আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেফাজতে ইসলাম, হেফাজতে শাহবাগ ও হেফাজতে বাংলাদেশ

ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো জামাতে ইসলামী ছাড়া অন্য ইসলামী দলগুলার নাম খুব একটা সামনে আসে না। বিগত দুই চার মাসে কিছু হরতালের কারণে জানতে পারসি ১২টা ইসলামী দল আছে। শুরুতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার শপথ নিলেও শাহবাগ এখন নিজদের তাকদ দেইখা এইসব ইসলামিক দলগুলারে সমঝে চলে। একটা বিপ্লব যখন সমঝে চলা শিখসে তাইলে বলতে হবে- বিপ্লবের ডেফিনেশন চেঞ্জ হইতেছে। কদ্দিন আগেও ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া শাহবাগ স্কয়ার বৈলা তাহরীরী ভাব দিলেও, শাহবাগ কোনকালেই সংগা মুতাবেক স্কয়ার বা বিপ্লবী জোশে মিশরের সমান হইতে পারে নাই।

তারা সেনাবাহিনী দুরের কথা পুলিশের সাথেই পাঙ্গা নিবার ক্ষমতা রাখে কিনা সন্দেহ। সরকারের আস্থা অর্জন করে বেশ জোরেশোরেই সাংস্কৃতিক এই আন্দোলন ছড়ায়ে দিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সভা করতে গেলে হেফাজতে ইসলামের বিরোধিতার মুখে পড়ে। পরে সেই কর্মসূচি বাতিল করা হয় 'আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায়ে'। আইনের প্রতি এত শ্রদ্ধা কাদের মোল্লার ফাসির রায়ের পরে দীর্র্ঘদিন দেখা যায় নাই। থাবা বাবার কলঙ্ক ধামাচাপা দিয়া সরকার দফায় দফায় এসেমেস আর ছোট সরকার শাহবাগ থেকে দৈনিক 'আন্দোলন ধর্মবিরোধী নয়' ঘোষণা দিলেও এই রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক ইসলামিক দলগুলারে সামলাইতে পারতেছে না।

টক্কর নেয়ার হিম্মতও দেখাইতেছে না। বিশাল গণআন্দোলন আর ব্রুট মেজরিটির সরকারের জয়েন্ট এলায়েন্স টক্কর নিতে ভয় পায় কার সাথে? এরা কারা? আঞ্জুমান হেফাজতে ইসলাম মূলত চ্যারিটি কইরা বেড়াইলেও হপ্তা দুই আগে তাগো একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী ব্রো গ্রেফতার হয়। নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নামলে তার গ্রেফতার হওনের পরে হেফাজতে ইসলাম ক্ষেইপ্পা উঠসে। সেই ব্রাদারের নামে আফগানে যুদ্ধ করার অভিযোগ থালেও তা প্রমাণিত হয় নাই। পত্রপত্রিকাতে ঘটনাটা সামনেও আসে নাই।

শুনা গেছে তারে কাশিমপুর থিকা ছাড়াইতে ব্রিটিশ হাইকমিশন দেনদরবার করতেছে। এই হেফাজতে ইসলামের শীর্ষনেতা ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা আল্লামা মাওলানা শাহ আহমেদ শফি চট্টগ্রামের বিখ্যাত আল্‌-জামিয়াতুল আহ্‌লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম বা হাটহাজারী কওমী মাদ্রাসা বা বড় মাদ্রাসার প্রধান। এই বড় মাদ্রাসায় ৫০হাজার শিক্ষার্থী আছে, বছরে শ খানেক উলামা এইখান থিকা বের হয়। সুতরাং সরকারী পাইক বরকন্দাজ যতই বিরোধী দলের কার্যালয় হানা দেয়ার হিম্মত দেখাক, মাওলানা শফির গায়ে তারা ফুলের টোকা দিতেও দশবার সামনে পিছে হিসাব করবে। সেক্যুলার দল হিসাবে লীগের এই বেহাল দশায় খুব একটা আনন্দিত হবার কিছু নাই।

কারণ প্রথমবারের মত এই মাদ্রাসাভিত্তিক দলগুলা বুঝতে পারসে- তাদের শক্তি। সামনে তারা এই শক্তির মহড়া দেখাবে না এমন বলা যায় না। প্রশ্ন আসে, যারা নির্বাচনে দাড়াইলে জামানত হারায়, তারা বিরোধীদলের চেয়েও শক্তিশালী হয় কিভাবে? কারণ ধর্ম? আমি মনে করি শিক্ষা। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেই সযত্নে গরিব দুখীদের জন্য মুটামুটি দুনিয়াবি শিক্ষাবিহীন বাইরের টাকায় চলা মাদ্রাসাশিক্ষাকে বাইড়া উঠতে দিসি। একদিকে ইংরাজি মিডিয়াম, আরেকদিকে মাদ্রাসা।

শহুরে সেক্যুলার শিক্ষায় আমরা হুমায়ুন আজাদের কবিতা পাঠ্য করি। আবার সেই হুমায়ুন আজাদকেই ওই মাদ্রাসার ছেলেটা ঘৃনা নিয়া বড় হইতেছে। এই দুরত্ব বাড়তে বাড়তে আমরা দেশের মধ্যেই ভিন্ন মাইন্ডসেটের দুই তিন ধারার মানুষ তৈয়ার করতেছি। কেউ চাঁদে সাইদী দেখে, কেউ আসমানে চিঠি পাঠায় বেলুনের লেজে। এই ভিন্নমতের কনফ্লিক্টে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার অজ্ঞতা পরিস্কার।

তারা হঠাত আবিস্কার করসে টুপি মাত্রই জামাত না। সুশীল সমাজের চক্ষের সীমানার বাইরে এই শক্তির উথাননিরবে হইতেছে। এতে জামাতের জোটসঙ্গী বিএনপির খুব খুশির কিছু নাই। ইসলামিক দলগুলার মাসল বাড়তে থাকলে আগামী ২০-৩০ বছরে ইসলামিক শক্তির উথান হইতে পারে। তৃতীয় বা দ্বিতীয় শক্তি হিসাবে।

এখন প্রশ্ন দাড়ায়, আলোচনায় কে কার সাথে বসবে? যে রিকনসিলিয়েশনের রাজনীতির কথা ব্যবসায়ী নেতারা ও তার গোলাম পত্রিকাওয়ালারা বলে, তা কি রাজাকারের বিচার বন্ধ কইরা সমঝোতার সমীকরণ বাতলাইতে চায়? বিএনপি-লীগের আলোচনা বৃথা। দেড়শো নেতাকর্মী গ্রেফতারের পরে সংলাপে ডাক দেয়াটা অনেকটা বাড়ি পুড়ায়ে আলু পোড়া খাওয়ার দাওয়াত। বিএনপি বললেই এই ইসলামিক দলগুলা ঘরে ফেরত যাবে না। লীগ-জামাত আলোচনায় রাজাকারের মুক্তির দাবি আসবেই। যা মাইনা নিলে দল হিসাবে লীগের মৃত্যু অবধারিত।

সুতরাং, সরকারের উচিৎ বিএনপি না, হেফাজতে ইসলাম ও তাদের সমমনা দলের সাথে সংলাপ করা। চাহেতো উনাদের জোটে আইনা আরেকটু ইসলামিক হওনের সুযোগ নেয়া। হিন্দুদের সংখ্যা ক্রমেই কমতেছে দেশে। অব্যাহত মন্দিরে, বাড়িতে হামলা জারি থাকলে আরো কমবে। সংকুচিত এই ভোট ব্যাংক ছাইড়া দিয়া ৯০ভাগ মুসলিমের ভোটে ভাগ বসাইতে হেফাজতে ইসলাম টাইপ পার্টির বিকল্প নাই।

ওলামা লীগ বানায়েও লাভ নাই। কারণ দলগুলার শক্তি ওলামায় না, মাদ্রাসায়। ভোটের রাজনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের মত, সামনে মাদ্রাসা দখলের রাজনীতি দেখতে হইতে পারে। যতদিন এই গরিব সন্তানদের শিক্ষা স্বাস্থ্যের চেয়ে সাবমেরিন যুদ্ধবিমান কেনার চেয়ে আগ্রহ থাকবে সরকারের, ততদিন এদের সমঝে চলতে হবে। ২০০৮ সালে হার্ভার্ড ইন্টারন্যাশনাল রিভিউতে সজীব জয় ও আমেরিকান আফগান এন্টিটেররিজম যোদ্ধা-বোদ্ধা সহলেখক একটি আর্টিকেল লিখসিলেন।

তাতে রাইজ অফ ইসলামিক এক্সট্রিমিজমের যে রূপ দেখানো হইসিলো, তা মূলত জামাতি স্টাবলিসমেন্ট ঘরানার ইসলামায়জেসনের বর্ণনা। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির শিক্ষার জন্য মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে যেই ইসলামায়জেষণ হইতেছে তা দেশী রাডারে ধরা না পড়লে আগামীতে হেফাজতে ইসলাম মার্কা দলের কাছে হেফাজতে বাংলাদেশ হেরে যাবে। দেশের বাইরে থেকে এইসব দল নিয়ন্ত্রনের কলাকৌশল সুপার পাওয়াররা জানে। হেফাজতে বাংলাদেশ, হেফাজতে শাহবাগ তা জানে না। -বাঙ্গাল ১৪ মার্চ ২০১৩ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.