আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপবাদ- যা ব্যক্তিত্ব ও রিজ্বক বিনাশ করে

ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকারক অন্যায় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অপবাদ। যে ব্যক্তি অন্যকে অপবাদ দেয় সে অন্যের ক্ষতি করার পাশাপাশি নিজের ক্ষতি করে। নিজের আত্মাকে পাপের মাধ্যেমে কুলষিত করে। অযথা অপবাদ কারো সম্পর্কে সমাজে বিদ্রুপ ছড়ালে তা সংক্রমিত হতেই থাকে। মিথ্যা অপবাদ যে ব্যক্তিকে নিয়ে হল- তা শুনে ঐ ব্যক্তির যে ক্ষতি হল সে জন্য যিনি আন্দাজে অপবাদ ছড়িয়েছেন তাহার রিজক্ব কমিয়ে দেওয়া হয় এবং আল্লাহর কাছে তাহার বিশ্বাস যোগ্যতা কমতে থাকে।

তাহার দোয়াও কবুল হয় না। এখন প্রশ্ন হলো অপবাদ কি? কোন ব্যক্তির মধ্যে যে দোষ ক্রটি নেই তাহাকে সে জন্য সাবস্থ্য করাকেই অপবাদ বলা হয়। কাউকে অপবাদ দেওয়া কবিরা বা মারাত্মক গুনাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কালামুল্লাহে কাউকে অপবাদ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে অপবাদ দিবে তাহাকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে বলে কোরআনে উল্লেখ করা আছে।

একজন নিরপরাদকে অপবাদ দেয়ার পাপ বড় পাহাড়গুলোর চেয়েও বেশী ভারী। অপবাদ বা কুৎসা রটনা হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার। এটা যদি ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে করা হয় তা হলে তা গীবত হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থাৎ অপবাদ দেয়ার মাধ্যেমে একজন মানুষ প্রকৃত পক্ষে দুই ধরণের পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। এক ব্যক্তি একজন আলেমের সাথে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিলেন এক জায়গায়।

ঐ ব্যক্তির সঙ্গে তার কাজের লোকটিও ছিল। হাঁটতে হাঁতে এক পর্যায়ে কাজের লোকটি পিছনে পড়ে যায়। এ অবস্থায় সঙ্গী ব্যক্তিটি তার কাছে আসতে ডাক দিলো। কিন্তু কাজের লোকটি কোন জবাব দিলো না। এভাবে বার কয়েক ডাকাডাকি করেও যখন সাড়া পেলো না তখন ওই ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হয়ে গালি দিলেন।

যা আসলে কাজের লোকটির মায়ের প্রতি এক ধরণের অপবাদ। আলেম ব্যক্তিটি ঐ ব্যক্তির আচরণ ও কথা শুনে অসন্তুষ্ট হন এবং ব্যক্তিটি যে নিন্দনীয় আচরণ করছে তা বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সে তা না মেনে নিজের আচরণের পক্ষে সাফাই ও যুক্তি তুলে ধরার চেষ্টা চালিয়ে গেল। তখন তিনি তাহাকে তার সঙ্গ ত্যাগ করতে বললেন। আসলেই ঐ সব লোকদের সংশ্রব এড়িয়ে চলা উচিত।

অপবাদ আগে বা পরে সামাজিক সুস্থতা বিনষ্ট করে। সামাজিক ন্যায় বিচার ধ্বংস করে, সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য হিসেবে তুলে ধরে। অপবাদ মানুষকে কোন কারণ ছাড়াই অপরাধী হিসেবে তুলে ধরে এবং সম্মান ও ব্যক্তিত্বকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। কোন সমাজে যদি অপবাদরীতি চালু থাকে এবং অপবাদকে মেনে নেয় ও অপবাদকে তারা বিশ্বাস করে তখন মিথ্যা ও সত্যের বেশ ধারণ করে সামনে আসে। ফলে সমাজে অনাস্থা, অবিশ্বাস এবং বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়ে।

এ অবস্থায় যে কেউ কারো বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে এবং যাকে তাকে অপবাদ দেয়ার সাহস পায়। এর ফলে সমাজে বন্ধুত্ব ও সহমর্মিতার পরিবর্তে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতার স্থান দখল করে নেয়। কে কখন অপবাদের শিকার হয় তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে মারাত্মক কু-প্রভাব রয়েছে। হযরত সাদেক (র.) বলেছেন যখনই কোন ব্যক্তি কাউকে অপবাদ দেয় তখনই তাহার ঈমান নষ্ট হয়ে যায় এবং তাহার নেক আমলগুলোকে মিটিয়ে দেওয়া হয়। তাহার বরাদ্দকৃত রিজক্বের অংশকে সংকুচিত করা হয়।

এবং তাহার ত্বাকদিরের ভালো প্রাপ্যগুলোকে অপবাদকৃত ব্যক্তিটির ভাগ্যের সহিত জুড়ে দেওয়া হয়। মোটকথা তাহার সকল কর্মকেই বিলিন করে দেওয়া হয়, যেমনটি লবণ পানিতে মিশে যায়। যে অপবাদ দেয় তাহার ঈমান নষ্ট হবার কারণ হলো- ঈমান সততা ও সত্যবাদিতার সঙ্গে পথ চলে এবং অপবাদের অর্থ হলো অন্যের বিষয়ে মিথ্যা বলতে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে সে সত্যের পথে থাকতে পারে না। এ ভাবেই অপবাদ দানকারী ব্যক্তির ঈমান আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যায়। হৃদয়ে ঈমানের আলোর আর কোন অস্তিত্ব থাকে না এবং তার চুড়ান্ত স্থান হলো জাহান্নাম বা নরক।

আমাদের মহানবী (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিম নারী পুরুষকে অপবাদ দেবে তাকে পরকালে আগুনে নিক্ষেপ করা হবে। অপবাদ দুই ধরণের। এক ধরণের অপবাদ হলো ব্যক্তিটি দোষী নয় এটা জেনেও তাকে কোন কাজের জন্য দোষী সাব্যস্থ করা বা নিজে অন্যায় করে তা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সে ব্যাপারে কৃৎসা রটানো করা। আরেক ধরণের অপবাদ হলো- অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশে কাউকে কোন দোষের জন্য দায়ী করা। অন্যের বিষয়ে খারাপ দৃষ্টিভঙ্গী পোষণের প্রবণতা থেকেই এ ধরণের অপবাদের সুত্রপাত।

অজ্ঞতা ও সন্দেহের বশেই অপবাদ দেওয়ার ঘটনাই বেশী। এ কারণেই আল-কোরআনে সুরা হুজরাতে বলা হয়েছে হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক বিষয়ে সন্দেহ বা ধারণা করা থেকে বিরত থাক, কারণ কোন ধারণা বা সন্দেহ গোনাহ। কাজেই সন্দেহের বশীভুত হয়ে কারো বিরুদ্ধে কোন দোষ চাপিয়ে দেওয়া অপরাধ। ধারণা বা সন্দেহ অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। মনো বিজ্ঞানীরা বলেন অনেকে-ই সন্দেহের কারণে নিজ স্ত্রীকে বা স্ত্রী স্বামীকে হত্যা পর্যন্ত করে বসে।

পরে দেখা গেলো হত্যাকারী যে বিষয়ে সন্দেহ করেছিল তা সত্য নয়। সমাজ সংস্কারক হযরত মুসা কাজেম (র.)কে একজন প্রশ্ন করেছিলেন আমি বিশ্বাস যোগ্য একাধিক সূত্রে জানতে পেরেছি এক মুসলিম ভাই আমার সম্পর্কে এমন কথা বলেছে যা আমার অপছন্দ। কিন্তু পরে আমি জিজ্ঞেস করলে ওই ব্যক্তি তা অস্বীকার করেছে। এখন আমার করণীয় কি? এর জবাবে তিনি বলেন যদি সে ৫০জন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি ও তোমাকে বলে সে তোমার সম্পর্কে ভুল কথা বলেছে তা হলে তুমি তা বিশ্বাস করো না যা তোমার মুসলিম ভাইয়ের জন্য সম্মান হানীকর তা তুমি করো না। ঐশী গ্রন্থ আল-কোরআনে বলা হয়েছে হে মুমিনগণ, যদি কোন পাপচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন খবর আনে তা হলে তা পরীক্ষা করে দেখবে।

যাতে অজ্ঞতা বশত; তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হও। অর্থাৎ নির্দেশ হলো আমরা যখন কারো ব্যাপারে কোন কথা বা অপবাদ শুনব তখন আমাদের দায়িত্ব হলো প্রথমে তা পরীক্ষা করে এর সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হবো। কোন বিষয়ে তাৎক্ষনিক এবং প্রমাণ ও তদন্তবিহীন মূল্যায়ন নিষিদ্ধ। আমি এ ব্যাপারে কিছুটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি নিজ জীবনে। এমন কিছু ঘটনা আমার যা রটনা হয়ে সমাজে একটি বিরুপ ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।

আমার থেকে বেশী বিপদে পড়েছেন যাহারা আমাকে খুব ভালো ভাবে জানেন, অথচ যাহারা ঐ সব কুৎসা রটিয়েছেন তাদেরকেও আমি ভালো করে জানি। তাদের ভুমিকা এবং কর্মকান্ড ব্যাপারে আবগতই শুধু নয় প্রত্যক্ষ সাক্ষীও বটে। এরপরেও সুবিধা ও টু পাইস কামাতে একান্তই লোভের বশবর্তা হয়ে ওরা এই গীবত বা কুৎসা ছড়াচ্ছেন। যার ফলে তাহারা সমাজে তাহাদের মর্যাদা হারাচ্ছে এবং জীবন চলতে পথে লজ্জিত হতে হচ্ছে। যাক মূল কথা হল আল-ইসলাম অপবাদকে হারাম ঘোষনা করেছে এবং মুমিনদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যাতে একে অপরের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ না করা হয় এ জন্য।

এবং অকার্য্য প্রমান ছাড়া কাউকে কোন কিছুর জন্য দোষী সাবস্ত্য করা যাবে না। পাশাপাশি এদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে যে, কেউ যাতে অপবাদ দিতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে ব্যাখার মাধ্যেমে সন্দেহ সৃষ্টির শঙ্কা দূর করতে হবে। এ কারণেই ইসলামে পাপচারীদের সঙ্গে মেলা হয়েছে।

কারণ পাপচারীদের সঙ্গে মেলামেশার ফলে মানুষের মনে মুমিনদের বিষয়ে ও সন্দেহের জন্ম হতে পারে এবং পরিণতিতে অপবাদ দিতে পারে। মোট কথা আমরা যদি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেই যে, অপবাদ দিতে অন্যের ক্ষতির পাশাপাশি নিজেরও ক্ষতি হয়। আধ্যাত্বিক দিক থেকে থেকে অপূরণীয় ক্ষতি হয় তা হলে আমরা নারী পুরুষ জাতী ধর্ম নির্বিশেষে নিশ্চয় এ ধরণের বড় পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে এবং অন্যেকেও বিরত রাখবো। শুধু তাই নয় আমাদের কচি প্রাণ সন্তানদেরও এ ব্যাপারে বাস্ততমুখী শিক্ষা প্রদান করবো। আদর্শ সমাজ ও ঈমান রক্ষায় আমরা সবাই সচেতন ভূমিকা রাখবো বলে আশাবাদী চৌধুরী হাফিজ আহমদ কভেন্ট্রি ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.