আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা - সম্পূর্ণ (পর্ব- ১ থেকে পর্ব-৭) সমাপ্ত ।

একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয় ৭ম পর্বতে "জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা" গল্পটার সমাপ্তি টানছি। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু অধ্যায় এই গল্পে লিপি বদ্ধ করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করেছি, ছোট বড় অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসছে যা ঘটেছিল আমার জীবনে কিন্তু আমি নিজেই জানতাম না অথবা সম্পূর্ণ রুপে ভুলে গিয়েছিলাম। আমার মস্তিস্ক তা রেখে দিয়েছিল সযতনে। আপনিও লিখুন। দেখবেন আপনার লিখা পরে আপনি নিজেই চমকে গিয়েছেন।

সবাই ভাল থাকবেন। ধন্যবাদ। বাংলাদেশী দালাল ********************** পর্ব - ১ ********************** দোস্ত আমার দুই জন গেস্ট আইছে জটিল কইরা দুইটা চটপটি বানা। "১৯৯৮ সালের রোজার ঈদে আমরা ৫ বন্ধু মিলে চটপটির ষ্টল দিয়েছিলাম। আমাদের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে স্টলের নাম ছিল "জরসলিম", যেখানে মেয়েদের জন্য চটপটি এবং ড্রিংকস বিলকুল ফ্রি, আর এলাকার বড় ভাইদের জন্যে সর্বশান্ত মুল্য মানে পকেটে যা আছে দিয়ে যেতে হবে।

" মাইয়া না পোলা? মাইয়া, দূর সম্পর্কে ভাগনী হয়। আমি অন্দর মহল থেকে চটপটি নিয়ে হাজির। তখনও বুজতে পারিনি চটপটি হাতেই আমার প্রেমময় জীবনের সুচনা হতে চলেছে। ছালা পরে ঘুরছেন কেন? প্রশ্ন কর্তার দিকে তাকালাম। মারুফ পরিচয় করিয়ে দিলো, আমার ভাগ্নী, নাম আঁকা।

"এলিফেন্ট রোড থেকে অনেক ঘুরে পাঞ্জাবিটা কিনেছি। যদিও এখন আমার নিজেরই পছন্দ হচ্ছেনা, মনে হচ্ছে আমি না পাঞ্জাবিটা দাড়িয়ে আছে। জীবনে আর কখনই পাঞ্জাবিটা পরিনি" আমি কিছুটা রেগে বললাম, আপনার পছন্দ না হলে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকুন। আঁকা চুপ মেরে গেল। ওর সাথে চাচাত বড় বোন ছিল নাম রজি।

রজি আপা জানতে চাইল আমি কি করি? আমি বললাম, ক্লাস ১১ তে পরি, আর চটপটি বানাইয়া সংসার চালাই। উনি হাসতে লাগলেন। তোমার কি কোন বোন আছে আইডিয়াল গার্লস কলেজে পরে? জি? আপনি জানলেন কি করে? তোমাদের ভাইবোনের চেহারা অনেক মিল। রুবি আমার বান্ধবী। আঁকার সাথে আর কোন কথা বললাম না।

শুধু বিদায়ের সময় ওর চোখের দিকে তাকাতেই আমার হালুয়া টাইট। হায়, বায়, বিদায়, শাব্বাখায়ের, ফের মিলেংগে কিছুই মুখ দিয়ে বের হলনা। রাতে খুব মজা করলাম কোকা কোলার বোতল খুলে একজন আরেক জনকে ভেজান। অনেক বন্ধুরা এসেছিল। ফুল ভলিউমে গান ছেড়ে নাচা নাচি চলল রাত ১১ টা অব্দি।

"সেই সময়ের সেই ঈদ উৎসব গুল এখন আর দেখা যায়না পারা মহল্লার অলি গলিতে" বাইরের বন্ধুরা সব চলে যাওয়ার পর মারুফকে বললাম, দোস্ত আঁকা কোন ক্লাসে পরে? ক্লাস নাইন। কেন বন্ধু? তর ভাগ্নিকে আমার ভাল লাগছে। ফিরি না বুক্ট ? বুক্ট থাকলে রিজার্ভেশন বাতিল করমু কি কস বেটা । আমার কি করেত হইব কয়া ফালা। ওকে জানালাম আমি আঁকাদের বাসায় যেতে চাই।

ফার্স্ট অফ অল ছরি বলা দরকার। পরের দিন বিকেল ৫ টা। আঁকাদের যৌথ ফ্যামিলি। চার তলা বাড়ি পুর বাড়িতেই ওদের বাপ চাচারা এক সাথে থাকে। আমরা নিচ তলায় আকার চাচাত বোন রজি আপাদের ফ্লাটে বসলাম।

আকা আসছেনা। আমার টেনশন বাড়ছে। মারুফকে খোঁচা দিলাম। ও উঠে চলেগেল। কিছুক্ষণ পর আঁকাকে নিয়ে ঘরে ঢুকল।

আমাদের আসার সংবাদ পেয়ে এক চাচি থেকে শুরু করে আন্ডা বাচ্চা সব ভির করেছে। কারণ ঈদের পর দিন মারফ কে পাওয়া গেছে, এখন গানের আশার হবে। ও, বলতে ভুলে গিয়েছি মারুফ একজন ভাল সংগীত শিল্পী। আমাদের বার বার চোখা চখী হচ্ছিল। ইশারায় বোঝাল, আপনার ছালা পাঞ্জাবি কই।

আমি হালকার করে কানে ধরলাম। ও হাসল। মেঘনা (না) চাইতে বৃষ্টির মত দাওয়াত পেয়ে গেলাম মারুফের সাথে কেরানীগঞ্জ বেরাতে যাওয়ার। সাথে রজি আপা এবং আঁকা....। আমার পাগলা ঘোড়া রে কই থাইকা কই লইয়া যায়..গাইতে গাইতে বাড়ি চলে আসলাম।

আম্মা কিছুতেই কেরানীগঞ্জ যেতে দিবেন না, কি আর করা পালাতেই হল। মহাম্মদপুর বেড়ি বাধে অপেক্ষা করছি আমি আর মারুফ। আঁকা আর রজি আপা আসলো আধ ঘন্টা পর। আকা বেবি টেক্সি থেকে নেমে সোজা আমার হাতে লাগেজটা ধরিয়ে দিল। ধরেন এটা আপনার কাজ।

আমার কাজ মানে? আমি কি কুলি নাকি? আমি জানি আমার লাগেজ টানতে আপনার ভালই লাগবে। হি হি হি । মনে মনে ভাবছি এই মেয়ে তো আমাকে এখনই নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরান শুরু করে দিয়েছে। আমি লাগেজ নিয়ে ট্রলারে উঠে পরলাম। আকা আমার মুখো মুখি বসে আছে আমরা দুজনেই সানগ্লাস পরা।

ও সাদাকালো স্কার্ট পরেছে সাথে সানগ্লাসে অপুর্ব লাগছে। টেনারির বর্জ্যে দুর্গন্ধ ময় পরিবেশেও আমি স্বপ্নের দেশে হারিয়ে গেলাম। ঘাটে ট্রলার ভিরতেই আমি সংবিত ফিরে পেলাম। সবাই কাপর, রুমাল, হাত, দিয়ে নাক চেপে আছে আমি ছারা। আঁকা হাসছে।

সবার দৃষ্টি আমার দিকে এই প্রথম বুজলাম গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমরা উঠলাম মারুফের ভাইয়ের বাসায়। আমরা বিয়ে বাড়িতে এসেছি। I don’t fucking care বিয়ে বাড়ি হোক আর মরা বাড়ি। আমার কাঠের চশমায় শুধু একটা ছবি 'আঁকা'।

আমি আজো জানিনা বিয়েটা কার ছিল বা বৌ দেকতে কেমন ছিল। ফ্রেস হয়ে আমরা গ্রামে ঘুরতে বের হলাম। সন্ধায় বাসায় ফিরে সবাই মিলে ধাঁধার আসরে বসলাম। আঁকা একটা ধাঁধা বলল। 'শোয়ার আগে কি করতে হয়?' O my goodness আমি উত্তর জানি।

কেও বলছে বাতি নিভাতে হয়, কেও বলছে দাঁত মাঝতে হয়। আমি খুব টেনশনের ভাব নিলাম। উ এ্যা আ করে বললাম, শোয়ার আগে বসতে হয়। আঁকা আর রজি আপা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। আমি বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী ভাব নিলাম ।

কিন্ত একটু পরেই ঝামেলা বাঁধল। আঁকাকে রজি আপার চামচ বলে ফেলেছি মুখ ফসকে। ব্যস তেলে বেগুনে। রাতে আর কোন কথা হলনা। মদ্য পান হবে, আয়োজন চলছে।

আর বাহিরে নাচের পর্ব চলছে। আঁকা বারান্দায় দাড়িয়ে দেখছে আমি বারান্দায় আসতেই ও স্টেইজের কাছে কত গুল ছেলে বসে ছিল ওদের পাশে চেয়ার নিয়ে বসল। আমার তো মাথায় আগুন। আমি আমার ব্যাগ গোছাতে লাগলাম। মারুফ কে ঘটনা বললাম ও গিয়ে আঁকাকে নিয়ে আসল।

আকা পাসের রুমে চলে গেল। মারুফ বোঝাল রাতে না কাল সকালে যেতে। রাতে ঘুম হলনা। ভরের দিকে খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছি। পানির ছিটায় ঘুম ভাংল।

আকা হাসছে। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কেও নেই। ও গোসল করেছে, চুল বাঁধা। ভোরের আল ওর মুখে এসে পরছে। আমি কি স্বপ্ন দেকছি?ও জেন মানুষ নয় কোন শিল্পীর তুলিতে 'আঁকা'।

এভাবে ঘুমাচ্ছেন কেন? ঘুমিয়ে পরব বুঝি নাই। কিছু একটা ভাবছিলাম। কাকে ভাবছিলেন? তোমাকে। শ্যামলা মুখ খয়েরি করে চলে গেল। আজ কি কোন বিশেষ দিন।

শুরুটা এত ভাল হল কেন। আমি আবার চোখ বন্ধ করে ফেললাম। ভাবছি আমাদের সংসার। আমি ঘুমিয়ে আছি আঁকা আমার ঠোঁটে চুমু দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়েছে। গোসল করে টাওয়েল পেঁচিয়ে আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।

আর দুর থেকে গান ভেসে আসছে- রাত কা নেশা আভি আঁখ ছে গেয়া নেহি....। ********************** পর্ব - ২ ********************** কেরানীগঞ্জ থেকে ৩ দিন পর ঢাকায় ফিরলাম। যথেষ্ট সময় ও সুযোগ পাওয়ার পরও ভালবাসি বলতে পারলাম না। ঢাকায় আসার ৭ দিন পর আমরা দেখা করলাম আইডিয়াল কলেজের সামনে। রজি আপা বলল যা বলার তোমরা সরাসরি কেনো বলনা।

আমি বললাম হারাবার ভয়ে। ও আমার সাথে কিছুটা দুড় হেটে আসলো। হাটতে হাটতে জানাল এখন সে ভালবাসতে প্রস্তুত নয়। আমি ব্যথিত চিত্তে ফিরে আসলাম। আমি কি ওর যোগ্য নই, তবে কি সে অন্য কার সাথে.. আর কত কি মনের মাঝে জমতে লাগলো।

অবশেষে প্রায় ২ মাস পর মারুফ আমার ইম্পিরিয়াল কলেজে আসে আমাকে নিয়ে যেতে কারণ ওদের বাসায় আঁকা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। ছুটি নিয়ে মারুফের বাসায় গেলাম। আকা জিন্স আর সবুজ জামা পরেছে। আমি বরাবরের মত মুগ্ধ। দুজন বসে আছি কেও কথা বলছি না।

আঁকা নিরবতা ভাঙল - আমার কয়েকটা শর্ত আছে। কিসের সর্ত ভালবাসার? মুচকি হেসে, আমরা বছরে ২ দিন দেখা করব। ২ ঈদের পরের দিন। এটা তুমি কি বল? একবার দেখা হওয়ার পর আবার দেখা হওয়া পর্যন্ত বেঁচে থাকব তো ? আকা জবাব না দিয়ে পরের শর্তে চলে গেল। আপনার সিগারেট খওয়া বন্ধ।

মানে? সিগারেটের সাথে কি সম্পর্ক। আমার মাথা ছুয়ে কছম করতে হবে। আর কখনো সিগারেট খাবেন না। নাসর বান্দা। তাই করতে হল।

"তিন দিন সিগারেট না খেয়ে ছিলাম। ৫৫৫ থেকে নেমে গেলাম সোজা আকিজ বিড়িতে। লোক চক্ষুর অন্তরালে বিড়ি খেয়েছি টানা এক বছর। ধরা খেয়েছি আঁকার কাছে। আমার NIIT'র ব্যাগে বিড়ি পায়া গেল।

বুঝালাম আমি তাকে কত ভালোবাসি যে এত কষ্ট করে সিগারেট ছেড়ে এক বছর বিড়ি খেয়েছি। পারমিশন পেলাম দিনে ২ টা সিগারেট খাওয়ার। এবারও চালাকি, দিনে ২ টা, রাতে? সন্ধা নামতেই শুরু আনলিমিটেড সিগারেট খাওয়া। ধরা খেয়ে গেলাম ৬ মাসে। তবে রাগে দুঃখে আমার উপর থেকে সিগারেটের আবরোধ তুলে নেয়া হল" আঁকা চলে গেল।

কেটে গেল ৯ মাস, কোন দেখা নাই। যোগাযোগের এক মাত্র মাধ্যম পত্র। দেখা হল ঈদের পর। আবার আরাই মাস কোরবানির ঈদের পর। এইভাবে দেড় বছর পার হওয়ার পর।

চিঠি আর গিফট সহ আকা ধরা খেল ছোট চাচার কাছে। আঁকা এসে দেখা করল মিরপুর ১০ এ। আমার কাছে ওর দেয়া সকল চিঠি আর ছবি নিয়ে গেল , সম্পর্কে ইতি। কেটে গেল আর ৭ টি মাস। আমি ধৈর্য হারায়নি।

অপেক্ষায় ছিলাম জানতাম ফিরে আসবে। ফিরে আসল উল্টো আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে। আমি কেন তাকে বোঝালাম না। আমি কেন আগে তার কাছে গেলাম না। কোন উত্তর দিলাম না।

বললাম না সেদিন কতটুকু চোখের জল ফেলেছি, বললাম না কত রজনী নির্ঘুম কাটিয়েছি। বললাম না কোন দিন না আসলেও, তিলে তিলে শেষ হয়ে গেলেও আমি তোমার কাছে আর যেতাম না। ভালবাসা অর্জন করতে জান দিয়ে দিতে প্রস্তুত কিন্তু অর্জিত ভালবাসা চলে গেলে পিছন থেকে ডাকতেও প্রস্তুত নই। আমার ভালবাসা ফিরে আসল আমার কাছে। আমার জন্মদিন মিরপুর ১০ থেকে ওকে তুলে নিলাম গন্তব্য ওয়াটার পন্ডস।

নেমে হাটছি ও শাড়ি পরেছে সবুজ রং এর। কি কি বলেছিলাম মনে নেই কিন্তু, সারাদিন কেটে গেল ৫০ টাকায় ভারা করা পাটিতে বসে এটা মনে আছে। সেই আবেগ সেই ভালবাসা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। এটা শারীরিক প্রেম নয়। আমি তখনও আকার হাতও ধরিনি।

প্রেম শুধু চোখে চোখে, প্রেম শুধু আবেগে, প্রেম শুধু অনুভবে। এর পর আসল সেই দিন যে দিন থেকে প্রেম স্পর্শে ও হয়ে গেল। ২০০১ রোজার ঈদের পরের দিন আশুলিয়া সড়ক। আমরা পাশাপাশি হাঁটছি। আঁকা আমার বা দিকে।

ওর বাদিকে খারা ডাল তার পরেই পানি। । আঁকা বলল, আমি যদি এখন পরে যাই আমার বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠল। আমি আমার নিজের অজান্তে হাত বাড়িয়ে দিলাম। গ্রীষ্মের প্রখর রোদে আমরা দুজন হাত ধরা ধরি করে আশুলিয়া সড়কের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত হেটে গেলাম একটি বাক্যও কার মুখ দিয়ে বের হলনা।

একটি অজানা অনুভুতি আমাকে গ্রাস করে ফেলল । বুকের মাঝখানে শিতল হাওয়া বইতে লাগল। কতক্ষণ হেঁটেছি বলতে পারব না। একটা টেক্সিতে উঠলাম আমরা হাত ধরেই আছি ও শুধু একবার বলল শক্ত করে ধর কখনও যেন ছুটে না যায়। আমি আর শক্ত করে ধরলাম।

এরপর থেকে দুজনেই মিলিত হওয়ার জন্য ছট ফট করতে লাগলাম। এখন শুধুই কাছে পাওয়ার নেশা। একটু স্পর্শের নেশা। আমরা দুই দিন পরেই দেখা করলাম এক বন্ধুর বাসায়। প্রথম বারের মত ঠোঁটের উষ্ণতা অনুভব করলাম।

কিন্তু সংযমী ছিলাম। কখনই শিমা অতিক্রম করিনি। কেটে গেল আর দুটি বছর। এবং সময় হল ক্লাইম্যাক্স এর। আকা এখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পরে।

ওর ছোট আর দুই বোন আছে। সংগত কারণেই ওর বিয়ের জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে। এদিকে আমি হচ্ছি সবার ছোট আমার বড় ভাই এখনও বিয়ে করেনি। তাছাড়া আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পরি। ছোট একটা ISP ব্যবসা করতাম তাতেও লস হয়েছে অনেক টাকা।

ব্যবসা ক্লস করতে হবে। সিদ্ধান্ত নিলাম ব্রেক আপের। ও শুধু কাঁদল। আমি আঁকার মুখের দিকে তাকাতে পারিনি। ও চলে যাচ্ছে আমি তাকিয়ে দেকছি আর আমার ভিতরটা শূন্যতায় ডুবে যাচ্ছে।

কি করব এখন? জীবনের লক্ষ্যই ছিল একটা। আমরা বিয়ে করবো সংসার করবো বাবা মা হব। এখন, এখন আর জীবনের লক্ষ্য কি রইল? ৫টি দিন কাটল ঘোরের মাঝে, না পারব না । আঁকা কাছে খবর পাঠালাম কিন্তু ও আসবেনা। একটা চিঠি পাঠালাম আমার শেষ ইচ্ছের কথা বলে।

আঁকা ছুটে আসল জরিয়ে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদল। আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিলাম । আমরা বিয়ে করব। তারপর আমি দেশের বাইরে চলে যাব। আঁকা চেষ্টা করবে ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করতে।

আমরা বিয়ে করলাম। টেনশন হচ্ছিল আবার প্রশান্তি ও পাচ্ছিলাম এই ভেবে যে হারানোর আর কোন ভয় নেই। ব্যবসায়ের প্রয়োজনে আমার ২ টা বন্ধুকে একটা ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভারা নিয়ে দিয়েছিলাম। ওখানে আমার একটা রুম ছিল। আমাদের বাঁশর হল ঐ ফ্ল্যাটে।

আমার ভিসা টিকেট হয়ে গিয়েছে বিদায় ঘন্টা বেজে উঠল। আঁকা আমার বুকের উপরে শুয়ে আছে। ওর চোখের জলে আমার বুক ভেসে যাচ্ছে। জীবনটা এমন কেন। সুখ কেন ক্ষণস্থায়ী ?????????? ********************** পর্ব - ৩********************** আমার এক বিশ্বস্থ বন্ধুর কাছে বিয়ের কাগজ পত্র বুঝিয়ে দিয়ে এয়ার পোর্টে চলে গেলাম।

এয়ার পোর্টে আসার আগে আঁকার থেকে বিদায় নিয়েছি আর তখন থেকেই আমার কোন অনুভুতি কাজ করছেনা। কেমন জেন রোবটের মত হয়ে গেলাম। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বিমানে উঠলাম। বিমান টেকঅফ করল। আমি জানালার গ্লাস দিয়ে আমার দেশকে দেকছি আর আঁকার কথা ভাবছি।

দেশটা ক্ষুদ্র হতে হতে একসময় হারিয়ে গেল সেই সাথে বিদায়ের বেদনা গ্রাস করে ফেলল.... আমি সাইপ্রাসে। আমার কলেজের একটি বাস এসেছে আমাদের নিয়ে যেতে। দেশী বিদেশি মিলে ১৪ জন। আমাদের কে সোজা কলেজে নিয়ে যাওয়া হল। রিসেপশনে একটা মে সং সেজে দাড়িয়ে আছে।

আমাদের রক্ত নেয়া হল পরীক্ষার জন্য । আর কিছু প্রয়োজনিয় কাজ সেরে আমাদের কে কলেজের সাময়িক হোস্টেলে পাঠিয়ে দিল। এখান থেকে ৭ দিনের মধে নিজের বাসস্থানে চলে জেতে হবে । আমি সেদিনই চলে গেলাম। আমার এক বন্ধুকে কল করলাম,ও এসে আমাকে নিয়ে গেল।

শুরু হল এক নতুন সংগ্রাম। অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। ব্যবসায় লোকসান করে অনেক গুল টাকা দেনা হয়ে আছি। লুকিয়ে বিয়ে করেছি। দুই পরিবারের সম্মতি আদায় করতে হবে।

নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সেই সাথে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমার জীবনের স্রোত বহমান নদীর মত ছিলনা ছিল কংকর ময় পাহাড়ি ঝর্না ধারার মত। আমার কলেজ আমাকে জানাল I'm HBs(Hepatitis B) positive. আর একটা টেস্ট করতে হসপিটালে পাঠিয়ে দিল। আমাদের দেশে জন্ডিস কে তেমন কোন বিশেষ রোগ হিসেবে মনে করা হয়না।

কিন্তু ওরা এই বিষয়ে খুব সচেতন। হসপিটাল আমাকে ১০ দিন পর রিপোর্ট নিয়ে জেতে বলল। আমি অনিশ্চয়তার মদ্যে পরে গেলাম। এই রিপোর্টও যদি positive আসে আমাকে দেশে ফিরে জেতে হবে। আঁকার সাথে রাতে কথা হল।

বিচ্ছেদের বেদনা রুপ নিলো অনিশ্চয়তার দোলাচলে। জীবন কি অদ্ভুত। ভালবাসা ছেড়ে এসেছি তাতেও নিদারুণ কষ্ট আবার ভালবাসার কাছে ফিরে যেতেও ভয়। আমি নির্ধারিত দিনে হসপিটাল গেলাম রিপোর্ট আনতে। রিপোর্টে কি আছে আমাকে বলা হল না।

কলেজে নিয়ে যেতে বলল। গ্রীক ভাষায় লেখা পরতে পাড়লাম না। আমি কলেজে গেলাম। International students relationship officer আমাকে বললেন, তুমি দেশে ফিরে যাচ্ছ। ভাল করে চিকিৎসাত নিয়ে নেক্সট সেমিস্টারে ফিরবে।

আমি আমার সেমিস্টার ফি ফেরত চাইলাম। এই দেশ থেকে ফিরে গেলে আর আসব না। সে বলল এটা কলেজ, ব্যাংক নয়। মন চাইল জমা করলে মন চাইল তুলে নিলে। কলেজ থেকে.এমিরেটসে ফোন করে কনফার্ম করে দিল আমার রিটার্ন ফ্লাইট আগামি কাল বিকেল ৫ টায় ........ ********************** পর্ব - ৪ ********************** অনেক চেষ্টা করলাম কলেজ কে ম্যানেজ করতে যেন আমি সাইপ্রাসেই চিকিৎসা নিয়ে থেকে যেতে পাড়ি।

কিন্তু কিছুতেই তারা মানল না। রিপন মানে আমার যে বন্ধু আমাকে হস্টেল থেকে নিয়ে এসেছিল ওর সাথে একজন বিশেষ বড় ভাই ছিল সাইপ্রাসের বাঙালী সমাজে যাকে তখন বিগ শার্ক বলা হত নাম রাকিব। তাদের কাজ স্টুডেন্ট ভিসা বের করা, ব্যাংক একাউন্ট করে দেয়া, হাউজ এগ্রিমেন্ট সহ বাংলাদেশী স্টুডেন্টদের কে আইনি সহায়তা দেয়া বিনিময়ে মোটা অংকের ফি। পরের দিন বিকেল ৪:৩০ মি আমার কল এল এমিরেটস এয়ার লাইনস থেকে। রাকিব ভাই বললেন ফোনটা আমার কাছে দাও।

উনি সেট থেকে সিম টা খুলে ভেঙে ফেললেন, বললেন খাও দাও ঘুমাও চার মাস অপেক্ষা কর সাইপ্রাস ইউরোপে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। আমার কাছে প্রায় ১২০০ ডলার ক্যাশ ছিল, চলতে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। আমি উঠেছিলাম রাকিব ভাইয়ের ছোট ভাই এর বাসায়। ইতিমধ্যে আমাদের আর দুজন বন্ধু আসল ঢাকা থেকে। ডাউন টাউনে একটা বাসা ভাড়া নিলাম।

জায়গাটা ভিষণ অদ্ভুত। বাড়িটার পেছনের অর্ধেকটা নোম্যান্স ল্যান্ড। উ এন সোলজারস দের সারাক্ষণ দেখা যায় ঘোরা ফেরা করতে। অদূরেই পতিতা পল্লী। পতিতাদের প্রত্যেকেরই নিজের বাড়ি।

কিছু কিছু বৃদ্ধাকে দেখা যায় সারাদিন বারান্দায় বসে থাকতে খদ্দেরের আশায়। বাড়ির সামনে দিয়ে গেলেই চেচিয়ে বলত, "থেলিস ধিকিধিকি রে মানামো" মানে বুজতেই পারছেন... কে যাবে বুড়ির কাছে? খুব মায়া লাগত দেকতে। শুয়ে বসে আর পুল খেলে দিন কেটে যাচ্ছিল। শিত চলে এল। এখানে সামারে কোন বৃষ্টি নেই ।

প্রচন্ড শিতে, অদ্ভুদ বৃষ্টি। আঁকার প্রথম চিঠি পেলাম। মন্ত্র মুগ্ধর মত পড়লাম। একদম শেষে লিখা - "এই মুহূর্তে আল্লাহ যদি আমকে বলতেন, একটা কিছু চাইতে, আমি বলতাম, আমি আমার স্বামীর বুকে যেতে চাই। তারপর বলতাম আমি আমার স্বামীর বুক থেকে আর কোথাও যাব না " আমি লাইনটা হাজার বার পড়লাম যতক্ষণ না বুকের সবটুকু ব্যথা অস্রু হয়ে ভেসে যায়।

তিন মাস কেটে গেল আমার হাতের টাকা শেষের পথে। তিনজনের খরচ আমাকে একাই চলাতে হচ্ছে। ওদের খরচ রিপনের দেয়ার কথা ছিল, যা কখনই দেয়নি। আমি ডাউন টাউনের বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় চলে গেলাম। এখানে আরো ৮ জন এক সাথে থাকে তাই খরচ কম হবে।

একদিন একটা কাজের অফার আসল। এক মাছরের সাথে ভিলেজে যেতে হবে ফলের বাগানের কাজ করতে। গ্রীক ভাসায় মালিক বা বস কে মাছরে বলে। থাকা এবং খাওয়ার ব্যাবস্থা মাছরেই করে দিবেন। লুফে নিলাম।

অন্তত নিরাপদে থাকা যাবে। শহরে মামুদের ভয়ে অস্থির থাকতে হয়। ইমিগ্রেশন পুলিশরা নাকি দরজায় করা নেড়ে বলে "মামুরা আইছি দরজা খোল" ওরা এই বাক্য টা কোথা থেকে শিকল শে আমর কাছে এক বিরাট রহস্য। শুনেছি কোন কোন বাঙালী পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে টাকার লোভে। হায়রে বাঙালী যেখানেই যাই রাজাকার আর মিরজাফররা আমাদের পিঠে চেপে বসে সিন্দাবাদের ভুতের মত।

আমরা ৬ জন একটা মাইক্রোতে চেপে রওনা দিলাম । দু ঘন্টা পর আমরা একটা পাহাড়ি ঢাল বেয়ে উঠে এলাম "পেরেস্তেরনা" নামের একটা ছোট্ট ভিলেজে। পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা অসম্ভব সুন্দর একটা গ্রাম যার তিন দিকেই সমুদ্র দেখা যায়। মাছরে আমাদের কে একটা মলে নিয়ে গেলেন বললেন যা যা লাগবে এখান থেকে নিয়ে নিবে আমি বলে দিচ্ছি। আমরা কেনাকাটা করে আমাদের জন্য নির্ধারিত বাড়িতে আসলাম।

আগামি কাল সকাল ৬ টায় ফোরম্যান গাড়ি নি্যে আসবে আমাদের কে কর্মস্থলে নিয়ে যেতে, জানিয়ে মাছরে চলে গেলেন। আমরা একটা বিষয় আবিস্কার করলাম। বাড়ি ভেতের বিভিন্ন জায়গায়, দেয়ালে, দরজায়, ম্যাগাজিনে বাংলা এবং ইংরেজিতে লিখা "ভাই এই মাছরের কাম কইরেন না টাকা দিবনা", "মাছরে ভালা না", "Go back now" ইত্যাদি। । কাজত নয় আর্মি ট্রেনিং।

পাহাড়ের ডালে মাটি সমতল করে কাটা বড় বড় একেকটা বাগান । মাল্টার মত দেকতে যাকে ওরা বলে মান্দরা আর মিষ্টি লেবু পেড়ে ২৫ কেজির বক্স ভরে কাধে নিয়ে লরিতে লোড করতে হত। তাতেও সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে যখন প্রচন্ড শিত আর বৃষ্টিতে হাত পা অবশ হয়ে যেত আর সেই সাথে কাদামাটি বুট জুত কামড়ে ধরত। আমাদে সাথে এক বড় ভাই ছিলেন আলি নাম।

আলি ভাই আর আমি বক্স কাধে নিয়ে পাশা পাশি খুব দ্রুত হাটছি উনি বললেন, নিজেকে গাধা গাধা মনে হচ্ছে বুজলে? গাধায় পিঠে কিছু না থাকলে চলবার চায়না। দুই মনের দুইটা বস্তা পিঠে তুইলা দিবা দেখবা আমাগো মতন দৌড়াইয়া যাইব। আমি বাক্স নামিয়ে কতক্ষণ হেসে নিলাম। এই ছিল আমাদের গাধার খাটুনি। কেটে গেল ৪০টা দিন ততদিনে আমরা বুঝে ফেলেছি ঘটনা সত্য, টাকা পাওয়া যাবেনা।

একদিন আরো কিছু নতুন ছেলে আসল কাজ করতে ওরা আফগানিস্তানী । আমি ওদের সতর্ক করলাম, বললাম আমরাও চলে যাচ্ছি দু এক দিনের মধ্যেই। বুজতে পারিনি এরা পাকিদের সহদর। মাছরের কানে গেল। আমাদের কে ডেকে হুমকি দিল, চলে জেতে চাইলে পুলিশে দিবে বলে।

পরের দিন আফগানি দের বললাম "হাম তুমহে দিল দিয়া পেয়ার সামসকে তুম উচ্ছে খা লিয়া বাদাম সামাসকে?"। দিল হেয় তোমহাড়ে পাছ? হারামি গুলোর উত্তর। পরের দিনই আমরা জান নিয়ে পালিয়ে আসলাম পাওনা টাকাত পরের কথা। সাইপ্রাসের সবাই এই মাছরের মত নয়। মেসে ফেরার ২ দিন পর এক এডভোকেটের অফিস শিফটিং এর কাজ করতে গিয়েছিলাম ।

কাজ কিছুই না, ফাইল আর বই পত্র দোতলা থেকে তিন তলায় নেয়া। ভদ্রলোক আমাদের থেকে বেশি কাজ করলেন, পিজ্জা খাওয়ালেন, গল্প করলেন। ফেরার সময় বললেন, তোমাদের কত দিলে খুশি হবে। আমরা লজ্জায় পরে গেলাম। ওর এখানে বেরাতে এসে পারিশ্রমিক নেই কি ভাবে? ১০০ ডলার করে ৫ জনকে ৫০০ ডলার দিলেন।

সময়ের চাকা ঘুরছে। সাইপ্রাস ইউ তে অন্তর ভুক্ত হল। সবাই হাত তোলা দিচ্ছে, মানে পাসপোর্ট গুম করে রেফিউজি অথবা পলিটিক্যাল সেলটাররে জন্য আবেদন করছে। বিগ শার্ক, রাকিব ভাই বললেন ধীরে চলাও গাড়ি নিরাপদে ফির বাড়ি। আমি ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষায় রইলাম।

৪-৫ দিন পর উনি বললেন, কাল কাক ডাকা ভোরে রেডি থাকবা কাম আছে। একটা বিষয় আমি সেদিন লক্ষ্য করলাম ওরা খৃস্টান, ফজরের নামাজ পড়েনা । কিন্তু ভোরের আল ফুটতেই কাজে বের হয়ে যায়। ৭:৩০ এর মধেই ব্যাংক, বিমা সব খুলে যায়। অথচ আমরা নামাজ পড়লেও আবার ঘুমাই কারণ অফিস ৯/১০ টায় ।

আর ডে লাইট সেভিং এর নামে ঘড়ির কাটা ধরে টানা টানি করি। রাকিব ভাই কাক ডাকা ভোরেই আসলেন পাসপোর্ট টা নিয়ে গাড়িতে বসতে বললেন। আমরা ইমিগ্রেশন অফিসে গেলাম। উনি আমাকে অফিসে ঢুকে কোসতানদিনো নামে এক এডভোকেটের কাছে যেতে বললেন। লং কোর্ট পরা চুল ব্যাক ব্রাস করা এডভোকেটের কোসতানদিনো কে খুজে পেলাম।

উনি একটা রুমে আমাকে ঢুকিয়ে গ্রীক ভাসায় এক ভদ্র মহিলাকে কি জেন বলে বের হয়ে গেলেন। ভদ্র মহিলা আমার পাসপোর্ট নাম্বার নিয়ে কম্পিউটারে সার্চ দিলেন। অনেক লেখার নিচে লাল কালি দিয়ে লেখা একটা বাক্য আমার নজরে পড়ল "Action to be taken " ********************** পর্ব - ৫ ********************** ভদ্র মহিলা বললেন তুমি বাহিরে আপেক্ষা করো। আমি করিডোরে চেয়ারে বসে আছি। রাকিব ভাইকে ফোনে ঘটনা বললাম।

উনি বললেন আল্লাহর নাম নাও আর ভায়ের কেরামতি দেখ। ১০ মিনিট পর এডভোকেট সাহেব এসে বললেন, "HBs positive রে মাই ফ্রেন্ড " আমি বললাম, জি এটা সত্য । উনি ইমিগ্রেশন চিফের কক্ষে ঢুকলেন। কিছুক্ষণ পর আমার ডাক পরলো। ফর্ম ফিলাপ করে, ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে "এলিয়েন বুক" হাতে বীরদর্পে বের হয়ে এলাম।

এলিয়েনের সার্টিফিকেট পেয়েছি কিন্তু চার মাস পর এই প্রথম মনে হচ্ছে আমি এখন আর কোন ভিন গ্রহের বাসিন্দা নই। যেই HBs এর অজুহাতে কলেজ আমাকে দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছিল সেই HBs এর দ্রুত চিকিৎসার কথা আমলে নিয়ে আমাকে একদিনেই স্টে পারমিট দিয়ে দিল। আমার পিছু পিছু কয়েকটা ছেলে বের হয়ে এসে ঘিরে ধরলো। "ভাই কেমনে কি, এক সপ্তাহ ধইরা ঘুরতেছি ফিংগার প্রিন্টই দিতে পারলাম না। আর বই পাইতে তো একমাস লাগবো কইতাছে।

আপনে একদিনেই এলিয়েন বুক পাইলেন?" ইত্যাদি বলতে লাগল। আমি চাপাবাজি করে ওদেরকে রাকিব ভাইয়ের ফোন নাম্বার দিয়ে গাড়িতে উঠে পরলাম। রাকিব ভাই বললেন, তোমার উপরে ইনভেস্ট করলাম তোমার কাজে আমি অতীব আনন্দিত। উনার মোবাইলে কল আসতে লাগল। উনি রিসিভ করে ওপাশের কথা শুনে, 'পরে ফোন দেন' বলে কেটে দিচ্ছিলেন।

গাড়িতে গান ছাড়লেন "চুমকি চলেছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে ......." । তিন দিনের মাথায় উনার ব্যবসা তুংগে উঠে গেল। বলা বাহুল্য সত্যিই উনি আমার থেকে কোন টাকা নেননি। রাকিব ভাই আর আমার বন্ধু রিপনের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্ধ বাদল। বিপাকে পড়লাম আমি।

আমাকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেল। কোনদিকে যাই। রাকিব ভাই কে বললাম ভাই আমি আর নিকসিয়া থাকতে চাইনা। রাকিব ভাই মনে হয় খুশিই হলেন। রাজধানী নিকসিয়া থেকে আমি পাফসে চলে গেলাম ।

একটা পাঁচ তারকা হোটেলে রাকিব ভাই এর রেফারেন্সে যার কাছে আসলাম তিনি ইসলাম ভাই, তার সাথে নিকসিয়াতে আগেই পরিচয় হয়েছিল। ইসলাম ভাই বললেন তুমি NIIT থেকে ডিপ্লোমা করে হাউজ ম্যান এর কজ করবে? আমি বললাম আমি কাজ করব। Coral Beach Hotel & Resort এ আমরা ৫ জন বাংলাদেশী একসাথে হাউজ ম্যান হিসেবে যোগ দিলাম। সমুদ্র সৈকতে নির্মিত এক বিশাল হোটেল। প্রথম দিনের একটা ছোট ঘটনা বলি, আমাদের ডিপার্টমেন্ট প্রধান মিসেস কেটি, আমাদেরকে সম্পূর্ণ হোটেল ঘুড়িয়ে দেখাচ্ছিলেন আর ব্রিফ করছিলেন।

একটা রুমের বেলকনির দরজা খুলতে খুলতে বলছিলেন, যা কখনই করবেনা তা হচ্ছে, নগ্ন অথবা অর্ধ নগ্ন কোন মেয়েকে সান বাথ করতে দেখলে এমন ভাবে তাকাবে না যাতে মনে হয় তুমি তাকে পর্যবেক্ষণ করছ। গেস্ট যদি অভিযোগ করে তাহলে চাকরি চলে যাবে" কথাটা শেষ করার আগেই দরজা খুলে গেল আর আমরা পাঁচ জনেই অর্ধ নগ্ন একটি মেয়েকে হা করে দেখতে লাগলাম। আল্লাহ বাচিয়ে ছিলেন আমি খুব দ্রুতই রাতের শিফটে ট্রান্সফার হয়ে ছিলাম। দশ ঘন্টার ডিউটি ছিল। গেস্ট রুমের প্রয়োজনীয়- টাওয়েল, টয়লেট্রিজ, এক্সট্রা বেড, বেবি কট ইত্যাদি সরবরাহ আর পাবলিক এরিয়া পর্যবেক্ষণ ও ক্লিনিং করা ছিল আমার কাজ।

একটা কথা না বললেই নয় সাইপ্রাস আমাকে কাজের মুল্যায়ন করতে শিখিয়েছে। একজন ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে পরিচয় হয়েছিল যিনি মাসে ছুটির আট দিন রংমিস্ত্রির কাজ করে ব্যাংকের বেতনের প্রায় সমান আয় করতেন। সাইপ্রাসে একটা গল্প প্রচলন ছিল। কঠিন সময় গুলোতে আমরা এই গল্প টা মনে করে ধৈর্য্য ধারণ করতাম। গল্পটা হচ্ছে " একটি জাহাজ গভীর সমুদ্রে দুঃখের ভাঁড়ে নিমজ্জিত প্রায়।

আরেকটি সুখের জাহাজ তাকে অতিক্রম করছিল। দুঃখের জাহাজ টি সুখের জাহাজ কে বলল, ভাই আমার থেকে কিছু দুঃখ তুমি তুলে নিলে আমি হয়ত তীরে পৌছাতে পারব। সুখের জাহাজ বলল, না না ভাই আমার সুখের জাহাজে আমি এক বিন্দুও দুঃখ নিব না। সে চলে গেল। এবার আরেকটি জাহাজ এল যেটা সুখ এবং দুঃখ মিলিয়ে কোন রকমে পার হয়ে যাচ্ছিল।

দুঃখের জাহাজ এটিকেও বলল, ভাই আমার থেকে কিছু দুঃখ তুমি তুলে নিলে আমি হয়ত তীরে পৌছাতে পারব। এই জাহাজ টিও বলল না না ভাই আমি আর এক বিন্দু দুঃখও নিতে রাজি নই। দুঃখের জাহাজ টি অত্যন্ত ক্লান্ত ও প্রায় অচেতন অবস্থায় তীরে এসে পৌছাল। প্রশ্ন হচ্ছে জাহাজটিকে, কে বাচাল? উত্তর হচ্ছে 'সময়'। জাহাজ টি আল্লাহ তালার নির্ধারিত তার দুর্ভোগের সময় অতিক্রম করে সু সময়ে পৌছাতে সক্ষম হয়েছিল" মার্চ মাস, ২৫ দিনের মত হয়েছে হোটেলে কাজ করছি।

আমার দুঃখের জাহাজ যেন তীরের দেখা পেতে চলেছে। দেশে আমার 'বিবি নাম্বার ওয়ান' তার যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। আঁকা আমার বোন রুবিকে দিয়ে আমার বাবা মা কে রাজি করিয়েছে ওদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যেতে। আর আপা-দুলাভাই ওর মার কাছেও আমাদের ভালবাসার ব্যপারটা জানিয়েছেন। আমার শাশুড়ি আমাদের ভালবাসাকে মেনে নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছেন, যার কিছুই আমি জানতাম না।

মার্চের ১৪ তারিখ আমি হোটেল থেকে ফিরে ডাইনিংয়ে রাতের খবার খেয়ে টিভি দেখছি। রাত ১০ টায় দেশ থেকে ফোন এল। আমার দুলাভাইঃ - কবুল সুনতে ও বলতে তৈরী হয়ে যাও। - মানে? আমি অবাক। - Get ready to say কবুল।

- ভাইয়া আমি কিছু বুজতে পারছিনা। মানে কি? - উনি বললেন আমরা তোমার শ্বশুর বাড়ি। আজ তোমার আর আঁকার বিয়ে। আমি এক দৌড়ে ওজু করে আসলাম। আমাকে আবার ফোন দেয়ার কথা।

তিন ঘন্টা হতে চলেছে ফোন আসছেনা। ভাবছিলাম ভাইয়া মনে হয় আমার সাথে ফান করলেন। দুলাভাই আমার বন্ধুর মত, মনে মনে খুব বকছি - "হারামজাদা, তুই ও তো প্রেম করে বিয়ে করেছিস তোর সাথে যদি কেও ফান করত?!" নিজে থেকে ফোন করছিনা, আবার যদি গাধা, পাঠা হয়ে যাই এই ভয়ে। রাত ১ টায় ফোন বেজে উঠল- - হ্যাল ? আঁকার কণ্ঠ । - হ্যাল।

- বলো গো স্বামী। - ব্যপারটা কি বলত? -আঁকা বলল, তোমার মোবাইলে অনেক চেষ্টার পরেও কল ঢুকল না। তার পর এই আধা ঘন্টা আগে আমার কবুল নিয়ে কাজী বললেন ছেলে দেশে এসে কবুল বললেও হবে (যদিও তার কোন দরকার নেই) - আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম। জান আই লাভ উ............ {দুই রাকাত শুকরানা নামাজও পরেছিলাম কিন্তু। কারণ পালিয়ে বিয়ে করার পর শুকরানা নামাজ পরা হয়নি} ********************** পর্ব - ৬ ********************** মাস খানেক যেতেই আমার এক কলিক জানাল একটা ইন্টারনেট ক্যাফে পার্ট টাইম সপ কিপার চাচ্ছে।

তুমি চেষ্টা করে দেকতে পার। আমি ক্যাফের মালিকের কাছে গেলাম জানলাম সপ্তাহে ৩ দিন কাজ, দুই দিন সকালে এক দিন বিকেলে। আমি হোটেলের সিডিউল এর সাথে মেলাতে পারছিলাম না। মিসেস কেটি কে বললাম আমি রাতে কাজ করতে চাই । উনি আমাকে রাতের শিফটে দিয়ে দিলেন।

আবার ক্যাফের মালিক জর্জের কাছে গেলাম। বললাম, জর্জ আমি হোটেলর কাজ এখন থেকে রাতে করবো তুমি আমাকে কাজটা দাও। আমি নিজে ইন্টারনেট প্রোভাইট করেছি, ক্যাফে চালিয়েছি। তোমার চাহিদা আনুযায়ী আমি কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ আর গেস্ট কে এসিস্ট করতে পারব। জর্জ বলল- আমি দুঃখিত, দেখ তোমার দেশে, বিদেশী গেস্ট ছিলনা।

তাছাড়া আমি আসলে রেসপনসিবল কাও কে চাচ্ছিলাম মানে আরেকটু বেশি বয়সের কাও কে । এতবড় ক্যাফে একা ম্যানেজ করতে হবে তুমি পারবেনা। আমি ভনিতা না করে বললাম, তাহলে তুমি আমাকে আমার যোগ্যতা প্রমাণ করার কোন সুযোগই দিচ্ছনা? জর্জ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, কাল সকাল দশটায় আমার ক্যাফেতে আসবে। তোমাকে ৩ দিন পর্যবেক্ষণ করব। প্রথম দিনেই পৌঁছতে দেরি হয়ে গেল জর্জ সাবধান করে দিলেন।

এটাকে ঠিক ইন্টারনেট ক্যাফে বলা যাচ্ছেনা, ভিডিও গেম, পুল সাথে রেস্টুরেন্ট। বিভিন্ন সুভেনিয়র দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজান । সারা রাত হোটেলে কাজ করে সোজা এখানে চলে এসেছি বিকেল ৪ টা বাজে, ক্ষুধায় পেট কামড়াচ্ছে কিন্তু বলতে পারছিলাম না। অবশেষে মিসেস জর্জ একটা স্যান্ডউইচ তৈরী করে দিলেন। খেতে পারলাম না ভিতরে পর্ক ছিল বলে।

দুদিনের মাথায় আমার জব পার্মানেন্ট হয়ে গেল। তবে আমার কাজ এই ক্যাফেতে নয়। 'পাফস' সৈকতের কাছে ওদের আরেকটা ক্যাফে আছে। জর্জ আমাকে ওখানে নিয়ে গেল। এই ক্যাফেটা আরও সুন্দর, অনেক গেস্ট ই "Beautiful cafe I ever seen" লিখে গেছেন মন্তব্য বইতে।

সত্যি বলতে আমিও। আমি দায়িত্ব বুঝে নিলাম। আমার সবচাইতে বড় পাওনা হচ্ছে আমি সুপার ফার্স্ট ইন্টারনেটে কাজ করতে পারব। দুদিন পর জর্জ আমার কাজ দেখতে এলো। টাকা পয়সা নিয়ে একটা আপত্তিকর কথা বলল।

আমি ভিষণ রেগে গিয়ে বললাম, জর্জ তুমি যদি আমকে বিশ্বাস করতে না পার আমি তোমার কাজ করবো না। অসৎ পন্থায় টাকা আয় করতে চাইলে তা আমার দেশেই পারতাম তোমার দেশে আসার প্রয়োজন হত না। আমি দেশে ফেরার পূর্বের দিন পর্যন্ত প্রায় ৫ বছর ওখানে কাজ করেছি। আর কখনই জর্জ আমাকে তদারকি করেনি। দেশে আসার কয়েক মাস পর এক বন্ধু ফোন দিয়ে আবেগ জরান কণ্ঠে বলেছিলেন, " আজ ৭ বছরের সাইপ্রাস জীবনে প্রথম বারের মত বাংলাদেশী হিসেবে সম্মান ও সমাদর পেলাম, আমি তোমার বস মিঃ জর্জ এর বাসায়, AC লাগাতে এসেছি।

" আমার চোখে পানি এসে পরেছিল । আসলে দেশের বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা না থাকলে কেও উপলব্ধি করতে পারবেনা দেশের প্রসংশা করলে হৃদয়ে কতটা দোলা দেয় আর দেশ নিয়ে গালি দিলে কতটা পুড়ে যায়। আমার দিন কাল ভালই কেটে যেতে লাগল। বৌ এর সাথে নিয়মিত ফোনে কথা হচ্ছে, ৫০-৬০ হাজার টাকা প্রতি মাসে দেশে পাঠাতে পারছিলাম। আর সেই সাথে ওয়েব সাইটের কাজ করে যাচ্ছি।

বেশ ভাল একটা ল্যাপটপ কিনেছি। ২০০৫ এ আমি দুইটা অনলাইন সার্ভিস চালু করি। একটা গিফ্ট সপ সাইট আরেকটা মোবাইল ক্রেডিট রিচার্জ সার্ভিস(ফর দা ফার্স্ট টাইম ইন বিডি)। হোটেলে রাতের কাজটাও বেশ চলে যাচ্ছিল। শুধু ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.