আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কুমিল্লার ‘সাপ্তাহিক আমোদ’ এর সংগ্রাম

ভূমিকা সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এ দর্পণে ভেসে উঠে সমাজের মানুষের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাক্সক্ষা, সাধ-সাধনার প্রতিচ্ছবি। সংবাদপত্র আমাদেরকে ভাবায়, প্রেরণা দেয়, উদ্বুদ্ধ করে। অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদির ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এ কাজটি যারা করেন বা যে সংবাদপত্রটি এ কাজ করে তাদেরকে কত ধরনের বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়, কতজনের অনুরাগ-বিরাগের কারণ হতে হয়, কত হামলা-মামলার মুখে পড়তে হয় তার কোন ইয়ত্তা নেই।

পত্রিকা গুলোকে এ ধরনের নিরন্তর বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়েই সংবাদপত্রের প্রকাশনা চালিয়ে যেতে হয়। কেউ সংগ্রাম করে টিকে থাকে; কাউকে বা অসীম মনোবেদনা নিয়ে বন্ধ করে দিতে হয় পত্রিকার প্রকাশনা। তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের ছোট্ট জেলা শহর কুমিল্লা থেকে শুধুমাত্র খেলাধুলার বিষয় নিয়ে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা চালান অচিন্তনীয় ব্যাপার ছিল। “আমোদ” নামের সেই খেলাধুলার পত্রিকাকেই পরবর্তীতে সাধারণ পত্রিকা হিসেবে প্রকাশ ও কত ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, এবং পত্রিকাটি প্রকাশের ক্ষেত্রে কত বাধা বিপত্তির সম্মুখিন হতে হয়েছে এ বিষয় গুলোই এই এ্যসাইনমেন্টে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে আঞ্চলিক সংবাদপত্রের বিভিন্ন সমস্যার কথা সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

এই এ্যাসাইনমেন্টটি করতে গিয়ে আমি আঞ্চলিক সংবাদপত্রের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এছাড়াও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি পিআবি-র লাইব্রেরিয়ান নাজিম সাহেবের প্রতি। “আমোদ” সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন আমোদের রিপোর্টার ইমরুল কবির সাহেব, তাকেও ধন্যবাদ জানাই। আঞ্চলিক সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা আমাদের দেশে মফঃ¯^ল এলাকা এমন কি জেলা শহরের ¯^ানীয় বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশের প্রতি জাতীয় দৈনিকগুলোর অনিহার কথা ¯^তঃসিদ্ধ বিষয়। একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে- ১৯৭৭ সালে কুমিল্লা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হবার পর কুমিল্লার ও জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার জন্য ৩২ জন বিশেষ ব্যক্তিকে ¯^র্ণপদকে সম্মানিত করা হয়।

মফঃ¯^ল শহরে এমন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ¯^র্ণপদক দানের ঘটনা এটাই প্রথম ছিল। এদর মাত্র ৬জন ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন, আর বাকি ২৬জনই বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার অধিবাসী। পদক প্রদান করেন তৎকালীন মন্ত্রী কাজী আনোয়ারুল হক। পরদিন ঢাকার পত্র পত্রিকায় এই ¯^র্ণপদক প্রদানের সংবাদটিতে ৩২জনের ছবি দূরে থাকুক শুধু ঢাকার তিন জনের নামই ছাপা হয়েছে। অন্যদের নামটুকু ছাপাতেও জাতীয় দৈনিকগুলো কার্পণ্য করতে কসুর করেনি।

রাজধানী শহরের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জাতীয় দৈনিক গুলোতে যথাযথ স্থান পায় না। বাংলাদেশের প্রায় ৭০% মানুষ গ্রামে বাস করে, আর বাকি মাত্র ৩০% মানুষ শহরে থাকে। অথচ জাতীয় দৈনিক গুলোর অধিকাংশ পাতা জুড়েই থাকে শহরের সংবাদ। সেখানে মফঃ¯^লের সংবাদ প্রকটভাবে উপেক্ষার শিকার। মফঃ¯^লের সংবাদ যাও প্রকাশ হয়, তারও যথাযথ গুরুত্ব সহকারে ছাপানো হয় না।

আঞ্চলিক সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার সমস্যা নানা সমস্যার মাঝে দেশের প্রতিটি জেলা ও থানা পর্যায় থেকে বেশ কিছু দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় যে, দেশে ১০৪০টি মিডিয়া তালিকাভুক্ত সংবাদপত্র রয়েছে। এছাড়া মিডিয়া তালিকাভুক্ত নয় এমন পত্রিকার সংখ্যাও রয়েছে প্রচুর। এসব পত্রিকার অধিকাংশই প্রকাশিত হয় রাজধানী শহরের বাইরে থেকে। রাজধানী শহরের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো প্রধানত যে সকল সমস্যায় আক্রান্ত হয় তার মধ্যে রয়েছে- অর্থ সংকট, অনুন্নত প্রযুক্তি ও অদক্ষ কর্মী।

স্থনীয় পর্যায় থেকে যারা সংবাদ পত্র প্রকাশ করেন এদের অনেকেই মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে আসা কিছু সচেতন উৎসাহী ব্যাক্তি। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সংবাদপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিলেও এরা পৃষ্ঠপোষাকতার অভাবে পত্রিকাগুলোকে সচল রাখার মত নিয়মিত পুঁজি সরবরাহ করতে অসমর্থ হন। ফলে পত্রিকাগুলো নিদারুন আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয়। আরও উল্যেখযোগ্য বিষয় হলো শহরে নিয়োজিত সাংবাদিকদের মত গ্রামের সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা বিষয়ক শিক্ষায় যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রাপ্তও হন না। পেশাগত দক্ষতার অভাবে তারা অনেক সময় অনেক ঘটনার সংবাদ মূল্য বুঝতে ব্যর্থ হন।

ফলে সেই সংবাদটির অপমৃত্যু ঘটে। স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি বৈষম্য জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতি স্থানীয় পত্রিকা কর্তপক্ষ থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাবৃন্দ নানা জাতীয় বৈষম্যমূলক আচরণ করে থাকে। অধিকাংশ পত্র-পত্রিকা ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী সাংবাদিকদের বেতন দেন না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সংবাদ সংগ্রহের জন্য পত্রিকা কর্তপক্ষ আর্থিক সমর্থন ও যোগাযোগের সহায়তা প্রদান করার ক্ষেত্রেও অনীহা প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও স্থানীয় সাংবাদিকদেরকে পেশাগত দায়ীত্বপালনকালে মানবাধিকার ও প্রশাসনিক দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হলে স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী মহল ও প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ব হুমকির সম্মুখীন হতে হয়।

এ কারণে স্থানীয় অনেক সাংবাদিক ঝুঁকিপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার করতে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। হুমকি, ভীতি, ও অর্থনৈতিক অসহযোগীতার কারণে জাতীয় ও স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় গ্রামের সংবাদ প্রবাহের হার অত্যন্ত কম। মফঃস্বলের বা জেলার খবরাখবরকে রাজধানীর দৈনিকগুলো সব সময়ই হেয় জ্ঞান করে থাকে। এবং এ নিয়ে রাজধানীর দৈনিকগুলোর নিজ নিজ প্রতিনীধিগণ প্রায় সময়ই অসুবিধায় পড়েন। তাদের প্রায়ই অভিযোগের সুরে জনগণের কাছে জবাবদিহী করে বলতে শোনা যায় যে, “আমরা তো সব খবরই পাঠাই কিন্তু ওরা না চাপালে আমরা কি করব।

” সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে কুমিল্লার ঐতিহ্য অষ্টাদশ শতাব্দীতে অর্থাৎ ১৮৬০ সালে “ত্রিপুরা জ্ঞান প্রকাশনী” নামে কুমিল্লা থেকে প্রথম এটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এরপর ১৮৮৩ সালে সাপ্তাহিক “ত্রিপুরা হিতৈষী”, ১৮৭৬ সালে পাক্ষিক “ত্রিপুরা”,১৮৯৩ সালে মাসিক “ঊষা”, ১৮৯৪ সালে মাসিক “হীরা”, এবং ঐ একই সালে সাপ্তাহিক “ত্রিপুরা বিকাশ” প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষকালেই বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা থেকে মাসিক, পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক মিলিয়ে মোট ছয়টি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে এই বিংশ শতাব্দীতে এসে কুমিল্লা জেলা সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যে কতটুকু অবদান রেখেছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ঐ সব পত্রিকার সবগুলোই যে খুব বেশি দিন স্থায়ি ছিল এমন নয়।

তবে সাপ্তাহিক “ত্রিপুরা হিতৈষী” ১৮৮৩ সালে মতান্তরে ১৮৯৬ সালে গুরুদয়াল সিংহের সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশের পওে পুত্র কমনীয় কুমার সিংহ ও পুত্রের মৃত্যুর পর পুত্রবধু উর্মিলা সিংহ ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত এটি চালিয়ে যান। সম্ভবত উর্মিলা সিংহই কুমিল্লা জেলার তথা সারা বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সম্পাদক। সে জন্যই কুমিল্লা জেলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের দাবিদার। “আমোদ” এর সম্পাদক সম্পর্কে কিছু কথা “আমোদ” এর প্রতিষ্ঠাতা প্রকাশক-সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি ১৯৪৫ সালে বৃটিশ ভারতে ত্রিপুরা জেলার অর্থাৎ বর্তমান বৃহত্তর কুমিল্লা মুসলিম লীগ ন্যাশনাল গার্ড বাহিনীর সালার-ই-জিলা, (জিলা কমান্ডার) নির্বচিত হন। তখন ঘুনাক্ষরে ও ভাবতে পারেন নি যে রাজনৈতিক জীবনের প্রবল নেশা কাটিয়ে তিনি একদিন সাংবাদিক হবেন,অথবা পত্রিকার সম্পাদক হবেন।

সালার-ই-জিলার দায়িত্ব পালনের পর ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের দেশ রক্ষা বাহিনীর অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলে ৬ষ্ঠ কোর্সে শিক্ষা লাভের পর কমিশন লাভ করেন এবং ’৫২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর লেফটেন্যান্ট পদে চাকরি করেন। ’৫২ সালে সামরিক বাহিনী থেকে বিদায় নিয়ে ’৫৫ সালের ৫ই মে “আমোদ” প্রকাশের আগ পর্যন্ত তিনি তার পরবর্তী জীবনের লক্ষ্য স্থির করা নিয়ে দ্বীধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন। তার পর মৃত্যুও আগ পর্যন্ত আমোদের সাথেই ছিলেন। আমোদের এর প্রতিষ্ঠাতা ফজলে রাব্বী ১৯৯৪ সালের ২৮ নভে¤^র ইহলোক ত্যাগ করেন। এরপর আমোদের দায়িত্ব নেন তার সহধর্মিণী শামসুন নাহার রাব্বী ও ছেলে বাকীন রাব্বী।

পারিবারিক ভিত্তিতে পত্রিকা চালানোর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমোদ। তার স্ত্রী, ছেলে এবং ৩ মেয়ে মিলে সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রæফ দেখা, প্রেস চালানো, পত্রিকা বাইন্ডিং এবং পেস্টিং এর কাজও করেছেন। প্রথমদিকে বৃহত্তর নোয়াখালী এবং সিলেটেও আমোদ-এর সার্কুলেশন ছিল। মানুষের ব্যক্তিজীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জাতীয় জীবনের বিশেষ মুহূর্তেও আমোদ কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন তথা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে।

আঞ্চলিক সংবাদপত্র হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার কারণে “আমোদ” তার যোগ্য স্বীকৃতিও পেয়েছে। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো কর্তৃক এশিয়ার পাঁচটি সেরা আঞ্চলিক পত্রিকার একটি হিসেবে আমোদ স্বীকৃতি লাভ করে। “আমোদ” প্রকাশের পটভূমি ও নাম করণ আমোদ প্রকাশের পটভূমি সম্পর্কে জনাব ফজলে রাব্বি তার লেখা গ্রন্থ কাগজের নৌকায় বলেন-“১৯৪৬ সালের দিকে একদিন কোলকাতায় তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার শিক্ষামন্ত্রী আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়, খান বাহাদুর মোয়াজ্জেম উদ্দীন সাহেবের বাড়িতে যাই নিজের একটা প্রয়োজনে। তিনি তখন তাঁর বাড়ির অফিস রুমে বসে কি যেন ডিকটেশন দিচ্ছিলেন। এমন সময় দু’জন লোক এসে তাঁর সাথে কিছু বলে তা নোট বইয়ে টুকে নিয়ে গেলেন।

তাদের একজন কুমিল্লার চর্থার গনি সাহেব। গনি সাহেব তখন আজাদ পত্রিকায় কাজ করতেন। পরদিন সকালে আজাদ পত্রিকায় দেখলাম তিন কলাম হেডিং দিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য ছাপা হয়েছে। সেই সময় সাংবাদিক বা সংবাদপত্রের সাথে জড়িত ছিলাম না বলে ব্যাপারটি আমার কাছে খুব চমকপ্রদ ও আশ্চর্যজনক মনে হয়েছিল। মন্ত্রীর সাথে দু’চারটে কথা থেকে এত সুন্দর একটা খবর ছাপা হয়ে গেল।

ঘটনাটি আমার মনকে বেশ নাড়া দিয়ে গেল। ” সে সময় কুমিল্লার খেলার মাঠের প্রতিটি ঘাসের সাথে জনাব রাব্বির যেন মিতালী হয়ে গিয়েছিল। তখন মাঝে মাঝে তিনি কুমিল্লার খেলাধুলার অঙ্গনের কিছু কিছু খবর লিখে তৎকালীন ইংরেজী দৈনিক মর্নিং নিউজে-এ পাঠাতেন। সে সব খবর ছাপা হত। বিশেষ করে ব্যাডমিন্টন খেলার খবরের প্রতি তার বেশ ঝোঁক ছিল।

কারণ ঐ সময় তিনি নিজে একজন ব্যাডমিন্টন তারকা বলে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। মর্নিং নিউজে তার পাঠানো খবর ছাপা হতে দেখে তিনি মনে মনে আগ্রহী ও আশাšি^ত হয়ে উঠেন এবং মনে মনে একটা খেলাধূলার পত্রিকা বের করার কথা ভাবতে থাকেন। এ ব্যাপারে একদিন তিনি সি ডি এস এর সেক্রেটারী শফিউদ্দিন আহম্মদ ( হারুন মিয়া সাহেব), কুমিল্লা কালেক্টরিয়েট এ, সি-র নওশের আলী সাহেব, পাক ইউনাইটেড ক্লাবের সুলতানুর রহমান সাহেবের সাথে আলাপ করেন। তারা জনাব রাব্বির এই চিন্তাধারা লুফে নিলেন। এবং বললেন কুমিল্লা খেলাধূলার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগামী হলেও খেলাধূলার কোন বিস্তারিত খবর কোন পত্রিকায় ছাপায় না।

তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শে একটি ক্রিড়া বিষয়ক সাপ্তাহিকী প্রকাশের সিদ্ধান্ত হলো। কিন্তু পত্রিকাটির নাম কি হবে, কোথা থেকে কেমন করে ছাপা হবে, কারা খবর লিখে দিবে, কে সম্পাদকীয় লিখবে ইত্যাদি এমন হাজারও চিন্তা পেয়ে বসল জনাব রাব্বিকে। তখন তার বন্ধুরা এগিয়ে এলেন। একদিন খেলার মাঠে বসেই তাঁর বন্ধু সুলতানুর রহমানের পরামর্শে পত্রিকার নাম ঠিক করে ফেলেন “আমোদ”। এভাবে “আমোদ”-ই হয়ে গেল কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ক্রীড়া বিষয়ক সাপ্তাহিকীর নাম।

“আমোদ” এর সংগ্রাম রাজধানী শহরের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো প্রধানত যে সকল সমস্যায় আক্রান্ত হয় তার মধ্যে রয়েছে- অর্থ সংকট, অনুন্নত প্রযুক্তি ও অদক্ষ কর্মী। এছাড়াও সময়ে সময়ে বিভিন্ন পর্যায় থেকে হামলা-মামলা, হুমকি ও বিভিন্ন চাপের মধ্যে থেকে পত্রিকা প্রকাশ করতে হয়। কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত “আমোদ” ও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। “আমোদ” প্রকাশের ক্ষেত্রে যে সকল বাধা-বিপত্তির সম্মুখিন হয়েছে তার কিছু কিছু নি¤েœ আলোচনা করা হলো- “আমোদ” এর আর্থিক দৈন্য পূর্বে একটা কথা প্রচলিত ছিল যে, teachers & editors are always poor. অবশ্য বর্তমানে এর উল্টোটাই দেখা যাচ্ছে। স্থনীয় পর্যায় থেকে যারা সংবাদ পত্র প্রকাশ করেন এদের অনেকেই মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে আসা কিছু সচেতন উৎসাহী ব্যাক্তি।

“আমোদের” সম্পাদক প্রকাশক জনাব ফজলে রাব্বি বলেন “আমোদকে কারো সাহায্য ছাড়াই চালাবার একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম.......আমোদের উপার্জনেই আমোদ চালাবো এবং আমিও চলবো। ” সম্পাদকের এই সিদ্ধান্তের কারণে “আমোদ” কে অনেক বাধার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমোদ প্রকাশে বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল এরকম আর্থিক সংকটের কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো- ক্যমেরা সংকট ও সেনা প্রধানের ছবি তোলার বিপত্তি : ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ মুসা কুমিল্লায় আসেন। বিমান বন্দরে তার খবর সংগ্রহ ও ছবি তুলতে আমোদ সম্পাদক নিজেই যান। ঘটনা হলো যখন সেনা প্রধান বিমানের সিঁড়ি থেকে নামছিলেন তখন তার কয়েকটি ছবি তোলেন।

কিন্তু যখন সেনা প্রধান প্যরেডে সালাম গ্রহন করছিলেন তখন সম্পাদক মহা বিপদে পড়েন। তার ধার করে আনা অন্যের ক্যমেরাটি হঠাৎ করে বিকল হয়ে পড়ে। তখন দুঃশ্চিন্তায় অসহায় জনাব রাব্বি ছবি তোলার ভান করে কোন রকমে সেদিনের মত পার পেয়ে যান। আর্থিক সংকটের কারণে ভালো একটি ক্যমেরার অভাবে সেদিন তাকে এই দুরবস্থায় পড়তে হয়েছিল। জনাব ফজলে রাব্বি তার লেখা ‘কাগজের নৌকায়’ লেখেন “পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে যখন আমোদ নিজ গতিতে চলতে থাকে, তখন এর পরিচালনায় দৈন্য ভাব প্রকট ভাবে দেখা দেয়।

আনুষঙ্গিক অনেক কিছুরই প্রয়োজন অনুভব করছিলাম। তখন একদিন আমোদের পরম হিতাকাঙক্ষী ,এক কালের বিপ্লবী নেতা অতীন্দ্র মোহন রায়ের বাসায় বসে আমোদ পরিচালনার কথা আলোচনা করেছিলাম। বলতে গিয়ে অনেকটা আবদারের সাথে বলেছিলাম, এখন আমার একটি টেলিফোন, একটা ক্যমেরা ও একটা টাইপ রাইটার মেশিনের খুব দরকার। ” আর্থিক অনটনের কারণে বড় আকারে “আমোদ” ছাপাতে ব্যর্থ: আমোদ প্রকাশের পর দীর্ঘ ১২ বছর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রেসে ঘুরে ঘুরে পত্রিকা ছাপান হয়। সম্পাদক মাঝে মাঝে ঈদ, স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি বিশেষ বিশেষ দিনে বড় আকারে আমোদ প্রকাশ করতে চাইতেন; কিন্তু সেই সময় বাদুড় তলাস্থ সিংহ প্রেস ছাড়া শহরে আর বড় কোন প্রেস ছিল না।

কিন্তু সেই সিংহ প্রেসের মালিক কখনই সম্পাদকের অনুরুধে বড় আকারে পত্রিকা ছেপে দেন নি। রাজনৈতিক চাপ সামরিক আইন: ১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারির মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা ভার নেওয়ার পর সংবাদপত্রগুলোকে সংবাদ লেখার ধারা বদলাতে হয়। ’৫৮ সালের পর বিভিন্ন সময়ে দেশে সামরিক আইন জারী হয়েছে। সংবাদপত্র গুলোকে সামরিক আমলে সরকারের বিভিন্ন ধরনের চাপের মধ্যে থেকে কাজ চালিয়ে যেতে হয়েছে। মার্চ-ডিসেম্বর ’৭১ এর কিছু ভয়াবহ ঘটনা ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ ছিল বৃহস্পতিবার, তার আগের দিন বুধবার রাতে যখন আমোদ ছাপা হচ্ছিল তখন দুজন সাধা পোশাকের সামরিক গোয়েন্দা অফিসার আমোদ প্রেসে এসে মেশিন ম্যনকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করতে থাকে, মেশিন ম্যন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সম্পাদকের কাছে এসে বলে দুজন পাঞ্জাবী লোক এসে আমরা পত্রিকায় কী ছাপছি জানতে চাচ্ছে তখন আমি আসলে আমাকেও তারা একই প্রশ্ন করে।

পরে পত্রিকার ফাইনাল কপিটি নিয়ে চলে যায়। ২৫ মার্চের পর ১০ সপ্তাহ আমোদের প্রকাশনা বন্ধ থাকে। তারপরও জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে সামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ এলো শহরে ¯^াভাবিক অবস্থা বিরাজ থাকতে হবে। অন্যন্য প্রতিষ্ঠানের মত প্রেস মালিকদেরও নির্দেশ দেয়া হলো ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রেস খুলে কাজ আরম্ভ না করলে প্রেস বাজেয়াপ্ত করা হবে। এই নির্দেশ শুনে প্রেস মালিকদের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হলো।

তারপরও ঝাড়া-মোছা করে প্রেসের দরজা খুলে দিলেন। যদিও কোন কাজ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুনের ঘোষণা: ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন বাংলাদেশের চারটি পত্রিকা রেখে বাকি সব পত্রিকা সরকারী ভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণার ফলে অন্য সকল পত্রিকার সাথে আমোদ ও বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আমোদ প্রকাশক এক গভীর সংকটে পড়ে যান।

তিনি কাগজের নৌকায় লেখেন-“স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে আমি “আমোদ” চালাচ্ছিলাম এবং আমোদই ছিল আমার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উৎস, একমাত্র ব্যবসা। এই আমোদ ছাড়া আমার জীবিকা নির্বাহের আর কোন উপায় ছিল না। তাই ছেলে মেয়ে নিয়ে কিভাবে চলব বা অন্য আর কি ব্যবসা করা যায় ঐ মুহূর্তে তা কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। ” পত্রিকায় নাম না আসায় কটু কথা শুনতে হয়: একটি জনসভার খবরে ভুল বসতঃ সভার সভাপতির নাম বাদ পড়ে যায়। বিকালে জনসভা শেষে তাড়াহুড়ো করে খবর লিখে দেন।

তাই সভাপতির নাম দিতে ভুল হয়ে যায়। ঐ সভার সভাপতি ছিলেন সম্পাদকের পুরান বন্ধু। অথচ পরদিন কাগজে তার নাম না দেখে বেশ কিছু কটু কথা শুনাতে কার্পণ্য করেন নি। বিজ্ঞাপন বন্ধ: একজন বিত্তশালী ব্যাক্তি ও রাজনৈতিক নেতা তিন বছর ধরে নিয়মিত “আমোদ” কে একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে সাহায্য করে আসছিল। তার এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর জন¯^ার্থ স¤^লিত হলেও সেই নেতার ¯^ার্থের পরিপন্থী ছিল।

একদিন ঐ খবরের প্রেক্ষিতে সেই বিত্তশালী নেতার বিরুদ্ধে এক বিরাট গণআন্দোলন হয়। ঐ আন্দোলনের সাথে আমোদের সংবাদটি জড়িত বলে চাটুকাররা উস্কায়ে দেয়। ফলে ঐ নিয়মিত বিজ্ঞাপনটি বন্ধ হয়ে যায়। সাংবদিককে সব জান্তা মনে করা: আমোদ প্রকাশের সূচনাকালে অর্থাৎ পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে ঐ অঞ্চলের লোকজন খবর, খবরের কাগজ বা সাংবাদিকতা সম্পর্কে খুব একটা সচেতন ছিলেন না। ব্যাক্তিগত বা কোন সংগঠনের পক্ষ থেকে কেউ কোন খবর লিখে কাগজের অফিসে পাঠাত না।

এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো থেকে যে খুব একটা সাড়া পাওয়া যেত তাও না। তেমন কোন ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সাথে কোথাও হঠাৎ দেখা হয়ে গেলে তারা অভিযোগ বা অনুযোগ করে বলতেন, অমুক দিন অমুক জায়গায় এরকম একটা ঘটনা ঘটল আপনি খবরটা ছাপালেন না কেন ?এর উত্তরে বিনয়ের সাথে যদি বলা হত আপনি যদি খবরটা জানাতেন তাহলে অবশ্যই ছাপান হত। তখন তারা বলে আপনি সাংবাদিক আপনার উচিৎ সব খবরাখবর সংগ্রহ করে কাগজে ছাপান। তারা সাংবাদিকদেরকে সবজান্তা মনে করত। পরীক্ষার ফল প্রকাশের কারণে অসুবিধা: ১৯৬৩ সালে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রথম পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

সাতচল্লিশ পূর্ব কালে ম্যাট্রিক সহ অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফল কোলকাতা ও সাতচল্লিশোত্তর কালে ঢাকার বড় বড় দৈনিক পত্রিকা সমূহে প্রকাশিত হত। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠিত হবার পর প্রথম “আমোদ” সম্পাদক পরীক্ষার রেজাল্ট ছাপাবার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী রেজাল্ট প্রকাশের আগের দিন বিকাল ৪ টায় রেজাল্ট শিট নিয়ে ছাপার কাজ শুরু করেন। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা না থকার কারণে কয়েক ঘণ্টা পরেই দেখা গেল প্রেসে অংকের টাইপের টান পড়ছে। কারণ রেজাল্টে যে প্রচুর পরিমাণ অংকের টাইপের প্রয়োজনএটা তিনি আগে ততটা ধারনা করতে পারেন নি।

পরে শহরের অন্যান্য প্রেস থেকে ফিগার টাইপ গুলো ধার করে এনে কাজ চালিয়ে নেন। অসুবিধা হলো পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে রেজাল্ট শিট দেয়ার সময় বলেছিল কোনমতেই যেন পরদিন সকাল ৬টার আগে রেজাল্ট লীক না হয়, অথচ রেডিওতে রেজাল্ট প্রকাশের খবর প্রচার হওয়ার পর ছাত্ররা-অভিভাবকরা শিক্ষাবোর্ডে ভীড় জমাতে থাকে। এদিকে শিক্ষা অফিসের লোকজন নিজেদের গা বাচানোর জন্য “আমোদে” ফল বেরুচ্ছে বলে বলে সব ছেলেদের আমোদ-এর প্রেসে পাঠিয়ে দেয়। সন্ধা থেকেই আমোদের অফিসের সামনে ভীড় জমতে থাকে। ভীড় এমন পর্যায়ে পৌছে যে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের হাটা-চলা বন্ধ হয়ে যায়।

সেই সময় আমোদ সম্পাদকের ঘর ও প্রেসটি ছিল বেড়ার ঘর। ছেলেরা বেড়ার ফাঁক দিয়ে তাদের ন¤^রটা জানাবার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে তাদের ভীড় ও অনুরোধের মাত্রা বেড়েই চলছিল। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে ছেলেদের চাইতে তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকরাই বেশি অধৈর্যের পরিচয় দিয়েছিলেন সেদিন। অসত্যকে সত্য বলে প্রমান করা : সত্য সংবাদ প্রকাশ করেও অবস্থার চাপে সংশোধনী দিতে হয়েছিল।

১৯৬৪ সালের কথা, আমোদে একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল “কিস্তিতে মনি অর্ডারের টাকা বিলি”। কাগজের কৌকায় ফজলে রাব্বি লেখেন-“সংবাদ প্রেরক আমারই প্রেসের একজন পুরনো কর্মচারী। কাজেই সংবাদ কোন মতেই ভুল হতে পারে না। তার মুখ থেকে সংবাদটি শুনে আমি সুন্দরভাবে খবরটি লিখে দেই যে,একটি গ্রামের পোস্টমাস্টার গ্রামবাসীদের মনি অর্ডারের টাকা কিস্তিতে বন্টন করেন এবং অনেক সময় কারো টাকা সম্পূর্ণ পরিশোধও করেন না। এই খবরটি দেখে কুমিল্লা অঞ্চলের পোস্টাল সুপার তার সহকারিকে তাড়াতাড়ি ঘটনাস্থলে সরেজমিনে তদন্তের জন্য পাঠান।

দুইদিন পর সহকারী পোস্টাল সুপার তদন্ত শেষে ফিরে এসে আমাকে বললেন যে,এবার সেই খবরের সংশোধনী ছাপাতে হবে। ভদ্রলোক রসিয়ে রসিয়ে আরো বললেন, গ্রামের পোস্ট অফিসের পোস্টমাস্টার স¤^ন্ধে তদন্ত করতে গেলে ঐ এলাকার চেয়ারম্যান, মে¤^ার, শিক্ষক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছে গেলে সবাই এক বাক্যে পোস্টমাস্টার সাহেবের ভূয়সী প্রশংসা করেন। শুধু তাই নয় যে ভদ্রলোকের টাকার জন্য খবরটি পরিবেশন করা হয়েছিল সেই ভদ্রলোকও পোস্টমাস্টার সাহেবের প্রশংসা করেন। আমার সংবাদ বাহক প্রেস কর্মচারী জয়নাল মিয়াকে এ কথা জানালে সে অবাক হয়ে যায় এবং ঐ লোককে এ রকম মিথ্যা ¯^াক্ষ দেবার কারণ কি জিজ্ঞেস করেন। ঐ ব্যক্তি ধীরস্থিরভাবে আমার কর্মচারীকে বুঝিয়ে বলে যে, আমি তো এখনও পোস্টমাস্টার সাহেবের কাছে মনি অর্ডারের ২০ টাকা পাওনা আছি।

তবুও আমাকে তার স¤^ন্ধে ভাল বলতে হয়েছে এজন্য যে, তিনি এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং আমার মাদ্রাসার একজন সদস্য। তার বিরুদ্ধে কিছু বললে বা লিখলে আমার চাকরিটাই থাকবে না। পরের সপ্তাহে আমাকে সংশোধনী দিয়ে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হল বেঁচে গেলেন পোস্টমাস্টার সাহেব, বেঁচে গেলেন মাদ্রাসার ঐ শিক্ষক। মাঝখানে আমি ও আমার প্রেসের কর্মচারী মিথ্যাবাদী হলাম ” যে খবর দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল সম্ভবত ১৯৬৪-৬৫ সালের দিকে একটি খবর ছাপাতে গিয়ে চরম সংকটে পড়তে হয়েছিল। খবরটি ছিল এইরকম-একদিন জনৈক দিন মজুর পুলিশ লাইনের পাশে এক বাড়িতে লাকড়ি কাটতে গিয়ে কিছু ভুল-ত্রæটি বা অন্যায় করলে গৃহকর্তা জনৈক দারোগা সাহেবের মারধোরের ফলে ক্ষীণকায় দিনমজুরটি শেষ পর্যন্ত মারা যায়।

দারোগার হাতে শ্রমিকের মৃত্যুও খবরটি শহওে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। সেই সুযোগে জনৈক উদীয়মান তরুণ নেতার নেতৃত্বে শ্রমিকেরা বিভিন্ন শ্লোগান সহকারে এক শোভযাত্রা বের করে। স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ এ ব্যপারটি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা এ সংবাদটি ধামাচাপা দেবার জন্য পি,পি,জি,পি ও পত্রিকার সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সংবাদটি চাপা দিতে সংবাদিকদের রাজি করিয়ে ফেলে। কিন্তু আমোদে সেটি ছাপিয়ে সম্পাদক খুবই দুশ্চিন্তায় পড়েন।

সে দিন যে খবর প্রকাশ করা যায় নি ১৯৬৭-৬৮ সালের দিকে একটি খবর সেদিন “আমোদে” ছাপাতে পারেন নি। খবরটি ছিল একটি মুরগি হত্যার। জনাব আখতার হামিদ খানের ছোট ভাই কুমিল্লা রাণীর বাজারস্থ মোহাজের কো-অপারেটিভ কারখানার তৎকালীন ম্যানেজারের একটি মুরগি কারখানার পার্শ্ববর্তী জেলা জজ সাহেবের বাংলোয় কে বা কারা হত্যা করেছে বলে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ডা এবং শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়। খবরটি খুব মুখরোচক হলেও এর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এক দিকে সম্পাদকের ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আমোদের পৃষ্ঠপোষক আখতার হামিদ খান, অপর দিকে জেলা ও দায়রা জজ সাহেব ও সম্পাদকের অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তি। শেষ পর্যন্ত এই মামালাটিতে আখতার হামিদ খান সঠিক বিচার পাবেন না বলে মামালাটি ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।

জেলা প্রশাসকের তলব ৫০ দশকের শেষ দিকে ছোট্ট একটি খবরে শহরে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ আমোদ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে নালিশ করে। এর প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক সম্পাদককে ডেকে পাঠান। এভাবে প্রায়ই জেলা প্রশাসকেরা সম্পাদককে ডেকে পাঠাতেন। আবার কোন কোন জেলা প্রশাসক ডেকে তার খবর প্রকাশ করতে বলতেন।

উপসংহার পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম ক্রীড়া সাপ্তাহিক 'আমোদ' এ বছর ৫৬ বছরে পদার্পণ করেছে। ১৯৫৫ সালের ৫ মে এর যাত্রা শুরু হয়। পরে তা সাধারণ সংবাদপত্রে রূপ নেয়। প্রথম সংখ্যাটির মূল্য ছিল এক আনা। বয়সের দিক দিয়ে সংবাদ, ইত্তেফাক ও অবজারভারের পরেই আমোদের স্থান।

জনাব ফজলে রাব্বি আমৃত্যু আমোদের সাথেই ছিলেন। ১৯৯৪ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর পর আমোদের দায়িত্ব নেন তার সহধর্মিণী শামসুন নাহার রাব্বী ও ছেলে বাকীন রাব্বী। পারিবারিক ভিত্তিতে পত্রিকা চালানোর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আমোদ। তার স্ত্রী, ছেলে এবং ৩ মেয়ে মিলে সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে প্রুফ দেখা, প্রেস চালানো, পত্রিকা বাইন্ডিং এবং পেস্টিং এর কাজও করেছেন।

প্রথমদিকে বৃহত্তর নোয়াখালী এবং সিলেটেও আমোদ-এর সার্কুলেশন ছিল। মানুষের ব্যক্তিজীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জাতীয় জীবনের বিশেষ মুহূর্তেও আমোদ কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর অসহযোগ আন্দোলন তথা মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে। আঞ্চলিক সংবাদপত্র হিসেবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার কারণে আমোদ তার যোগ্য স্বীকৃতিও পেয়েছে। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো কর্তৃক এশিয়ার পাঁচটি সেরা আঞ্চলিক পত্রিকার একটি হিসেবে আমোদ স্বীকৃতি লাভ করে।

তথ্য সূত্র  কাগজের নৌকা -মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি  কুমিল্লা জেলা তথ্য বাতায়ন।  ০৬/০৫/২০১১,দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন  নিরীক্ষা  গণমানুষের গণমাধ্যম ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.