আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীর কেন্দ্র / পৃথিবীর কোর

এই আমি খুব খারাপ ! আমরা বড় হতে হতে যতটা না পৃথিবীর বাইরের জগৎ মানে মহাজাগতিক গ্রহ-গ্রহাণু, নক্ষত্র-নক্ষত্রপুঞ্জ, ব্ল্যাকহোল,উল্কা , চন্দ্র গ্রহণ , সূর্য গ্রহণ ইত্যাদি নিয়ে অনেক লেখা দেখতে পাই আর জানতে আগ্রহী হই তেমনভাবে কিন্তু আমরা আমাদের পৃথিবীর কেন্দ্র নিয়ে অতটা আগ্রহী হই না অথবা এ সম্পর্কে লেখা আমরা তেমন ভাল ভাবে বুঝি না । যখন আমরা জুলভার্ণ এর “জার্নি ট্যু দ্যা সেণ্টার অফ দ্যা আর্থ’’ পড়ি আর রোমাঞ্চকর অভিযানের কথা দেখতে পাই তখন কিন্তু সেই রোমাঞ্চকর পরিবেশে গল্পের চরিত্রগুলোর পাশে আমরাও অবস্থন করি । এককথায় বলতে গেলে পৃথিবীর কোর নিয়ে জুলভার্ণের উপন্যাস “জার্নি ট্যু দ্যা সেণ্টার অফ দ্যা আর্থ’’ আর দুটো সিনেমা দেখেছি এর মধ্যে একটা সিনেমা “The core” এবং একটা ডকুমেন্টারী দেখেছি । এতেও সব কিছু বুঝতে বাকি আছে । তবুও যতটুকু পারি লিখছি।

আমাদের পৃথিবীর কেন্দ্র কিন্তু কোন বিন্দু নয় এটা আকারে আমাদের উপগ্রহ চাঁদের মত আর এর ভেতর আছে গলিত পদার্থ যার মধ্যে লৌহের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি । এই নীল গ্রহের মানুষরা প্রথমেই এর কোরের কথা জানতে পারে নি ,এটাতো পর্যবেক্ষণ করাও অসম্ভব । প্রাচীন কালে নাবিকরা সমুদ্রের দিক নির্ণয়ের সময় দেখতো লোহার হালকা কাটা টা কেবল নর্থ-সাউথ হয়ে থাকে তখন তাদের মনে প্রশ্ন জাগতো কোন শক্তির কারনে এমন হয় ,পাখিরা ঠিক মত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গমন করে কোন শক্তি সেই রহস্য! আর সেই শক্তির জন্য দায়ী আর কিছুই না আমাদের পৃথিবীর কোর । আমাদের কোর দুটি অংশে বিভক্ত মানে একটা বলয়ের উপর আরেকটা বলয়ের স্তর । বাইরের স্তরটা শক্ত ; এটি লোহা , নিকেল দিয়ে তৈরী এর ব্যাসার্ধ ১২২০ কিমি . ।

ভেতরের স্তরটি লোহা , নিকেল এবং অন্যান্য হালকা মৌল দিয়ে তৈরী এর ব্যাসার্ধ ৩৪০০ কিলোমিটার । আর আমরা এদের উত্তাপ অনুভব করি না কারন আমরা এর থেকে অনেক উপরে থাকি ; প্রায় ১৭৫৮.১ কিলোমিটার উপরে । পৃথিবীর ডায়নামো হল এর কোর । পৃথিবী তার নিজ অক্ষ বরাবরও একবার করে ঘুরে প্রতি ২৪ ঘন্টায় যার ফলে দিন-রাত্রি হয় । আর এই ঘুর্ননের ফলে কোরের মধ্যে গলিত মৌলসমুহ পাক খেতে থাকে ।

এই পাক খাওয়ার ফলেই চোম্বকত্বের সৃষ্টি হয় । যা আমাদের রক্ষা করে চলেছে । কোর থেকে সৃষ্ট চৌম্বকত্ব আমাদের পৃথিবীর উপর বাইরে থেকে আগত কোন পাথর খন্ড , উল্কা পরতে বাধা দেয় ; এমনকি সূর্য নামে যেই তারা টি আছে যার বুকে অবিরাম নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া ঘটে চলেছে তার থেকে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় রশ্নি পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয় (মহাকাশ থেকে ফেরত ৩৯ জন নভোচারীর ফেরতের তিন চার বছরের মধ্যে চোখে ছানি পরে কেবল সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্নির কারনে ) , পৃথিবীর দুই মেরুর দিক পরিবর্তনে সহায়তা করে । পৃথিবী যদি তার নিজ অক্ষ বরাবর ঘূর্ণন থামিয়ে দেয় তাহলে এই ডায়নামো আর কাজ করবে না ,চৌম্বক ক্ষেত্র আর কাজ করবেনা । ফলে বাইরে থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্নি , উল্কা পিন্ড , বড় পাথর খন্ড ছিটকে এসে পৃথিবীতে পরবে ।

আর আমদের পৃথিবীর ঘূর্ণন প্রক্রিয়া ঠিক থাকলেও তার তাপমাত্রা কিন্তু আস্তে আস্তে কমছে । এবং একদিন সমস্ত কোর ঠান্ডা হয়ে শীতল হয়ে যাবে । আমাদের নিকটতম গ্রহ মার্স তার কোরটা শীতল হয়ে গেছে । কিন্তু বিজ্ঞানীরা বের করেন কোটি কোটি বছর আগে এই গ্রহে পানি ছিল কিন্তু এখন সেটি বিশাল মরুভুমি ছাড়া আর কিছুই নয় । এর কারন জানা যায় যে এক কোটি বছর আগে যখন মঙ্গলের উত্তপ্ত একটা কোর ছিল তখন বাইরে থেকে অনেক বড় মাপের উল্কা এসে পরে এর উপর তখন মঙ্গল এর ভেতর থেকে সমস্ত তাপ বের করে দেয়, উপরের বালি গলে যায় , এর কোর ঠান্ডা হয়ে যায় ।

বাস যোগ্য উদীয়মান মঙ্গল গ্রহ পরিণত হয় মরুভুমিতে । মঙ্গলের চিত্রটি আমাদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর । পৃথিবী মরার অনেক আগেই মানুষ দূষণের কারনে মারা যাবে আর পৃথিবী পরিণত হবে একটি সাদা আইস বলে । কিন্তু আমাদের চৌম্বকক্ষেত্র এখনই বিভিন্ন জায়গায় হালকা হয়ে যাচ্ছে । আর কোথাও কোথাও সম্পুর্ণ রুপে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ।

এর ফলে সূর্যের তেজস্ক্রিয় রশ্নি সরাসরি পৃথিবীতে এসে মানুষের সাথে বিদ্যুতের সমস্ত সম্পর্ক ছেদ করে দিবে । এই কোরের ফলেই পৃথিবীর দিক পরিবর্তন হয় , এবং এ পর্যন্ত ১০০ বার পৃথিবী তার উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিক পাল্টেছে । কিন্তু আমাদের পৃথিবীর কোরটি এখনও সাবলীলভাবে কাজ করে যাচ্ছে । হয়তো পৃথিবী একদিন আইসবলে পরিণত হবে কিন্তু তাও এক কোটি বছর পর । এতদিনে হয়তো মানুষ অন্যগ্রহে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়ে উঠবে ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.