আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলাতকা...

আগামীর স্বপ্নে বিভোর...

যখন আমার বয়স ছিলো চার কিংবা পাঁচ তখন আমি আমার দাদীর সঙ্গে তার বাপের বাড়ী গিয়েছিলাম। আমার দাদীর ভাই তখন গুরুতর অসুস্থ, মূলত উনাকে দেখার জন্যই যাওয়া। সেখানে যাওয়ার পর আমাকে এক টুকরো পাঁকা পেপে দেওয়া হয়। আমার পাশে মৃত্যু পথযাত্রী একজন মানুষ সেদিকে আমার কোন নজর নেই আমি খুব আরামের সাথে পাঁকা পেপেটি খাচ্ছিলাম। দিন অনেক গড়িয়েছে কিন্তু ছোট্ট বেলার সেই স্মৃতি মুছে যায়নি, এখনো পাঁকা পেপে দেখলেই অবধারিত ভাবেই আমার সেদিনের কথা মনে পড়ে যায়।

স্মৃতির সাথে অভ্যাসের কোথায় যেন একটা সুক্ষ্ণ মিল আছে। কিছু স্মৃতি যেমন মুছে ফেলা যায়না তেমনি কিছু অভ্যাসও ছাড়া যায়না। তমাল কলেজ জীবনে বাম ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো। আর রাজনীতি মানেই ত দলা দলির একটা ব্যাপার স্যাপার। কলেজের জি,এস পদে নির্বাচন করে হারলেও দমেনি।

বি,এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে পড়াশোনায় ইস্তফা দিলো। অফুরন্ত অবসরকে শ্রাদ্ধ করার জন্য ফেসবুকে নাম লিখিয়েছে। ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে কবিতা আর বিভিন্ন জনের ধার করা বাণী নিয়মিত প্রকাশ করার ফলে গ্রুপগুলোতে জনপ্রিয় মুখে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু অভ্যাস বলদলাতে পারেনি বলে সেখানেও দলা দলি ঢুকিয়ে দিয়েছে। তার নিজস্ব দলে বেশ কিছু শক্তিমান লেখক আছেন যারা নজরুল থেকে মাইকেল, রবীন্দ্র থেকে জীবনানন্দের কবিতার বিভিন্ন লাইন জোড়া তালি দিয়ে নিজস্ব একটা ধারা তৈরী করে কপি পেষ্টিংয়ে অত্যান্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন।

তমাল ফেসবুকের একটা গ্রুপের কোন এক মেয়ের উপর কোন কারণে চরম বিরক্ত। সুযোগ পেলেই দুজন দুজনকেই এক হাত দেখে নেয় কেউ কাউকেই ছাড় দেয়না। একটি হঠাৎ করেই সেই মেয়েটির সাথে তমাল বড় সড় একটা ক্যাঁচাল বাঁধিয়ে ফেলে। গ্রুপে মহা হৈ চৈ শুরু হয়ে গেলো। মেয়েটির নিজস্ব কোন দল নেই, মেয়েদের কোন নিজস্ব দলেরও প্রয়োজন পড়েনা তারা যেখানেই যাবে প্রাকৃতিক ভাবেই সেখানে একটা দলের সৃষ্টি হয়ে যায়।

এই গ্রুপেও ব্যতিক্রম নয়, মেয়েটির পাল্লা ইতিমধ্যেই বেশ ভারি হয়ে উঠেছে। তমালের দল ঠিক মতো কুলিয়ে উঠতে পারছেনা সেই দলের সাথে। অগত্যা তমাল আমাকে ফোন দিলো আমি কোন একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলে খুব বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করলাম। তমাল আমাকে তার পক্ষ হয়ে ঐ দলের বিরুদ্ধে লড়ার আবেদন জানালো আমি সম্মতি দিলাম। আমি সেই গ্রুপে জয়েন করে সব কিছু পর্যবেক্ষণ করলাম, দেখলাম তমালের যে পোষ্ট নিয়ে ক্যাচাল শুরু সেটা তেমন কোন সংঘাতপূর্ণ ছিলো না কিন্তু ঐ মেয়েটি তমালের উপর আগে থেকেই নারাজ হওয়ার কারনেই বিপত্তিটা বেঁধেছে।

আমি তমালের পক্ষ নিইনি মিডল অফ দ্যা রোডেই থেকেছি। কারণ এই মুহুর্তে মিডল অফ দ্যা রোডে থাকা মানেই তমালের পক্ষে থাকা। গ্রুপের এ্যাডমিন ঐ মেয়েটির পক্ষে থাকার কারণে আমাদের অবস্থা ছেড়া বেড়া। আমরা একটা পোষ্ট দিলে বিরোধী পক্ষ পাঁচটা পোষ্ট দিয়ে ফেলে। কাহিনী জটিল হতে লাগলো আর কাহিনী জটিল হলেই রবিনের দরকার পড়ে।

রবিন আমার বন্ধু, বিদেশে থাকে। বিদেশে থাকলেও সব সময় আমার হাতের নাগালেই থাকে, ডাকলেই পেয়ে যাই। রবিন সব বিষয়েই তিন পোয়ার উপর জ্ঞান রাখে। ক্ষেত্র বিশেষে কখনো সেটা সেরের উপরে উঠে। আমার কোন সমস্যা হলে আমি ভড়কাই না রবিন আছে সে সব ঠিক করে নেবে।

আমার দায়িত্ব শুধু রবিনের কান পর্যন্ত পৌছানো। রবিন হচ্ছে দয়ার সাগর। আমার এমন এক বন্ধু যাকে কারণে অকারণে যতই কষ্ট দিই না কেন তার সামনে গিয়ে আমি যখন তার মুখের পানে তাকাই তখন তার সব কষ্ট পানি হয়ে যায়, পরম ভালোবাসায় আমাকে তার বুকে জড়িয়ে নেয়। আমরা টাকা পয়সা খরচ করে সাগরের বিশালতা অবলোকন করার জন্য সাগরের কাছে ছুটে যাই কিন্তু আমাদের হাতের কাছে কিছু মানুষ আছেন যারা বুকের মধ্যেই বিশাল সাগর ধারণ করে আছেন অথচ আমরা তাদেরকে চিনতে পারিনা। রবিনকে কেউ চিনুক আর নাই চিনুক বুকের ভিতর বিশাল সাগর ধারণ করা রবিনকে আমি চিনি।

রবিন কিন্তু আসল নাম নয় আমার দেয়া নাম, রবিনের নামটা হাতেম তাঈ দিতে পারলে আরো ভালো হতো কিন্তু এ যুগে এই নাম পাবলিক খাবেনা। অথচ হাতেম তাঈ-এর সব গুণাগুন সমৃদ্ধ রবিনের "রবিন" নামটা অনেকটা অনিচ্ছাকৃত ভাবেই দেয়া। ছোট বেলায় বিটিভির পর্দা কাঁপানো বিদেশি ধারাবাহিক রবিন হুডের হুডটা বাদ দিয়ে রবিন নামটা আমি রেখে দিয়েছি। পরোপকারী রবিন হুডের সাথে আমার রবিনের চরিত্রের যথেষ্ট সাদৃশ্য আছে বলেই নামটা রাখা কিছুটা হলেও সার্থকতা পেয়েছে। যাহোক আমি রবিনকে বিষয়টা জানালাম।

রবিন মাহানন্দে আমাদের সাথে ঝাপিয়ে পড়লো বিরোধীদের বিপক্ষে। এবার বিরোধীরা পিছু হটতে বাধ্য হলো। আমাদের সাথে কথা যুদ্ধে পেরে উঠতে না পেরে তাদের শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলো মানে গ্রুপ থেকে আমাদের সবাইকে বের করে দিলো। গ্রুপ থেকে আমাদের বের করে দেয়ার ফলে তমালের মাথায় রক্ত উঠে গেলো। সেই রক্ত আর নামেনা একেবারে জমাট বেঁধে গেছে।

তমালের এখন একটাই লক্ষ্য মেয়েটির উপর প্রতিশোধ নেবে। তমাল সব সময় একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে। লক্ষ্যে পৌছালেই তৃপ্তির হাসিতে ফেটে পড়ে। তমালের লক্ষ্য এখন একটাই ওই মেয়েটির ফোন নাম্বার যোগাড় করে তাকে একটা ফোন করে হ্যালো বলেই ভড়কে দেয়া। কিন্তু মেয়েটির ফোন নম্বর যোগাড় করা সহজ কোন কর্ম নয়।

আমার সমস্যার সমাধান যেমন রবিন তেমনি তমালের সমস্যায় আমি। মেয়েটির ফোন নাম্বার যোগাড়ের দায়িত্ব এখন আমার কাঁধে। আমি এই কঠিন দায়িত্ব এড়াতে চাইলেও এড়াতে পারিনি দু মাস বয়েসি বান্দরের বাচ্চার মতো এই দায়িত্বটা আমার কাঁধেই ঝুলে আছে। তমাল একটু পর পর ফোনে জিজ্ঞেস করছে নাম্বার যোগাড় হলো কিনা। আমি বার বার পরাজিত সৈনিকের মতোই নীরব থাকার চেষ্টা করেছি।

কিন্তু তমালের কামড় জগৎ বিখ্যাত, একবার কামড় দিলে কচ্চপের মতো আর ছাড়বেনা। তমালের কামড় থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য নিরুপায় হয়ে মেয়েটির নাম্বার খুঁজতে লাগলাম। এটা ত সিনেমা বা নাটকের কোন দৃশ্য নয় যে পরিচালকের মর্জিতে ভালোয় ভালোয় সব কিছু ঠিক ঠাক হয়ে যাবে। কিন্তু নাটক সিনেমা না হলে কি হবে প্রতিটা ক্ষেত্রেই একজন করে পরিচালক থাকেন সেই পরিচালক কখনো দৃশ্যমান আবার কখনো অদৃশ্য। একদিন আমি হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম আমার খুব পরিচিত একজনের মিচুয়াল ফ্রেন্ড হচ্ছে সেই মেয়েটি।

আমার ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে এলো। আমার কোন কাজের ভালো মন্দ বাছ বিচার না করে হতে গোনা যে ক'জন আমার সব কিছুতেই উৎসাহ দিয়ে থাকেন সান্টু মামা হচ্ছেন তাদের একজন। সান্টু মামার সাথে ফেসবুকেই আমার পরিচয়। শুরু থেকেই তিনি আমাকে মামা ডেকে আসছেন আমিও তার এই সম্বোধনে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। তাই আমিও তাকে কখনো সান্টু ভাই ডাকিনি সান্টু মামা বলেই সম্বোধন করি।

সান্টু মামা একজন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বড় একটা রাজনৈতিক দলের ছায়াও তার মাথার উপর আছে সব সময়। কিছু কিছু মানুষ আছেন যাদের শরীরের আয়তন সীমিত হলেও ক্ষমতা বিশাল, সান্টু মামা হচ্ছেন তাদের একজন। বিশাল ক্ষমতাধরদের আমার খুব অপছন্দ হলেও সান্টু মামাকে অগ্রাহ্য করতে পারিনা। আমার সাথে তার সম্পর্কও চমৎকার ফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলেও ক্লান্তি লাগেনা। মীরা নামের মেয়েটি সান্টু মামার মিচুয়াল ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে আমার সুবিধাই হলো।

যাক এবার তমালকে ঠান্ডা করা যাবে। সান্টু মামাকে জিজ্ঞেস করলাম মীরার সম্পর্কে, মীরার সাথে ব্যক্তিগত কোন যোগাযোগ আছে কিনা। আমি যা জিজ্ঞেস করি সান্টু মামা দ্বিগুন উৎসাহে তার উত্তর দিয়ে যান। আমি যা জিজ্ঞেস করি তার উত্তর ত দেনই সেই সাথে যা জিজ্ঞেস করিনি তারও আগাম উত্তর দিয়ে ফেলেন বুঝতে আর বাকি রইলো না যে সান্টু মামার পছন্দের তালিকাতে মীরার অবস্থান আছে। যাদের ক্ষমতা বিশাল তাদের পছন্দের তালিকাও বিশাল থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

আমি সান্টু মামাকে তমাল জনিত ঘটনাটি বুঝিয়ে বললাম। সান্টু মামা রাজি হলেন মীরার নাম্বারটা আমাকে দেয়ার জন্য কিন্তু একটা শর্ত জুড়ে দিলেন শর্তটা হলো আমিই যেন প্রথমে মীরাকে ফোন করি। আমি হ্যাঁ বা না কিছুই বলিনি। চলবে.... মুখবন্ধঃ লেখকেরা যখন কোন উপন্যাস লিখেন তখন উপন্যাস শুরুর আগে মুখবন্ধ লিখে থাকেন যাতে বিদগ্ধ পাঠকেরা উপন্যাস শেষ হয়ে গেলে উপন্যাসের কোন চরিত্র নিয়ে কোন ধরনের হাউ কাউ করতে না পারেন। তাদের দেখানো পথে আমিও হাঁটলাম।

যদিও আমি জানিনা মুখবন্ধ মানে কি ! অনেক সময় দেখা যায় উপন্যাসের প্রকাশক বা কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও মুখবন্ধ লিখে দিয়ে থাকেন কিন্তু এই লেখার আমিই লেখক আবার আমিই প্রকাশক তাই আমার পাঠক বন্ধুদের মুখ ফসকে যেন অনাকাংখিত কিছু বের না হয় তার জন্য এই মুখবন্ধের আয়োজন নিজের হাতেই করলাম । ফেসবুকে আছি অনেক দিন হলো। ফেসবুকে আসার আগেও টুকটাক লেখা লেখি করতাম, ফেসবুকে এসেও হাত থেমে থাকেনি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেশ কিছু অপুষ্টিকর লেখা লিখে গেছি কিন্তু ফেসবুককে পুঁজি করে সেভাবে কোন লেখা দাঁড় করাতে পারিনি। হঠাৎ করেই মাথায় এলো ফেসবুক নিয়ে বড়সড় (ধারাবাহিক) একটা লেখা লিখলে কেমন হয়।

কিন্তু কিভাবে কি লিখবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলামনা। তাই কল্পনার আশ্রয় নিলাম, লেখকের সবচে বড় আশ্রয় হলো কল্পনা। কল্পনার প্রশ্রয়ে প্রথম পর্ব শেষ করে ফেলছি। চেষ্টা থাকবে এই লেখাটির অন্যান্ন পর্ব গুলি দুই/তিন দিন পর পর ধারাবিহিক ভাবে প্রকাশ করার। এই লেখাটির সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই তারপরও কারো সাথে যদি কোন অংশ মিলে যায় তাহলে তা অভিপ্রেত ও কাকতাল মাত্র।

সুমন আহমদ সিলেট। ১৪ই মে, ২০১১ খৃষ্টাব্দ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।