আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‌'আব্বু আম্মুকে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে'...কথাগুলো বলেছে পৌনে তিন বছরের শিশু -'তাহা'

আমার গায়ে প্রথম কেরোসিন ঢেলে দেন আমার শাশুড়ি (তানজিদা নূর)। ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরান স্বামী ইমন। ইমন বিয়ের প্রথম দিকে নির্যাতন না করলেও শাশুড়ি সব সময় মানসিকভাবে কষ্ট দিতেন। আগুন লাগানোর পর ফ্লোরে গড়াগড়ি দিয়ে নিজেই আগুন নেভাই। কেউ যাতে ঘটনা টের না পায় সে কারণে শ্বশুরের জর্দার ফ্যাক্টরির কাভার্ড ভ্যানে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

শ্বশুর-শাশুড়ি গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা কাউকে বললে চিকিৎসা না করারও হুমকি দেন। এদিকে রুমার পৌনে তিন বছরের শিশু তাহা বলেছে, আব্বু আম্মুকে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। গতকাল এলিফ্যান্ট রোডের ঢাকা বার্ন হাসপাতালের আইসিইউ'র (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) ৫ নম্বর বেডে শুয়ে রুমা এ কথাগুলো বলেন। জানা গেছে, গত ২ জুন ফেনীর সোনাগাজীর চরশাহ ভিকারির হালিমা ইয়াসমিন রুমার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগান রুমার স্বামী হারুনর রশিদ ইমন ও ইমনের মা তানজিদা নূর। রুমাকে প্রথমে ফেনীর আলকেমি হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।

পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা বার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গায়ে আগুন লাগার প্রায় ১৭ দিন পর রুমার জ্ঞান ফিরে আসে। রুমার চিকিৎসক ডা. নাঈম জানান, রুমা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। শরীরের ৩৫ ভাগ পুড়ে গেছে। সে সঙ্গে আছে শ্বাসকষ্ট।

ডা. নাঈম জানান, আগুন লাগানোর আগে রুমার ঠোঁট ও চোখ ফুলা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে আগেও তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। রুমার স্বজনরা জানান, ইমনের ব্যবহার ভালো ছিল না। ২০০৮ সালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বিএসসির পুত্র হারুনর রশিদ ইমনের সঙ্গে হালিমা ইয়াসমিন রুমার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন যেতেই তারা জানতে পারেন আসল ঘটনা।

মামা সুমন বলেন, ইমনের নেশার অভ্যাস আছে। এ ছাড়া তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বাড়ির দারোয়ানকে পিটিয়ে হত্যাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। সুমন জানান, যৌতুক নেয়নি ইমনের পরিবার। কিন্তু কিছুদিন পরেই ইমনের বাবা পারিবারিক ব্যবসা থেকে ইমনকে সরিয়ে দেন। ইমনকে তিনি রুমার বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করতে বলেন।

এ জন্য রুমাকে প্রায়ই শারীরিক নির্যাতনও করা হয়। জানা যায়, এ পর্যন্ত ব্যবসার অজুহাতে রুমার পরিবার থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন ইমন। বার্ন হাসপাতালের ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান জানান, রুমাকে হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই ইমনকে মনে হয়েছে উগ্র স্বভাবের। ১৪ জুন ইমনকে ওষুধ আনতে বললে তিনি আনেননি। এ সময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।

নিরাপত্তার স্বার্থে প্রবেশে নিষেধ করা হলে ১৫ জুন সকালে গার্ডদের ফাঁকি দিয়ে রুমার কাছে গিয়ে বলেন, আগুন লাগানোর ঘটনা যদি কাউকে বল তাহলে আত্মহত্যা করব। রুমার মা বেগম রোকেয়া সেলিম এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় রুমার শ্বশুর আবদুল মালেক বিএসসি, শাশুড়ি তানজিদা নূর ও জামাই ইমনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি জানান, আসামিরা পলাতক। কোম্পানীগঞ্জে তাদের বাসাটিও তালাবদ্ধ।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মনজুরুল হক আকন্দ বলেন, আসামিদের ধরার চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে নানীর হাতে ফিডার খাচ্ছিল রুমার পৌনে তিন বছরের শিশু তাহিয়া নূর তাহা। নানীকে শিশুটি বলছিল, আম্মু ডাকছে নিয়ে চল। কিন্তু নানী তাহাকে যেতে দেননি। মায়ের পোড়া মুখ দেখলেই ভয়ে কেঁদে উঠে তাহা।

রুমার মা জানান, রুমাকে আগুন লাগানোর সময় তাহা উপস্থিত ছিল। তাহা প্রায়ই বলে, আব্বু আম্মুকে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।