আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তৃপ্ত কাক, ক্ষুধার্ত মানুষ - দুপুরনামা

অনুভুতিহীন জীবনের অপেক্ষায়... http://www.raatmojur.com/ আমরা কিছু কাক পুষি। বংশানুক্রমে বলা যায় কি? হবেও বা! ছেলেবেলা কেটেছে নানীবাড়ীতে, নানীকে দেখতাম খাবার পরে এঁটোকাঁটা উঠোনের একটা নির্দিষ্ট কোনে ফেলতেন। কাকের দল জানতো কখন শেষ হয় খাওয়া, ওরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়তো। সেটা গ্রামের কথা। নানা মারা যাবার পর থেকে নানী ছিলেন আমার মায়ের কাছেই।

বড় মেয়ের কাছে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। আর বাবাকে শালাশালীরা কেউ দুলাভাই ডাকতো না, ডাকতো ভাই, সেরকমই ছিলেন বাবা শ্বশুরবাড়ীর জন্যে। এই সময়টাতে মাঝে মাঝে বাড়ী গেলে দেখতাম, খাবার শেষের এঁটোকাঁটা নানী একসাথে করছেন একটা পাত্রে, তারপর ছাতে গিয়ে দিয়ে আসতেন এক কোনায়, সেই গ্রামের উঠোনের মতই। আর কোত্থেকে এত এত কাক এসে ঝাঁপ দিয়ে পড়তো এখানেও। বছর তেরো বাদে আমি ফিরেছি নিজের শহরে, সেখানে নিরাপত্তাজনিত কিছু সমস্যার কারনে মা আমাকে সরিয়ে এনেছেন আরেকটা শহরে।

বাসা নিয়েছি মাস খানেক মাত্র। জানি, এটাও প্রায় সাময়িক আবাস, বছরটাক পরে আবার সরে যাবো অন্য কোথাও পাকাপাকি। এখানেও সেদিন দেখি মা কাক জুটিয়ে ফেলেছেন, আমরা থাকি টপ ফ্লোরে, মা খাওয়া শেষে এঁটোকাটা একটা কিছুতে করে দিয়ে আমাকেই পাঠান ছাতে। কাক আসে, ওরা জানে কোন সময় এখানে এলে খাবার জুটবে। আজ ঠিক দুপুর, প্রেস থেকে ফিরছিলাম, সাথের পরিচিত লোকটা চা খাবে, নিজেও দাঁড়িয়ে গেলাম।

চা শেষে ফিরছি, পাশ থেকে কে যেনো হাত টেনে ধরলো। ফিরে দেখি কংকালসার এক বৃদ্ধ। ভাঙা গলায়, তবু জোরদার দাবী, "ভাত খাবো। " পকেটে টাকা ছিলোনা আজ, মানিব্যাগের এক কোনে একট দশটাকার নোট। বাড়িয়ে দিলাম, বুড়ো নিয়ে চলে গেলো।

ভিক্ষুকদের মতন সালাম, দোয়া অথবা অন্যকোনো ভাবে খুশি করার চেষ্টা করলো না। শুনতে চাইনি সেই বৃদ্ধের কোনো বিত্তান্ত। জানি, পাবো পরিচিত কোনো ঘটনা, হয় ছেলেমেয়ে-সম্পদ-কাজ কিছু নেই, নয়তো ছেলেমেয়ে আছে খেতে দেয়না। এইসব মানুষদের শেষ বয়েসে টিকে থাকা আর দু'টো ডাল-ভাতের জন্যে কিছু সরকারী বৃদ্ধাশ্রম কবে হবে এদেশে? অন্ততঃ সামর্থ অনুসারে কাজের বিনিময়ে আশ্রমে স্থান দিলেওতো একটু নিশ্চিত হবে ওদের জীবন? ছেলেবেলাতে দেখতাম প্রতিদিন কিছু ফকির আসতো, একজন-দুজন, দুপুরে খেতো বাসায়। একটু তরকারী, একবাটি ডাল আর কটা ভাত দিলেই খুশি হয়ে খেয়ে নিত।

এরকম কালচার পাড়াতে একটু অবস্থাপন্নদের বাসায়ও দেখেছি, এখন আর সেই দৃশ্য কোথাও দেখিনা। এখন ঘরে ঘরে ফ্রিজ আছে, তাই বাসি খাবার ফেলবার বা ফকিরকে দেবার প্রয়োজন নেই বোধহয়! ছাতের কাকগুলো জানে সকাল আর দুপুরে কিছু জুটবে ছাতে এলে, এই বৃদ্ধের সেই স্বস্তি আছে কোথাও?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.