আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবিধান সংশোধন, গণতন্ত্র ও বর্তমান বাস্তবতা



সংবিধান সংশোধন, গণতন্ত্র ও বর্তমান বাস্তবতা লেখক: ডা. এসএ মালেক | শনি, ১৪ মে ২০১১, ৩১ বৈশাখ ১৪১৮ পঁচাত্তরোত্তর সামরিক শাসকরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে যেভাবে সংবিধান কাটাছেঁড়া করেছেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় দেশের রাজনীতিতে যে পরিবর্তন এসেছে, তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হলে সংবিধান সংশোধনের কোনো বিকল্প নেই। আসলে স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া সংবিধানের প্রাণশক্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে দুর্বল করার প্রয়োজনে সংবিধানে একটা বিশেষ ধর্মকে স্থান করে দিয়েছেন। সুদীর্ঘদিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষতার ভুল ব্যাখ্যা দেয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, এখন সংবিধান থেকে বিসিমল্লাহ অপসারণ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে কোনো ধর্মীয় কারণে জেনারেল জিয়া সংবিধানে বিসিমল্লাহ প্রতিস্থাপন করেননি। আল্লাহর সার্বভৌমত্বে তিনি নিজে কতটা বিশ্বাস করতেন কে জানে।

আর বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা পরিবর্জনের দাবি উঠেছে তখন যখন ক্ষমতা দখল করে তা টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়। জেনারেল জিয়ার নীতি অনুযায়ী একমাত্র সংবিধানের মৌলনীতি পরিবর্জন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধসমূহ ধ্বংস করেই তা করা সম্ভব। আসলে জেনারেল জিয়া জানতেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি তাকে কখনও সমর্থন করতে পারে না। ভারত ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে বাদ দিয়ে তাকে সমর্থন জোগাবে না। তাই স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে দুর্বল করতে হলে সাংবিধানিকভাবে একটা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, যা মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী।

তাহলেই কেবল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্র তাকে সমর্থন করবে। আর জেনারেল এরশাদের রাষ্ট্রের জন্য একটা ধর্ম নির্ধারণ করে দেয়ার মূল কারণ হচ্ছে বিশেষ মৌলবাদী গোষ্ঠীর সমর্থন আদায়। তিনি নিজে একজন খাঁটি বিশ্বাসী মুসলমান ছিলেন কি না তা তিনিই জানেন। তবে ইসলামের প্রতি অনুরাগের কারণে তিনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেননি। জেনারেল জিয়া বিসিমল্লাহ সংযোজন করে যতটা অসুবিধার সৃষ্টি করেছেন তার চেয়েও জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রের জন্য একটা ধর্ম নির্ধারণ করে দিয়ে অহেতুক নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন।

সংবিধানে এ ধরনের সংযোজন খুব সাধারণ ব্যাপার নয়। বিশেষ করে এমন একটা রাষ্ট্রে যার ৯০ ভাগ মানুষ একটা বিশেষ ধর্মের অনুসারী। আলজিরিয়ায় প্রায় ৭০ বছর ধরে মৌলবাদীরা ঐ দেশটিকে ধর্মসাপেক্ষ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তুরস্কে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম একটা রাষ্ট্রের পরিচালিকা শক্তি হওয়া বাঞ্ছনীয় কি না এই নিয়ে যত বিকর্তই হোক না কেন প্রকৃত ইসলামের অনুসারীরা ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র সৃষ্টিতে আগ্রহী।

ধর্মনিরপেক্ষতা যদি ধর্মহীনতা হয় তবে তাদের তা প্রত্যাখ্যান করাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে, সেকুলার মুসলমানরা ধর্মকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক শক্তি হতে দিতে রাজী নন। বিশেষ করে এমন একটা রাষ্ট্রে যেখানে বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের লোকরা একই সাথে বসবাস করে আসছেন এবং একই রাষ্ট্রের সংবিধান আইন মেনে চলার চেষ্টা করেছেন। এদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকরা জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তাই স্বাধীনতা লাভের পর তাদের রাজনৈতিক, মৌলিক ও আর্থ-সামাজিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনেই তারা বিশেষ কোনো ধর্মীয় প্রভাবে প্রভাবিত হতে চান না। অথচ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ একটা বিশেষ ধর্ম অর্থাত্ ইসলামের অনুসারী হওয়ার কারণে কিছু লোকের ভেতর এমন একটা অনুভূতি কাজ করছে যে দেশটির অধিকাংশ নাগরিক মুসলমান হওয়ায় ধর্মীয় আইন রাষ্ট্রীয়ভাবে বলবত্ থাকবে না কেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রভাব সমাজে বিদ্যমান থাকায় এবং ধর্মনিরপেক্ষর প্রকৃত ব্যাখ্যা না দেয়ায় বা ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপক্ষে প্রচার-প্রচারণা না থাকায় জনগণের ভেতর ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে একটা বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি হওয়ায় তারা এখন ধর্মসাপেক্ষ নীতিমালার স্বপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন বলে চিন্তা করার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। তাই সংবিধান সংশোধনের প্রশ্ন উঠায় ঐ মৌলিক বিষয়সমূহ সামনে এসেছে। বিসিমল্লাহের সাথে যে অনুভূতি আজ বিজড়িত তাতে করে সংবিধান থেকে বিসিমল্লাহ অপসারণ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সংবিধানে তা যে অবস্থায় আছে সেখানেই রাখা যেতে পারে। তবে রাষ্ট্রের জন্য একটা বিশেষ ধর্ম নির্ধারিত করা হলে তা অন্যান্য ধর্মীয় অনুসারীদের ভেতর বিরূপ প্রতিক্রিয়া যে সৃষ্টি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং রাষ্ট্রের জন্য তা সুখকর নয়।

রাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ধর্মের প্রয়োজন, রাষ্ট্রের জন্য কোনো ধর্মের প্রয়োজন পড়ে কি। এটা ধর্ম ব্যসায়ীদেরই সুযোগ করে দেবে। ধর্মীয় কারণে জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম নির্ধারণ করে দেননি, দিয়েছিলেন রাজনীতির কারণে এবং সেই রাজনৈতিক কারণেই তিনি তার অবস্থান সঠিক বলে মনে করে চলেছেন। অবশ্য অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা যদি একই প্রকার মর্যাদা লাভ করেন তাহলে তারা হয়তো প্রতিবাদমুখর নাও হতে পারেন। রাষ্ট্রের জন্য একটা ধর্ম নির্ধারণ করে দেয়া যে একেবারেই অপ্রয়োজনীয় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সংবিধান যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মসাপেক্ষ হয় তাহলে রাষ্ট্রে বসবাসকারী সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অধিকার যাতে কোনো প্রকারে ক্ষুণ্ন না হয় তার নিশ্চয়তা বিধান করা দরকার। একটা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণের যেসব বিধিবিধান রয়েছে তা অনুকরণ করা বাঞ্ছনীয়, ’৭২-এর সংবিধানে তার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছিল। সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে যদি বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হয় তবে বাঙালির পরিবর্তে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ গ্রহণের কোনো যুক্তি নেই। যে বাঙালি জাতিয়তাবাদভিত্তিক দেশ স্বাধীন করা হয়েছে স্বাধীন দেশে সেই জাতীয়তাবাদ প্রত্যাখ্যাত হওয়া কোনো প্রকারেই উচিত নয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠি আছে বলে মূল জাতীয়তাবাদের পরিবর্তন করতে হবে—এটা যুক্তিহীন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সাংবিধানিকভাবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষিত রাখা হয়। বাংলাদেশেও তা করা সম্ভব, তার জন্য মূল জাতীয়তাবাদের পরিবর্জন প্রয়োজন পড়ে না। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিবর্জিত হলে এমন একটা অবস্থা দাঁড়াবে যে আবার বাঙালি আত্মপরিচয়ের সংকটে নিমজ্জিত হবে এবং তা বেশি দূরে নয়। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভেতর দ্বন্দ্ব ও সংঘাত প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিশৃঙ্খলাবাদী তত্পরতা বৃদ্ধি পাবে ও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে। নাগরিকত্বকে রাজনৈতিক কারণে যারা জাতীয়তাবাদ বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তারা কিন্তু বাঙালি হওয়ার কারণেই বাংলাদেশি হয়েছেন।

স্বাধীন বাংলায় তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদ অস্বীকার করবেন কী করে। প্রশ্ন উঠেছে, আদালতের রায়ের কারণে সংবিধান সংশোধিত হওয়া বাঞ্ছনীয় কি না। আসলে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংসদ, সরকার ও বিচারবিভাগের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে আলাদা করা রয়েছে। আইন প্রণয়নের সব দায়িত্ব সংসদের, সরকারের দায়িত্ব সেই আইন কার্যকর করা এবং বিচারবিভাগের দায়িত্ব ঐ আইন সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না তার প্রতি দৃষ্টি রাখা। সংবিধান প্রণয়ন ও তা সংশোধনের দায়িত্ব সংসদের—এটাই সংসদীয় পদ্ধতির বিধান।

কিন্তু অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই বিধান কার্যকর থাকে বলে মনে হয় না। হাইকোর্টের রায়ে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ায় তার পূর্ব পর্যন্ত সংবিধান যে অবস্থায় ছিল তা সাধারণভাবেই বহাল হয়ে গেছে। এখানে আদালতের রায় কোনো কিছুতে হস্তক্ষেপ করেছে বলে মনে হয় না। তবে রায় ঘোষণার পর সংবিধান সংশোধনের যদি প্রয়োজন দেখা দিয়ে থাকে তবে তা করা যেতে পারে। সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়াকে জায়েজ করা উচ্চ আদালত নাকচ করে দিয়েছেন।

এটা শুধু বর্তমানের জন্যই নয় ভবিষ্যতেও প্রযোজ্য। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ঐ দখলপ্রক্রিয়া বৈধ বলে আইন প্রণয়ন করে ক্ষমতা দখলকারীদের নিরাপত্তা বিধানই কার্যত উচ্চ আদালত অকার্যকর করেছে। এতে জনগণের প্রত্যাশাই পূরণ হয়েছে। যারা মনে করেন আদালত এটা করে সঠিক কাজ করেননি বা সংবিধানবিরোধী কাজ করেছেন, তারা মূলত স্বৈরশাসকের সমর্থক। শুধু পঞ্চম সংশোধনী নয় অনুরূপ অন্য সংশোধনসমূহ অকার্যকর বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।

অবশ্য রাষ্ট্র পরিচালনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার প্রয়োজনে যদি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে, তা এই সংশোধনী থেকে বাদ যেতে পারে, উচ্চ আদালত সেই কাজটি করেছে। আদালতের এই রায় সংসদের অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপ বলে বিবেচিত হতে পারে না। আইনের প্রশ্নে যদি জটিলতা দেখা দেয় তার ব্যাখ্যা দেয়াই উচ্চ আদালতের দায়িত্ব। আদালত যে ব্যাখ্যা দেবেন তা নিয়ে সংসদে বিতর্ক হওয়া অনুচিত। কেননা, আদালতের পক্ষে তো আর কেউ সংসদে হাজির হতে যাবেন না।

আদালতকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ করা কোনো প্রকারেই বাঞ্ছনীয় নয়। আইনের ব্যাখ্যা প্রদানে আদালতের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা বাঞ্ছনীয়। একইভাবে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংসদের সার্বভৌম থাকা বাঞ্ছনীয়। জনপ্রতিনিধিরা কী ধরনের আইন প্রণয়ন করবেন, এটা সংসদের অধিকার সেখানে আদালতের কোনো হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। বিচারকদের যদি সংসদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় তাহলে বিচারব্যবস্থায় ধস নামবে।

বাংলাদেশের বাস্তবতায় বিষয়টি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। একটা সশস্ত্র সংগ্রামের পর এখানে জাতির জনক সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন করেন। এবং ’৭২-এর সংবিধান প্রণয়ন ও ’৭৩-এ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেই তা করা হয়। প্রায় তিন বছর বঙ্গবন্ধু সংসদীয় পদ্ধতিতে দেশ শাসন করার পর বিশেষ কারণে সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর নেপথ্যের নায়ক হিসেবে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করেন।

জেনারেল জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, দল গঠন করে, নির্বাচন করে সংসদ ও সরকার গঠন করেন এবং ঐ সংসদই জেনারেল জিয়ার সব কর্মকাণ্ডের সংবিধানের অনুমোদন দেন। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমেই তা করা হয়। মহামান্য আদালত ঐ সংশোধনটি বাতিল করে যে প্রক্রিয়ায় জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করেছেন তাকেই অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ অনুরূপ আচরণ না করেন তার দিকনিদের্শনাও দেয়া হয়েছে ঐ রায়ে। এখন যদি সংবিধানে কোনো সংশোধনী আনা হয় যাতে করে ভবিষ্যতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে আর কেউ ক্ষমতা দখল করতে না পারে তবে তার দায়-দায়িত্ব আদালতের ওপর বর্তে না। সংশোধনীর ব্যাপারে আদালত প্রভাবিত করেছেন—এরূপ চিন্তা করার কোনো অবকাশ নেই।

তবে সংশোধনী হলেই সামরিক অভ্যুত্থান বন্ধ হয়ে যাবে—এরূপ চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। উচ্চাভিলাষীরা ঐ ধরনের চিন্তা থেকে বিরত নাও করতে পারেন। তা ছাড়া দেশে যদি এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন তাহলে জাতীয় সেনাবাহিনী ঐ সংশোধনের কারণে কর্তব্য হতে বিরত নাও থাকতে পারে। তাই অনিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অবসানকল্পে সর্বাগ্রে প্রয়োজন দেশে একটা সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হওয়া।

জঙ্গিবাদী তত্পরতাকে প্রশ্রয় না দেয়া। দেশের সব সম্প্রদায়ের জনগণের প্রতি সমতাভিত্তিক আচরণ করা, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পাদন করা। সহিংসতা ও জঙ্গিবাদকে ক্ষমতা দখলের নীতি হিসাব কখনও প্রশ্রয় না দেয়া। সংখ্যালঘিষ্ঠের অধিকার সুনিশ্চিত করা। ধর্মীয় বিরোধ প্রশ্রয় না দেয়া।

আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করা। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এসব মূল্যবোধ রক্ষিত হলে ক্ষমতা দখলের প্রয়োজন পড়ে বলে মনে হয় না। তাহলেই কেবল অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টার অবসান হতে পারে। একটা গণতান্ত্রিক দেশের বিভিন্ন দলের ভেতর প্রতিযোগিতা থাকা স্বাভাবিক, তবে তা যেন কোনো প্রকারেই সহিংসতার রূপ না নয়। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

[লেখক: প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.