আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাদ্দাফি সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বীর নয়, তার চতুর সহযোগি.

১. লিবিয় নেতা গাদ্দাফী হলেন, স্বৈরাচারী এক নায়ক, সাম্রাজ্যবাদের চতুর সহযোগি এবং সেদেশের জনগণের প্রধান শত্রু। তাকে সাম্রাজ্যবাদের দালাল কিংবা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বীর হিসেবে চিহ্নিত করার তত্ত¡ বিভ্রান্তিকর। সাদ্দাম হোসেনসহ আরব ভ‚খন্ডের শাসকরা কেউই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বীর নয়, আবার সাম্রাজ্যবাদের চাকর বাকরও নয়। গাদ্দাফী বিরোধী লড়াই সীমাবদ্ধতাসহ গণতান্ত্রিক, ন্যয় সঙ্গত এবং প্রগতিশীল। গাদ্দাফী বিরোধী লড়াই আরব গণজাগরণের অংশ।

গাদ্দাফীর পরিনতি মিশরের হোসনে মোবারকের কিংবা তিউনিসিয়ার বেন আলীর মত হতে বাধ্য। তার উ”েছদ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। লিবিয়ায় গাদ্দাফী বিরোধী সশস্ত্র লড়াইকে সহায়তা করার নামে বন্ধুর বেশে সাম্রাজ্যবাদের আগমন হস্তক্ষেপের সামিল। মার্কিন ও তার মিত্রদের সহায়তার নামে হস্তক্ষেপ সত্ত্বও লিবিয়ায় জনগণের গাদ্দাফী বিরোধী লড়াই হল প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রাম। গাদ্দাফীকে উচ্ছেদ হল সেখানকার জনগণের প্রধান রাজনৈতিক করণীয়।

একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইকে গাদ্দাফী বিরোধী লড়াইয়ের অধীন¯’ করা রাজনৈতিক দায়িত্ব। সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক বাহিনীর উপস্থিতির বিরোধীতা এবং তাদের অবিলম্বে দেশত্যাগের জন্য লিবিয়ার জনগনকে আওয়াজ তুলতে হবে। গাদ্দাফীর পতনের পর যদি সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক বাহিনী সেদেশে থেকে যায় এবং ক্ষমতা গ্রহণ করে কিংবা কারজাইয়ের মত অনুগতদের গদিতে বসায় তাহলে প্রধান শত্রæ পরিবর্তন হয়ে যাবে। সক্ষেত্রে গাদ্দাফীর বদলে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইটাই প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রামে পরিণত হবে। এই মুহুর্তে সাম্রাজ্যবাদের প্রতক্ষ উপস্থিতি সত্তে¡ও গাদ্দাফী সরকারের উচ্ছেদের লড়াই থেকে এক চুল সরে আসা মানে প্রধান রাজনৈতিক লড়াইকেই দুর্বল করে দেয়া।

মনে রাখা দরকার, একটা দেশের জনগণ যখন লড়াইয়ে সামিল হয়, সে লড়াকু জনগণ ও তাদের দেশকে কেউ হজম করতে পারে না। সে যতবড় শক্তিই হোকনা কেন। জনগণের ওপর আস্থা রাখা দরকার, জনগণই সকল প্রকার শত্রুকে পরাস্ত করতে সক্ষম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুর বেশে ভারতের আগমন হয়েছিল, তারাও বাংলাদেশে সৈন্য রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের জনগণ একটি লড়াইয়ে ব্যাপৃত ছিল।

এ লড়াকু জনগণকে হজম করা ভারতে পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিল না। ওই লড়াইয়ে ভারতে আগমনকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশের জনগণের অনেকেই ভারতের আগমনকে স্বাগত জানিয়েছিল। তদ্রুপ, লিবিয়ার জনগণের অনেকে মার্কিন ও ন্যাটোর আগমনকে স্বাগত জানিয়েছিল। এর অর্থ এই নয় যে, তারা সেদেশে মার্কিন ও ন্যাটোর আগ্রাসন খবরদারি মেনে নেবে।

সেক্ষেত্রে লড়াকু জনগণের অস্ত্র বুমেরাং হয়ে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে। সেটা ইরাক কিংবা আফগানিস্তান থেকেও আরো ভয়াবহ হতে বাধ্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের আগমনকে আগ্রাসন হিসেবে উল্লেখ করে যারা ওই মুহুর্তে ভারতকেই প্রধান প্রতিপক্ষ বিবেচনা করেছিল তারা প্রধান রাজনৈতিক সংগ্রাম থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ২. আরব গণজাগরণ তিউনিসিয়া ও মিশর হয়ে এখন লিবিয়া ইয়েমেন সিরিয়া ও কুয়েতে ছড়িয়ে পড়েছে। পর্যায়ক্রমে ওই ভ‚খন্ডের সকল দেশেই ছড়িয়ে পড়ার অভুতপূর্ব সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

আরব শাসকদের হৃৎকম্পন শুরু হয়ে গেছে। এশিয়া আফ্রিকার প্রতিক্রিয়ার শেষ ঘাটি সৌদি আরবে এমন গণজোয়ারের অপেক্ষা করছে বিশ্ব। আরব জাগরণ বিশ্বের খাদ্য সংকটের ফলাফল নয়। দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলে চেপে বসা বুর্জোয়া স্বৈরতন্ত্র ও সামন্তীয় স্বৈরতন্ত্রের জগদ্দল শাসনকে উচ্ছেদ করতে সেদেশের জনগণ উঠে দাড়িয়েছে। সারা পৃথিবীর গণতন্ত্রমনা মানুষ একে সমর্থন করছে।

আরব জাগরণ দেখিয়ে দিচ্ছে, স্বৈরাচারী এক নায়কের যুগ শেষ। মানুষ আর কোন স্বৈরাচারী শাসনকে মেনে নেয়না। কমিউনিস্ট শাসনের নামে চীনেও একদলীয় শাসন মেনে নেবে না জনগণ। আরব অঞ্চলের সামন্তীয় ও বুর্জোয়া একনায়ক শাসকরা জনগণের ওপর স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের সহযোগিতায় অবাধে জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। জনগণের সম্পদে ভোগবিলাস আর অপচয়ে এরা বিশ্বে সবচেয়ে ঘৃণিত।

এরা জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারী একনায়ক, সাম্রাজ্যবাদের সহযোগি ও সেই দেশের জনগণের প্রধানশত্রু। এরা সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে গাটছড়া বেধে জনগণের সম্পদ লুট ও নিজেদের রক্ষা করতে চায়। ইতিহাস শেখায়, জনবিচ্ছিন্ন স্বৈরাচারি একনায়কতন্ত্র সবসময় নিজ দেশে বর্হিশত্রুর হামলার শর্ত তৈরি করে। সে দেশ যদি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধশালী হয়, তাহলে সে হামলার আশঙ্কা বহুগুনে বেড়ে যায়। জনগনকে এভাবেই ওরা হুমকির ঝুকির মধ্যে ঠেলে দেয়।

যে সাম্রাজ্যবাদকে তারা রক্ষা কবজ মনে করে, বন্ধুর বেশে সেই সাম্রাজ্যবাদ শত্রুর অধিক কিছু নয়। সাম্রাজ্যবাদকে নিজেদের রক্ষা কবচ বলে ধরে নিলেও তারা কখনোই এদের রক্ষা করতে পারে না। উল্টো নিজের জনগণ ও দেশকে সাম্রজ্যবাদী হুমকির অসহায় শিকারের মধ্যে রেখে দেয়। ইরাকের জনগণ যদি একনায়ক সাদ্দাম হোসেনকে উচ্ছেদ করত, তাহলে কখনোই সেদেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন সম্ভব হত না। কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও একই কথা আফগানিস্থানের ক্ষেত্রেও খাটে।

আরব শাসকরা একদিকে ধর্মীয় উম্মদনাকে কাজে লাগিয়ে ইসরাইল বিরোধী ভড়ং দেখায় অপরদিকে জনগণ যখন ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়ে, তখন আরব শাসকরা ইসরাইলের বন্ধু ও সহযোগি সাম্রাজ্যবাদী মোড়লদের সঙ্গে মদের গøাসে চেয়ার্স করে। তাদের এমন দ্বৈত চরিত্র সে অঞ্চলে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে দাড়াতে দেয় না এবং সমস্যাকে চিরস্থায়ী করে তোলে। ফলে মার্কিন খবরদারির ও ইসরাইলি আগ্রাসন চিরস্থায়ী রূপ পেয়ে যায়। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ অবাধে লুন্ঠনের জন্য সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে সহজ হয়ে যায়, তাদের আধিপত্য অনিবার্য করে তোলে। এ কারণে জনগণের সম্পদ রক্ষা, সাম্রাজ্যবাদী হুমকি আগ্রাসন ও খবরদারির অবসান এবং ইসরাইলি সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য জনগণের শাসন কায়েম জরুরি, তার পূর্বশর্ত হল আরব দেশের শাসকদের উচ্ছেদ।

আমাদের ধারণা, আরব জনগণ এই সত্যটি জীবন্তভাবে উপলব্ধি করেছেন। তারা সে অঞ্চলে মার্কিন আগ্রাসনকে উচ্ছেদ করতে নিজ দেশের শাসকদের উচ্ছেদের মহান সংগ্রামে ব্যাপৃত হয়েছেন। আরব জাগরণ ইতিহাসের সেই দায় মেটাতে যাচ্ছে। আরব ইসরাইলি সমস্যা একই চক্রবিত্তে ঘুরছে। বাঘা বাঘা মার্কিন ক‚টনৈতিকরা দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা নিয়ে সাপ লুডু খেলছেন।

মার্কিন মুল্লুকে সরকার বদল হয়, কিš‘ আরব ইসরাইল সমস্যার সাপলুডু খেলা বন্ধ হয়না। আরব গণজাগরণ সে অঞ্চলে আরব ইসরাইলি সমস্যার সাপ লুডু খেলার প্রহসনের অবসান ঘটাবে। আরব ভ‚খন্ডে সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন হামলা হুমকি যেখানে অনবার্য হয়ে ওঠে, সেখানকার শাসকরা আপাত সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাড়াতে বাধ্য হলেও তারা কোন বিবেচনাতেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নয়। সুতরাং ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ার গাদ্দাফী কখনোই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নন। আরব গণজাগরণ সারা পৃথিবীর পরিবর্তনকে অনিবার্য করে তুলবে।

আরব জাগরণ অনুন্নত বিশ্বকে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, শ্রমিক রপ্তানি করে অর্থনীতি চাঙ্গা করার দিন শেষ। নিজেদের অর্থনীতির চাকা নিজেদেরই ঘোরাতে হয়। আরব জাগরণ এশিয়ার অনুন্নত দেশগুলোতে আরেকটি জাগরণকে অনিবার্য করে তুলবে। এমনকি একনায়কতান্ত্রিক উত্তর কোরিয়া ও চীনের জন্যও উদাহরণ হয়ে থাকবে। ওই গণজাগরণ আরব নাগরিকদের ইতিহাসের দায় থেকে মুক্তি দেবে।

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি দিয়ে সে অঞ্চলের মানুষদের গণতন্ত্রের স্বাদ দিতে সক্ষম হবে। সভ্যতার ভরকেন্দ্র প্রতিচ্য থেকে প্রাচ্যে নিয়ে আসার শর্ত তৈরি করবে। ## ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।