আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খুনী

শাকিলা তুবা ঘোর লাগা অন্ধকারে হাঁটছিল সে। বুকের ভেতর এখনো হিম হিম। আকাশও যেন সমান উল্লাসে প্রকৃতির বুকে নেচে চলেছে। একটানা সুরে ঝরছে টুপটুপ বৃষ্টি। ভাবছিল সে, আমি এখানে কেন? করছিটা কি? পরমুহুর্তেই সব মনে পড়ে গেল তার।

আবারও একটা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ডুঁকরে উঠল সে। কত শত বছরের যন্ত্রনা ঝরে পড়ছে সে কান্নায়। তার অনাবৃত বাহুতে বৃষ্টির ফোটাগুলো বিঁধছিল জোর। শীতের দাঁত সমানে কামড়ে চলেছে তার সর্বাঙ্গ। ব্যর্থ অভিযান নাকি নিরুপায় আক্রোশে কাঁদছে এটা সে নিজেই জানে না।

পায়ের নীচে কলকলে বৃষ্টির স্রোত, মাথার উপরে বৃষ্টিঝরা থমথমে আকাশ। সে ভেবে পায় না, কতটুকু গেলে আর যেতে হবে না। কাদাময়, অন্ধকার সরু গলিতে বসে পড়ে সে এবার। দূর থেকে কে আসছে? লম্বা ছায়া পড়ে অন্ধকার ফুঁড়ে ওঠা ইষৎ আলোছায়াময় রাস্তায়। সে উঠে দাঁড়িয়ে আবারও শুরু করে চলতে।

ওকে দেখে আগন্তুক একবার যেন থমকায়। বৃষ্টিভেজা রাতের অন্ধকারের এই কাদামাখা রমনী তাকে কৌতুহলী করলেও ভয় তাকে পিছিয়ে নেয়। সে ভাবছে, তাকেও কেউ ভয় পায়? এই ভাবনাটাই তাকে আবারো কাঁদিয়ে ফেলে। কেন সে পারল না? কেন? আমায় ক্ষমা কর, যেতে দাও। আমি তোমায় আর ভালবাসি না---বিশাল এই চাবুকটি ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়েছিল শুভ।

বুকে এ কোন পাহাড় আঁছড়ে ফেলল শুভ? নিরুত্তাপ জিজ্ঞাসা রেখেছিল, কে? যদিও উত্তর জানাই ছিল, তথাপি---- শুভ চলে গিয়েও ওকে ততটা আহত করতে পারেনি যতটা আহত হয়েছে নিশার নাম শুনে। নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছে, ওই বিস্বাসঘাতককে কি ছেড়ে দেয়া যায়? মন বলেছে, না, না, না। আজ তাই ঝড়ের আগে পথে নেমেছিল সে। বুকের কাছে গুঁজে রাখা কাল্পনিক ছোরাটা বারবার পরখ করে নিয়েছে। ওকে পালাতে দেয়া যাবে না।

নিশার ভয়ার্ত চোখ কল্পনায় ওকে সারাটা পথ ক্লান্তিহীন রেখেছে। নব উদ্যোমে শুভকে ভেবেছে। আবার আসবে শুভ। আরেকটা জীবন ওদের বড়ই প্রয়োজন। কিংবা শুভকে ও আর ফেরত চাইছিল কি? সব কিছু কেমন জট পাকাল মাথায়।

ওখান থেকেই শুরু। নিশার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিল সে। নিশার চোখে ভয় ছিল না। আহ নিশা, তুমি ভয় পাও, ভয় পাও---মনে মনে বিড়বিড় করছিল সে। একটুও মায়া লাগছিল না তার।

কিন্ত এ কি বোকা মেয়েরে বাবা। হাত জোড় করে কেঁদে কেঁদে মৃত্যুই ভিক্ষা চাইল। দুঃখে, যন্ত্রনায় এতটাই কি মলিন হয় মানুষ! নিশার চোখে চোখ রাখল সে। বিবাহিত বান্ধবীর স্বামীকে ভালবেসে ফেলার অক্ষমতায় বিমুঢ় ও চোখে এ কি দেখল সে? চোখ বন্ধ করে ভাবতে চাইল ভুল দেখেছে। আবারো দেখল, আবারো।

নাহ কোনও ভুল নেই। আয়নায় যেন নিজেকেই দেখল নিজে। এই দৃষ্টি সে চেনে। অনেকদিন আগে, কোনকালে এই দৃষ্টি-ই কি তার চোখে খেলে যেত না? শুভর জন্যে ভালবাসার তিরতির করে বয়ে যাওয়া সে নদীটি আজ তবে কই? নেই, নেই, কোথাও নেই। নিশার চোখে চোখ রেখে ছোরাটা সে বসিয়ে দেয় তার নিজের হৃৎপিন্ডে আমূল।

তারপর, এই বৃষ্টিভেজা পথ, কাদামাখা শরীরের একাকী পথ, একাকী সে------ আজ নিজেই খুন হয়েছে সে, নিজের খুনের দায় মাথায় নিয়ে এই রাতে একাই কাঁদছে খুনী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।