আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নবীন লেখক

দৃশ্য এক স্থান: বাংলা একাডেমির বই মেলা প্রাঙ্গন সময়: ফেব্রুয়ারী, ২০১০ সাল আবুল প্রকাশনীর মালিক আবুল আলী বই মেলায় তার ষ্টলে বসে পান চিবুচ্ছিলেন। একটু আগে নেহারি আর তুন্দুল দিয়ে সকালের নাস্তা সেরেছেন। মেলার বেশ কয়েক দিন পার হয়ে গেছে কিন্তু সে তুলনায় বিক্রি ভাল নয় বলে আবুল আলী খানিকটা চিন্তিত। যদিও মেলা এখন তেমন একটা জমে ওঠেনি। জমে উঠলে বিক্রি বাড়বে বলে তার বিশ্বাস।

এই যখন অবস্থা ঠিক তখন সাদা পাঞ্জাবী পড়া এক লোক হেলতে দুলতে ষ্টলের সামনে এসে দাড়ালেন। ভ্রু কুচকে এটা সেটা নাড়াচাড়া করতে দেখে আবুল আলী জিজ্ঞেস করলেন, ‘বিশেষ কারো বই খুজছেন নাকি ভাই সাহেব?’ ভদ্রলোক আবুল আলীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কললেন, ‘জ্বি জ্বি, আমি আসলে সর্বনাম রাসেলের বই খুজছিলাম, আছে না কি?’ এবার আবুল আলীর ভ্রুও কুচকে গেল। তিনি বললেন, ‘না, এই নামে কোন রাইটারের বই তো আসে নি। নতুন রাইটার না কি?’ কাষ্টমার যারপর নাই অবাক হয়ে বললেন, ‘আসে নি মানে? এমন একজন রাইটারের বই না এসে তো পারে না। আপনি মনে হয় ভুল করছেন।

অবশ্য আপনার ছোট দোকান, সব বই না থাকারই কথা। ’ অতপর কাষ্টমার ভদ্রলোক আর দেরি করলেন না। বিরক্তির একটা ভাব দেখিয়ে আবুল প্রকাশনীর ষ্টল থেকে চলে গেলেন। দিনের প্রথম কাষ্টমার মিস হয়ে গেলে দিনটা খারাপ যায় বলে শুনেছেন। তার উপর এতবড় ষ্টল কে ছোট ষ্টল বলে চলে গেল অথচ কোন জবাবই দিতে পারলেন না।

সব মিলিয়ে আবুল আলীর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। মেজাজ ঠা-া করার জন্য গরম গরম চায়ের কোন বিকল্প নেই। অগত্যা দোকানের এক সেলসম্যানকে চা আনার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। দুপুরের দিকের কথা। মেলায় কাষ্টমার কিছুটা বেড়েছে।

আবুল আলী সাহেব বেশ কয়েকটা বইও বিক্রি করে ফেলেছেন। ষ্টলের সামনে কাষ্টমাররা বই নাড়াচাড়া করছেন বলে তিনি সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন যেন কাষ্টমার সেজে কোন চোর বই চুরি করে না নিয়ে যায়। এমন সময় এক ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই যে ভাই, আপনাদের প্রকাশনী থেকে সর্বনাম রাসেলের কোন বই এসেছে?’ আবুল আলী বললেন, ‘না ভাই, এবার তার কোন বই আমাদের থেকে আসেনি। ’ আবুল আলীর কথা শুনে কাষ্টমার ভদ্রলোক যার পর নাই হতাশ হলেন। তিনি বললেন, ‘হায় হায়! সর্বনাম রাসেলের বই প্রকাশ করেন নি? অবশ্য সর্বনাম রাসেল ছোটখাট প্রকাশনীতে বই দেন না।

আপনাদেরকেও সে কারনে পান্ডুলিপি না দিয়ে থাকতে পারেন। আচ্ছা ঠিক আছে, আমি পাশের ষ্টলে খোঁজ নিয়ে দেখি। ’ কাষ্টমার যা ইচ্ছা বলতে পারেন কিন্তু এভাবে অপমান করে কথা বললে কার না খারাপ লাগে। আবুল আলীরও খারাপ লাগল। রাগে দুঃখে তিনি বেশ কিছুক্ষন কথাই বলতে পারলেন না।

সন্ধ্যর দিকে বই মেলা চুড়ান্ত রকম জমে গেল। আবুল আলী প্রচন্ড ব্যস্ত। কাষ্টমারকে বই দিয়ে কুল পাচ্ছেন না। এমন সময় এক তরুনী সুরেলা কণ্ঠে বললেন, ‘সর্বনাম রাসেলের যে কটা বই বেরিয়েছে তার প্রত্যেকটার দু কপি করে দিন তো। ’ আবুল আলী কথাটা শুনতে পেয়ে বললেন, ‘আমাদের প্রকাশনী থেকে সর্বনাম রাসেলের কোন বই এবার আসেনি ম্যাডাম।

’ আবুল আলীর কথা শুনে ম্যাডাম মনে হয় আকাশ থেকে পড়লেন, তাও আবার প্যারাসুট ছাড়া। তিনি বললেন, ‘সর্বনাম রাসেলের একটা বইও আসেনি, বলেন কি? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরে বাংলা সাহিত্যে একজন রাইটারই আছেন, তিনি সর্বনাম রাসেল। আর আপনারা বলছেন তার বই আপনাদের ষ্টলে নেই! অবাক হলাম বটে। ’ আবুল আলী এবার সত্যিই বিচলিত হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন, ‘ম্যাডাম, এবার তিনি ব্যাস্ততার কারনে বই প্রকাশ করতে পারেন নি।

সামনের বার আমরা অবশ্যই তার বই বাজারে আনব। ’ দৃশ্য দুই স্থান: বাংলা একাডেমির বই মেলার পাশের চায়ের দোকান সময়: ফেব্রুয়ারী, ২০১০ সাল তিন ভদ্রলোক আর এক ভদ্রমহিলা বসে চা খাচ্ছেন। তাদের মধ্যে এক জনের নাম সর্বনাম রাসেল। চা খেতে খেতে তিনি অন্যদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘এক সপ্তাহ পর আবার তোরা আবুল প্রকাশনীতে যাবি এবং এভাবে আমার বই এসেছে কি না জিজ্ঞেস করবি। চল এবার সবাই বিরানী খেয়ে বাড়ির দিকে চলে যাই।

দৃশ্য তিন স্থান: মিরপুর দশ নাম্বার গোল চক্করের পত্রিকার দোকান সময়: ফেব্রুয়ারী, ২০১১ সাল এক ভদ্রলোক দোকানের সামনে দাড়িয়ে ফাও পত্রিকা পড়ছেন। পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন ছাপা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের ভাষা এরকম, ‘এবারের বই মেলায় সর্বনাম রাসেলের দুটো বই। পাখি ও বৃক্ষ বিষয়ক গবেষনা পত্র ‘ডাউয়া গাছে কাউয়া বসা’ এবং অমর প্রেমের উপন্যাস ‘মনো মাঝে বাঁশি বাজে’। পাওয়া যাচ্ছে আবুল প্রকাশনীর ষ্টলে।

’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।