আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা... (নবম পর্ব)

আগামীর স্বপ্নে বিভোর... তিথির রীতি নীতি মতি গতি বুঝা খুবই মুশকিলের ব্যাপার। ও সবাইকে অযথা টেনশানে রাখতে পছন্দ করে। হুটহাট করে কয়েকদিনের জন্য মোবাইল অফ করে দেবে, ফেসবুকেও আসবেনা। কয়েকদিন পর হঠাৎ উদয় এমন সব যুক্তি দাঁড় করাবে যেসব যুক্তির পাশে খালি হাতে দাঁড়ানো যায় না। পুষে রাখা ফুঁসে উঠা রাগ তখন নিমিষেই পানি হয়ে যায় উল্টো তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয় ! এর কোন মানে হয়না।

এবার আর ওকে কোন ছাড় দিচ্ছিনা আমিও মনে মনে বেশ কিছু যুক্তি তর্ক দাঁড় করাচ্ছি ওর বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। যদি মোবাইল ছিনতাইয়ের কথা বলে তবে যুক্তি নম্বর এক, যদি মোবাইল চুরি গেছে বলে তাহলে যুক্তি নম্বর দুই, যদি বলে শরীর খারাপ ছিলো তাহলে যুক্তি নম্বর তিন, যদি বলে অমুক ফুফুর/আত্মীয়ের বাড়ীতে ছিলাম তাহলে যুক্তি নম্বর চার। তবে আমার ভেবে রাখা বিষয়গুলির বাইরে যদি কোন যুক্তি দাঁড় করায় তবে তার সাথে পেরে উঠা সত্যি কঠিন হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ভেবে রাখা যুক্তির ফাঁদে যদি ও একবার পা দেয় তাহলেই দেখবো ও যায় কোথায়। ওর অতীত রেকর্ড বলছে ও চার পাঁচ দিনের বেশি আমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে থাকেনি তার মানে আজ অথবা কালকের মধ্যে ও আমাকে ফোন করবে।

কথাটা ভাবতে ভাবতেই মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। নিশ্চয় তিথি ফোন করেছে। মোবাইল হাতে নিয়েই দেখলাম তমালের ফোন। - হ্যা তমাল বল। - তোর মাথায় কি কোন কাজ আছে ? - না।

- হাতে কোন কাজ আছে ? - না। - মীরা কি আর তোকে কোন উপায়ে ডিস্টার্ব করছে ? - তমাল শোন কি বলতে চাচ্ছিস বলে ফেল, তোর কথা শোনার মত সময় আমার আছে এতো ভণিতা না করে সোজা সুজি বলে ফেল। - দুস্ত গত দু তিন দিন থেকে রাতে ঘুমাতে পারছিনা, খুব টেনশান হচ্ছে। - কেন ? - ঐ শালারা আমাদেরকে তাদের গ্রুপ থেকে বের করে দিলো কিন্তু আমরা এতো দিনেও কোন প্রতিশোধ নিতে পারলাম না। ভালো মত একটা প্রতিশোধ নিতে না পারলে আমি আর ফেসবুকই ইউজ করবো না।

- তমাল শোন, আর পাগলামী করিস না। যা হবার হয়ে গেছে। আমি আর কোন ঝামেলায় জড়াতে চাচ্ছিনা। - নীল। - হ্যা বল শুনতে পাচ্ছি।

- আমার মাথায় একটা মাষ্টার প্ল্যান এসেছে। - কি সেটা ? - আমরা নতুন একটা গ্রুপ তৈরী করবো। সেই সাথে কয়েকটা মেয়ে ফেক আইডি। মেয়ে ফেক আই ডির মূল কাজ হবে অন্য গ্রুপ থেকে লেখক সদস্য সংগ্রহ করা। আর বিভিন্ন ব্লগ থেকে অখ্যাত লেখকের কবিতাংশ কপি করে গ্রুপে পোষ্ট করা।

আপাতত দুইটা মেয়ে ফেক আই ডি খুলবো তুই একটা চালাবি আর আমি একটা চালাবো। ঠিক মতো চালাতে পারলে কয়েক দিনের মধ্যেই আমাদের গ্রুপটা জনপ্রিয় তালিকায় চলে আসবে। ফেক আই ডি দিয়ে আমরা ঐগ্রুপের শালাদের এ্যাড করবো আমাদের গ্রুপে, ওরা যখন আমাদের গ্রুপে নিয়মিত হয়ে যাবে তখন সুযোগ বুঝে ওদের পাছায় বাঁশ ঢুকিয়ে দেবো। আমার আইডিয়াটা জোশ না ? - না। - কি বললি ? - আমি ঠিকই বলেছি।

আমি আর ওসবের মধ্যে নেই। - শালা ! এখন ইচ্ছে করছে বাঁশটা তোর পাছায় ঢুকিয়ে দিই। আমি এতো সুন্দর একটা মাষ্টার প্ল্যান করলাম আর তুই কোন গুরত্বই দিলিনা। - তোর যা ইচ্ছে হয় কর বাঁধা দেবোনা শুধু আমাকে আর ওসব ঝামেলায় জড়াস না প্লিজ। তিথির সাথে যোগাযোগ হয়েছে।

পাক্কা চারদিন পর ও আমাকে একটু আগে ফোন করলো। ফোন করেই বললো আমার ফেসবুকে নাকি ও একটা মেইল পাঠিয়েছে আগে আমি যেন সেটা চেক করি তারপরে সে আমাকে বিস্থারিত জানাচ্ছে। এই বলেই ফোনটা রেখে দিলো। নতুন কোন লজিক নিয়ে এসেছে কিনা কে জানে। আমি মনে মনে আমার লজিকগুলো স্মরণ করে তিথির মেইল চেক করার জন্য ফেসবুকে লগিং করি।

অনেক গুলো আনরিড মেইলের সাথে তিথির মেইল ওপেন করালাম। মেইলে অপরিচিত একজন মানুষের ছবি এটাচটড করা। গৌর বর্ণের হালকা পাতলা চেহারার এই মানুষটার মাথা শরীর থেকে খানিকটা উপরে বলেই কার্টুন ফিগারের মতো লাগছে। সার্টের সাথে প্রমাণ সাইজের টাইয়ের নটটাও দেখার মতো। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পাশে থাকা একটা খাম্বায় হাতটা শক্ত করে ধরা মনে হচ্ছে ভারি বাতাস যাতে বেচারাকে উড়িয়ে যাতে নিতে না পারে সেই ব্যবস্থা করেছেন খাম্বায় হাত রেখে।

কুঁকড়ানো চুলের সাথে হালকা নীল রঙের চোখটা দেখে যে কেউ শংকর প্রজাতি ভেবে ভুল করতেই পারে। দীর্ঘ দিন প্রবাসে থাকলে চেহারার মধ্যে যে একটা হাবা গোবা ভাব চলে আসে সেটাও ছবিতে পরিষ্কার ভাবে প্রষ্ফুটিত। এই অপরিচিত মানুষটার সাথে তিথির কি সম্পর্ক হতে পারে তা ভাবতে ভাবতেই তিথির ফোন চলে এলো। তিথি ফোন করে হ্যালো না বলে সোজা সুজি জানতে চাইলো ছেলেটা কেমন ? আমি ছেলেটা কে সেটা জানতে চাইলে সে আবারো একই প্রশ্ন করলো। উত্তরে আমি বললাম ওকে দেখতে ত কার্টুনের মতোই মনে হচ্ছে।

তবে এই কার্টুনের ভেতরে কি আছে তা ত বলতে পারছিনা। তিথি অনেকটা কান্নার সুরে আমাকে জানালো অর্পা দি নাকি এই ছেলেটার সাথে তিথির বিয়ে ঠিক করেছেন ! অর্পা দি র মূল নাম অর্পণা সেন গুপ্ত। বরিশালের মেয়ে হলেও স্বামী সন্তান নিয়ে কলকাতায় সেটেল্ড। কলকাতার সল্টলেকের একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে থাকেন। নাচ গানে বেশ পারদর্শি বলেই কলকাতার কোন এক বাংলা টিভি চ্যানেলে বাচ্চাদের গানের প্রতিযোগীতার প্রধান বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অর্পা দির সাথে আমার ফেসবুকেই পরিচয় তিনি বাংলাদেশে বেড়াতে এলে চট্টগ্রামেও আসেন। চট্টগ্রামে অর্পা দির শ্বশুড়ের মূল বাড়ি এখনো ভিটে মাটি রয়ে গেছে। চট্টগ্রামে এলে অর্পা দির সাথে আমার দেখা হয়। সেই থেকে অর্পা দির সাথে আমার এক্সট্রা খাতিরও আছে। তিথির কথা শোনে আমি যেন আঁৎকে উঠলাম।

- বলিস কি ? - হ্যা আমি ঠিকই বলছি, এই জন্যই ত চার দিন থেকে মোবাইল অফ করে রেখেছি যাতে অর্পা দি আমাকে মোবাইলে খুজে না পান। - ছেলেটা কি কলকাতায় থাকে ? - না। - তাহলে কোথায় ? - রাশিয়ায়। - হুম, এই জন্যই মনে হয় ভদকা খেতে খেতে শরীরটা ভদকার বোতলের মতো বানিয়ে রেখেছে। - ফাজলামি করিস না।

বল এখন আমি কি করবো ? - কি আর করবি ঝুলে পড়... - নীল... - হাজার হোক ছেলেটা রাশিয়ান। ওকে বিয়ে করলে তুই রাশিয়া চলে যাবি। তোর নতুন নাম হবে তিথিভলস্কি ! নাম টা কিন্তু জঠিল !! আর হ্যা প্রতি মাসে আমার জন্য এক বোতল ভদকা পাঠাবি। আহ ! ভাবতেই ভালো লাগছে। - নীল প্লিজ থাম।

সেই কখন থেকে দেয়াল ঘড়িটায় দেখছি রাত ১১টা বাজে। এখনো এগারোটা বেজে বসে আছে যেন ঘড়ির কাঁটা দুটো বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছে তারা আর নড়তে চাইছে না। আমার এই দেয়াল ঘড়িতে সেকেন্ডের কাঁটা নেই তাই বুঝতে পারছিনা ঘড়িটা কেউ বন্ধ করে দিয়েছে কিনা। বুলগেরিয়ার গ্যাব্রোভো অঞ্চলের আদিবাসীরা ঘড়ির ব্যাটারী সাশ্রয় ও ঘড়ির কাঁটা যাতে দ্রুত ক্ষয়ে না যায় সেজন্য তারা রাতের বেলা ঘড়ি বন্ধ করে রাখে। এমন কুকর্ম করার মতো কোন লোক আমার বাসায় নেই।

মোবাইলের ঘড়িতে দেখলাম এগারোটাই বাজছে। শীতের রাত এগারো টা মানে মধ্য রাতের সমান। সন্ধ্যা থেকে রাত এগারোটায় পৌছাতে পৌছাতে অনেক কাজ সেরে ফেলা যায়। আমার হাতে কোন কাজ না থাকায় আমাকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এই অপেক্ষা বিড়ালের মা'র জন্য।

বিড়ালের মা রাত ১২টা পর্যন্ত পড়াশোনা করে। তারপর তার সাথে শুরু হয় আমার ম্যারাথন ফোনালাপ, চলে রাত দুইটা তিনটা পর্যন্ত। ইদানিং বিড়ালের মায়ের মাথায় হাত না রাখলে ওর নাকি ঘুম হয়না। শত মাইল দূরে থেকেও আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়াতে পারি। মনের অবস্থান যদি মনের ভেতরে হয় তাহলে শরীরের অবস্থান শত ক্রোশ দূরে থাকলেও কি তাকে দূরে থাকা বলে... দূরে থেকেও আমরা কত কাছা কাছি।

চলবে... সুমন আহমদ সিলেট। ২৭শে জুন ২০১১ খৃষ্টাব্দ। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।