আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সত্যের সাক্ষ্য

আশায় বুক বেধে ছিলাম , রয়েছি , চিরকাল থাকব। মানব হিসাবে প্রত্যেকের কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে। সত্যের পক্ষে সাক্ষী দিতে হয় সর্বসাধারণের বিবেকের আদালতে। জীবনের প্রতি পদে প্রতিটি ব্যক্তিকেই কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাকে রায়ও দিতে হয়।

সেটি কখনও পরিবারে, কখনও সমাজে, আবার কখনও বা রাষ্ট্রের রাজনীতি ও প্রশাসনে। রাজনীতির ক্ষেত্রে সে রায়ের গুরুত্ব আরো অধিক। কে কত দীর্ঘকাল বাঁচলো সেটাই বড় কথা নয়, কতটা সত্য পথে থাকলো এবং কীরূপে দায়িত্বপালন করল সেটিই বড় কথা। যে সমাজে সঠিক দায়িত্বপালনকারির অভাব সে সমাজ ব্যর্থতায় রেকর্ড গড়ে। রায় প্রদানে বিচারকের অভিজ্ঞতা ও বিবেক-বুদ্ধিই যথেষ্ট নয়, অতি অপরিহায্য ছিল সত্য ঘটনার পক্ষে বিচারকের সে আদালতে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্যদানের বিষয়টিও।

নইলে ব্যর্থ হয় ন্যয় বিচার। ঠিক একই কারণে জনগণও নিছক নিজ বিবেক-বুদ্ধির উপর ভরসা করে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক রায় দিতে পারে না। সে কাজে ঘটনার পক্ষে সত্য সাক্ষী চাই। সে সাক্ষী পেশ করে ইতিহাসের লেখকেরা। বাংলাদেশে সে কাজটি সঠিক ভাবে হয়নি-এটা বলব না।

বরং বলব যারা সঠিক ইতিহাস লিখেছেন তারা মানুষের কাছে অচেনা। একটি বিশেষ মহল তাদের নাম পর্যন্ত মুখ নেন না। এই কারণেই বছরের পর বছর ধরে রাজনীতি ও প্রশাসনের ন্যায় প্রচন্ড দূর্নীতি চলছে এ ক্ষেত্রটিতেও। পাঁচ বছর পর পর এদেশের ইতিহাসে পরিবর্তন এরই সত্যতা প্রমাণ করে। অনেক ক্ষেত্রেই পরিকল্পিত ভাবে রচনা করেছে বিকৃত ইতিহাস।

আর সেটি ঘটেছে একাত্তরকে নিয়ে। ফলে জনগণ অর্থাৎ সাধারণ মানুষেরা পদে পদে ব্যর্থ হচ্ছে সঠিক ইতিহাস জানতে। আমাদের আজকের এই নোটটি আমাদের দেশের ইতিহাসের জানা অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে একটির নির্লজ্জ মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে এক নীরব সত্যের সাক্ষ্য দিবে। এই কারণেই আমাদের আজকের এই নোটটির নামকরণ করা হয়েছে "সত্যের সাক্ষ্য"। শুরুতে নিচের এই ছবিটি দেখুন।

খুবই পরিচিত একটি ছবি। মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত প্রায় সব সাইটেই রয়েছে। এমনকি 'জেনোসাইড বাংলাদেশ' সাইটের প্রথম পাতাতেই ছবিটি রয়েছে। এছাড়াও আরো নানা যাগায় ছবিটি পাওয়া যাবে। যেখানে সাথে আরো বলা হয়ে থাকে, ১৯৭১ সালে এক পাকিস্তানী সৈন্য একজন বাঙালীকে পরীক্ষা করছে বাঙ্গালীটি মুসলিম নাকি হিন্দু।

View this link এখন দৃষ্টি কিছুটা সময়ের জন্য অন্য দিকে নিয়া যাক। নিচে ডান পাশের ছবিতে যেই লোকটিকে দেখছেন তিনি হলেন একজন ভারতীয় ফোটোগ্রাফার কিশোর পারেখ। উনিই এই ছবিটি তুলেছেন। প্রশ্ন হল তিনি এই ছবিটি ঠিক কিভাবে তুলেছিলেন? View this link এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য উনার রচিত "BANGLADESH A BRUTAL BIRTH" বইটিতে দৃষ্টিপাত করা যাক। এই বইটিতে তিনি যেই ছবিটি দিয়েছে তা হলোঃ View this link এবার উপরের প্রথম ছবির দৃষ্টিপাত করা যাক।

ঠিক ধরেছেন। উপরের ছবিটি বইটির এই মূল ছবি থেকে এডিট করে তৈরী করা হয়েছে এবং উপরোক্তভাবে প্রচার করা হয়ে আসছে বছরের পর বছর ধরে। এই মূল ছবি সম্পর্কে কিশোর পারেখ অবাক করার মত তথ্য দিয়েছেন তার বইটিতে। বলা যায় রীতিমত হাঁটে হাড়ি ভেঙ্গে দিয়া। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশের যে সব মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের উপর ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনী অত্যাচারের এক দৃশ্য এটি।

ছবিটি এক ভারতীয় সৈন্য কর্তৃক এক বাঙালীকে পরীক্ষা করছে সে পাকিস্তানী স্পাই কিনা যে লুঙ্গির ভিতর অস্ত্র লুকিয়ে রাখতে পারে। এই ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন- Indian Troops Grimly round up villagers suspected to be Pakistani spies they peer into Lungi in search of weapons. বইটির ছবিতে যেই স্থান দেখতে পাচ্ছেন ঠিক সেই স্থানের অন্য একটি এঙ্গেল থেকে তোলা আরেকটি ছবি দেখুন নিচে যেখানে একজন ইন্ডিয়ান আর্মি শরনার্থীদের উপর লাথি মারছে। সেই সাথে মিলগুলো খেয়াল করুন। View this link পাকিস্তানী সৈন্যরা একাত্তরে ভয়াবহ নৃশংসতা চালিয়েছে, নারী ধর্ষণ করেছে এবং এরকম আরো অনেক অপকর্ম করেছে যেগুলোর ভূড়ি ভূড়ি প্রামাণ্য দলিল আছে। কিন্তু তাই বলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বর্ণণা করতে গিয়ে আমাদের দেশের যে সব মানুষ ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল উপর ইন্ডিয়ান আর্মির অত্যাচারের ঘটনাবলী লুকায়িত করার জন্য বছরের পর বছর ধরে ভারতীয় সৈন্যের লুঙ্গি খুলে পরীক্ষাকে পাকিস্তানী সৈন্য বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা একমাত্র নির্লজ্জ ও বিবেকহীন মানুষ ছাড়া আর কেউই করতে পারে না।

আমরা যেমন এখন পর্যন্ত জানিনা এর পিছনে কোনো রাজনৈতিক কারণ আছে কিনা ঠিক তেমনি এও জানি না এরকম আরো কোনো মিথ্যাচার লুকায়িত আছে কিনা ইতিহাসের পাতায়। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।