আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখন দলীয় ক্যাডারদের ছড়াছড়ি

ইমানের পরীক্ষা হয় সংকট কালে। ইমানের পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত থাকুন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখন দলীয় ক্যাডারদের ছড়াছড়ি। শুধু রাষ্ট্রদূত পদে নয়, ফার্স্ট সেক্রেটারি থেকে শুরু করে সহকারী সচিবের মতো মধ্যম ও নিম্নস্তরের কূটনীতিক পদে চলছে চুক্তিভিত্তিতে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ। এ পর্যন্ত ১২ জনকে রাষ্ট্রদূত এবং ১১ জন দলীয় ক্যাডার, ক্যাডারদের স্ত্রী ও আত্মীয়স্বজনকে মধ্যম এবং নিম্নস্তরের কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছেন যারা অনার্স ও মাস্টার্সে তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত। অনেকে ছিলেন গৃহিণী। কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালনের কোনো যোগ্যতাই নেই এসব দলীয় ক্যাডারের। এ নিয়ে পেশাদার কূটনীতিকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে চরম হতাশা এবং ক্ষোভ। দলীয় ক্যাডারদের এই নিয়োগের ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি হননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ভারত এবং জাতিসংঘের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিশনসহ মোট ১২টি মিশনে দলীয় লোকদের চুক্তিভিত্তিতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এখন নিচের পদে চলছে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ। ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সহ-সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান টিপুকে ম্যানচেস্টারে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগের আগে তার পেশা ছিল রাজনীতি। ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক এক আওয়ামী লীগ এমপির ছেলে শাহেদুর রহমানকে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনসুলেটে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তার পেশা ছিল রাজনীতি। ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েত-মৈত্রী হল শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা পালকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব (কনসুলার) পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে অপর্ণা পাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের ছাত্রী ছিলেন এবং তিনি অনার্স ও মাস্টার্সে তৃতীয় শ্রেণীপ্রাপ্ত। অপর্ণা পাল এখন কানাডায় পোস্টিং নেয়ার চেষ্টা করছেন। ছাত্রজীবনে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মরহুম ওয়াইসুজ্জামানের স্ত্রী মৌসুমী ওয়াইসকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সহকারী সচিব (বাজেট) নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি একজন গৃহিণী ছিলেন। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাসুম আহমেদকে নেদারল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসে সেকেন্ড সেক্রেটারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগের আগে তিনি পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর এপিএস ছিলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মরহুম রুহুল আমীনের স্ত্রী আনিসা আমীনকে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগের আগে তিনি ছিলেন গৃহিণী।

ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী এবং ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার স্ত্রী ইরিন পারভীন বাঁধনকে সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশনে কাউন্সেলর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক মহাপরিচালক ফারুক আমীনের স্ত্রী রওনক আমীনকে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি ছিলেন গৃহিণী। বিডিআর বিদ্রোহে নিহত এক সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর এপিএস (২) সাইফুজ্জামান শেখরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শামীমা পারভীনকে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে সেকেন্ড সেক্রেটারি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি ছিলেন গৃহিণী। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পরিচালক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মরহুম শিকদার মোহাম্মদ জাহিদুর রহমানের স্ত্রী চৌধুরী সুলতানা পারভীনকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনসুলেটে কনসল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন গৃহিণী। এছাড়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুরস্কার হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় সাবেক কূটনীতিক তারিক এ করিমকে ভারতে, সাবেক কূটনীতিক আকরামুল কাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম সাইদুর রহমান খানকে ব্রিটেনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রীর ভাই ড. আবদুল মোমেনকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

নেপালে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় অযোগ্য ও বিতর্কিত ড. নিমচন্দ্র ভৌমিককে। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে পেশাদার কূটনীতিকদের বাদ দিয়ে চীনে সাবেক কূটনীতিক মুন্সী ফয়েজ, ওমানে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি নূরুল আলম, রাশিয়ায় ড. এসএম সাইফুল হক, পাকিস্তানে মো. সোহরাব হোসেন, ইরাকে মুহাম্মদ কামালউদ্দিন, লিবিয়ায় মুহাম্মদ নুরুজ্জামান এবং শেখ কামালের বন্ধু ও আবাহনী ক্লাবের সাবেক পরিচালক শাহেদ রেজাকে দলীয় লোক হিসেবে কুয়েতে রাষ্ট্রদূত পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ক্ষমতায় আসতে নানাভাবে সহায়তা করার পুরস্কার হিসেবে এদের রাষ্ট্রদূত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এছাড়া ১/১১’র অন্যতম প্রধান হোতা লে. জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে হাইকমিশনার হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় বহাল তবিয়তে রেখেছে বর্তমান সরকার। দলীয় ক্যাডারদের এই নিয়োগের ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, অতীতে কখনও এভাবে অযোগ্য দলীয় ক্যাডার এবং তাদের আত্মীয়স্বজনদের কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

পেশাদার কূটনীতিকদের বাদ দিয়ে এক্ষেত্রে ঢালাওভাবে যে দলীয়করণ শুরু হয়েছে তাতে অকার্যকর হতে চলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আর এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে মেধাবীরা আর কূটনীতিক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইবে না। এছাড়া দলীয়করণের ফলে কূটনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কূটনীতির মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। এদিকে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ নিয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান।

খবরটি আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.