আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা... (সপ্তম পর্ব)

আগামীর স্বপ্নে বিভোর... মীরার মোবাইলে বার বার কল দেয়া স্বত্বেও আমার কল রিসিভ না হওয়াতে তিথির আশ্রয় নিই। তিথিও সমান তালে ফোন করে যাচ্ছে মীরার মোবাইলে কিন্তু ফলাফল শূন্য, কেউই ফোন রিসিভ করছেনা। রবিনও একটু পর পর আমাকে ফোন দিচ্ছে মীরার খবর জানার জন্য। রবিন নিজেও বেশ ক'বার মীরার মোবাইলে কল দিয়েছে। তমালকেও সম্পূর্ণ বিষয়টা জানালাম, তার মেজাজ মর্জি নিয়ে আমার মনে যে ভ্রান্ত ধারণা ছিলো তা সম্পূর্ণ পাল্টে গেলো তার সান্ত্বনামূলক কথা বার্তায়।

আমরা সবাই বেশ উৎকন্ঠার মধ্যে সময় পার করতে লাগলাম। রাতে একদমই ঘুমাইনি, সকালে নাশতাটাও গলা দিয়ে নামেনি। মাথার উপর এখন আর ত্যাজি সূর্য্যটা নেই খানিকটা কাঁত হয়ে গেছে তাই প্রচন্ড ক্ষুধা অনুভব করছি কিন্তু গলা দিয়ে কিছুই নামানো যাচ্ছেনা। এরই মধ্যে তিথি আমাকে ফোন করে জানালো যে মীরার মোবাইলে দেয়া তিথির ফোন মীরার কোন এক আত্মীয় রিসিভ করেছেন। মীরা বর্তমানে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।

তার স্টোমাক ওয়াস করানোর ফলে মীরা বর্তমানে সুস্থ্য আছে। মীরার এই খবরটা পেয়ে আমার বুক থেকে ভারি পথরটা নেমে গেলো নিমিষেই। আমি সাথে সাথে রবিন ও তমালকে জানালাম। আমি মীরাকে ফোন করলাম মীরা আমার ফোন এবার রিসিভ করেছে। তার বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জানালো এখন ভালোই আছে।

তরল জাতীয় খাবার তাকে দেয়া হয়েছে শক্ত খাবার তার জন্য এখন বারণ। - আমি খুবই দুঃখিত যে তোমাদেরকে বেশ টেনশনে ফেলে দিয়েছিলাম। - এখন এসব কথা থাক। - তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিও। - আমি এখন আর এসব শুনতে চাচ্ছিনা, আগে তুমি পুরোপুরি সুস্থ্য হও তারপর এসব নিয়ে কথা বলবো।

- তুমি আমাকে অনেক বার ফোন করেছিলে তাই না ? - হ্যা। - আমার মোবাইলটা সাইলেন্ট ছিলো এবং বাসায় ফেলে এসেছিলাম তাই কেউ রিসিভ করেনি, দুপুরে আমার মামাতো বোনকে দিয়ে আনিয়েছি। - তোমার মা কি এসেছেন ? - না। - তিনি কি জানেন তুমি অসুস্থ্য ? - না তাকে এখনো জানানো হয়নি। - তিনি কবে ফিরবেন ? - দুই একদিনের মধ্যেই ফিরবেন।

আচ্ছা শোন... - বলো। - একটা কবিতা শোনাবে ? - এখন ? - হ্যা... এখন। - শুধু বিধাতার সৃষ্টি নহ তুমি নারী ! পুরুষ গড়েছে তোরে সৌন্দর্য সঞ্চারি আপন অন্তর হতে। বসি কবিগণ সোনার উপমাসূত্রে বুনিছে বসন... - এটা তোমার লেখা ? - না। - তাহলে কার ? - রবীন্দ্রনাথের।

- রবীন্দ্রনাথের কবিতা শোনাতে তোমাকে কে বলেছে ? তুমি তোমার লেখা কবিতা আমাকে শোনাবে। - আমি কবিতা লিখতে জানিনা, কখনো লিখিওনি। - কবিতা লিখতে জাননা তাহলে ফোন করেছো কেন ? ফোন রাখো। মীরা আর আমকে ফোন রাখার সুযোগ না দিয়ে নিজেই খট করে রেখে দিলো। মীরাকে বুঝা দিন দিন দুষ্কর হয়ে পড়ছে।

আমি আর বুঝতে চাইনা, বুঝার চেষ্টাও করবো না। নিজেকে কোন মতে উদ্ধার করতে পারলেই বাঁচি। মীরার কবল থেকে আমাকে উদ্ধারের জন্য তিথি এবং রবিন দুজনে মিলে একটা বোর্ড গঠন করে ফেলেছে। তারা বিভিন্ন ধরনের সু-পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। পরামর্শ একঃ মীরাকে যেন আমি নিজে থেকে কখনো ফোন না করি।

পরামর্শ দুইঃ মীরা যদি আমাকে ফোন করে তবে তার ফোন রিসিভ করে যেন স্বাভাবিক ভাবে কথা বলার চেষ্টা করি। পরামর্শ তিনঃ আমার মোবাইলে বেশি পরিমানে টাকা রাখা যাবেনা। যাতে মীরা যদি কল ব্যাক করতে বলে তাহলে আমি যেন খুব বেশি কথা বলতে না পারি। পরামর্শ চারঃ এই মুহুর্তে আমার অর্থনৈতিক অবস্থা খুব শোচনীয় তা মীরাকে নানান উপায়ে বুঝাতে হবে। আমি অতশত পরামর্শের ধারে কাছে না গিয়ে সোজা আমার মোবাইলে মীরার নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছি।

আমার ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও তাকে ব্লক করে দিয়েছি যাতে সে আমার সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করতে না পারে। মানুষ একবার যখন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে তখন তার জীবনটা আরো বেশি গোছানো ও পরিপাটি হয়ে উঠে। জীবনের প্রতি মায়া বেড়ে যায়। মীরা যে ভুলটা আবেগের বশে করে ফেলেছিলো সেটা আর দুবার করতে চাইবেনা। ন্যাড়া যেমন একবারই বেল তলায় যায় ঠিক তেমনি মানুষও স্যাভলন জাতীয় খাবার একবারই খায়।

কেউ স্যাভলন খেয়ে ঠিকে যায় আর কেউ স্যাভলন খেয়ে পড়ে যায়। স্যাভলন এমন কোন মুখরোচক খাবার বা পানীয় নয় যে বার বার খেতে হবে। বার বার স্যাভলন পান করেছে এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। মীরা স্বাভাবিক ভাবেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে চাইবে কিন্তু যখন যোগাযোগ করতে পারবেনা তখন তার একটু বেশিই খারাপ লাগবে কিন্তু সেই খারাপ লাগার পরিমানটা ক্রমে ক্রমে কমে আসবে একদিন সে আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে আমি সেই কামনাই করি। মনটা আমার অসম্ভব পরিমাণে খারাপ হয়ে আছে।

মীরাকে যে আমি কখনো ভালোবাসিনি তা তাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি বলে মীরার মতো ভালো একটা বন্ধুকে হারাতে হলো। আমার মন খারাপটা খুব সহজেই তিথি তমাল ও রবিনকে সংক্রমিত করে ফেলে। তারা বার বার আমাকে ফোন করে নানান রকমের সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে রবিন ফেসবুকে তার প্রিয় বন্ধু যূথীর সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেয়। যূথী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স করছে।

সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্রী হলেও মনস্তাত্তিক বিদ্যায় অসামান্য দখল আছে। যে কারো মনকে এক তুড়িতে ভালো করে দেবার মতো ক্ষমতা সবার হয়না কিন্তু যূথীর হয়। বাচ্চাদের কন্ঠকে হুবহু নকল করার প্রতিভা কি সবার মধ্যে আছে ? সবার থাকুক আর না-ই থাকুক যূথীর আছে। এরকম আরোও অনেক অনেক প্রতিভা যূথীর মধ্যে বিদ্যমান তা রবিনের মাধ্যমেই আগে থেকেই জানা হয়ে গেছে। যূথী আমার ফেসবুকে যুক্ত হওয়ায় তাকে জানার আগ্রহও আমার মধ্যে প্রকাশ পেলো।

তার প্রোফাইলের তথ্য ঘেঁটে বুঝতে পারলাম মেয়েটা বেশ রসিক। এই যুগে রসিক মেয়েদের কদর খুব বেশী বলেই তার দেয়ালে তার ভক্তদের আগা গোনাও বেশ ঈর্ষণীয়। বিড়ালের প্রতি বিশেষ দূর্বলতা আছে যূথীর। বাসায় সাত সাতটা বিড়াল পোষা হয় !! প্রত্যেকেরই আলাদা নাম, আলাদা খাবারের বাটি, আলাদা বিছানা আছে। তাদের জন্য আলাদা খাবার রান্না করা হয় প্রতিদিন।

একবার তার একটা বিড়াল বেশ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তিন দিন থেকে কোন খাবার দাবার মুখে তোলেনি। যূথীও বিড়ালের সাথে পাল্লা দিয়ে খাবার মুখে নেয়নি। বিড়ালকে ডাক্তার দেখানোর জন্য পরীক্ষার হলে অনুপস্থিত ছিলো এমন নজির যূথীর বেলায় সহজলভ্য। যে মানুষ বিড়ালের প্রতি এতোটা দরদ দেখাতে পারে সেই মানুষটা মানুষের জন্য না জানি কতটা ভালোবাসা সংরক্ষণ করতে পারে তা দেখার জন্য আমিও বেশ ব্যকুল হয়ে উঠেছি। ফেসবুকে যূথী আমার সাথে যুক্ত হওয়ার কিছু দিনের মাথায় তার অনুরোধে আমার মোবাইল নাম্বার তাকে দিই।

এখন মোবাইলেই যূথীর সাথে আমার কথা হয়। যূথীর সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম সে কবিতা খুব একটা পছন্দ করেনা। যারা কবিতাকে প্রশ্রয় দেয়না তারা বাইরে যতটা নরম হয় ভেতরে ততধিক শক্ত থাকে। এরা যে কোন পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নিতে পারে। কবিতার আবেগ তাদের বাহ্যিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও ভেতরটা নাড়াতে পারেনা।

ওর ভেতরটা নড়ে উঠুক আমিও তা চাইনা। চলবে... সুমন আহমদ সিলেট। ৮ই জুন ২০১১ খৃষ্টাব্দ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।