আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে"

I am not bad boy!

১৭ বছর আগে ১৯৯৪ সালে মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের ভর্তির হার ছিল ৩৩ শতাংশ। এখন ছাত্রদের পেছনে ফেলে ছাত্রীদের ভর্তির হার বেড়ে হয়েছে ৫৪ শতাংশ। শুধু মাধ্যমিকেই নয়; প্রাথমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ এখনো ছাত্রী। তা ছাড়া ছাত্রীদের শিক্ষার সার্বিক মান এখনো ভালো হয়নি বলে মনে করেন শিক্ষা নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষায়তনে ছাত্রীদের অভিগম্যতা বেড়েছে, এটা ঠিক। উপবৃত্তি, নতুন নতুন নীতিমালাসহ নানা ধরনের উদ্যোগের কারণে শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে, কিন্তু সার্বিক মান বাড়েনি। দেখা যাচ্ছে, পরীক্ষাগুলোয় প্রথম সারির দিকে মেয়েরা ভালো করছে, যাদের বেশির ভাগই আর্থিকভাবে মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের সন্তান। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের ছাত্রীরা কিন্তু অতটা ভালো করতে পারছে না। তা ছাড়া ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার এখনো বেশি।

দরিদ্রতাসহ বিভিন্ন কারণে তারা ঝরে পড়ছে। এ জন্য রাষ্ট্রের উচিত সবার জন্য সুযোগ বাড়ানো। আর শ্রেণীকক্ষগুলোতেও পড়াশোনা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, শিক্ষা এখন পণ্য হয়ে গেছে। যে যত বিনিয়োগ করতে পারছে, সে তত ভালো করছে।

এ ক্ষেত্রে দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা পিছিয়ে থাকছে। সরকারের উপবৃত্তি প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৯৪ সালে ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের ভর্তির হার বাড়তে থাকে। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির অন্যতম প্রকল্প সেকেন্ডারি এডুকেশন স্টাইপেন্ড প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের প্রকল্পের আওতায় দেশের ৫৬টি জেলার ৩০৫টি উপজেলায় উপবৃত্তি দেওয়া হয়। মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ ছাত্রী এবং ১০ শতাংশ দরিদ্র ছাত্রকে এই উপবৃত্তি দেওয়া হয়। আগে কেবল ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেওয়া হতো।

কিন্তু এখন ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের ভর্তির হার বেড়ে যাওয়ায় গত বছর থেকে প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে ছাত্রদেরও উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, যখন উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু হয়, তখন মাধ্যমিকে ছাত্রদের ভর্তির হার ছিল ৬৭, আর ছাত্রীদের ছিল ৩৩ শতাংশ। এখন ছাত্রীদের ভর্তির হার বেড়ে হয়েছে ৫৪, আর ছাত্রদের ভর্তির হার কমে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। এই প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেবল উপবৃত্তির কারণেই ছাত্রীদের ভর্তির হার বেড়েছে, সেটা বলব না। তবে এটা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

পাশাপাশি শিক্ষার প্রতি মানুষের আগ্রহ, সচেতনতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমে ইতিবাচক ভূমিকাসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের ভর্তির হার বেড়েছে। ’ উচ্চমাধ্যমিকেও ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয় ২০০২ সাল থেকে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, ২০০২ সালে যখন উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে উপবৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়, তখন এই স্তরে ছাত্রীদের ভর্তির হার ছিল ৩৩, আর এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে ছাত্রদের হার হয়েছে ৫৪ শতাংশ।

অর্থাত্ গত নয় বছরে ছাত্রীদের ভর্তির হার বেড়েছে ১৩ শতাংশ। প্রাথমিকেও ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের অংশগ্রহণ বেশি। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষাতেই ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীসংখ্যা ছিল বেশি। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে ছাত্রীসংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬০ এবং ছাত্র ১০ লাখ সাত হাজার ১০৮। ইবতেদায়ি পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর অর্ধেকের বেশি ছিল ছাত্রী, এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৮২ জন।

আর ছাত্র ছিল এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৫১ জন। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলসহ অন্য সব উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ছাত্রীদের উপস্থিতি এখন চোখে পড়ার মতো। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কারণে ছাত্রীদের ভর্তির হার বেড়েছে। আমরা এটা অব্যাহত রাখব। ’ ছাত্রীরা বেশি ঝরে পড়ছে শিক্ষায় ছাত্রীদের ভর্তির হার বাড়লেও ঝরে পড়া এখনো উদ্বেগজনক বলে মনে করেন খোদ শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর এক হিসাবে দেখা গেছে, চলতি মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে দুই বছর আগে নবম শ্রেণীতে নিবন্ধন করেও অংশ নেয়নি প্রায় সোয়া চার লাখ নিয়মিত শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রীদের সংখ্যাই বেশি, অর্থাত্ দুই লাখ ৫৯ হাজার ৯৮৭ জন। আর ঝরে পড়া ছাত্র এক লাখ ৬৫ হাজার ৪৮৩ জন। ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার ৩৪ দশমিক ৬৭, আর ছাত্রদের ঝরে পড়ার হার ২৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিকেও ঝরে পড়াদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি বলে গত কয়েকটি পরীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে।

শিক্ষা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, মূলত আর্থসামাজিক কারণেই তারা ঝরে পড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন প্রথম আলোকে জানান, ছাত্রীদের ঝরে পড়া কমাতে হলে অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এখনো গ্রামের অনেক অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁদের মেয়েদের পাঠাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। বখাটেদের উত্পাতসহ বিভিন্ন ঘটনা এর জন্য দায়ী। উদাহরণ হিসেবে ফাহিমা খাতুন বলেন, ২ মার্চ একজন অভিভাবক তাঁর কাছে এসে বখাটেদের উত্পাতের কারণে মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তনের অনুরোধ করেন।

আরেক অভিভাবক তাঁর মেয়ের বয়স বাড়ানোর জন্য আসেন, যেন তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেন। আসলে এখনো অনেক অভিভাবক মেয়েদের বোঝা মনে করেন। এ জন্য তাঁরা মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চান। এসব কারণেই ছাত্রীদের ঝরে পড়া বাড়ে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, ঝরে পড়া রোধে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.