আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিয়তি আমার ভাগ্য লয়ে যে নিশিদিন খেলা করে

. আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া... টিভি দেখিনা প্রায় বছর চারেক হলো। তাই টিভিতে কি দেখায় বা কোন অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তার শীর্ষে এসব কিছুই আমার জানা নেই। মাস দুয়েক আগে একদিন বিকালে আমার ছেলের প্রাক্তন গৃহ-শিক্ষক যে কিনা তখন সিলেটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো, হঠাত ফোন করে বল্লো, " মাসিমা আমি আপনার বাসার কাছেই এসেছি। ঠিকানাটা যদি বলেন তবে দেখা করে যেতাম"। সানন্দেই তাকে ঠিকানা বললাম।

অনেক বছর পর তার সাথে দেখা হয়ে ভালোই লাগলো। তার মুখেই শুনলাম সে আমার পাড়ার ৫ তারা হোটেল রোজভিউতে "কে হতে চায় কোটিপতি অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচিতদের ২য় রাউন্ডের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে হবিগঞ্জ থেকে সিলেটে এসেছে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্ব, রাজকীয় খানা-দানা, দারুন সময় কাটিয়েছে। ৭টার সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সে অনুষ্ঠানের খবরের সাথে সাথে তাকেও দেখা গেলো। যাই হোক! যাওয়ার সময় পল্লব বার বার বলে গেলো "মাসিমা ২য় বার রেজিষ্ট্রেশনের সময় আমি আপনাকে জানাবো, প্লিজ! আপনি রেজিষ্ট্রেশন করবেন।

ব্যাপারটা যথারিতি আমি ভুলে গেলাম। মাস খানেক আগে পল্লব ফোন করে বল্লো, " আমি ফাইনাল রাউন্ডের জন্য নির্বাচিত হয়ে ঢাকায় এসেছি। দোয়া করবেন। আপনি রেজিষ্ট্রেশন করেছেন? হঠাত মনে পড়লো আমার মোবাইল জীবনের প্রথম সিমটি ছিলো একটেল( বর্তমানের রবি)। খুঁজে পেতে সেটা বের করে ৫০ টাকা ভরে সেটাকে সচল করে রেজিষ্ট্রেশন করেই ফেললাম।

৩টা প্রশ্নের মাঝে প্রথম ২টির ৩টি করে অপশন থাকলেও ৩য়টির কোন অপশন ছিলোনা। আর সেটার উত্তরও আমার জানা ছিলোনা। আন্দাজে ঢিল ছুড়ে দিলাম। কয়েক দিন পর একটি এসএমএসের মাধ্যমে জানলাম আমি ২য় পর্বের জন্য নির্বাচিত হয়েছি। ২য় পর্বের অনুষ্ঠান হবে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে।

আমাকে যথা সময়ে ফোন করে জানানো হবে। টাইফয়েডে পড়ে ত্রাহি মধুসুদন করা ছাড়া আর কিছুই মনে ছিলোনা। এর মাঝে একদিন সেই বিখ্যাত কোটিপতি অনুষ্ঠানের বাজনা কানে এলে উঠে টিভির সামনে গিয়ে দাড়ালাম। দেখলাম একজন সুবেশী সুন্দরী হট সিটে বসে আছেন। যিনি "পেডিকিউর" কাকে বলে জানতে লাইফ লাইন ব্যাবহার করলেন।

মেজাজ চরমে উঠলো। বিউটি পার্লারে জীবনে একবার মাত্র গিয়েও তো আমি জানি পেডিকিউর কাকে বলে। ( সেই একবার পার্লার কথন পরে কোন সময় বর্ননা করবো) ধ্যাত!!! বলে আর কিছুই দেখিনি। ২১ তারিখ সন্ধ্যায় একটি কোটিপতি অনুষ্ঠান থেকে ফোন এলো। জানানো হলো দ্বিতীয় পর্বে নির্বাচিত হয়ে আমার প্রতিক্রিয়া কি? বললাম, ভাই অসুখে পড়ে চিঁচিঁ করছি, অনুভুতি বোঝার ক্ষমতা এই মুহুর্তে নেই।

আমার সুস্থতা কামনা করে জানানো হলো, ২৩ তারিখ সকাল ৮টায় আমাকে চট্টগ্রামে জুবিলী রোডে অবস্থিত হোটেল টাওয়ার ইন এ উপস্থিত হয়ে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। এবং সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত তাদেরকে সময় দিতে হবে। আরো কিছু ব্লা ব্লা ব্লা। কুম্ভকর্ণকে গিয়ে বললাম, "ফোন এসেছিলো। ২৩ তারিখ সকাল ৮টায়।

" পাগল নাকি"? এক কথায় আমার কথা উড়িয়ে দিয়ে টিভির দিকে মনোযোগ দিলেন। মিনিট খানিক হীমশীতল দৃষ্টি হেনে সামনে থেকে সরে এলাম। একটু পরেই আমার সামনে এসে বসে বল্লো, " শোনো, আমি আজ পর্যন্ত তোমাকে কোন কাজে বাঁধা দিয়েছি? সব সময় তুমি একা, অথবা বাচ্চাদের নিয়ে ঢাকা গিয়েছ। আমি দুঃচিন্তা করিনি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বয়সের তোমাকে একা ছাড়ার কথা আমি কল্পনাও করতে পারিনা।

কারন এখন এদেশটা পশুতে ভরে গেছে। আর একটি কথাঃ " আমি নিজে তোমাকে নিয়ে যাবো। কিন্তু কখন? তারা যেসব কাগজ-পত্র নিতে বলেছেন সেসব ঠিক করতেই তো ২২ তারিখ সারা দিন না হলেও দুপুর পর্যন্ত যাবে। রাতে রওনা দিয়ে ২৩ তারিখ সকালে পৌছে এই অসুস্থ শরীরে সারাদিনের ধকল সামাল দিতে পারবে? যেখানে ১৫/২০ মিনিট কথা বলেই তুমি ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছ। ফোনটা যদি আর একদিন আগে আসতো তবে একদিন আগে যেয়ে উপস্থিত হতে পারতাম।

তোমার হয়তো এতোটা কষ্ট হতোনা। চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম, কুম্ভকর্ন নিজেও অসুস্থ। শেষ পর্যন্ত দুজনেই আবার এক সাথে না বিছানায় পড়ি। থাক!!! যাওয়ার দরকার নেই।

সুযোগটা এসেছিলো কিন্তু সুযোগ মতো নয়। এখন ভেবে পাচ্ছিনা আমার কি মেজাজ খারাপ? নাকি মন খারাপ? মনটা কেমন যেনো কুপা সামসু হয়ে আছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।