আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরনো সেই দিনের কথা

এতকিছু ... ওই সিনেমার জন্যই...

শুনতে কি চাও তুমি সেই অদ্ভুত বেসুরো সুর ফিরে পেতে চাও কি সেই আনচান করা দুপুর দেখতে কি চাও তুমি সেই খেলনাওলাটাকে তার খেলনা দোতারা সে বাজাচ্ছে কবে থেকে। [কথা সুর কন্ঠ: অন্জন দত্ত] এই ছেলেমেয়েদেরকে আমি চিনি না। কিন্ত এদের ছায়া আসলে আমারই ছায়া। এই মাঠ থেকে একদিন সবকিছূ শুরু করেছিলাম। এটিই আমার স্কুলের মাঠ।

এই মুখ হয়তো আমার নিজেরই মুখ। আমার যতো বৃষ্টিভেজা সকাল, রৌদ্রকরোজ্জল দুপুর, অসংখ্য আনন্দিত বিকেল সব রাখা আছে এই মাঠে। একদিন আব্বার পেছনে পেছনে এখানে এসেছিলাম। আব্বাকে ভীষন ভয় পেতাম। তাই পেছনে পেছনে।

আব্বা এই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক। স্কুলে আমার সাথে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হলো আরেকটি ছেলে। তার নাম মশা। সাইজও মশার মতো। মোশাররফ।

মশার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। মশা সাইকেল চালিয়ে আসতো। আমি সাইকেল চালাতে পারতাম না। কিছুদিন পর ভর্তি হলো রিমা। রোমানা নাসরিন।

লম্বায় মশার দ্বিগুন। কিন্ত তারা প্রতিযোগী হয়ে গেল। আমি কোনো প্রতিযোগীতায় ছিলাম না। রিমা আমার পুর্ব পরিচিতা ছিল। আমি যেমন এ স্কুলেরই এক শিক্ষকের সন্তান।

রিমাও তাই। কিন্ত ওর সাথে আমার প্রচন্ড লড়াই লাগতো ক্লাসে। সে প্রচুর বই পড়তো। অঢেল জ্ঞান তার। আমার এসব সহ্য হতো না।

একদিন সে বুমেরাং নিয়ে বললো। আমার তো মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। বললাম এসব ফালতু কথা। তুই নিজেও একটা ফালতু। ক্লাস টীচার আমাকে কিছুই বলে নাই।

পরে তার সে কী কান্নাকাটি। পরদিন ক্লাসে সে সেবা প্রকাশনীর একটা বই নিয়ে এসেছে। বুমেরাং নিয়ে বিস্তারিত লেখা। আমি ওসব দেখি নাই। আমি বলছি তোর জ্ঞানের অভাব আছে তুই বই পড়।

আমি বই লিখব বড় হয়ে। রিমা। তোকে সেদিন স্যরি বলা উচিত ছিল। যেটা কখনোই বলা হয় নাই। আজ তোকে এই লেখার মাধ্যমে স্যরি বলছি বন্ধু।

কিন্ত সেদিনের সেই কথা কিন্ত অলৌকিকভাবে সত্যি হয়ে গেছে। ২০১০ বইমেলায় আমার একটি বই বেরিয়েছিল। রিমা কিন্ত ঠিকই বইটি কিনেছে। আজ এতদিন পর এই পড়ুয়া বন্ধুটিকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। কিন্ত আমি এসব কিছুই করতে চাইনি।

আমি হয়তো স্কুল মাঠের এক কোনায় সারা জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছি। আজও চাই। ২. আমাদের স্কুলের নাম সেনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়। এটি কুষ্টিয়া জেলার শেষপ্রান্তে একদম গ্রামের মধ্যে। আজ থেকে ১০৭ বছর আগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।

তখন এটির নাম ছিলো সেনগ্রাম গোবিন্দ সুন্দরী মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয়। তৎকালীন নদীয়া জেলার বিখ্যাত একটি স্কুল। আমি এখানে ভর্তি হই ১৯৯৫ সালে। ক্লাস সিক্সে। স্কুলটি কুষ্টিয়া জেলার হলেও আমাদের বাড়ীটা ছিল রাজবাড়ী জেলায়।

এখনো আছে। আর আমরা গরমের দুপুরগুলিতে যখন মর্নিং স্কুল থাকতো তখন গোসল করতাম পদ্মা নদীতে। সেটি আবার পাবনা জেলায়। এই তিনটি জেলা আবার তিনটি আলাদা বিভাগের অন্তর্গত। সারা বাংলাদেশের অনেকটাই আমার বুকের মধ্যে পোতা।

৩. আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। স্বভাবতই মনোভুমি ভেজা । আর সন্ধার বাসে বাড়ি যাচ্ছি। অনেকদিন পর। স্কুলজীবনের অনেক কথা মনে হয়ে গেলো ফেবুতে রিমার প্রোফাইলে স্কুলের এই ছবিটি দেখে।

এটি কোনো গৌরবগাঁথা নয় সামান্য আত্মকথন মাত্র। পাংশাতে সাধুসঙ্গ হচ্ছে। ঢাকা থেকে যারা যাচ্ছেন, সামু থেকে যারা যাচ্ছেন। দেখা হবে আগামীকাল। আর যারা থাকার জায়গা নিয়ে চিন্তিত, আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আজ আবার বৃষ্টি হতে পারে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।