আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দিনান্তের দিনগুলি

কবিরাজ বাড়ির গলি। পলাশপাড়ায় আমরা যে বাড়িটাতে থাকতাম তার দুটি গলি আগে ডান দিকে যে গলিটা গেছে তার নাম। আগে মনে করতাম ওই গলির মধ্যে যে বিশাল শাদা রঙের বাড়িটা আছে সেটাই কোন কবিরাজের বাড়ি। আর সেই বাড়ির মালিকের নাম অনুসারেই এর নাম হয়েছে কবিরাজ বাড়ির গলি। ছোট বেলায় আমরা যখন এ পাড়ায় এসেছি, তখন এক লোককে দেখতাম।

বয়স্ক, শুকনা পাতালা, ফর্সা, কেমন কাটা কাটা চেহারা, শাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি পরতেন। মাঝে মাঝে বিকালে গলির মুখে চায়ের দোকানে বসে রাশভারি গলায় কথা বলতেন। আমি মনে করতাম ইনিই হয়তো কবিরাজ। অবশ্য আমার ভুল ভাংতে বেশিদিন সময় লাগেনি। তিনি ছিলেন ভুমি রেজিস্ট্রি অফিসের কানুনগো।

কয়েকদিন পরে তিনি যখন মারা গেলেন, তখন জানতে পারলাম তার নাম ছিলো আজহারউদ্দিন। মুসলিম হয়েও যে ধুতি যপরা যায় তখন তা বুঝতে পারিনি। কানুনগো চাকরির কি মানে তা আজও বুঝতে না পারলেও ধুতি পরার সাথে ধর্মের যে কোন সম্পর্ক নেই তা এখন বুঝতে পারছি। আজহারউদ্দিনের তিন ছেলে আর পাঁচ মেয়ের বিশাল সংসার। দুই ছেলেই বিদেশে থাকেন।

মেয়েরাও তাদের স্বামীদের সাথে বেশিরভাগই দেশের বাইরে থাকেন। যারা দেশে থাকেন তারাও তেমন একটা বাড়িতে আসেন না। বকুল ভাই। তিনিই বাড়ির রাজা, উজির নাজির, প্রজা। ছোট ছেলে বলে, অতি আদরে হোক বা বাবা ভাই-বোন না থাকায় আদরের অভাবে হোক, তাকে এক কথায় এই জামানার বখে যাওয়া সন্তান বলা যায়।

তিনি ঠিক কি করতেন বা আদৌ কিছু করতেন কিনা তা আমার জানা ছিলোনা। তিনিও তার বাবার মতো গলির মুখে চায়ের দোকানে মাঝে মাঝে বসতেন। তবে কথাবার্তা তেমন একটা বলতেন না। হঠাৎ একটা সিগারেটে আগুন ধরিয়ে মুরুব্বিদের মুখের ওপর ধোয়া ছড়িয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে থাকতেন। মনে হতো তাদের জন্যই তার যতো সমস্যা।

অবশ্য তার কি সমস্যা তাও আমার জানা ছিলোনা। তার কোন কিছুই আমাদের তেমন একটা জানা ছিলোনা। আর জানার কোন আগ্রহও ছিলোন। কারণ আমাদের ছোটদের দেখলেই তিনি নানাভাবে জ্বালাতন করতেন। শুধু শুধুই আমাদের বকা দিতেন।

এজন্য আমরা তাকে পিছনে ‘বকা ভাই’ বলে ডাকতাম। একদিন কিভাবে জানি তিনি ‘বকা ভাই’র বিষয়টি জেনে যান। সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, কবিরাজ বাড়ির গলির মুখে আসতেই দেখি বকা ভাই বসে আছেন। আমাদের দেখেইে চোখ মুখ খিচিয়ে গালি দিয়ে কাছে ডাকলেন। আমার সাথে যে দুই বন্ধু ছিলো তারা কোন ফাঁকে ভেগেছে টের পাইনি।

আমার বরাবর যা হয়, তাই হলো। পা দু’টো শক্ত হয়ে গেলো। মনে হলো রাস্তার ভিতর থেকে দুটো হাত বেরিয়ে আমার পা দু’টো ধরে আছে। ভয়ে আমার প্যান্ট ভিজে যাওয়ার মতো অবস্থা। আমাকে আর কষ্ট করে তার কাছে যেতে হলোনা।

তিনি নিজেই আমার কাছে এসে ডান কান মলে বাম গালে কষে একটা চড় দিয়ে বললেন ‘ ... এর বাচ্চা, আমি বকাভাই না। এর পর কোনদিন যদি শুনেছি.....’। এর পর থেকেই তিন আমার চির শত্রু। আমি নানান সময় প্লান করি কিভাবে এর প্রতিশোধ নেব। কিন্তু কোন কিছুতেই শেষে পর্যন্ত সাহসে কুলায়না।

তারপর সিদ্ধান্ত, বড় হই তারপর দেখে নেব। কিন্তু এর কয়েকদিন পরই হঠাৎ করে আমি তার খুব প্রিয় পাত্র হয়ে গেলাম। এর ঠিক কি কারণ আমার বুঝে আসিনি। রাস্তায় দেখা হলেই, হাসি মুখে কাছে ডেকে বলেন ‘কিরে সেদিনের কান মলায় খুব ব্যথা পেয়েছিস। বুঝলি মাথাটা খুব গরম হয়ে গিয়েছিল।

’ এর পর শিশির কাকার দোকান থেকে চকলেট, লাঠি বিস্কুট, আইসক্রিম। আমারতো চোখ চরক গাছ। আমার বন্ধুরাও এসবের কিছু কিছু ভাগ পেতো। এখন প্রায় প্রতিদিনই বকুল ভাইকে গলির মুখের দোকানের সামনে দেখা যায়। প্রতিদিইন স্কুল থেকে ফেরার পথে আমাকে জোড় করে কিছুনা কিছু খাওয়ায়।

আমি খেতে চাইনা তারপরেও জোর করে খাওয়ায়। খেতে ইচ্ছে না করলেও ভয়ে ভয়ে খাই। আবার কানমলা দেয় কিনা এই ভয়ে। কয়েকদিন পরই মূল রহস্য উদঘাটন হলো। ওই দিন কি কারণে জানি তারাতারি স্কুল ছুটি দিয়েছে।

বন্ধুরা বই নিয়েই মাঠে গেছে খেলতে। আমি আর সব বিষয়ের মতো খেলাধুলায়ও পিছিয়ে থাকায় মাথা নিচু করে বাড়িতেই ফিরছিলাম। প্রতিদিনের মতো আজও বকুল ভাই আমাকে একটা চকলেট হাতে ধরিয়ে দিলেন। তবে আজকেরটা অনেক দামি। ক্যাটবারির ডেইরি মিল্ক চকলেট।

আমি এর আগে শুধু টেলিভিশনে এর বিজ্ঞাপন আর দোকানে কাচেঁর বাক্সে সাজিয়ে রাখতেই দেখেছি। বকুল ভাই আমাকে দোকান থেকে একটু পাশে চিপায় নিয়ে গেলেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। চকলেট দিয়ে আবার কান মলা দেবে নাতো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি তার পকেট থেকে ভাজ করা কেমন যেন রঙিন একটা কাগজ বের করে আমার হাতে গুজে দিলেন।

‘এইটা তোর বোনকে দিস, ও সব বুঝবে। ’ আমার বুঝতে বাকি রইলো না। এটা প্রেমপত্র। কিন্তু আমার বোন কেবল ক্লাস থ্রিতে পড়ে। ও এর কি বুঝবে তার কিছুই বুঝলাম না।

আমি মিন মিন করে বললাম ওতো অনেক ছোট। আরে বেকুব তোর শিলা দি’কে দিবি। এখন বুঝলাম মূল ঝামেলা কোথায় পাকিয়েছে। শিলা দি আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে। এবার কলেজে ভর্তি হয়েছে।

সকালবেলা শাদা ইউনিফর্ম পড়ে যখন স্কুলে যায় তখন তাকে সত্যিই পরীর মতো লাগে। আমি বড়ো হলে তার সথে নিশ্চয়ই প্রেম করতাম। অবশ্য শিলা দি কোন ছেলেকে তেমন পাত্তা দেয়না। আমি ছোট তাই হয়তো আমার সাথে দু’একটা টুকটাক কথা বলে। আমি বিভিন্ন ছুতোয় তার পাশে ঘুরঘুর করার চেষ্টা করি।

তার ফাই ফরমায়েশ খাটি। কেমন যেন একটা ভালো লাগার আবেশ জড়িয়ে থাকে। তার জন্য দোকান থেকে চুলের ফিতা কিনি। কলেজে যাওয়ার সময় রিক্সা ডেকে দেই। এজন্যই হয়তো বকুল ভাই ভেবে বসে আছেন শিলা দি আমার বোন।

আদর আপ্যায়নের লোভে এবং আবার কান মলা খাওয়ার ভয়ে সত্য কথাটা বলতে গিয়েও গিলে ফেললাম। আমি জামার বুক পকেটে বকুল ভাইর রঙ্গিন প্রেমের চিঠি আর হাতে ক্যাটবারি চকলেট নিয়ে বুক ধরফর অবস্থায় বাড়ি ফিরলাম। আমার পক্ষে এই চিঠি শিলা দি’কে কোনভাবেই দেয়া সম্ভব না। শিলা দি অসম্ভব রাগি স্বভাবের মেয়ে। তাকে আমি খুব কম হাসতে দেখেছি।

আমি বুঝিনা এতো সুন্দরি একটা মেয়ে এতো রাগি হয় কিভাবে। বকুল ভাইর কান মলা খাওয়ার ভয়ে বিকেলে বাড়ি থেকেও বের হইনি। খেলতে না পারলেও বন্ধুদের খেলা দেখতে মাঠে যাই। তাও যাইনি। নিজে কোনদিন কাউকে প্রেমপত্র দিতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।

কিন্তু বকুল ভাইর প্রেমপত্র কি করবো তা নিয়ে বেকায়দায় পরলাম। সারা রাত কেটে গেলো দুশ্চিন্তায়। পরদিন স্কুলে যাওয়ার আগে বকুল ভাইর কান মলা খাওয়ার ভয়ে কাপা কাপা হাতে চিঠিটা শিলা দি’র হাতে দিলাম। তিনি চোখ কুচকে বললেন ‘এটা কি’? আমি গলা যতোটা সম্ভব খাদে নিয়ে বললাম, ‘বকুল ভাই তোমাকে দিয়েছে’। ‘তুই কি আজকাল ডাক পিয়নের কাজ শুরু করেছিস’? আমি কি করে বুঝাই, কি বিপদে পড়ে এই চিঠি আমি তাকে সরবরাহ করছি।

আমি কোন জবাবই তাকে দিতে পারলাম না, শুধু কাতর চোখে তাকিয়ে থাকা ছাড়া। শিলা দি আর কোন কথা বড়ালেন না। তাচ্ছিল্যের সাথে চিঠিটা টেবিলের এক কোনে ফেলে রেখে তিনি তার পড়ায় মন দিলেন। আমি আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে এবার আরো দুশ্চিন্তায় পরলাম। ভয়ে ভয়ে স্কুলে যাই।

ফেরার পথে কবিরাজ বাড়ির গলির সামনে থেকে পাড়লে দৌড়ে আসি। কিন্তু কপাল ভালো আজ বকুল ভাই সেখানে নেই। পরদিনও ছিলেন না। কিন্তু প্রতিদিনই থাকবেন না, তা কি হয়। তৃতীয় দিন তিনি উদয় হলেন।

যথারীতি একটা চেয়ারে বসে আরেকটা চেয়ারে পা তুলে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ছিলেন। তাকে দেখেই আমার হাত পা জড়ো হয়ে আসে। আমাকে হাসিমুখে ডাক দিলেন। ছোটকাল থেকেই মুখস্থবিদ্যা কম ছিলো। তারপরও যে কয়টা দোয়া জানতাম তা মনে মনে পড়তে পড়তে কাছে গেলাম।

‘কিরে চিঠিটা দিয়েছিলি’? আমার মুখ থেকে কথা বেরোয় না। শুধু হ্যা সূচক মাথা দোলাই। ‘সে কি বলেছে’? এবার মাথা দুলাতেও কষ্ট হয়। কি বলবো ভেবে পাইনা। বলতে পারিনা চিঠিটা সে ফেলে দিয়েছে।

আমি মিন মিন করে কি বললাম নিজেও বুঝতে পারলাম না। বকুল ভাইর চেহারা চোখের পলকে পাল্টে যায়। ‘তুই সত্যিই চিঠি দিয়েছিলি’? আমি জোড়ে জোড়ে মাথা নাড়াই। কিন্তু বকুল ভাইর বিশ্বাস হয় না। তিনি চিবিয়ে চিবিয়ে গাল দিয়ে বলেন, ‘...জাদা আমার সাথে চালবাজি।

আজকে যদি চিঠি না দিস আমি তোর কান টেনে ছিড়ে ফেলবো’। বাকি পথ কিভাবে বাড়ি ফিরেছিলাম তা আমার মনে নেই। শুধু মনে আছে বাড়িতে ফিরে শিলা দি’র প্রায় পায়ে ধরে বলেছিলাম ‘আমাকে বাচাও’। পরদিন শিলা দি আমাকে দিয়ে বকুল ভাইকে একটা চিঠি দিয়েছিলেন। ভাজ করা চিঠি গাম দিয়ে আটকানো।

চিঠি পড়া সম্ভব ছিলোনা। আর গাম খোলার সাহস আমার ছিলোনা। চিঠি পাওয়ার পরপরই বকুল ভাই কেমন যেন পাল্টে গেলেন। এখন আর নিয়মিত গলির মুখে বসেন না। তাকে আজকাল বেশ স্মার্টভাবে চলতে দেখা যায়।

মাঝে মাঝে বেশ পাগলামিও করেন। শিলা দি একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে একটা ছেলে তাকে যেন কি বলেছিলো। সেই ছেলেটাকে বকুল ভাই পারলে মেরে ফেলেন। আবার এক রিক্সাওয়ালা শিলা দি’র কাছে বেশি ভাড়া চেয়েছিলো। বকুল ভাই তাকে এমন চোট নেন, যে শেষ পর্যন্ত তাকে ভাড়া না দিয়েই তাড়িয়ে দেন।

আবার মাঝে মাঝে তাকে উদাসভাবে বসে থাকতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে হঠাৎ উধাও হয়ে যান। আবার অনেকদিন পর হয়তো দেখা যায় আগের মতো চেয়ারে পা তুলে বসে আছেন। আমাকে আর আগের মতো ডাকেন না বা কিছু খাওয়ায়-টাওয়ায় না। আমি এখন স্বাভাবিকভাবেই স্কুলে যেতে পারি।

তবে শিলা দি’র মধ্যে কোন পরিবর্তন হয়নি। তিনি আগের মতোই সকালে রিক্সায় চেপে কলেজে যান। কলেজ থেকে ফিরে প্রাইভেট। আবার বাড়িতে এসে পড়াশুনা, এই নিয়েই আছেন। একদিন দেখি বকুল ভাই শিলা দি’দের বাড়িতে।

কি নাকি এক পিকনিকের আয়োজন করেছেন। মহল্লার সবাইকে স্বপারিবারে উপস্থিত থাকতে হবে। পরিবার প্রতি পাঁচশ টাকা চাঁদা। শুধু শহিদ চাচা (মানে শিলা দি’র বাবা) তার খুব পছন্দের বলে তাদের দুইশ’ টাকা ধরা হয়েছে। শহিদ চাচার পিকনিকে তেমন কোন আগ্রহ দেখা গেলোনা।

আমার যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও আমার বাবা টাকা খরচের বিরুদ্ধে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত পিকনিক কেন যেন আর হয়নি। বকুল ভাই প্রায়ই এরকম কান্ড করতে লাগলেন। একদিন কি কারণে শহিদ চাচার সাথে বকুল ভাইর খুব বেধে গেলো। গলির মুখে শহিদ চাচা বকুল ভাইকে খুব বকা ঝকা করলেন।

সেখানে ভীর জমে গিয়েছিলো। যে বকুল ভাইর সাথে এলাকার মানুষ ভয়ে কোন কথা বলেনা। সেই বকুল ভাইকে এতো বকা দেয়ার পরও তিনি কোন রা করেন নি। সেদিন শহিদ চাচা বাড়িতে এসেও অনেক রাগারাগি করলেন। শিলা দি’কেও কেন যেন খুব বকলেন।

হঠাৎ করে আমাদের ঘরে এসে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে বাবার সাথেও বাধিয়ে দিলেন। বাবাকে আমি কখনো ঝগড়া করতে দেখিনি। বিদ্যুৎ বিলের সমস্যা কোথায় এই নিয়ে তিনিও পাল্টা জবাব দিলেন। বাবা সরকারি দপ্তরের তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী ছিলেন। দরিদ্রদের অর্থ থাকেনা এজন্যই হয়তো আত্মমর্যাদাবোধ বেশি থাকে।

পরদিনই বাবা নতুন ভাড়াবাসা খুজতে লাগলেন। আমার সামনে পরীক্ষা ছিলো। অসুস্থ মেঝ খালা ডাক্তার দেখাতে আমাদের বাসায় উঠেছেন। বাসায় হাসপাতালের মতো অবস্থা। তার সাথে তার ছোট ছোট তিনটি ছেলে মেয়ে।

সারাদিন বাজার, ডাক্তারখানা, ফার্মেসি এসব করতে করতেই দিন যায়। বকুল ভাই আজকাল মাঝে মাঝে আমাকে চকলেট আইসক্রিম খাওয়ায়। তবে কোন চিঠি দিতে বলে না। এখন আর তাকে আগের মতো ভয় লাগে না। মাঝে মাঝে বেশ ভালো ব্যবহারই করেন।

আবার মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যান। একবার অনেকদিন পর ফিরলেন। দাড়িগোফে ভরপুর। জামাকাপরও কেমন যেন ময়লা ময়লা। আগের মতো চেয়ারের উপর পা তুলে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ছিলেন।

তবে এবার তার চোখে কেমন যেন একটা হাসি ছিলো। যে হাসি বোঝার মতো বয়স তখনো আমার হয়নি। বাবার চাকরির ট্রান্সফারের জন্য আমাদের বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছিলো। সেদিন ভোরে ট্রাকে মালামাল তুলে আমরা রেডি হই যাওয়ার জন্য। শহিদ চাচা বেরিয়ে এসেছিলেন বাবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য।

আমাদের যাওয়ার তাড়া ছিলো। সবার মধ্যেই ব্যস্ততা। তখনো আলো ফোটেনি। চারদিকে নিরবতা। শুধু ট্রাকের ড্রাইভার, হেল্পার আর মালামাল তোলার জন্য আসা দু’জন কুলির মধ্যে চিৎকার চেচামেচি।

হঠাৎ করেই কবিরাজ বাড়ির গলির দিক থেকে কেমন যেন চিৎকার ভেসে আসে। এই সকালে চিৎকার শুনলেও আমার বাবা বা শহিদ চাচার কারোরই সেদিকে তেমন কোন আগ্রহ ছিলোনা। তারপরও মানেুষজনের ছুটোছুটি দেখে বাবা এগিয়ে যান। পিছু নেই আমিও। এর মধ্যে কবিরাজ বাড়ির সামনে ভির জমে গেছে।

একটা পুলিশের গাড়িও এসেছে। ভির ঠেলে আমরা ভিতরে ঢুকলাম। শাদা দালানের অনেক জায়গাতেই চুন পলেস্তারা উঠে গেছে। জানালার কপাটও অনেকটা ভাঙা। নিচে যে ঘরের জানালার ধারে অনেক মানুষের ভির সেখানে গিয়ে মাথা গলিয়ে ভিতরে তাকালাম।

কিছুই দেখতে পেলাম না। শুধু অন্ধকারে দেখলাম মেঝে থেকে কিছুটা উপরে শূণ্যে দুটো পা একসাথে ঝুলছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবা আমার চোখ চেপে ধরে বাইরে নিয়ে আসলেন। আমি আর বাবাকে কিছু জিজ্ঞাসা করিনি। আমাদের খুব তাড়া ছিলো।

ট্রাকে মালামাল উঠানোর শেষ হলে রোদ উঠার আগেই আমরা রওয়ানা দেই। নতুন জায়গায় নতুন স্কুলে ভর্তি হই আমি। নতুন বাসা। নতুন বন্ধু। নতুন বাড়িওয়ালার মেয়েটি আমার চেয়ে ছোট।

তাকে দেখলে কেমন যেন মনে হয়। একবার মনে হলো তাকে একটা চিঠি দেই। বকুল ভাইর মতো রঙিন চিঠি। বকুল ভাই চিঠিতে কি লিখেছিলো। শিলা দি’ইবা তাকে কি বলেছিলো।

তাদের মধ্যে কি কিছু হয়েছিলো। বকুল ভাই কেনো মাঝে মাঝে উদাস হয়ে যেতেন। তার চোখে অমন হাসি ছিলো কেনো। কেনোইবা তিনি হঠাৎ নিজেকে অমন করে শেষ করে দিলেন। জানি এসব প্রশ্নের কখনোই উত্তর পাবোনা।

তারপরও জানতে ইচ্ছা করে। ## ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।