আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাছে আসার গলপ



এটি হল কাছে আসার গলপ । নাটকের চেয়ে গলপো টি বেশি ভালো লেগেছে ফার্মগেটে দেীড়ে কোন রকমে গাড়ীতে উঠলাম। যাব গুলশান-২। যে বাহনটিতে উঠলাম, তার নাম ম্যাক্সি। পোশাক হিসেবে ম্যাক্সি বেশ ঢিলেঢালা হলেও, যানবাহন ম্যাক্সি কিন্তু বেশ আঁটসাট।

চীরকালের মথা উঁচু মানুষকেও তাই তা নিচু করেই এ টাতে ঢুকতে হয়। প্রতি সিটে ৪ জন লেখা থাকায় শারীরিক আকৃতি যার যাই হোক না কেন, ৪ জনকেই সেখানে বসতে হয়। আমিও চতুর্থ জন আর গাড়ীর সর্ব শেষ যাত্রী হিসাবে বসলাম। ”ওস্তাদ বাড়ান” চিত্কারে সায় দিয়ে সেটি চলতে লাগলো। খেয়াল করলাম, সামনের মুখোমুখি সীটের কয়েক জন যাত্রী বেশ আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখছে।

ছেলে হয়ে আরেকটা ছেলেকে আগ্রহ নিয়ে দেখার কারন নেই। তাই দ্রুত প্যান্টের জীপার চেক করে আশেপাশে তাকালাম। সর্বনাশ! তাড়াহুড়ায় খেয়ালই করিনি, কাকে পাশে নিয়ে বসে আছি। টানাটানা চোখের এক মডেল। এ এখানে কি করে? ওর তো কোন পাজেরো জীপে ভ্রু কুঁচকে বসে থাকার কথা।

যাক, লোক গুলোর আগ্রহ তাহলে ঐদিকে। এ ধরনের একটা মেয়ে আশেপাশে থাকলে অনেকেই স্বভাবতই সাভাবিক স্বভাব ভুলে যায়। কেউই বুজাতে চাচ্ছেনা যে, সে মেয়েটাকে দেখছে। একটু তাকিয়েই উদাস দৃষ্টিতে বাইরে তাকায়। কিছুক্ষনের মাঝেই সেই উদাস দৃষ্টি অন্তরের দাস হয়ে মেয়েটির দিকে ফিরে আসছে।

একজন মোটা পেটের ভদ্র লোকের আবার এক গাদা ফোন কলের দরকার হয়ে পড়লো, সবই আবার ইমারজেন্সী! - ”কি ভাই, আপনি ওটা এখনো রেডি করেননি কেন? ঠিক আছে, আমি ওকে বলে দিচ্ছি . . .। ” এক নজর তাকে দেখে রিচার্জ হয়ে আবার ফোন-” আপনি এক্ষুণি ওরে ফোনে মিট করেন, হ্যাঁ, ঐঁটা স্যাটেল করেন, আরে ঐসব মন্ত্রী এমপি আমি সামলাবো . . .। ” এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকায়, যার অর্থ- ” কিহে, কি বুজলা, ম্যাক্সী চড়ি বলে আমি কিন্তু যেই সেই লোক না। হু!” পথে নতুন যেই যাত্রীই উঠলো, বসতে গিয়ে ওদিকে চোখ পড়তেই ছোট বড় টাস্কি খেতে লাগলো। এমনকি অন্য দুয়েকটি মেয়ে যাত্রীও ঘাড় ঘুরিয়ে ওকে দেখছিলো।

বোধ হয় বুজতে চাইছিলো, ছেলেগুলা কি দেখে ওর মাঝে। বেশ মজা লাগছিলো বলে আমি মুচকি মুচকি হাসতে লাগলাম। মেয়েটা তা খেয়াল করে সেও হাসি লুকাতে লাগলো। বিধাতার নির্মম পরিহাস। রাস্তায় তেমন কোন যানযটও নেই।

মেয়েটা গুলশান এ আসতে না আসতেই নেমে পড়ে হনহনিয়ে হাঁটা দিলো। দেখলাম একটা প্যাকেট সে ফেলে গেছে। প্রায় সাথে সাথে নেমেও ধরতে পারলামনা। তন্ময়কে ফোন দিলাম। সে বললো- ” তোর হাঁসির সাথে সেও হাঁসলো?” বল্লাম ”হ্যাঁ”।

ও বললো-” তার মানে একটা কমিউনিকেশানও হলো বাহ্ ! অভাগা যেদিকে যায় সাগর সুকিয়ে যায়, আর ভাগা যেদিকে যায় মরুও সাগর হয়ে যায়। ” -’ভাগা’ টা আবার কি জিনিস?” -ভাগা হলি তুই। কিন্তু শোন, রাস্তায় দেখা মেয়েকে রাস্তাতেই রেখে, নিজের রাস্তা দেখো। টানা চোখের টানে হারাই যাইওনা। বুজলা।

” -বুজলাম, তুমি অনেক ম্যাচিউর হইছ। নিজের কাজটা দ্রুত সেরে প্রায় সাথে সাথেই নেমে এসে, মেয়েটা যেদিকে গেলো সেদিকে আবার একটু হেঁটে এলাম, যদি ঐ চোখ আবার একটু দেখা যায়। কিন্তু না, কোটি মানুষের কোটি কোটি চোখের মাঝে তা হারিয়ে গেলো। গাড়ীতে উঠতে যাব দেখি, সে দাঁড়িয়ে আছে। একটা দিন কতটা শুভ হতে পারে কাওসার আহমেদের মত জ্যোতিষিও তা বলতে পারবেনা।

আগের চোখাচোখি পরিচয়ের সূত্রকে বেশ শক্ত করে ধরে, কাছে গিয়ে হাসি দিয়ে বললাম-”হাই, কেমন আছেন?” -মানে”ভু“ কুঁচকে, চোখে সানগ্লাস্ টেনে নিয়ে বললো দীঘল কেশের মেয়েটা। হাসিটা ধরে রেখেই বললাম- মানে, কি অবস্থা?” -মানে? ওমা, এতো স্বাভাবিক হাই-হ্যালোই বুজেনা। লোকালয়ের বাইরে জঙ্গল বাস করে এসেছে নাকি! টারজান কন্যা? বললাম-সরি আপনি কি বিদেশ থেকে এসেছেন?” তার ড্রেস দেখে সেরকমই মনে হচ্ছিলো। সে কুঁচকানো ভ্“ু আরো কুচকে বললো-”মানে!” বললাম-এই মহাবিশ্বের কোন পাঠশালা কি আপনাকে ’মানে’ ছাড়া আর কোন বাংলা শব্দ শেখাইনি?্ এই একটা শব্দের উপর ভরসা করেই আপনি ঢাকা শহর চরতে বেরিছেন! তাও আবার এক শব্দের একটা প্রশ্ন। ” সে দ্বিধান্বিত হলো।

ভু“ কি আরো কুঁচকাবে নাকি স্বাভাবিক করবে ভাবছে। তার অবাক দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে হাত নেড়ে নেড়ে ইশারা কারে বুজালাম-” কেমন আছ মানে ’হাই’। উত্তরে তুমি বলবে ’হ্যালো’। ”বলে ঐ প্যাকেটটা তার দিকে এগিয়ে দিলাম। এবার ভু“ জোড়া সোজা হলো।

মুখে সেই হাসিটাও আসলো, কিত্তু প্যাকেটটা নিলো না। বললো- না আমি আরো অনেক বাংলা শব্দই জানি। শুধু এক শব্দের উপর ভরসা করে চরতে বেরোই নি। এমনকি কিছু গালিগালাজও জানি। ” এক জন মানুষের সব কিছু নাকি ভালো হয় না।

আমি আশা করেছিলাম এই মেয়ের কণ্ঠ হবে ফ্যাঁস্ ফ্যাঁসে হাঁসের মত। কিন্তু চমতকার গলায় সে কথা বলছে। তাহলে এর খুঁত কোথায়! আমি কি পৃথিবির নিখুঁততম মানবির সামনে দাঁড়িয়ে আছি! ট্যাক্সি নিয়ে আরামে কথা বলতে বলতে ফিরলাম। আমার অনুমান কিছুটা হলেও সত্যি। জঙ্গল না হলেও,ও এসেছে সুইডেন থেকে।

বলল-আমি ’রোদেলা’। রোদেলা দিন ইউরোপে খুব আরামের। আচ্ছা এখানে এত ফকির আসে কোথা থেকে, এমন ভাবে ঘিরে ধরে যেন আমি ত্রান নিয়ে এসেছি। বেশির ভাগই বিকলাঙ্গ? ” বললাম,-আমার কি মনে হয় জানো, মানুষের প্রতিটা অঙ্গেরই .আলাদা ব্যবহার আছে। শুধু ্উপযুক্ত ট্রেনিং হলেই সবাই ই কোন না কোন কাজে আসবে, যার একটা অঙ্গও ঠিক আছে।

কি বল?” -হু। আমাদের ওখানে প্রতিবন্দীদের একটা দল আছে, ওরা দূরবীন আর মোবাইল নিয়ে এলাকার সার্বক্ষণিক সিকিউরিটির কাজ করে। ” রোদেলা বাংলাদেশে এসেছে একটা এনজিও’র হয়ে কিছু এতিমখানার খোঁজ খবর নিতে, শিশুদের নিয়ে কাজ করতে। বললো- এখানে ইস্কুলগুলোতে নাকি শিশুদের শারিরিক ভাবে আঘাত করা হয়!” বললাম- শুধু ইস্কুলে নয়, বাড়ীতেও একই সিস্টেম। ” -মানে?” -মানে, শিশুরাতো আসলে মানসিক আঘাত ঠিক বুজেনা, তাই শারিরীক আঘাত দেয়া হয়।

আর বড় হলে দেয়া হয় মানসিক আঘাত। ক্লাস হয় তো পরিক্ষা হয় না, পরিক্ষা হয় তো রেজাল্ট দিতে দিতে ভুলে যাই এটা কিসের রেজাল্ট। এভাবে আমরা ভবিষ্যতের যে কোন শারীরিক মানসিক চাপ নেয়ার যোগ্য হয়ে উঠি। ” ও কি বুজলো কে জানে। বললো-কোন কারনেই তো শিশুদের মনে ভয় দেয়া উচিত নয়।

” বললাম- শুন, ভয় না পেলে শিশুরা যে কোন সময়েই বিপদে পড়বে। কাল সাপ দেখেও ’তা তা তা’ করে এগিয়ে যাবে ধরে মুখে দিতে। ভয় হলো একটা মানবিক জৈবিক অনুভূতি। দেখনা কড়া সূর্যালোকে চোখ নিজে থেকেই বš্ধ হয়ে যায় ভয়ে, এতে আমাদের চোখ রক্ষা পায়। বীর পুরূষের মত তাকিয়ে থাকলেতো সব শেষ হয়ে যেতো।

” হঠাত দেখি ওর চেহারা কালো হয়ে গেলো। প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললাম-” তুমি ম্যাক্সিতে চড়েছিলে কেন? নিজেকে দেখিয়ে মানুষকে চমকে দিতে মজা লাগে?” বললো- আমাকে বলা হয়েছ্,ে এখানে একা টেক্সি নেয়া থেকে যে কোন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নিরাপদ। আচ্ছা তুমি আমাকে এদেশের সব সুন্দর জায়গা গুলো ঘুরিয়ে দেখাবে?” মনে মনে বলি- সে আর বলতে। এ রকম একটা চেহারা যদি আমার হতো, স্রেফ হাতে একটা আয়না নিয়ে বসে থাকতাম। আর কোন সুন্দরই দেখার ইচ্ছে হতো না আমার।

” গাড়ী থেকে নামার পর ওর প্যাকেটটা এগিয়ে দিলাম। মুচকি হেঁসে বললো-এটা আমার নয়। ” যে কোন জায়গাতেই ছবি তুলতে আমার অসাধারন লাগে। রোদেলারও ফটোগ্রাফিতে প্রচন্ড আগ্রহ দেখে বেশ ভালো লাগলো। দারুন যতœ নিয়ে সব ছবি সে তুলছিলো।

আর আমি শুধু ওর ছবি তুলছিলাম। ঠিক করলাম ওর ডি.এস.এল.আর এর জন্যে একটা লেন্স কিনে দিব। আগ্রহ দেখে ওকে বিভিন্ন এক্সিবিশনে নিয়ে গেলাম। একটা এক্সিবিশনে গিয়ে, সূর্যাস্তের একটা ছবি দেখিয়ে বললো-বলতো এটা সূর্যদয় নাকি সূর্যাস্তের ছবি?” ভালো ধাঁধা তো, এটা বুজার উপায় কি? স্নেপে একটা ঘড়ি থাকলে হতো। ও রহস্যটা খুললোনা।

সানগ্লাসের ভিতর দিয়ে হাসি ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। পরিচয়ের পর থেকেই দেখছি ও সব সময়েই কথা বলে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে। বললাম-কালো চশমাটা ছাড়া কি তোমার মুখ দিয়ে কথা বেরোয়না?” বেশ গম্ভির হয়ে গেল সে। বাইরে এসে চশমাটা খুলে বললো-আমার চোখের ছবি তোলতো দেখি। ” ক্যামেরা হতে নিয়ে বললাম-আমার দিকে তাকাও।

” বললো- আমি তোমার দিকেই তাকিয়ে আছি। ” বললাম-কই তুমি তো তাকিয়ে আছ ঐ দিকে. . .। ” হঠাতই বিদ্যুত চমকের মত ব্যপারটা ধরতে পারলাম। রোদেলার চোখ ট্যারা, এক দিকে তাকালে মনে হয় অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। ও বললো-আমি প্রায়’ই তাকিয়ে থেকে তোমাকে দেখি, তুমি বুজতে পারনা।

” হঠাতই ওর ফিরে যাওয়ার ডাক আসলো। যেটি ছিলো অবধারিত। ঐদিন আমরা সারা দিন ঘুরলেও কেউ কোন কথা বললাম না। আমি আমার ক্যামেরা সেল বাজারে ছেড়ে দিয়ে আরো কিছু টাকা যোগাড় করে ওর ডি.এস.এল.আর. এর জন্যে ল্যান্স কিনে ওকে দিলাম। রোদেলাও আমাকে একটা প্যাকেট দিলো।

বাসায় ফিরে রোদেলার প্যাকেটটা খুলেতো আমার চক্ষু চড়ক গাছ। ও আমাকে ওর ডি.এস.এল.আর. ক্যামেরাটা দিয়ে গেছে। দুদিন পরই ওর মেইল এলো। বললো- আমার চোখে গ্লুকোমা আছে। শেষ পর্যায়ে।

আমি পৃথিবীর সব সেীন্দর্য দেখেছি ঐ ক্যামেরার ’আই পিসে’। কদিন পরে যখন আর কিছুই দেখবোনা তখন তুমি আমার ক্যামেরায়. আমার চোখে পৃথিবীর সব সেীন্দর্য তুলে এনে আমাকে পাঠাবে। না দেখলেও আমি তা অনুভব করবো। কি পারবেনা। ” এত্ত চটপটে একটা মেয়ে টুপ করে অন্ধ হয়ে যাবে ভাবতেই আমার ভেতরটা কেমন যেন করে উঠছিল।

মনে হলো ঘটনাটা কি এমন হতে পারতোনা যে, ম্যাক্সিতে ঐ মেয়েটার সাথে আমার আসলে কোন কথা’ই হয়নি। ঐ দিনও যে যার গন্তব্যে হাঁটা দিলাম, আর দশটা দিনের আর দশটা অজানা মানুষের মতই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.