আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সৃজনশীল তরুণদের এক রাজ্য

ফিদা হক গানপাগল মানুষ। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেনের দরকার। ফিদা হকের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন ছাড়াও লাগে গান। সেই গান শোনার ক্ষেত্রেও কোনো বাছবিচার নেই। হাতের কাছে যে গানই পান, একবার হলেও বাজিয়ে শোনেন।

প্রিয় শিল্পীর তালিকাটা তাই অনেক লম্বা।

তখন তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী ফিদা হক বেশ ভালো মাইনের চাকরি করেন। তবে মাঝেমধ্যেই দেশের কথা মনে হয়। একদিন গান শুনছিলেন।

বাংলা গান। হঠাৎ চমকে উঠে আবিষ্কার করলেন, তাঁর ফেলে আসা ধুলোমাখা শৈশবের সব ছবিই যেন ফ্রেমের মতো বাঁধাই করা আছে এই গানে। অচেনা তরুণ সেই শিল্পীর ব্যাপারে খোঁজ নিলেন। সেই খোঁজ নিতে গিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে আবিষ্কার করলেন, এই কয় বছরে বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনে তরুণেরা রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছেন।

শুধু কি সংগীত? আলোকচিত্র, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, টিভি নাটক, গল্প, উপন্যাস, কবিতা—একঝাঁক তরুণের হাতে যেন নতুন করে তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগৎ।



তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থেকেই ফিদা হক উপলব্ধি করলেন, এই সৃষ্টিশীল তরুণদের জন্য দরকার একটা জায়গা। শিল্প সৃষ্টির পেছনে প্রেরণা যেমন থাকে, একইভাবে শিল্পের স্বার্থেই এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, সৃষ্টিকর্ম থেকে শিল্পী যেন তাঁর প্রাপ্য টাকাটাও পান। শিল্পীকেও তো খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে। কিন্তু ব্যাপক পাইরেসির এই জগতে কী হতে পারে বিকল্প? ভেবে সেই বিকল্প বের করলেন তিনি। একটা রাজ্য! যে রাজ্যে সৃষ্টিশীল তরুণেরাই হবেন রাজা।

এই রাজ্যে সৃষ্টিশীল তরুণেরা সৃষ্টিকর্মের পসরা সাজিয়ে রাখবেন। সেই সব মানুষ আসবেন এই রাজ্যে, যাঁরা তরুণদের সৃষ্টিকর্ম কিনেই প্রাপ্য বাহবাটা দিতে চান। তাঁরা কিনবেন নিজের পছন্দের গানটি, কোনো বই, গল্প বা উপন্যাস। হতে পারে কোনো আলোকচিত্র বা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। তরুণেরা তাঁদের সৃষ্টিকর্ম রাখবেন সূর্যরাজ্যে।

আর সারা বিশ্বের ক্রেতারা কিনবেন সেখান থেকে।

এই ধারণা থেকেই ফিদা হকের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সূর্যমুখী লিমিটেড তৈরি করল সূর্যরাজ্য (www.shurjorajjo.com.bd)।

 

সূর্যরাজ্য কী?

সূর্যরাজ্য একটি ই-শপ। তবে এখানে বিক্রি হয় এমন কিছু, যেটা খোরাক মেটাবে মনের।

সাইকে নিশ্চয়ই আমরা সবাই চিনি।

ওই যে দক্ষিণ কোরিয়ার গায়কটি, অদ্ভুতুড়ে এক খ্যাপাটে ঘোড়া-নৃত্য নেচে আর ‘গ্যাংনাম স্টাইল’ গেয়ে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন যিনি। সাইকে বিখ্যাত বানিয়েছে কে? ইউটিউব।

সূর্যমুখীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিদা হক সাইয়ের এই উদাহরণ দিয়ে বললেন, ‘পৃথিবীর মানচিত্র এখন পাল্টে গেছে। আপনি গান করেন, লেখেন, আঁকেন, ছবি তোলেন, ভিডিও বানান, তৈরি করেন ফোনের অ্যাপস? কিন্তু নিজেকে তুলেধরবেন কোথায়? কোথায় সাজানো থাকবে নিজের সৃষ্টিশীল কাজ? প্রচলিত মাধ্যমগুলোতে হতেই পারে। তবে পৃথিবী এখন ই-দুনিয়া।

আর সেখানে ভার্চুয়াল জগতে নিজের সৃষ্টিশীল কাজগুলো বিক্রির ভালো মাধ্যম হতে পারে সূর্যরাজ্য। ’

 

কীভাবে কাজ করে সূর্যরাজ্য?

ফিদা জানালেন, সূর্যরাজ্য এমন একটা ওয়েব পোর্টাল, যেখানে যে কেউ যেকোনো ধরনের সৃষ্টিশীল কাজ তুলে ধরতে পারেন। সূর্যরাজ্য সেই কাজকে, শিল্পীকে সবার সামনে প্রচারের দায়িত্বটা নিয়ে নিচ্ছে। শুধু প্রচার নয়, শিল্পীদের আয় করার সুযোগও তৈরি করে দিচ্ছে। তরুণদের কাজ হলো বিনা খরচায় সূর্যরাজ্যে নিবন্ধন করে সৃষ্টিগুলো রেখে দেওয়া।

বাকি কাজটুকু সূর্যরাজ্যের।

সাইকে ইউটিউব বিখ্যাত বানিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁর গ্যাংনাম দিয়ে ইউটিউব যে কোটি কোটি ডলার কামিয়েছে, সেখান থেকে সাইকে দিয়েছে যৎসামান্যই। কিন্তু সূর্যরাজ্য একান্তই তরুণদের রাজ্য। এখানে তরুণদের সৃষ্টি থেকে বিক্রির প্রায় পুরোটাই দেওয়া হবে তাঁদের। ফিদা জানালেন, সূর্যরাজ্য হলো তেমনই একটা ই-শপ, যেখানে বিক্রি করা যাবে যেকোনো সৃষ্টিশীল কাজ।

আর এখানে টাকা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে থাকছে দেশে প্রচলিত সর্বোচ্চসংখ্যক ব্যাংক কার্ড ও ই-পেমেন্ট মাধ্যম। সূর্যরাজ্য থেকে প্রবাসীরাও কেনাকাটা করতে পারবেন। আর পুরো কেনাবেচার প্রক্রিয়াটিই হবে ই-কমার্সের মাধ্যমে।

ধরুন, কোনো সংগীতশিল্পী একটি গান রেকর্ড করলেন, তাঁকে আর পুরো অ্যালবাম শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। সূর্যরাজ্যে সাইন-আপ করে তাঁর গানটি আপলোড করে বিক্রি করা শুরু করে দিতে পারবেন।

একইভাবে যে কেউ এখানে নিজের কোনো শর্ট ফিল্ম বা নাটকও বিক্রি করতে পারবেন। পিডিএফ আকারে বই বানিয়ে সেই ই-বুকও বিক্রি করা যাবে।

ফিদা বলছিলেন, ‘সূর্যরাজ্য এক দিনের পরিকল্পনার ফসল নয়। প্রায় দুই বছরের পরিকল্পনা এবং দেশের সৃজনশীল গোষ্ঠীর মতামতের ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাইটটি তৈরি করা হয়েছে। সৃজনশীলদের জন্য করা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দেশে চলে এসেছি।

অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাই একবাক্যে বলেছে, অনলাইন থেকে এত সহজে কিনতে পারলে পাইরেসি থেকে মানুষ সরে আসবে। ’

 

যা আছে সূর্যরাজ্যে

সূর্যরাজ্যের গানের আর্কাইভ এরই মধ্যে অনেক সমৃদ্ধ। এখানে একতার মিউজিক, আজব রেকর্ডস মিউজিক—এসব লেবেলের গান যেমন পাওয়া যাচ্ছে, আছে অনেক একক সংগীতশিল্পী বা ব্যান্ডের গানও। এঁদের মধ্যে আছেন সাদি মহম্মদ, পারভেজ সাজ্জাদ, মেহরীন এবং অনেক নবীন-প্রবীণ শিল্পী।

চমক ছিল এখনো মুক্তি না পাওয়া শোভনের স্বাধীনতা নামের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের গানগুলোর ওয়ার্ল্ড মিউজিক প্রিমিয়ার।

গত আগস্টে সূর্যরাজ্যের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই আলোড়ন! বর্তমানে বাংলাদেশের বরেণ্য অধিকাংশ সংগীতশিল্পী, আলোকচিত্রী, সফটওয়্যার নির্মাতা, নির্মাতা, কবি, লেখকসহ সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত অনেকেই এখানে অনলাইন শপ খুলেছেন। কিন্তু পরিচিত মুখগুলোর পাশাপাশি যেন নতুন সৃজনশীল মানুষেরাও সহজেই উঠে আসতে পারে, এটা সূর্যরাজ্যের প্রধান লক্ষ্য। বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে একটি শিল্প ও সংস্কৃতিমনষ্ক জাতি হিসেবে পরিচিত করাও সূর্যরাজ্যের প্রচেষ্টা।

‘যেদিন কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মতো অচেনা অখ্যাত কোনো জায়গার এক গায়ক, লেখক বা চিত্রকর তাঁর গান বা সৃষ্টিকর্ম এখানে আপ করবেন, আর সেই সৃষ্টিকর্ম কিছু টাকার বিনিময়ে হলেও সারা বিশ্বের মানুুষ এখান থেকে ডাউনলোড করে শুনবে, সেই দিন পূরণ হবে আমার স্বপ্ন’—এ রকম একদিন ঘটবে, এমন প্রত্যাশা ফিদা হকের।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।