আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডেটলাইন হোটেল মিরাজ



ডেটলাইন হোটেল মিরাজ। ১৫ই মার্চ। সুমী আর লাকী দুই বান্ধবী যান চাকরির উদ্দেশে। সেখানে ধর্ষিত হয় সুমী। ধর্ষণের পর তাকে হোটেল রুম থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়।

সুমীর দেহ আটকে থাকে লোহার গেটের রডের মাথায়। শরীরে রড বিদ্ধ হয়ে ছটফট করতে থাকে সুমী। এ দৃশ্য আশপাশের মানুষজন দেখে চোখের পানি ফেলেন। দীর্ঘ প্রায় আড়াই ঘণ্টা গেটেই ঝুলে ছিল সুমী। এ নির্মম, নিষ্ঠুর, হৃদয়বিদারক ঘটনাও নাড়া দিতে পারেনি রামপুরা থানার ওসি সায়েদুর রহমানের মনকে।

ষোড়শী সুমীকে হোটেলে আটক করে রাখার খবর পেয়েও তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। সুমীর নাম-পরিচয় সব জানার পরও তাকে অজ্ঞাত হিসাবে পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ওই দিন সুমী ও লাকী দুই বান্ধবীকে চাকরির প্রলোভন দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ৭০/বি মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার ছ’তলা ভবনে। এ ভবনের ৪তলায় প্যারাগন গার্মেন্টস। ভবনের তেতলা পর্যন্ত হোটেল মিরাজ ইন্টারন্যাশনাল।

এ প্যারাগন গার্মেন্টসেই তাকে চাকরি দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। বিকাল ৫টা নাগাদ দু’বান্ধবী যায় সেখানে। তিন তলার সিঁড়িতে ওঠার পরই ক’জন যুবক সুমী ও লাকীর হাত ধরে টানাহেঁচড়া করতে থাকে। তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে লাকী পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও সুমীকে নিয়ে যাওয়া হয় হোটেলের এক কক্ষে। ওদিকে লাকী নিজেকে রক্ষা করে বান্ধবী সুমীকে উদ্ধার করতে ছুটে যায় মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রিসোর্সের কাছে।

তারা এ ঘটনা রামপুরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। দায়িত্বরত এসআই জয়নাল অভিযোগ গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে ওসি সায়েদুর রহমানের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি জিডি করতে বলেন। জিডিতে কোন নাম্বার না দিয়েই তিনি তা রেখে দেন। ওসি বলেন, সময়মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ওসি সময় ক্ষেপণ করেন। কিন্তু সুমীকে উদ্ধারে কোন ব্যবস্থাই নেননি। আর এ ঘটনায় রামপুরা থানার ওসি, হোটেল মালিক, হোটেলে নারী পাচারকারীসহ ১৪ জনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর নুরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ওসি’র যোগসাজশে ওই হোটেলে দেহ ব্যবসা ওপেন সিক্রেট। ১৫ই মার্চ সকালে ওই হোটেল পরিদর্শন করে আমরা রামপুরা থানার ওসি’র কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করি।

হোটেলের বিভিন্ন রুমে প্রাপ্ত অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের সঙ্গে বহিরাগত পুরুষদের অসামাজিক কার্যক্রমের বিবরণ ছিল এ অভিযোগে। তখন হোটেল থেকে ওই মেয়েগুলোকে উদ্ধার করে তাদের অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ওসি’র কাছে লিখিত আবেদন করি। জনস্বার্থে এ অভিযোগ দায়ের করার পরও ওসি রহস্যজনক কারণে হোটেল থেকে মেয়েগুলোকে উদ্ধার করেনি। মিরাজ হোটেলের চারতলায় প্যারাগন নামে একটি গার্মেন্টস খোলা হয়েছে। এ গার্মেন্টসে চাকরি দেয়ার টোপ দিয়ে হোটেল মালিক ও নারী পাচারকারীরা হোটেলটিতে সহজ সরল মেয়েদের জোরপূর্বক খদ্দেরের হাতে তুলে দেয়।

ধর্ষণ করে। তাদের দেহবৃত্তিতে নামানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুমীকে ফেলে দেয়ার পর ৭১/বি মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার বাড়ির গেটে লোহার রডের ওপর পড়ে। সূঁচালো রডের ওপর পড়ায় সুমীর দেহ এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে যায়। আড়াই ঘণ্টা রডের ওপর এভাবেই গাঁথা ছিল সুমী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় কাটা মুরগির মতো ছটছট করতে করতে মারা যায় সুমী। সুমীর এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর বিচার চাইতে গিয়েও বিচার পায়নি তার মা, বাবা ও ভাইয়েরা। পরে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশন ব্যাপক অনুসন্ধান করে মূল ঘটনা এবং ঘটনার নেপথ্যে কারা ছিল তা উন্মোচন করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে গত ২৬শে এপ্রিল। সংগঠনটি জনস্বার্থে এ মামলা করে বলে সংগঠনের মহাসচিব মো. আলমগীর বলেন, ওই মিরাজ ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেল মালিক মিরাজের সঙ্গে রামপুরা থানার ওসি’র দহরম মহরম আছে। হোটেলে দেহ ব্যবসা ওপেন সিক্রেট।

ওদিকে ২৭শে মার্চ এ মামলা সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হওয়ার পর রামপুরা থানার ওসি সায়েদুর রহমান প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, গত ১৫ই মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় র‌্যাব-৩, ডিএডি-৪৯৪১ মো. সিরাজুল হক-এর নেতৃত্বে হোটেল মিরাজ-এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। পত্রিকায় উল্লিখিত সুমী (২২) উক্ত হোটেলের তেতলা থেকে আত্ম-রক্ষার্থে নিচে লাফিয়ে পড়ে নিহত হয়। ঘটনার খবর পেয়ে রামপুরা থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত ও লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মৃতের কোন পরিচয় এবং তার কোন আত্মীয়-স্বজনদের সন্ধান না পেয়ে অজ্ঞাতনামা হিসেবে লাশ মর্গে পাঠানো হয়। মৃতের মা-বাবা রামপুরা থানায় এসে মামলা দিতে চাওয়া বা মামলা না নেয়ার কোন ঘটনা ঘটেনি।

নিহত সুমীকে ধর্ষণ বা নির্যাতনের কোন অভিযোগও পাওয়া যায়নি। র‌্যাব-৩ হোটেলে অভিযান পরিচালনাকালে ভিকটিম সুমী আত্মরক্ষার্থে নিচে পড়ে মৃত্যুবরণ করে। রামপুরা থানার কোন পুলিশ উক্ত অভিযানে ছিল না। এদিকে মামলার বাদী হিউম্যান রিসোর্স অ্যান্ড হেলথ ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর নূরুল ইসলাম চৌধুরী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, সুমী আক্তারকে (১৬) আসামিরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধর্ষণের পর হোটেল মিরাজের তেতলা ভবনের উপর থেকে নিচে লোহার গেটের ওপর ছুড়ে ফেলে দেয়। হোটেল থেকে নিক্ষেপের পর তার মৃতদেহ লোহার গেটের কাঁটায় গেঁথে ঝুলে থাকে।

এক পর্যায়ে তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করার পর মেয়েটির মৃত্যু হয়। ওইদিন রামপুরা থানা পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের (৬/১১) করে। পরে এ ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাটি ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়। সুমীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে হোটেল মিরাজে নিয়ে আসে দালাল টুটুল খান, আরেফিন, রশিদ, রাব্বি, রইস ও স্বর্ণানী নামে এক মহিলা দালাল। দালাল আরেফিন বিভিন্ন হোটেল ও পতিতালয়ে মেয়ে সরবরাহকারীদের সর্দার।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মেয়ে সরবরাহ করে হোটেল ও পতিতালয়ে। দেশের বিভিন্ন নারী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে রয়েছে তার নেটওয়ার্ক। মামলার এজাহারে মানবাধিকার সংস্থাটি আরও জানায়, সময়মতো পুলিশ ঘটনাস্থলে না গিয়ে রাত ৯টায় গেটের রড থেকে সুমীর লাশ উদ্ধার করে। এরপর নিহত সুমীর মা-বাবা মামলা করতে গেলে তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়। অন্যদিকে অপমৃত্যু মামলা হিসেবে একটি মামলা লিপিবদ্ধ করে।

সুমীর মা-বাবা ও ভাইদের অনুরোধের পরও সেদিন রামপুরা থানার ওসি অপমৃত্যু মামলায় সুমীকে অজ্ঞাতনামা দেহ ব্যবসায়ী বলে চালিয়ে দেয়। Daily manav jamin patrika থেকে খবরটি নেয়া হয়েছে। লিনক..http://www.mzamin.com/ শনিবার, ৩০ এপ্রিল ২০১১


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।