আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুবাদ ধারাবাহিক সায়েন্স ফিকশন: আইজাক আসিমভের কারেন্ট অব স্পেস। (৪র্থ পর্ব)

দিল ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা। প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব শহরের দুটি ভাগ। আপার সিটিতে থাকে অভিজাত মানুষরা। লম্বা লম্বা থাম সেটাকে ধরে রেখেছে আকাশের কাছাকাছি। লোয়ার সিটি, যেটা আপার সিটির ঠিক নিচেই, তাতে থাকে অন্যান্য কর্মীর দল, যাদের সেবার দরকার হয় অভিজাতদের।

ডাক্তারের চেম্বারে যখন রিককে নেয়া হল, তখন অনেকটা জোর করেই সাথে থাকে ভেলোনা। এরকম অচেনা জায়গায় রিককে চোখের আড়াল করতে চায় না সে। ডাক্তার একের পর এক ভয়ানক চেহারার যন্ত্র দিয়ে রিককে পরীক্ষা করতে থাকে, আর ভয়ে ছটফট করতে থাকে ভেলোনা। এ পর্যায়ে যাক্তার যখন রিকের মাথাটা একটা যন্ত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল আর সেই যন্ত্রটা একটা আলো ছড়াতে শুরু করল ক্রিট পোকার মত, আর থাকতে পারলনা সে, লাফ দিয়ে উঠে রিককে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে সেই ভযানক যন্ত্রের ভেতর থেকে। ডাক্তার তখন বাধ্য হয়ে তার দুই সহকারীকে ডেকে তাকে সরিয়ে নিতে বলে।

আধা ঘন্টা পরে গম্ভীর মুখে ডাক্তার তারদিকে এগিয়ে আসে, চেহারায় অসন্তোষের ছাপ। ভেলোনা অস্বস্তিতে পড়ে যায় খুব। যদিও ডাক্তার এর চেহারা ও আচরনে একটা নরম ও দয়ালু ভাব আছে, তারপরেও সে একজন অভিজাত। কে জানে কেন সে লোয়ার সিটিতে আসে চেম্বার করতে। ডাক্তার একটা ছোট টাওয়েল এ হাত মুছতে মুছতে সেটা একটা ময়লার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে (যদিও সেটা ভেলোনার কাছে একদমই পরিস্কার মনে হয়) দাড়ায় তার সামনে।

"এই মানুষটার সাথে কোথায় দেখা হয়েছে তোমার?" জানতে চায় ডাক্তার ভেলোনা সতর্কতার সাথে ধীরে ধীরে পুরো ব্যপারটা তাকে খুলে বলে, তবে রিক এর ব্যপারে মেয়র এর হস্তক্ষেপ এর ব্যপার আর প্যট্রোলারদের সাথে ঘটা ঘটনা বাদ দিয়ে। "তাহলে তার বিষয়ে এর থেকে বেশি কিছু জান না তুমি?” জানতে চায় ডাক্তার। "যা জানি, সবই রিককে পাবার পরে। তার আগের কোন কিছূ জানি না। ” এবারে ডাক্তার মুখ খোলে “এই মানুষটাকে সাইকিক প্রোব দিয়ে মগজ ধোলাই করা হয়েছে।

তুমি জান সাইকিক প্রোব কি?” প্রথমে মাথা নেড়ে না বলতে গিয়ে থেমে যায় ভোলোনা, তারপর ভয় পাওয়া কাষ্ঠ স্বরে বলে, "তারা এই কাজটা পাগল লোকেদের উপরে করে, তাই না ডাক্তার?” "...এবং ক্রিমিনালদের উপরেও চালায়, তাদের মন মানসিকতা পরিবর্তন করে দেবার জন্য। তাদের নিজেদের ভালর জন্যই, এই চিকিৎসা তাদের মানসিকভাবে সুস্থ করে তোলে। মনের যেই জায়গাগুলোর প্রভাবে তারা খুনী কিংবা অপরাধীতে পরিনত হয়, সেই জায়গাগুলোকে ছেটে ফেলা হয় এর সাহায্যে। বুঝেছ তুমি?” ভেলোনা বোঝে, তারপরে ফিসফিসিয়ে বলে, রিক কোনদিন কাউকে কোন ক্ষতি করেনি, কাউকে কষ্ট দেয়নি। ” "তুমি ওকে রিক বলে ডাক?“ অবাক হয় ডাক্তার।

"যাই হোক, খেয়াল করে আমাকে বল, তুমি কিভাবে জান রিক আগে কেমন ছিল? কি করেছিল? তার বর্তমান মানসিক অবস্থাতে তার আগের অবস্থা সম্পর্কে কোন কিছু বলা অনেক কঠিন। তার মনকে খুব নিষ্ঠুরতার সাথে কোন রকম সতর্কতা অবলম্বন না করেই ধুয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। এটা বলা কোনভাবেই সম্ভব না তার মনের কতটুকু অংশ পাকাপাকি ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, আর কতটুকু সাময়িকভাবে। আমি যা বলতে চাইছি তার মানে হল, রিক এর কিছু স্মৃতি আর সাধারন কিছু দক্ষতা ফিরে আসবে, ধীরে ধীরে। যেমন কথা বলা আরও কিছু টুকটাক।

কিন্তু পুরো স্মৃতি ফিরে আসবার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। তাকে আলাদা করে রেখে নিয়মিত পর্যবেক্ষন করতে হবে। ” "না না, ও আমার সাথেই থাকবে। বিশ্বাস করুন ডাক্তার, আমি ওর খুবই যত্ন নেই। ওর কোন ক্ষতি হবে না।

” আবারো তার মুখে অসন্তোষ এর ছায় পড়ে, তবে ডাক্তার আবার নরম সুরে বলেন, "আমি আসলে তোমাকে নিয়ে চিন্তা করছি। হয়ত ওর মন থেকে সব খারাপ সরে যায়নি, আস্তে আস্তে মনে পড়তে থাকলে ও তোমার ক্ষতি করতে চাইতে পারে। ” সেই মুহুর্তে নার্স রিককে নিয়ে ফিরে এল। তাকে দেখা গেল বাচ্চাদের মত গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আর মুখ দিয়ে শব্দ করে রিককে শান্ত করার চেষ্টারত। দু হাতে মাথা চেপে ঘরে রিক দাড়িয়ে থাকে দরোজার কাছে, বুঝতে পারছে না কি করবে।

তার দৃষ্টি ভেলোনার দিকে পড়তে সে যেন নতুন জীবন ফিরে পেল। তার দিকে হাত বাড়িয়ে সে কেদে ওঠে ”লোনা..!” ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ভেলোনা, নিজের কাধে রিকের মাথা রেখে শক্ত করে ধরে রাখে তাকে। ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে এক অদ্ভূত বিশ্বাস নিয়ে সে বলে, "ও আমার ক্ষতি করবে না, কোনদিন না। ” ডাক্তারকে চিন্তিত দেখায়, "তার ব্যপারটা আমাকে রিপোর্ট করতে হবে। যে অবস্থা তাতে তার এখন কোন না কোন মেডিকেল প্রতিষ্ঠানের তত্বাবধায়নে থাতার কথা, এভাবে বাইরে এল কিভঅবে সেটাই চিন্তার বিষয়।

সে হয়তবা কোথাও থেকে পালিয়েছে, কিভাবে কে জানে। ” "ওরা কি ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যাবে, ডাক্তার?" ব্যকুল ভাবে প্রশ্ন করে ভেলোনা। "সম্ভাবনা আছে, সেটাই ভয় পাচ্ছি। ” "প্লীজ ডাক্তার, এটা করবেন না। ” কোমড় থেকে রুমালে বাধা পাচ ক্রেডিট বার করে সে।

আপনি এর সবটা রাখতে পারেন। আমিই ওর দেখাশোনা করব. খুব ভালভাবে। ও কাউকে কষ্ট করবে না, ক্ষতি করবে না। ” ডাক্তার তার হাতের দিকে তাকায়, "তুমি বোধহয় কারখানায় কাজ কর? মাথা ঝোকায় ভেলোনা। "সপ্তাহে কত বেতন পাও? "আড়াই ক্রেডিট।

" ভেলোনার দেয়া ক্রেডিটগুলো হাতে নিয়ে তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ডাক্তার। তারপর সেগুলো আবার তার দিকে বাড়িয়ে দেয়, আমি ওর জন্য কোন চার্জ করছি না। এগুলো নিয়ে যাও। ” "আপনি ওর কথা কাউাকে বলবেন নাতো“ "আমাকে রিপোর্ট করতেই হবে, এটাই আইন। ” একটা ঘোরের মধ্যে গ্রামে ফিরল ভেলোনা, পুরো রাস্তা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখলো রিককে।

পরের সপ্তাহে হাইপারভিডিও বিজ্ঞপ্তিতে একজন ডাক্তারের মৃত্যুর খবর প্রচার করলো। সে নাকি পাওয়ার বীম পরিবহন সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় মারা গেচে। নামটা পরিচিত লাগায় বাড়ি ফিরে পুরানো কাগজ ঘেটে দেখে, নামটা একই। লোকটার মৃত্যুতে কষ্ট ডায় ভেলোনা, ভাল লোক ছিল সে। কারখঅনার এক সহকর্মীর কাছে এই ডাক্তারের কথা শুনেছিল ভেলোনা, সে নাকি দয়ালু হৃদয়ের মানুষ, তাদের শ্রমিক বলে অবহেলঅ করেননা, যত্ন করে দেখেন।

ভেলোনা কোন জরুরী দরকারে লাগতে পারে ভেবে তার নাম একটা কাগজে টুকে রেখেছিল। তার জরুরী দরকার হয়েওছিল, সে সাহায্যও পেয়েছে। তারপরেও একটা আনন্দ ডাক্তারের জন্য শোককে ম্লান করে দিচ্ছিল, ডাক্তার নিশ্চয়ই রিকের কথা রিপোর্ট করার সময় পায়নি, তার আগেই দুর্ঘটনায় মারা গেছে। এখন পর্যন্ত যখন কেউ রিকের খোজ করতে আসেনি, আশা করা যায় আগামীতেও আসবে না। পরের দিকে, রিক যখন আরও অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে, সে তখন তাকে খুলে বলেছে ডাক্তারের বলা সব কথা।

মনে আশা, সে হয়ত অপরাধী ছিল, তাকে হয়ত ধরে নিয়ে যাবার জন্য খোজা হচ্ছে এই কথা শুনে রিক সবসময় গ্রামেই থেকে যাবে, তাকে ছেড়ে যাবার কথা চিন্তা করবে না। বাম হাতে ঝাকুনি খেয়ে বাস্তবে ফিরে এল ভেলোনা, প্রায় চিৎকার করছে রিক, "তুমি শোননি আমি কি বলেছি? আমি যদি কোন একটা গুরুত্বপুর্ন কাজ করার মানুষ হই, তার মানে আমি অপরাধী ছিলাম না। ” "হয়ত তুমি কোন ভুল করেছিলে?” গলায় দ্বিধা আর অস্বস্তি নিয়ে বলে ভেলোনা, অনেক বড় মানুষেরও অনেক ভুল করে, এমনকি অভিজাতদেরও ভুল হয়..” "আমি জানি আমার ভুল হয়নি। কিন্তু তুমি কি বুঝতে পারছ না, আমাকে আরও অনেক কিছু জানতে হবে, যেন অন্য সবার ভুল ভাঙ্গাতে পারি আমি? আমি যা জানি তা দিয়ে আমি নিশ্চিত নিজের সম্পর্কে। কিন্তু অন্যদের নিশ্চিত করতে হলে প্রমান লাগবে, যুক্তিযুক্ত কারন লাগবে..” "রিক!” ভেলোনার গলায় ভয় আর আতঙ্ক ফুটে ওঠে।

সেটা বিপজ্জনক হতে পারে, কেন তোমাকে এ কাজটা করতেই হবে? যেখানে তুমি কোন কিছুই বিশ্লেষন কর না, সেখানে কেন তোমার আরও জানা দরকার?” একটা নিশ্বস ফেলে রিক উত্তর দেয়, "কারন আরেকটা জিনিস আমার মনে পড়েছে। ” "আরেকটা কি জিনিস?” "আমি তোমাকে বলতে চাই না। ” ফিসফিসিয়ে বলে রিক, তাকে মলিন দেখায়। "তোমার উচিৎ কাউকে বলা, তুমি ভুলেও যেতে পার। ” রিক শক্ত করে ভেলোনার হাত ধরে, "ঠিক বলেছ।

আর তুমি কাউকে বলবে না,তাই না লোনা? আমি ভুলে গেলেও তোমার মনে ঠিকই থাকবে। ” "অবশ্যই রিক। ” রিক তার চারপাশে তাকায়, এই বিশ্ব, এই গ্রহটা অনেক সুন্দর। ভেলোনা তাকে একবার বলেছিল. আপার সিটিতে একটা উদ্ধৃতি অনেক বড় করে লেখা আছে, "সৌন্দর্যে ফ্লোরিনা পুরো গ্যালাক্সীর মধ্যে সবার সেরা। " চারপাশে তাকালে এই কথাটা বিশ্বাস হতে চায় তার।

"ব্যপারটা খুবই ভয়ঙ্কর আর অবিশ্বাস্য, কিন্তু আমি যখনই কোন কিছু মনে করতে পেরেছি, সঠিক মনে পড়েছে, আজ বিকেলে এই কথাটা আমার মনে পড়েছে। ” "কি?“ উদ্বেগ আর কৌতুহল ঝরে পড়ে ভেলোনার স্বর থেকে। ভয় পাওয়া চেহারায় তার তিকে তাকায় রিক “সবাই মারা যাবে, ফ্লোরিনার সবাই মারা যাবে, কেউ বাচবে না। ” আমি একটা ব্লগ টাইপ সাইট ডেভলপ করছি। পাবলিক ব্লগ না, ব্যক্তিগত ব্লগ।

সেখানে নিয়মিত মুভি রিভিউ, ই রিভিউ, পিসি গেম রিভিউ সহ টুকটাক লেখারিখি পাবলিশ করি আমি। একবার দেখবেন নাকি? আমার সাইটটার একটা ফেবু পেজও আছে। সাইটটি ভাল লাগলে, এবং প্রতিদিন নিয়মিত পোস্ট আপডেট পেতে আগ্রহ বোধ করলে একটা লাইক দিন প্লিজ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.