আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা... (দ্বিতীয় পর্ব)

আগামীর স্বপ্নে বিভোর...

আমার মোবাইলে অনবরত রিং হচ্ছে কিন্তু ধরতে ইচ্ছে করছেনা। কারণ আমি জানি এটা সান্টু মামার ফোন। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে সান্টু মামা কিছু কথা রেকর্ড করে রেখেছেন এবং গত তিন দিন থেকে সেই রেকর্ড করা কথা আমাকে শুনিয়ে যাচ্ছেন। মীরা'কে আমি ফোন করিনি, তমাল করেছে। তমাল ফোন করে মীরা'কে উল্টা পাল্টা কিছু বলেনি শুধু হ্যালো বলে তার পরিচয়টা দিয়েছে।

তাতেই মীরা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। মীরার সমস্ত রাগ এখন সান্টু মামার উপর কারণ সান্টু মামা আগেই মীরা'কে জানিয়েছেন যে তার নাম্বার আমাকে দেয়া হয়েছে আমি মীরা'কে কোন এক সময় ফোন করবো। কিন্তু আমি ফোন না করে তমাল ফোন করেছে বলেই সান্টু মামার সাথে মীরা আর কোন যোগাযোগ রাখছেনা। তাই সান্টু মামা আমাকে বার বার ফোন করে বিষয়টা মধ্যস্থতা করে দেবার জন্য তাড়া দিচ্ছেন। আমি মীরা'কে ফোন করতে খুব অস্বস্তি বোধ করছিলাম যদি ও আমার সাথে খারাপ আচরণ করে এই ভেবে, কিন্তু অন্য কোন উপায় নেই।

তাই অনিচ্ছা স্বত্বেও মীরা'কে ফোন দিতে হলো। মীরা'কে ফোন দিয়ে আত্মসম্মানের ভয়কে উহ্য করে নিজের পরিচয় দিলাম। ওহ আমার পরিচয়টা এখনো আপনাদেরকে দেয়া হয়নি। আমার নাম নীল। ভালো নাম নীলাঞ্জন।

ভালো মন্দ কোন নামই আমার পছন্দ নয় আমার বাবা যে কার উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য এরকম একটা নাম আমার জন্য বরাদ্দ করেছেন কে জানে। আমার চোখে মনির মধ্যে নীলের কোন ছিটে ফোঁটাও নেই যে আমার চোখের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে এই নামে আমাকে প্রকাশ করবেন। তবে আমার বাবার অবশ্য একটু নীল প্রীতি আছে। কাপড় ধোয়ার পর নীল গুলা পানিতে কাপড় না চুবালে বাবা একটুও শান্তি পান না। কে জানে হয়তো এই নীল প্রীতি থেকেই আমার নাম নীলাঞ্জন আর নীলাঞ্জন থেকে নীল।

ঘটনা যা-ই হোক এ নিয়ে আমার বাবার উপর আমার কিঞ্চিত রাগ আছে কিন্তু সেটা তাকে বুঝতে দিইনা। সব কিছু সবাইকে বুঝতে দেয়া উচিতও না। তাহলে মজা নষ্ট হয়ে যায়। চট্রগ্রাম শহরের কাঠগড়ে জন্ম এবং সেখানেই থাকি বাবা মা'কে নিয়ে। বি,বি,এ পাশ করার পর একটা বিদেশি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীতে চাকরি নিয়েছিলাম।

কিন্তু চাকরিতে যোগ দেবার পর মনে হলো আমি একটা নিয়মের মধ্যে চলে এসেছি। অথচ আমি অন্যের বেঁধে দেয়া নিয়মের মধ্যে চলতে পছন্দ করিনা। নিজের মতোই একটা অগোছালো নিয়ম তৈরী করে চলি। ন'টা পাঁচটা অফিসের অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে হয় বসকে তোষামোদ করার জন্য। তার উপর ক্লায়েন্ট যতই অভদ্র হোক তার সাথে হাসি হাসি ভাব নিয়ে কথা বলতে হবে।

এতো কড়া কড়ি নিয়মের মধ্যে আমি পড়িনা। তাই বাধ্য হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাবার হোটেলের টিকিট নিয়ে আছি। অবশ্য এখন ধান্ধায় আছি ভালো দেখে একটা ব্যবসা শুরু করার কিন্তু কি ব্যবসা করবো সেটা নিয়ে মাথার ঘাম পা'য়ে ঝরাচ্ছি। সেই সাথে এম,বি,এ টাও শেষ করার ইচ্ছা আছে। ভালো লাগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে।

গান শোনার চাইতে দেখতেই বেশি পছন্দ করি ইদানিং কালের গানের চাইতে গানের ভিডিওটা বেশি ভালো লাগে। বই আমার দুই চক্ষের বিষ। আমার মতে যারা অলস কিংবা যাদের ভাবার শক্তি খুব ক্ষীণ তারাই কেবল বই পড়ে। কোন মুভিও আগা গোড়া এক নাগাড়ে দেখিনা, তিন ঘন্টা ধরে একটা জিনিষ গেলার মতো অত ধৈর্য্য আমার নেই। কোন একটা মুভি দেখা শুরু করলে প্রথম পনেরো মিনিট দেখে ফরওয়ার্ড করে নিই শেষের পনেরো মিনিট দেখে মাঝ খানের বিষয় গুলো কল্পনায় এঁকে নিলেই হলো।

খাদ্য তালিকায় পছন্দ অপছন্দ বলে তেমন কিছু নেই। তবে ভাতের সাথে সর্ষে ইলিশ (অবশ্যই রান্না করা) হলে খাবারের তৃপ্তিটা একটু বেড়ে যায় সেটা বুঝতে পারি। নিজেকে নিয়ে এখন আর বকবক করতে ইচ্ছে করছেনা সময় সুযোগে আবারো নিজের কথা টেনে আনবো। এখন মীরা'র প্রসঙ্গে আসি। মীরা'র সাথে যতটা সম্ভব বিনয় প্রকাশ করে দুঃখ প্রকাশ করলাম পুরো ঘটনার জন্য।

কিছুটা দায় নিজের কাঁধে নিয়ে সান্টু মামার যে কোন দোষ নেই তাও বুঝালাম, দেখলাম বরফ গলতে শুরু করেছে। প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক সব মিলিয়ে পাক্কা বিশ মিনিট কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। এবার আমার মেজাজটা বেশ ফুরফুরে লাগছে, যাক একটা ঝামেলা মিটলো। রাতে সান্টু মামা ফোন করলেন আমি বেশ আনন্দ নিয়েই সান্টু মামার ফোনটা রিসিভ করি। আমি যতটা আনন্দ নিয়ে সান্টু মামার ফোনটা রিসিভ করি সান্টু মামা দ্বিগুন উৎকন্ঠা নিয়ে জানতে চান আমি মীরা'কে ফোন করেছি কিনা।

তাকে জানালাম যে মীরার সাথে আমার কথা হয়েছে মীরা এখন থেকে সান্টু মামার ফোন ধরবে এবং আগের মতোই স্বাভাবিক আচরণ করবে। কিন্তু সান্টু মামা জানালেন যে মাত্র পাঁচ মিনিট আগেও নাকি মীরা'কে তিনি বার কয়েক ফোন করেছেন কিন্তু মীরা সান্টু মামার ফোন রিসিভ করেনি। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম যে আমি আবার মীরা'কে ফোন করে অনুরোধ জানাবো যাতে মীরা সান্টু মামার ফোন রিসিভ করে। কিছুক্ষণ পরে আমি মোবাইল ফোনটা হাতে নিলাম মীরা'কে ফোন করার জন্য কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে তাকে ফোন করার আগেই তার মোবাইল থেকে আমার মোবাইলে কল এলো। আমি মীরা'র ফোনটা ধরে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলাম।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা অনেক্ষণ কথা বলে যাচ্ছি কিন্তু দুঃখ জনক ভাবে সান্টু মামার কোন প্রসঙ্গ উঠে আসছেনা দেখে আমি সান্টু মামার প্রসঙ্গ টেনে আনলাম। কিন্তু কোন একটা কারণে মীরা সান্টু মামার কথা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমার কামড় তমালের মতো এতো শক্তিশালী না হলেও ক্ষেত্র বিশেষে কম নয়। মীরা যতই এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করছে সান্টু মামার প্রসঙ্গ আমি ততই পথ আগলে ধরছি। মীরা'রা দুই বোন এক ভাই।

মীরা সবার মধ্যে ছোট। মীরা একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে প্রাণী বিদ্যায় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্থ রোগী বলেই সারাদিন বাসায় পড়ে থাকেন। তাই বড় ভাইয়ের উপর সংসারের সব দায় দায়িত্ব। বড় ভাইয়ের চাকরীর সুবাদে সংসারের চাকা চলছিলো।

মীরার বড় ভাই প্রেম করতো তার মামীর আপন খালাতো বোনের সাথে। এই নিয়ে দুই পরিবারের মাঝে প্রায়ই ক্যাঁচাল হতো। মামা ভাগ্নে ভায়রা ভাই এটা যেমন আমাদের সমাজ মেনে নিতে চাইবেনা তেমনি এই দুই পরিবারও মেনে নিতে পারছেনা। সবাই ভেবেছে কিছু দিন গড়ালে তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে এবং এক সময় তারাই এই সম্পর্ক থেকে সরে আসবে কিন্তু হঠাৎ করেই মীরার বড় ভাই তার প্রেমিকাকে বিয়ে করে বাসায় তোলে। এই অসম সম্পর্কের বিয়ে বাংলাদেশের কোন পরিবারই যেমন মেনে নিতে চাইবেনা ঠিক তেমনি মীরার মা-বাবাও মেনে নিতে পারেন নি।

পারিবারিক দ্বন্ধের শুরু সেখান থেকেই। এক পর্যায়ে মীরার ভাই তার নব বধুকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি চলে যাওয়ায় মীরার পরিবার অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায়। মীরার মায়ের কাছে কিছু জমানো টাকা ছিলো সেগুলো দিয়ে কিছু দিন চলা হলো। মীরার বড় বোনের বিয়েও ঠিক হয়ে আছে কিছু দিনের মধ্যে তার বড় বোনকে পাত্রস্থ করা হবে।

তাই মীরার বড় বোনও পরিবারের কোন সাহায্যে আসতে পারছেনা। বাধ্য হয়ে মীরা'কেই চাকরির সন্ধানে বের হতে হলো। কিন্তু এই বাজারে চাকরি কি আর এতো সোজা ? ফেসবুকের মাধ্যেমেই সান্টু মামার সাথে মীরার পরিচয় হয়। কথা বার্তা যা হতো তা ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু মীরা জানে সান্টু মামা চাইলেই হয়তো একটা চাকরির যোগাড় করে দিতে পারে কারণ সান্টু মামার রাজনৈতিক পরিচয়টা ততদিনে মীরার জানা হয়ে গেছে।

একদিন মীরা ফেসবুকের চ্যাটে এসে সান্টু মামার কাছে তার ফোন নম্বর চায়। সান্টু মামা তার ফোন নাম্বার মীরা'কে দিলে মীরা সান্টু মামার সাথে ফোনে চাকরির ব্যাপারে কথা বলে। সান্টু মামা মীরা'কে চাকরির ব্যাপারে যথা সাধ্য সাহায্যে করার আশ্বাস দেন। দু'দিন পরে সান্টু মামা তার এক বন্ধুর মাধ্যমে একটা বায়িং হাউজে মীরার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে ফেলেন। মীরার অফিসের বস সান্টু মামাকে আগে থেকেই চিনতেন।

একদিন মীরাকে তার বস ডেকে পাঠালেন, মীরা তার বসের রুমে যায়। নতুন চাকরি সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বার্তার ফাঁকে মীরার বস সান্টু মামার সাথে মীরার কেমন সম্পর্ক সেটা জানতে চাইলে মীরা যা সত্য তা বলে দেয়। ঠিক তখনি তার বস তাকে সাবধান করে দেয় যাতে সান্টু মামার সাথে যেন খুব একটা ঘনিষ্ট না হয়। কেন সান্টু মামার সাথে মীরা ঘনিষ্ট না হতে বলেছে তা মীরা ধরতে পেরেছে বলেই এখন আর সান্টু মামাকে আগের মতো খুব একটা পাত্তা দেয়না। চলবে... সুমন আহমদ সিলেট।

১৬ই মে ২০১১ খৃষ্টাব্দ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।