আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা... (ষষ্ঠ পর্ব)

আগামীর স্বপ্নে বিভোর... চট্টগ্রামে ফিরে এসেছি কিন্তু কাজে মন বসাতে পারছিনা। একটু পর পর মীরা ফোন করছে। সে আমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে আমি তাকে বিয়ে করছি কিনা। কিন্তু তাকে বুঝানো কোন মতেই সম্ভব হচ্ছেনা যে তাকে আমি শুরু থেকেই একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই ভেবে আসছি অন্য কিছু নয়। কিন্তু মীরা তা মানতে নারাজ।

ইদানিং সে আমাকে বেশ হুমকি দামকি দিয়ে বেড়াচ্ছে! মেয়েরা ভালোবাসা আদায়ে হুমকি দামকি দিচ্ছে এই দৃশ্য আমাদের দেশে সচরাচর দেখা যায়না তাই আমি খানিকটা ভড়কেও যাই। কিন্তু আমাকে ভড়কে গেলে চলবেনা, ভয় এমন এক জিনিষ যা বাড়তে শুরু করলে ক্রমাগত বাড়তেই থাকে। আমি ভয়ের লাগাম ধরার চেষ্টা করি, একবার ধরতে পারলেই হলো। পাল্টে যাওয়া দৃশ্যপট আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আমাকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু এটা একা একা করা ঠিক হবেনা সতীর্থ হিসেবে কাউকে পাশে রাখা দরকার।

তমালকে এই মুহুর্তে কিছু বলা উচিত হবে কিনা ভাবছি তমালের মাথা এমনিতে গরম থাকে তার উপর এখন গরমের সময় হিতে বিপরীত হবার আশংকা বেশী। রবিনের সাথেও গত দু দিন থেকে যোগাযোগ হচ্ছেনা। তাই এই মুহুর্তে তিথিকে ছাড়া আর কারো কাছে কিচ্ছু বলা যাবেনা। তিথি আমার বন্ধু। ফেসবুকে পরিচয় হলেও এখন আর ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ নয় ফেসবুকের দেয়াল ভেঙ্গে অনেক কাছে চলে এসেছে সেই কবে থেকে।

আমার হাতে গুনা যে ক'জন মেয়ে বন্ধু আছে তিথির অবস্থান সেখানে সবাই উপরে। আমার যে কোন কথা তার কাছে সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখতে পারি। তিথি অসম্ভব মেধাবী একটা মেয়ে। ইনিয়ে বিনিয়ে ভালোই কবিতা লিখতে জানে। একটা ছোট খাটো শব্দের উপর ভর করে আস্ত একটা কবিতা বের করার মতো কঠিন কাজ তিথির কাছে নস্যি।

দস্যিপনাতেও কম যায়না। তিথি একটা কনসালটেন্সি ফার্মে চাকরী করে তাই তার কাছে যেকোন সমস্যার সমধান আগে থেকেই তৈরী করা থাকে। পরম আস্থা আর নির্ভরতা নিয়ে তিথিকে ফোন করে মীরা সম্পর্কিত সব কিছু জানালাম। তিথি সহজাত একটা হাসি দিলো তাতেই আমার অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে এলো। আমার ফেসবুক প্রোফাইলে মীরার আনা গোনার সুবাদে মীরাকে তিথি চেনে।

মীরাও তিথিকে চিনে থাকবে একই কারণে। তিথি আমার কাছে থেকে মীরার ফোন নাম্বার চেয়ে নিয়ে আমাকে স্বাভাবিক থাকার পরামর্শ দিলো বাকি দায়িত্ব এখন তার উপর। নিজের দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে অন্য সবার মতো আমিও কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। কিন্তু মীরার ফোন সেই স্বস্তিকে দীর্ঘায়িত করতে দিলো না। - হ্যালো... - হ্যা শুনতে পাচ্ছি।

- আগে ত রিং হওয়ার আগেই ফোন ধরতে এখন এখন রিং বাজতে বাজতে লাইন কেটে যায় কিন্তু ফোন ধরো না কেন ? - আমি কিছুটা ব্যস্ত ছিলাম তাই। - দেখো ভন্ডামি করবানা, ওসব আমার পছন্দ না। যা বলার সোজা সুজি বলো। - আমি কোন ভন্ডামি করছিনা, তোমাকে যা বলার আমি বলে দিয়েছি। - কি বলে দিয়েছো ? আমাকে তুমি বিয়ে করবেনা ? - মীরা, আমরা খুব ভালো বন্ধু হয়ে থাকতে চাই।

- শোন বিয়ের পরও বন্ধু হয়ে থাকা যায়... তিথি না ফিথি কে একজন ফোন করেছিলো। অনেক ওকালতি করলো, আমি ওকালতির ধার ধারিনা। তুমি কি স্যাভলন চেনো ? - হ্যা। - ওটা খেলে কি হয় বলতে পারবে ? - মীরা প্লিজ থামো। - না আমি থামবো না, আমার ঘরে হাফ লিটারের একটা স্যাভলনের বোতল আছে আজ রাতের মধ্যে যদি তুমি আমাকে তোমার সিদ্ধান্ত না জানাও তবে বোতলের সব স্যাভলন গলা দিয়ে ঢেলে দেবো।

বুঝেছো ? আমি আর মীরার সাথে কথা না বাড়িয়ে ফোনটা রাখলাম ও বার বার আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো রাতে ঘুমানোর আগেই যেন আমি তাকে আমার সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দিই। তিথিকে ফোন করে বিষয়টা জানালাম তার তার মুখে সেই পরিচিত হাসিটি না শোনে বুজতেই পারলাম বিষয়টা জটিল হচ্ছে। রবিনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম কিন্তু তাকে সাথে সাথে পাওয়া গেলো না। রবিনকে পেলে আরো একটু ভরসা পাওয়া যেতো। ঘন্টা দুই পরে রবিন নিজেই আমাকে ফোন করে, আমি তাকেও বিস্থারিত জানালাম।

পুরো ঘটনা শুনে রবিন নিজেও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলো। একটু পরে রবিন আমাকে আশ্বাস দিলো যে এমন কিছু আসলে ঘটবেনা আমি যেন স্বাভাবাবিক থাকার চেষ্টা করি। রবিন আমার কাছ থেকে ঘন্টা খানেকের জন্য সময় নিলো। যূথী নামে রবিনের এক বন্ধু আছে যার কথা আমাকে প্রায়ই বলতো কিন্তু আমার সাথে যূথীর কোন পরিচয় নেই। সবার যেমন বিশেষ কেউ থাকে যার সাথে সব ধরনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যায় তেমনি রবিনের বেলায় যূথী।

রবিনের সাথেও যূথীর পরিচয় ফেসবুকে। কেউ কাউকে এখনো দেখেনি কিন্তু তাদের কথা বার্তা শোনে তা কারোর মনে হবেনা। সবাই ভাববে একজন আরেকজনকে কত দিন থেকেই যেন চেনে। রবিন যূথীর সাথে আমার ব্যাপারে আলোচনা করতে আমার সম্মতি চাইলো আমি না করিনি। মেয়েরা মেয়েদের ব্যাপারগুলো ভালো বুঝবে হয়তো তাতে ভালো কোন সমাধান বেরিয়ে আসতেও পারে।

রবিন আমাকে ঠিক এক ঘন্টা পরে আবার ফোন করে জানালো যে যূথীর সাথে তার কথা হয়েছে এটা নিয়ে এতো ভাবা ভাবির কিছু নাই। আমি যেন সহজ স্বাভাবিক ভাবেই থাকি। আমিও আর কিচ্ছু ভাবতে চাইছিনা যা হবার তা হবে। রাত তিনটার দিকে তিথি আমাকে ফোন করলো। ও এতো রাতে সাধারণত আমাকে ফোন করেনা।

- মীরা কি তোকে ফোন করেছিলো ? - না। - তুই করেছিলে ? - না। - একটু আগে মীরা আমাকে ফোন করেছে। - তাই নাকি ? - হ্যা। - কি বললো ? - ও স্যাভলন খেয়ে ফেলেছে।

- বলিস কি ? - হ্যা ঠিকই বলছি। - তাহলে এখন আমি কি করবো ? - কি আর করবি আল্লাহ আল্লাহ কর। - তিথি শোন ঢং করিস না প্লিজ, সত্যি করে বল ও কি সত্যি সত্যি স্যাভলন খেয়েছে ? - হ্যা, আমি সত্যিই বলছি ওর কথা বলার ধরণ ও কন্ঠ শোনে আমার সেটাই মনে হয়েছে। শোন ওর মায়ের নাম্বার কি তোর কাছে আছে ? - না। আর ওর মা বাসায় নেই তিন চার দিন আগে নাকি গ্রামের বাড়ি গেছেন এখনো ঢাকায় ফিরেন নি, আরোও সপ্তাহ খানেক পর নাকি ফিরবেন।

- তাহলে বাসায় এখন কে কে আছে ? - ওর বাবা আর বোন। - ওর বোনের নাম্বার আছে ? - না আর অন্য কারোর নাম্বার আমার কাছে নেই। - তাহলে আর কি করা এখন বসে বসে আঙ্গুল চোষ। - তিথি প্লিজ কিছু একটা কর। আমার কিচ্ছু মাথায় আসছে না।

- শোন এখন আর কিচ্ছু করার নাই, তুই অত অস্থির হইস না। এখন ঘুমানোর চেষ্টা কর কাল সকাল না হওয়া পর্যন্ত কি করতে হবে তা বুঝতেও পারছিনা। মীরার মোবাইল থেকে শেষ কলটা আমার কাছে আসছে তাই কেউ যোগাযোগ করলে প্রথমে আমার সাথেই করবে। প্লিজ তুই শান্ত থাক, আমি একটা ব্যবস্থা করে ফেলবো। তিথির সাথে কথা বলার পর পর মীরার মোবাইল থেকে আমার মোবাইলে একটা টেক্সট মেসেজ এলো "জানো, আমি মরে যাচ্ছি।

যাবার আগে তোমাকে একটা সত্যি কথা বলে যাই আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি, আমাকে ক্ষমা করে দিও যদি কোন ভুল করে থাকি" মীরার এই টেক্সট মেসেজে অনেক গুলো বানান ভুল ছিলো তাই বুঝতে আর বাকি রইলো না যে মীরা সত্যি সত্যি অঘটনটা ঘটিয়ে ফেলেছে। আমি সাথে সাথে মীরাকে ফোন করি মীরা আমার ফোন রিসিভ করলে ওর ঘুঙ্গানীর মতো শব্দ ছাড়া আর কিচ্ছু শোনতে পাইনি। তারপর আমি লাইনটা কেটে আবার কল দিই কিন্তু মীরা আর আমার কল রিসিভ করেনি। চলবে... সুমন আহমদ সিলেট। ২৫শে মে ২০১১ খৃষ্টাব্দ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।