আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুধের এতসব গুণের সবগুলোই জানেন কি ?

ঙ দুধের পুস্টিমান, গুণাগুণ সমন্ধে আমরা কমবেশি জানি, কিন্তু দেখুনতো এর এতসব গুণের সবগুলোই কি আমরা জানি ? আমার নিজের জানা ছিল না । ভাবলাম এরকম দুএকজন যদি থাকেন যাদের জানা নেই, তাদের জন্য পোস্টটি দিলে কেমন হয় ? দুধ ও দাঁতক্ষয়ঃ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস দাঁতের গঠন ও বিকাশে উপকারী । দুধে প্রচুর পরিমাণে থাকা আমিষ ‘casein’ দাঁতের এনামেলের উপর প্রতিরোধী পাতলা স্তর গড়ে তুলে – মুখের ভেতর দাঁত এসিডের সংস্পর্শে আসলে এটি তখন দাঁত থেকে ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের ক্ষয় রোধ করে । দন্তবিশেষজ্ঞরা বলেন যে প্রতি বেলা আহারের মধ্যবর্তি সময়ে পানি বাদে দুধই হচ্ছে আরেকটি নিরাপদ পানীয় কারণ দেখা গিয়েছে দুধ দাঁত ক্ষয়ের সবচে’ নাজুক অবস্থাতেও দাঁতের ক্ষয় সাধন করে না । হাড়ের স্বাস্থ্যঃ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠন ও বিকাশে দরকারী ।

ছোটবেলা থেকে শুরু করে সারা জীবনব্যাপী দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ হাড়কে করে মজবুত আর রক্ষা করে ‘osteoporosis’ নামের হাড়ক্ষয়কারী রোগ থেকে । যদি দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার প্রতিদিনের আহারে না থাকে, তবে ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা দিতে পারে যা বিশেষ করে মহিলাদের আর বয়স্কদের চিন্তার বিষয় । ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে ‘osteoporosis’ নামক হাড়ক্ষয়কারী রোগ হতে পারে । দুধ ও রক্তচাপঃ শুধুমাত্র ফল ও সব্জি খেলে যে উপকার হত, তারচে’ ফল, সব্জি আর স্বল্প চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার নিয়মিত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অধিক কার্যকরী – এমনটিই ফুটে উঠেছে যুক্তরাস্ট্রের এক গবেষণায় । দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে ‘উচ্চমান সম্পন্ন আমিষ’ যা মানবদেহের জন্য দরকারী ।

দুগ্ধজাত আমিষ শরীরে অ্যামাইনো অ্যাসিড সরবরাহের মাধ্যমে অ্যামাইনো অ্যাসিডের কমতি থাকা ‘cereal’ ও সবজিজাত সাধারণ মানের আমিষের পুস্টিমান বাড়িয়ে তুলে । দুধ ও হৃদরোগঃ বেশ কিছু গবেষণায় দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণের সাথে হৃদরোগের লক্ষণসমূহ হ্রাসের একটি যোগসূত্র পাওয়া গেছে । দেখা গেছে যারা স্বল্প পরিমাণে দুধ পান করেছিলেন তাদের চাইতে যারা বেশি পরিমাণে দুধ (বিশেষত সর বাদ দিয়ে ) পান করেছিলেন তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম । এক্ষেত্রে আরো অন্যান্য নিয়ামক থাকতে পারে, তবে স্বাস্থ্য ও অসুস্থতা সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা গেছে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের সাথে হৃদরোগের ঝুঁকিহ্রাসের একটা সম্পর্ক রয়েছে । বিশেষ করে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ রক্তে বাজে কোলেস্টরেলের পরিমাণ কমিয়ে থাকতে পারে আর ভাল কোলেস্টরেলের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকতে পারে ।

অধিকতর বাজে কোলেস্টরেল আর কম পরিমাণ ভাল কোলেস্টরেল দুটোই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় । স্থূলতাঃ প্রচলিত ধারণার বিপরীতে জানা গেছে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেননা তাদের চাইতে যারা দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন তারা তুলনামূলক ঝরঝরে শরীরের অধিকারী হয়ে থাকেন । পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে ক্যালরি নিয়ন্ত্রিত সুষম খাবারের অংশ হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে ওজন হ্রাস ত্বরান্বিত হতে থাকে, বিশেষ করে তলপেট থেকে যেখানটায় বেশি চর্বি থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি । টাইপ-২ ডায়াবেটিসঃ নিয়মিত কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়; যা এখন শুধু বয়স্ক নয়, শিশু-কিশোরদেরও সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে । কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবারের এই উপকারিতার পেছনে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য দরকারি পুস্টিগুণের সমন্বিত অবদান আছে নয়ত এতে থাকা স্বল্প গ্লাইসেমিক সূচক রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।

৩৭,০০০ মধ্যবয়সী মহিলাদের মধ্যে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যারা পর্যাপ্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেছিলেন তাদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম ছিল। ৩,০০০ অতিরিক্ত ওজনের বয়স্কদের মাঝে গবেষণায় দেখা গেছে পরিশোধিত চিনি ও শর্করা গ্রহণ না করে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ওজনের বয়স্কদের শরীরে টাইপ-২ ডায়াবেটিস জেঁকে বসাটা প্রতিরোধ করতে পারে । হাইড্রেশন বা জলযোজনঃ শরীরে জলশূণ্যতা হলে দুর্বল মনযোগ, স্মরণশক্তির এলোমেলো ভাব, অনুভূতির অবসাদগ্রস্থতা আর ভাল না লাগার বোধ হতে পারে । তরল খাবার হিসেবে পানির পাশাপাশি দুধ সত্যিই দারুণ, যা শুধু শরীরের জলীয় মাত্রার পরিপূরণ করে না, সেইসাথে প্রচুর পুস্টিমান দিয়ে থাকে । ক্যান্সারঃ বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে পর্যাপ্ত দুধ পান মলাশয় ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করে ।

৪৫,০০০ সুইডেনবাসীর মধ্যে এক গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষদের মধ্যে যারা নিয়মিত প্রায়দিনই দেড় গ্লাসের মতন দুধ পান করেছিলেন; তাদের রোগ-শোক হবার ঝুঁকি, যারা সপ্তাহে দুই গ্লাসের মতন দুধ পান করেছিলেন তাদের চাইতে ৩৫% কম । পাশাপাশি ৪০,০০০ সুইডিশ মহিলাদের মধ্যে এক জরিপে দেখা গেছে যারা ছোটবেলা থেকে বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত দুধ পান করে আসছেন তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কম । মলাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ক্যালসিয়াম ও দুধে স্বাভাবিকভাবে সৃষ্ট ‘Conjugated Linoleic Acid (CLA)’ প্রতিরোধমূলক কাজ করে থাকে বলে বিবেচিত হয় । যারা নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে মলাশয়ের ক্যান্সার হবার হার কম । সবমিলিয়ে বলতেই হয়, নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ (বিশেষত সর বাদ দিয়ে বা লো ফ্যাট দুধ) স্বাস্থ্যের জন্য অপরিসীমভাবে দরকারি ।

## The Saudi gazette এ প্রকাশিত Dr. Rizwan Ahmed এর একটি আর্টিকেলের কিছু অংশের বাংলা অনুবাদ মাত্র । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.