আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুড়ে যাও হালিমারা

কবে যাবো পাহাড়ে... কবে শাল মহুয়া কণকচাঁপার মালা দেব তাহারে.... দুপুর দু’টা। ফেলানী ঝোলে কাঁটাতারে। সেই ছবি ইন্টারনেট থেকে নামিয়ে ব্লগের পাতায় এঁটে দেয় সেলিব্রিটি ব্লগার। হিট-কাউন্ট পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায় নিমেষেই। প্রতি মিনিটে পেজ রিফ্রেশ করে আর তৃপ্তির হাসি হাসে উঠতি লেখক।

আগামী বইমেলায় বই প্রকাশের স্বপ্ন তার চোখেমুখে। সকাল দশটা। ৪টা সংবাদপত্রে গ্যাসের ভাগবাটোয়ারার হিসাব ছাপা হয়েছে। সরকারকে ষড়যন্ত্রকারী আখ্যা দিয়েছে কিছু মূর্খ বুদ্ধিজীবি। ঘৃণায় মুখ কুঁচকে বিদেশী সিগার ধরান প্রধানমন্ত্রীর সেক্রেটারী।

ঠিক সেসময় পেট্রোবাংলা অফিসের কোনো ডেস্কে টেন্ডারের ফাইলে আরেকটা সরকারী সীল লাগে। ফেসবুকে তখন দাবানল লেগেছে। সরকারের মুন্ডু নিপাত করতে করতে পোস্টে শেয়ার দেয় সবাই। ওদিকে লিমনের আজ জ্বর এসেছে। ক্রাচে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ফার্মেসীতে ওষুধ আনতে যায় সে।

রাস্তার পাশে দু’জন পুলিশ অলস দাঁড়িয়ে গুলতানি মারছে। লিমনের গায়ের কাঁপুনি জ্বরের না আতংকের- বোঝা যায় না। বেশ মাসখানেক মাথায় তুলে নেচে জাতি আজ তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। হাতে তুলে নিয়েছে নতুন খেলনা। রাত দশটা বাজে।

বেকার স্বামী তখন বাজার থেকে দুই লিটার নীল কেরোসিন কিনে ঘরে ফেরে। আজ তার সুন্দরী বউয়ের মাংসের বারবিকিউ হবে। উত্তেজনা প্রশমনের নিমিত্তে গলায় ঢালে আধবোতল মদ। আগুনে পোড়ে হালিমা। পোড়া মাংসের অসহ্য গন্ধ সইতে না পেরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে স্বামী-শাশুড়ী।

পাঁচ বছরের কন্যাসন্তানটি মায়ের আধপোড়া আধগলা অর্ধমৃত শরীরের পাশে বসে চেয়ে রয় অপলক দৃষ্টিতে। আগুন জ্বলে ব্লগেও। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, সব উৎসর্গ হয় ওই গলা-পঁচা লাশের নামে। গরম কফির মগে চুমুক দিতে দিতে পশুর মুন্ডু দাবি করে নিশাচর পাঠকেরা। স্রষ্টার বাস নাকি হৃদয়ে।

যত বড় হৃদয়, তত সেখানে স্রষ্টার আনাগোনা। মরা হৃদয়ে স্রষ্টা আসেনা। মরা বুক, মরা বিবেক নিয়ে কেনাবেচা করে যাই গ্যাসের, পানির, বিদ্যুতের, রুমানা কিংবা হালিমার আধমরা লাশের। আগামী পাঁচ বছরে দিন বদল হবে অনেকের। কেউ রিপোর্টার থেকে সাব-এডিটর হবেন, কেউ ফ্রি-ল্যান্সার ব্লগার থেকে প্রফেশনাল রাইটার হবেন।

কেউবা চাঁদাবাজ থেকে মন্ত্রী হবেন। পুড়ে যাও হালিমারা। যুগ যুগ ধরে হতে থাকো জাতির উন্নয়নের জ্বালানী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.