বিশ্বের শিক্ষিত সমাজে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যিনি মিউজিয়াম বা যাদুঘরকে চিনেন না। যাদুঘর কি এবং এর সংজ্ঞা আমরা অনেক ভাবেই দিতে পারি। একটি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, আচার-কৃষ্টি এবং হারিয়ে যাওয়া বা বিলুপ্ত হয়ে যাবার উপক্রম এমন বিরল কীর্তি ও মনোমুগ্ধকর বিষয়বস্তু সংগ্রহ করে সবার দর্শনের জন্য যে স্থাপনাতে রাখা হয়,মোটামুটিভাবে তাকেই আমরা যাদুঘর বলে জানি। কিন্তু এরপরও কিছু মানুষ যাদুঘরের এই সংজ্ঞাটি পাশকাটিয়ে নিজস্ব ধ্যান ধারণা, চিন্তা চেতনা থেকে কিছু কৌতুহলোদ্দীপক বিষয়বস্তু সংগ্রহ ও সমাবেশ করে যাদুঘরের নামে এমন স্থাপনা তৈরী করে গেছেন যার কোনোটি চিত্তাকর্ষক আবার কোনোটি কান্ডজ্ঞানহীন এবং উদ্ভট। আজ তাহলে চলুন, পৃথিবীর এমনি কিছু অদ্ভুত জাদুঘর নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
১.দি মিউজিয়াম অফ মনস্ত্রুশ ক্রিয়েচার, জাপান (Gensou Hyouhon Hakubutsukan)
এটি সরীসৃপ গোত্রের প্রানীদের যাদুঘর । এই যাদুঘরে উপরে দেয়া ছবির ন্যায় একাধিক অদ্ভুত ও বিরল সরীসৃপ প্রজাতির দেহাবশেষ ও ফসিল সংগৃহীত আছে।
২. মিউজিয়াম অব পেনিস, আয়ারল্যান্ড।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের হুসাভিক নামক একটি ছোট শহরে এই যাদুঘরটি অবস্থিত। এই আজব যাদুঘরটিতে সে দেশের স্তন্যপায়ী জীবের শিশ্ন সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে ।
এই যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা সেই দেশের একজন প্রাক্তন ইতিহাসের অধ্যাপক। ১৯৭৪ সালে তিনি এই আজব যাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে মানুষের জননেন্দ্রিয় ব্যতীত বিভিন্ন স্তন্যপায়ী জীবের ২৪৫টি শিশ্ন দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে মিউজিয়ামের এক সহৃদয় পৃষ্ঠপোষক মৃত্যুর পর তার শিশ্ন যাদুঘরে দান করার অঙ্গীকার করেছেন।
৩.মধ্যযুগে নির্যাতন করার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জাম এর যাদুঘর, প্রাগ।
প্রতি বছর রিপাবলিক চেকোস্লাভাকিয়ার রাজধানী প্রাগের এই যাদুঘরটিতে ঘীরে প্রচুর দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। যে যন্ত্রপাতির সাহায্যে মধ্যযুগে বন্দিদের অমানবিক ও নির্মমভাবে নির্যাতন করা হত এ রকম এক ডজনের অধিক সাজসরঞ্জাম সংরক্ষিত আছে এই যাদুঘরে। এখানে সংগ্রহকৃত সাজসরঞ্জাম এর মধ্যে এমন কতগুলো যন্ত্রণাদায়ক উপকরণ রয়েছে যা দ্বারা নির্যাতন করে ধীরগতিতে ভিকটিমের প্রাণসংহার করা হত।
৪. সেক্সচুয়াল মিউজিয়াম।
হল্যান্ডে অবস্থিত ভেনাস টেম্পল বা রতিদেবীর মন্দির নামের এই যাদুঘরটি ইউরোপের সর্বপ্রথম এবং প্রাচীন সেক্স যাদুঘর।
এই যাদুঘরের শোকেসে সাজানো রয়েছে অষ্টদশ শতাব্দীর কামজ বিষয়ে বিভিন্ন সংস্করণ, তৈলচিত্র, পূর্ণায়ত ভাস্কর্য। এ ছাড়া উনবিশ শতাব্দীর কামজ বিষয়ক বই, ছবি , পোস্টকার্ড, ভারতীয়দের অনুকরণে তৈরী ভাস্কর্য ইত্যাদি এরোটিক সামগ্রীর সমাহারে ইউরোপিয়দের পূর্বপুরুষদের যৌনজীবন এবং যৌন-সংস্কৃতি বাস্তবরূপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই যাদুঘরে। প্রতিবছরে ৫ লক্ষ দর্শনার্থীর সমাগমে আমস্টারডামের অন্যান্য যাদুঘরের ন্যায় এই সেক্স যাদুঘরটিও দিনে দিনে খ্যাতিলাভ করছে।
৫.প্যারাসাইট মিউজিয়াম।
পৃথিবীর একমাত্র পরজীবী মিউজিয়ামটি জাপানের রাজধানী টোকিও তে অবস্থিত ।
এই মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা একজন জাপানি নাগরিক, নাম সাতোরু কেমেগী। পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। তিনি দীর্ঘদিন মানব ও অন্যান্য প্রাণী দেহে বসবাসকারী পরাশ্রয়ী সংগ্রহ এবং সেগুলো নিয়ে গবেষণা করার পর তার গবেষণালব্ধ তথ্য ও সংগৃহীত পরজীবী প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৩ সালে মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই মিউজিয়ামের শোকেসে কমপক্ষে ৩০০ প্রজাতির প্রাণীর দেহে বসবাসকারী প্রায় ৪৫ হাজার অদ্ভুত পরাশ্রয়ী দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আছে । তাছাড়া এখানে হাজারের উপর পরজীবী নিয়ে গবেষণালব্ধ তথ্য ও প্রামাণ্য দলিলপত্র বই আকারে সংরক্ষণ করা আছে।
৬.মিউজিয়াম অফ এ্যাট( এলিয়েন)
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে অন্যান্য গ্রহের যে সমস্ত প্রাণী বা এলিয়েন বাস করছে তাদের প্রতি আনুগত্য স্বীকার এবং শ্রদ্ধাবোধ থেকেই এই মিউজিয়ামটি নির্মান করা হয়েছে। এই মিউজিয়ামে অন্য গ্রহের প্রানীদের জীবনদর্শন ও জীবনচরিত নিয়ে পুঙ্ক্ষানুপুঙ্ক্ষভাবে বিশ্লেষণ করা ছাড়াও অত্যন্ত কারুকর্মের সাহায্যে মিউজিয়ামকে এমন ভাবে মিথষ্ক্রিয় করে তোলা হয়েছে যাতে আমাদের সৌরমণ্ডল ঘিরে এলিয়েনদের অস্তিত্ব আছে সেই বিষয়ে দর্শনার্থীগণ বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে।
৭.সকস মিউজিয়াম
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মোজার মিউজিয়ামটি জাপানের টোকিও শহরে অবস্থিত। এখানে ছোট বড় ২০ হাজারের বেশী নানা রকমের মোজা অতিথিদের দর্শনের জন্য সাজানো আছে । এই মিউজিয়ামের সবচেয়ে বড় মোজাটির আকার (গোড়ালি থেকে পায়ের অগ্রভাগ পর্যন্ত ) ৩২ সেন্টিমিটার যা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় মোজা বলে বিবেচিত।
বস্ত্রশিল্প অনুরাগীদের জন্য এই মিউজিয়ামটি বেশ আকর্ষনীয়।
৮.আন্তর্জাতিক প্রসাধন ও শৌচাগার মিউজিয়াম।
এই অদ্ভুত মিউজিয়ামটির প্রতিষ্ঠাতা ভারতের নাগরিক বিন্দেশ্বর পাথক এবং এটি দিল্লি শহরে অবস্থিত। এই মিউজিয়ামে শুধুমাত্র প্রসাধন ও শৌচাগারে ব্যবহৃত সামগ্রী দর্শনাথীদের প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ২০০৫ সাল থেকে প্রসাধন ও শৌচাগার এর জন্য ব্যাবহৃত সামগ্রীর ছবি এবং মডেল এই মিউজিয়ামে সংগৃহিত আছে।
হাইজেনিক ও স্যানিটেশন সমস্যায় জর্জরিত জনগনের সমস্যা দূরীকরণ এবং এসকল বিষয়ে জনসাধারণের সচেতনা বৃদ্ধি করাই এই মিউজিয়ামের মূল উদ্দেশ্য।
৯.গার্বেজ মিউজিয়াম, বোস্টন।
এই অদ্ভুত যাদুঘরে বোস্টনের সুখ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের আবর্জনা ময়লা সংগ্রহ করে তা প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। কৌতুক করার জন্য হোক বা অত্যধিক শ্রদ্ধা বা আদর দেখানোর জন্যই হোক সেলিব্রেটিদের ময়লা,আবর্জনা রাস্তার ডাস্টবিন থেকে তুলে দর্শকদের দেখাবার উদ্দেশ্যে এই মিউজিয়ামটি নির্মান করা হয়েছে।
১০. ডিভেল মিউজিয়াম।
এই ডিভেল মিউজিয়াম অর্থাৎ শয়তানের যাদুঘরটি লিতুয়ানিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কাউনাশ এ অবস্থিত। এই যাদুঘরে এমন সমস্ত ভৌতিক ভাস্কর্য ও ছবি রয়েছে যা দর্শকদের অতীতে দেখা কোনো ভায়াল দুঃস্বপ্ন ও আতঙ্কের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।