আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৃজনশীল পদ্ধতি বনাম নোটবই

Bangladesh: Dream প্রাইভেট ও কোচিং বন্ধে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি (৩০ মে) 'শিক্ষার মানোন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা' নামে একটি সংগঠন সংবাদ সম্মেলন করে। নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার বেঞ্জামিন কস্তার নেতৃত্বে সংগঠনটির বলা চলে সবাই শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবে প্রাইভেট ও কোচিংয়ের ছড়াছড়ি তারা প্রত্যক্ষভাবে দেখছেন। শিক্ষার মানোন্নয়নে এগুলো প্রতিবন্ধক বলে তাদের এ আহ্বান। প্রাইভেট, কোচিংয়ের সঙ্গে আরেকটা যোগ হবে নোটবই।

সংগঠনটি এমন সময় আহ্বান জানাল, যার মাত্র দু'সপ্তাহ আগে এসএসসির ফল প্রকাশ হয়। যাকে বলা হচ্ছে ইতিহাসের রেকর্ডকৃত ফল। এটা অবশ্য ২০০১ থেকে জিপিএ পদ্ধতিতে চালু হওয়া ফলের ধারাবাহিকতা, অর্থাৎ ২০০১-এ জিপিএ পদ্ধতি চালুর পর থেকে প্রত্যেক বছরই ফলের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এবারে পাসের হার ৮১.১৬ ভাগ, যা গত বছর ছিল ৭৮.১৯ আর জিপিএ-৫-এর সংখ্যা ৬২ হাজার ৭৮৮, গত বছর ছিল ৬২ হাজার ১৩৪। বলার বিষয় হলো, এবারের ফলকে সবাই দেখছেন সৃজনশীল পদ্ধতির সফলতা হিসেবে।

ফল সম্পর্কে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুনের বক্তব্যে তা-ই এসেছে- 'নোট-গাইড না কিনে বিনামূল্যে দেওয়া সরকারের বই পড়লে ভালো নম্বর পাওয়া যায়_ এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। ' ফাহিমা খাতুন সৃজনশীল পদ্ধতির সফলতার ইঙ্গিত দিয়েই এ বক্তব্য দিয়েছেন। এ ধারণা ঠিক কাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক না শিক্ষকদের, নাকি তার মতো প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের। ২০১০ সাল থেকেই এসএসসিতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়। তখন বাংলা ও ধর্ম শিক্ষায় সৃজনশীলতা ছিল, এ বছর যোগ হয় সাধারণ বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ভূগোল, রসায়ন ও ব্যবসায় পরিচিতি।

মোট সাত বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি কার্যকর হলো। এ সাতটি বিষয়ে গাইড কেনেনি এ রকম শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে কি-না বলা মুশকিল কিংবা এসব বিষয়ে কেউ কোনো কোচিং করেনি তা বের করা কঠিন, আর প্রাইভেটের কথা না-ই বললাম। তবে এগুলোর বিস্তার যে সর্বত্র তা 'শিক্ষার মানোন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টা'র আহ্বান থেকে সহজে অনুমান করা যায়। বাস্তবতাও আমরা দেখছি_ শিক্ষা ব্যবস্থায় যখনই সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলো, ঠিক সঙ্গে সঙ্গেই বাজারে এলো সৃজনশীলের নামে গাইড, নোট। আবার কোচিংগুলোও অটো সৃজনশীল হয়ে গেল।

আজকে যে সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে এত তোড়জোড়, শিক্ষাব্যবস্থায় ঠিক এ নামে পৃথিবীর কম দেশেই তা আছে, এর তুলনায় কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতির প্রচলন আরও বেশি। বর্তমান সৃজনশীল চালুর আগে নামটা কাঠামোবদ্ধ হিসেবেই হওয়ার কথা ছিল, সেটাই সৃজনশীল নামে হলো। নাম যা-ই হোক, মূলত পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাই করা হয়, মুখস্থ বিদ্যা নয়। যথার্থভাবে তার মেধার পরিমাপ করা যায় এমন পদ্ধতিই কাম্য। বিশ্বব্যাপী প্রকৃত মেধা যাচাইয়ে অনেক আগ থেকেই একটা পদ্ধতি ব্যাপক পরিচিত, শিক্ষা বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ব্লুমস টেক্সোনমি (নষড়ড়স\'ং ঃধীড়হড়সু) বলে।

পঞ্চাশের দশকের প্রথমার্ধে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেঞ্জামিন এস ব্লুমের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ পদ্ধতি চালু করেন। যেখানে শিক্ষার্থীর মেধার প্রধান তিনটি বিষয় দেখা হয়_ জ্ঞানমূলক, অনুভূতিমূলক এবং মনোপেশিজ। এখানকার প্রথমটির (জ্ঞানমূলকের) আবার ছয়টি বিষয় আছে_ জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ, বিশ্লেষণ, সংশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন। এসব বিষয়ের সংযোগ ঘটিয়ে কোনো প্রশ্ন তৈরি করলে সেটাই হবে মেধা যাচাইয়ের আদর্শ প্রশ্ন। আমাদের যে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু আছে এখানে উপরোক্ত বিষয়গুলোর তিনটি দেখা হয়_ জ্ঞানস্তর, অনুধাবনস্তর এবং প্রয়োগস্তর।

ফলে বলা যায় আমাদের পদ্ধতি পুরো সৃজনশীল হয়নি। তবে এ কথা ঠিক, এটা সৃজনশীলতা পূর্ণাঙ্গতার একটা সূচনা, যার আরও কাজ বাকি আছে। সৃজনশীল পদ্ধতি এখন মোট সাতটি বিষয়ে হয়েছে, গণিতে হয়নি। অথচ গণিতেই সৃজনশীল পদ্ধতি বেশি দরকার। কারণ গণিত এমন একটা বিষয়, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থী মুখস্থ বিদ্যার বাইরে গিয়ে তার মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে।

বাস্তবতা হলো এখনও অনেক শিক্ষার্থীর কাছে গণিত একটা ভীতিকর বিষয়। অনেক শিক্ষক নিজেরাও এ ভীতি নিয়ে গণিত শিখেছেন, সে ভীতি নিয়েই গণিত করাচ্ছেন, ফলে তার প্রভাব এখনও শিক্ষার্থীর মনে রয়ে গেছে। সৃজনশীল পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর না হলেও, এ পদ্ধতির একটা জয়জয়কার অবস্থা এবারের এসএসসির ফলে দেখা গেল। শিক্ষার্থীরা যে এ পদ্ধতিটি বুঝেছে এবং সামনে এ পদ্ধতির আরও উন্নতি ঘটালে তারা তাদের মেধার বিকাশ যে আরও ভালো করে ঘটাতে পারবে, এবারের ফলই তার প্রমাণ। তবে বর্তমান অবস্থায়ও অনেক দুর্বলতা যে রয়ে গেছে, বিশেষ করে প্রশাসনিক দুর্বলতা এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ঘাটতি, তা মাদ্রাসা বোর্ডের ফলই প্রমাণ করে।

মাদ্রাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে পাসের হার। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।