আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খালেদা জিয়া গৃহবন্দি!!! ব্রেকিং নিউজ

অ আ ক খ গ ঙ

খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ছেন বলে আইএসপিআরের দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি বলেছে, বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করতে বিরোধীদলীয় নেতাকে কার্যত গৃহবন্দি করা হয়েছে। শনিবার সকালে বাড়ি ছাড়া নিয়ে এ পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দেখা করেছেন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের সঙ্গে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার পর খালেদার আইনজীবীরাও বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বাড়ি ছাড়ছেন না। এ নিয়ে আইএসপিআরের বক্তব্য ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন তারা। এদিকে ঢাকা সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর ফটকে বিএনপির কয়েকশ নেতা-কর্মী জড়ো হয়েছেন।

স্লোগান দিচ্ছেন তারা। সেখানে পুলিশ মোতায়েন আছে। অন্যদিকে নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও অবস্থান নিয়েছেন দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনসহ নেতা-কর্মীরা। সামনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এ উত্তেজনার মধ্যেও খালেদা জিয়া ঢাকা সেনানিবাসের মইনুল সড়কের বাড়িতেই আছেন।

আইনজীবীরা বলছেন, খালেদার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। বিরোধী নেত্রী বলেছেন, আইনজীবীদের পরামর্শ ছাড়া তিনি ওই বাড়ি ছাড়বেন না। তবে বাড়ির গৃহকর্মীদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে বলে অভিযোগ করেছেন খোন্দকার দেলোয়ার। সেনানিবাসের ওই বাড়ি ছাড়তে সরকারের দেওয়া নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদার করা রিট আবেদন গত ১৩ অক্টোবর খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। রায়ে ১২ নভেম্বরের মধ্যে বাড়ি খালি করতে বলা হয়।

এর বিরুদ্ধে খালেদা আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন। আপিল বিভাগে এর শুনানি চলছে। হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করেই শুনানি ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। তবে হাইকোর্টের দেওয়া সময়সীমা রোববার মধ্যরাতে অতিক্রান্ত হওয়ার পরপরই ওই বাড়ি খালি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইএসপিআরের বক্তব্য খালেদার বাড়ি খালি করা নিয়ে সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর ফটকে সকাল ১০টার দিকে প্রেস ব্রিফিং করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

ফটকের কাছে নির্মাণাধীন একটি ভবনে আইএসপিআর'র মহাপরিচালক শাহীনুল ইসলাম বলেন, "আদালতের রায় বাস্তবায়নে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড ওই বাড়ির দখল নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমাদের বিশ্বাস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডকে সহায়তা করবেন। " তিনি বলেন, "আমরা জানতে পেরেছি, তিনি (খালেদা) বেশ কিছু দিন ধরে বাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি বলে আসছেন। এজন্য বাড়ির দখল বুঝে নিতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। " মইনুল সড়কের ওই বাড়ি খালি করতে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এমইও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে কাজ করছেন বলে আইএসপিআর মহাপরিচালক জানান।

খালেদা জিয়ার অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, "উনি বাড়িতেই আছেন। ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। " সেনানিবাসে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়ে শাহীনুল বলেন, "এর সঙ্গে নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। " এর আগে আইএসপিআর'র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া কয়েকদিনের প্রস্তুতি শেষে স্বেচ্ছায় সেনানিবাসের বাসা ছেড়ে দিচ্ছেন। খালেদা জিয়ার বিশেষ অনুরোধে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

" তবে আইএসপিআর মহাপরিচালক দাবি করেছেন, খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়ছেন এমন কথা তারা বলেননি। বরং তারা আশা করার কথা বলেছেন। বিএনপির প্রেস ব্রিফিং খালেদা জিয়াকে মইনুল সড়কের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে তাকে কার্যত গৃহবন্দি করা হয়েছে বলে সকাল পৌনে ১১টার দিকে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে অভিযোগ করেন খোন্দকার দেলোয়ার। বিএনপি মহাসচিব বলেন, "খালেদা জিয়ার বাসার সব কাজের লোককে তুলে নিয়ে গিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। " খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়ছেন না দাবি করে দেলোয়ার বলেন, "তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়লে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতেন না।

তার বাড়ি র‌্যাব-পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। তাকে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। " বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী নয়া পল্টনে রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে দুপুর ১২টায় বিএনপির জরুরি যৌথসভাও ডাকা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

দুপুর ১২টার দিকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে খালেদার কৌঁসুলিদের সাক্ষাৎ খালেদার বাড়ি খালি করতে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উদ্যোগ নেওয়ার পর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের চার কৌঁসুলি। তারা হলেন রফিক-উল-হক, মওদুদ আহমেদ, খোন্দকার মাহবুব হোসেন ও বদরুদ্দোজা বাদল। আলোচনার পর সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন তারা। এরপর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেনের কক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেন তারা।

ব্যারিস্টার রফিক বলেন, "আমরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের বিশ্বাস জন্মেছে যে ২৯ ডিসেম্বরের শুনানির আগে খালেদা জিয়াকে ডিস্টার্ব (বিরক্ত) করা হবে না। " খালেদাকে ২৯ ডিসেম্বরের আগে কোনো ধরনের হয়রানি না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। আইএসপিআরের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে ব্যারিস্টার রফিক বলেন, "খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়ছেন বলে যে বক্তব্য আইএসপিআর দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। " খালেদা জিয়া এখনি বাড়ি ছাড়ছেন না দাবি করে খোন্দকার মাহবুব বলেন, "খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া তিনি বাড়ি ছাড়বেন না। " আপিল বিভাগে শুনানি চলার সময় খালেদা জিয়ার বাড়ি খালি করা হলে তা সুপ্রিম কোর্ট অবমাননা হবে বলে মন্তব্য করেন মওদুদ আহমেদ। খালেদার বাড়ি ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে দায়িত্বশীল আচরণের পরামর্শ দিয়েছেন কৌঁসুলিরা। মাহবুব বলেন, "এটি স্পর্শকাতর বিষয়। দায়িত্বহীন সংবাদ প্রকাশ অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

তখন এর দায়-দায়িত্ব সংবাদ মাধ্যমকে নিতে হবে। " জাহাঙ্গীর ফটকের পরিস্থিতি খালেদা জিয়ার বাড়ি খালি করা হচ্ছে- এমন খবরে শুক্রবার মধ্যরাতেই সেনানিবাসের জাহাঙ্গীর ফটকে যায় বিএনপির একদল নেতা-কর্মী। তবে ভোররাতে তারা ফিরে আসে। সকালে তারা আবার সেখানে যায়। পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে থেমে থেমে েেস্লাগান দিচ্ছে।

সাংবাদিকরাও আছে সেখানে। তবে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। জাহাঙ্গীর ফটকের সামনে সকালে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদারসহ মহিলা সংসদ সদস্য ও কর্মীরা। বিএনপি নেতাদের ঢুকতে না দেওয়ার সমালোচনা করে রফিকুল ইসলাম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে এভাবে হয়রানি ও হেনস্তা করা অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক।

আদালতে এ নিয়ে শুনানি চলছে, এরপর সরকার তা তোয়াক্কা না করে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। " মওদুদ আহমদ বলেন, "সর্বোচ্চ আদালতে এই স্পর্শকাতর মামলার বিষয়টি নিয়ে যখন শুনানির কার্যক্রম চলছে ঠিক সে সময়ে সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। " মওদুদ পরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে যান। জাহাঙ্গীর ফটকের কাছে নির্মাণাধীন ভবনে আইএসপিআর একটি অস্থায়ী তথ্য কেন্দ্রে স্থাপন করেছে। অন্যদিকে মইনুল সড়কের ওই বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রতিবেদক দেখেছেন, ওই বাড়ির সামনে বেশ কয়েকটি জিপ দাঁড়িয়ে আছে।

তাতে কিছু মালামালও তোলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়ির সামনে রয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খালেদার আইনজীবীদের অন্যতম সানাউল্লাহ মিয়া সেনানিবাস থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, "আমাকে ঢুকতে দিয়েছিলো। বাড়ির সামনে পর্যন্ত গিয়েছিলাম। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীসহ সবাইকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

বাড়িটি র‌্যাব-পুলিশ ঘিরে রেখেছে। " ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে নিহত হওয়ার পর ওই বছরের ১২ জুন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার শহীদ মইনুল সড়কের ৬নং বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ওই বাড়ির ইজারা বাতিল করা হয়। সূত্র: বিডিনিউজ


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.