আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশু দিবসে শিশুদের অধিকার নিয়ে কিছু কথা।

শিশু শিশুরা হচ্ছে জাতির ভবিষ্যত এবং একই সাথে সমাজের সবচেয়ে দূর্বল অংশ । শিশুর প্রতি ব্যবহারে সর্তকতা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য । বিশ্বশিশু পরিস্থিতিতে পরস্পরবিরোধী একটি অবস্থা বিরাজমান থাকা সত্ত্বেও বর্তমান বিশ্ববাসীদের মধ্যে এক জায়গায় একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ্ করা যায়, যা হচ্ছে শিশু অধিকার সর্ম্পকে পূর্বেকার যে কোনো সময়ের চেয়ে আরো অনেক বেশি সচেতনতা । শিশুর প্রতি দায়িত্ববোধ এখন আর শুধু নীতিবোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়-বরং তা ক্রমবর্ধমান হারে বৃহত্তর সামাজিক ও আইনানুগ বাধ্যবাধকতার আওতায় চলে আসছে । অধিকার বিষয়ক আলোচনার পূর্বে কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয়ে তথ্য উপস্থাপন আবশ্যক ।

শিশু কারা?/শিশু হিসেবে কাদের গণ্য করা হবে? সেভ দি চিলড্রেন থেকে প্রকাশিত "বাংলাদেশে কর্মজীবী শিশু -ম্যাথিউ এ কিং ও সহযোগী রায়ান এর নক্স" বইটিতে ব্লাঞ্চেট তার ১৯৯৬ সনে পরিচালিত গবেষণায় শিশু সর্ম্পকে যে সংগা দিয়েছেন তা হলো -যে মানব সন্তানের কিছু বোঝার ক্ষমতা নেই তাকে বলা হয় শিশু । এটা নির্ভর করে তার শারীরিক বিকাশ ও জীবনযাপন পরিস্থিতির উপর -বয়স কমবেশী হতে পারে । সাধারণভাবে বয়সের তারতম্যের কারণে আমরা কাউকে শিশু, কাউকে যুবক, কাউকে বৃদ্ধ বলে থাকি । জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে ১৮ বছরের কম বয়সী যেকোন মানব সন্তানকেই শিশু বলা হয়েছে । বাংলাদেশের জাতীয় শিশু নীতি ১৪ বছরের নীচে যে কোন বালক-বালিকাকে শিশু বলছে ।

অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রচলিত সাবালকত্ব আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, সাবালকত্বের বয়স শুরু হবে ১৮ বছর থেকে । এই সংগা দুটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে বাংলাদেশ, জাতিসংঘে প্রদত্ত প্রতিবেদন এবং অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে ''শিশু এবং অল্পবয়সী'' শব্দটি ব্যবহার করছে । শিশুর বয়সের প্রমাণের বিষয়টি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে; বিশেষত আদালতে প্রমাণের ক্ষেত্রে । বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়স সর্ম্পকিত কোন গ্রহণযোগ্য লিপিবদ্ধকরণ ব্যবস্থা প্রচলিত নেই; যদিও কাগজে কলমে মিউনিসিপ্যালিটি এবং ইউনিয়ন পরিষদের উপর জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধীকরণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে । বর্তমানে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ যৌথভাবে ইউনিসেফের সহায়তায় বিশেষ কিছু এলাকায় শিশুর জন্ম নিবন্ধীকরণের জন্য তুলনামূলক কার্যকর পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে যার প্রকৃত দুটি উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা হয়েছে- --শিশুর বয়স সর্ম্পকিত বিরোধ কমিয়ে আনা এবং সুবিচার নিশ্চিত করা ।

--যেহেতু শিশুর জন্ম নিবন্ধীকরণে ছবি ও জন্ম তারিখ ব্যবহার করা হয় সেহেতু শিশু পাচার ও অপহরণের মামলা গুলোতে শিশুকে চিহ্নিতকরণের পদ্ধতিটি উন্নততর হবে। যদিও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার কিছু নির্ধারিত প্রকল্পে শিশুর বয়সের বিষয়ে সুনির্ধারিত নিয়ম মেনে চলছে তথাপিও দেশের অন্যান্য স্থানে এবং অন্যান্য কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিশুর বয়স নির্ধারণে কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয় না । যেমন -বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত বিভিন্ন আইনে শিশুর বয়সকে বিভিন্নভাবে সংগায়িত করা হয় । বাংলাদেশে প্রযোজ্য প্রচলিত বিভিন্ন আইনে শিশুর সংজ্ঞা ক্রমিক উদ্দেশ্য/বিধি-বিধান বয়স/বয়সসীমা ১.চাকুরীতে নিয়োগের অনুমতি প্রসঙ্গে-(কারখানা আইন-১৯৬৫; দোকান ও প্রতিষ্ঠান আইন-১৯৬৫; শিশু শ্রমিক নিয়োগ আইন-১৯৩৮) ১২ থেকে ২১ বছরের মধ্যে ২.বিবাহ মেয়েদের জন্য-১৮ ও ছেলেদের জন্য-২১ ৩.তামাক,সুরা বা অন্য কোন মারাত্নক ড্রাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৬ ৪.বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বশেষ বয়স ১০ ৫.সামরিক বাহিনীতে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ ১৬ ( অভিভাবকের সম্মতিতে ) ৬.ফৌজদারী দায়-দায়িত্ব ১২ বছর থেকে সর্ম্পূণ দায়-দায়িত্ব এবং ফৌজদারী আইন ভঙ্গ করা সর্ম্পকিত খন্ডনযোগ্য আনুমানিক বয়স সীমা-৭ থেকে ১১ বছর ৭.গ্রেফতার,আটক বা কারারুদ্ধের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা (ফৌজদারী দায়-দায়িত্বের সাথে সর্ম্পকিত)নির্ধারিত কোন বয়স নেই ৮.মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড ,মৃত্যুদন্ডের ক্ষেত্রে -১৭ বছর ; ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদন্ড-৭ বছর ,তবে শর্ত থাকে যে বয়সের অনুমান সম্পর্কে কোন যুক্তি খন্ডন করা হয় নাই । ৯.আদালতে সাক্ষ্য দেয়া প্রসঙ্গে যদিও সাক্ষ্য দেয়ার জন্য কোন সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারিত নেই তবে সাক্ষীকে অবশ্যই প্রশ্ন বোঝা এবং উত্তর দেবার মতো যথেষ্ট বুদ্ধিসম্পন্ন ও সচেতন হতে হবে ।

১০.আদালতে অভিযোগ দায়েরের মাধ্যমে প্রতিকার পাবার ক্ষেত্রে (অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া)১৮ ১১.যুদ্ধে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নন-কমিশন অফিসারের ক্ষেত্রে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষ হবার পর এবং কমিশনড অফিসারের ক্ষেত্রে দুই বছরের প্রশিক্ষণ শেষ হবার পর এর বাইরেও বাংলাদেশে প্রচলিত কিছু কিছু আইনে শিশু হিসেবে কাদেরকে অভিহিত করা যাবে সে সর্ম্পকিত বিধানের উল্লেখ রয়েছে । চুক্তি আইনে বলা হয়েছে যে, ১৮ বছর বয়সের কম কোন ব্যক্তি চুক্তি করতে পারে না । এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের মানব সন্তানকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে । নিম্নতম মজুরী আইনে ১৮ বছর পূর্ণ না হলে সে শিশু হিসেবে গণ্য হয় । খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের তালাক আইনে নাবালক নির্ধারণের ক্ষেত্রে পুত্রের ১৬ বছর এবং কন্যার ১৩ বছরের কম হলে নাবালক বলা হয়েছে ।

খনি আইনে ১৫ বছর পূর্ণ না হলে তাকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয় । শিশুকে খনিতে কাজে নেয়া যায় না । ১৯৩৯ সালের মটর গাড়ী আইনে ১৮ বছরের কম বয়সের ব্যক্তিকে গাড়ী এবং ২০ বছরের কম বয়সের ব্যক্তিকে বড় গাড়ী চালানোর অনুমতি দেয়া হয় না । এত বৈপরিত্য সত্ত্বেও এই মুহূর্তে আমাদের জন্য যে বিষয়টি আশার সঞ্চার করছে সেটি হলো যে সরকার শিশুর সংগা নির্ধারণের এই জটিল বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন । বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের দ্বিমাসিক নিউজলেটার জুলাই-আগষ্ট/২০০৫ সংখ্যায় মানব জমিনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়- আর্ন্তজাতিক শিশু অধিকার সনদের অনুসরণে অনূধ্ব ১৮ বছর বয়স্ক সব বালক-বালিকা শিশু হিসেবে গণ্য হবে ।

এ লক্ষ্যে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে “দি কোর্ট অব ওয়ার্ডস (সংশোধন আইন)-২০০৫” নামের একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে । ভূমি প্রতিমন্ত্রী উকিল আব্দুর সাত্তার বিলটি উত্থাপন করলে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ৬ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হয় । বিলে বলা হয়েছে, দেশের আর্থসামাজিক বিবেচনায় বিভিন্ন আইনে শিশুদের ভিন্ন ভিন্ন বয়স নির্ধারণ এবং আর্ন্তজাতিক শিশু অধিকার সনদ অনুসরণের লক্ষ্যে দি কোর্ট অব ওয়ার্ডস আক্ট (Act) ১৯৭৯-এর সংশোধনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে । এই আইনে শিশুর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি তার বয়স ২১ বছর পরিপূর্ণ করেনি সেই শিশু । প্রায় ২৬ বছর আগে প্রণীত এ আইনের কার্যকারীতা- বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়েছে ।

এদেশের আবহাওয়া ও প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠা বালক-বালিকারা সাধারণত ১৮ বছর বয়সে নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে সংরক্ষণ, ভাল ও মন্দ সর্ম্পকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে । এ বিবেচনায় বিলটি আনা হয়েছে . শিশু অধিকার আজকের শিশু জাতির সোনালী ভবিষ্যতের স্থপতি । সুন্দর কল্যাণকর জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন এমন সুন্দর পরিবেশ যেখানে জাতির ভবিষ্যত স্থপতিগণ সকল সম্ভাবনাসহ সুস্থ,স্বাভাবিক ও স্বাধীন মর্যাদা নিয়ে শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, আধ্যাত্নিক এবং সামাজিকভাবে পূর্ণ বিকাশ লাভ করতে পারবে । শিশুদের জন্য এরূপ একটি পরিবেশ গঠন কারো দয়া বা অনুগ্রহের উপর নির্ভরশীল থাকলে চলবে না । এজন্য প্রয়োজন শিশুর অধিকার সম্বলিত উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন ।

এই বাস্তব সত্য উপলব্ধি করে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে শিশু অধিকারের উপর বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে । বাংলাদেশও পরিবর্তনশীল সময়ের দাবী অনুযায়ী শিশু অধিকারের উপর বিভিন্ন আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছে । ১/ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধীনে শিশু অধিকারসমূহ ২/ শিশু আইনে শিশু অধিকার ৩/ অন্যান্য আইনে শিশু অধিকার দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শিশুদের জন্য সুষ্ঠু কার্যক্রম গ্রহণ অপরিহার্য ৷ প্রত্যেক শিশুকে দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্ঠায় সকলের অংশগ্রহণ একান্ত বাঞ্জনীয় ৷ শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার ৷ জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিশুদের উন্নয়নের সার্বিক কার্যক্রম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন ৷ ১/ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধীনে শিশু অধিকারসমূহbr /> অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার অবসর ও বিনোদন উন্নত জীবন মান গ্রেফতার ও দন্ড থেকে বিশেষ সুরক্ষা চিকিত্‍সা পরিচর্যা জন্ম নিবন্ধন ও আইনসম্মত পরিচিতি দত্তক গ্রহণ ও প্রদান পারিবারিক সংহতির পিতামাতার সাথে বসবাস পাচার থেকে সুরক্ষা প্রতিবন্ধী শিশু পুনরুজ্জীবন ও পুনসংহতকরণ পরিবার বঞ্চিত শিশুর ক্ষেত্রে সঠিক যত্ন বেঁচে থাকা বিকাশ লাভ মর্যাদা ও সুনাম মত, ভাব চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা মেলা মেশার স্বাধীনতা মানবিক আচরণ মাদকের অপব্যবহার থেকে রক্ষা যৌন অনাচার থেকে রক্ষা শিক্ষা লাভ শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন শরনার্থী শিশু শোষন থেকে রক্ষা সঠিক লালন পালন সশস্ত্র সংঘাত থেকে সুরক্ষা সামাজিক নিরাপত্তা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ক সংখ্যালঘু শিশু ২/শিশু আইনে শিশু অধিকার বাল্য অপরাধী হিসাবে জামিন ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োগ থেকে রক্ষা নিষ্ঠুর আচরণ থেকে রক্ষা ৩/অন্যান্য আইনে শিশু অধিকার শ্রম আইনে শিশু ঝুকিপূর্ণ ও শিশু শ্রমে নিয়োগ নিষিদ্ধ স্থানে নিয়োগ থেকে সুরক্ষা শ্রম বিষয়ে বন্ধকী চুক্তি থেকে রক্ষা কর্মজীবী শিশু হিসেবে বিশেষ সুবিধা কর্মজীবী মায়ের সন্তান হিসেবে শিশু কক্ষ নবজাত ও ভূমিষ্ট হবে এমন শিশু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শিশু ধর্ষণের ফলে জন্মগ্রহনকারী শিশু পারিবারিক আইনে শিশু ভরণপোষণ শিশুর হেফাযত (হেযানত) সঠিক প্রতিপালন ও অভিভাবক বুকের দুধের বিকল্প খাদ্যের ব্যবহার থেকে সুরক্ষা বুকের দুধের বিকল্প খাদ্য থেকে নিরাপত্তা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.