আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারী নীতির দেশে নারী নির্যাতন; জড়িতদের অধিকাংশ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীজড়িতদের অধিকাংশ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মী

দেশ গড়ার প্রত্যায় নিয়ে এগিয়ে আসুন

জড়িতদের অধিকাংশ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মী ২৭ মাসে নারী নির্যাতন ৩৩ হাজার ২৬৭\ ধর্ষণ ১১৩৭ গণধর্ষণ ৪৩৮ মিয়া হোসেন : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত নজীরবিহীনভাবে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। আর এ ঘটনা প্রতি মাসেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সরকারের গত ২৭ মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ৩৩ হাজার ২৬৭টি। এ চিত্র প্রতিমাসেই বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে। বেসরকারি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২৭ মাসে ২ হাজার ৬১৪ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তার মধ্যে ১ হাজার ১৩৭ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে ৩৩২ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছে ৩৩৮ জন এবং যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছে ৮০৭ জন। ধর্ষিত নারী ও শিশুর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৩৮ জন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২১১ জনকে। গণধর্ষণের মধ্যে ১১৯ জন শিশু রয়েছে।

আর ধর্ষণের পর ৬৯ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব ধর্ষণের অধিকাংশ ঘটনায় সরকার দলীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার বছর তথা ২০০৯ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১২ হাজার ৯০৪টি, ২০১০ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬ হাজার ২১০ এ উন্নীত হয়েছে। এক বছরে নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ হাজার ৩০৬টি।

একই চিত্র দেখা গেছে চলতি বছরে। ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে নারী নির্যাতন হয়েছে ১ হাজার ১৫৯টি, ফেব্রুয়ারি মাসে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৩৯৬তে উন্নীত হয়েছে। এক মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩৭টি ঘটনা। মার্চ মাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৫৯৮টি। দুই মাসের ব্যবধানে নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩৯টি।

মানবাধিকার সংগঠন ‘আইন ও সালিশ কেন্দ্র' ২০০৯ সালের মানবাধিকার রির্পোটে উল্লেখ করেছে, ২০০৯ সালে ৪৪৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৫৮ জন। মানবাধিকার সংগঠন ‘‘অধিকার’’ এর ২০১১ সালের জানুয়ারী থেকে মার্চের ত্রৈমাসিক রির্পোটে দেখা গেছে, তিন মাসে মোট ১২৭ জন নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫২ জন নারী এবং ৭৩ জন মেয়ে শিশু এবং ২ জনের বয়স জানা যায়নি। উক্ত ৫২ জন নারীর মধ্যে ১৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৩১ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

৭৩ জন মেয়ে শিশুর মধ্যে ৬ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১৯ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের কারণে ২ জন নারী ও ৪ জন শিশু আত্মহত্যা করেছে। এ সময়কালে একজন শিশু ও ১ জন নারী যথাক্রমে আনসার ও সেনাবাহিনীর সদস্য কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিন মাসে ১০১ জন নারী যৌতুক সহিংসতার শিকার। তাদের মধ্যে ৬২ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে এবং ৩২ জন বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ৭ জন আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এই সময়কালে ৩ জন শিশু তাদের মায়ের সাথে যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে ২ জনকে গরম দুধ ও খেজুরের রস ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং অপর ১ জনকে মাটি চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ২৯ জন এসিডদগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জন নারী, ৮ জন পুরুষ, ১ জন বালিকা, ৪ জন বালক। ‘‘অধিকার’’ এর ২০১০ সালের বার্ষিক রিপর্টে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে মোট ৫৫৬ জন নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

তাদের মধ্যে ২৪৮ জন নারী এবং ৩০৮ জন মেয়ে শিশু। উক্ত ২৪৮ জন নারীর মধ্যে ৬১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ১১৯ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ২ জন নারী ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন। ৩০৮ জন মেয়ে শিশুর মধ্যে ৩০ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং ৯৩ জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ৪ জন মেয়ে শিশু ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করে।

৫ জুলাই ২০১০ টাঙ্গাইল জেলার সখীপুর উপজেলার কাহারতা গ্রামের নবম শ্রেণীতে পড়া এক কিশোরী বাজার থেকে খাতা কিনতে যায়। খাতা কিনে ফেরার পথে সখীপুর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুল্লা ইতিহাস ওরফে হাবিব, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা আরিফ আহমেদ ও সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত শিকদারের ভাগ্নে বাবুল আজাদ ও তাঁর নাতি আরিফুল ইসলাম আকাশ কিশোরীকে অপহরণ করে সখীপুর হাজিপাড়ায় একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানেই হাবিবুল্লা ইতিহাস ওরফে হাবিব তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পুলিশ আরিফুল ইসলাম আকাশ নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামীকে গ্রেফতার করেনি।

সখীপুর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে গত ৯ই সেপ্টেম্বর ২০১০ আদালতে অভিযোগ পত্র পেশ করেন। সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধিকারকে জানান, ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত না থাকায় আরিফ আহমেদ, বাবুল আজাদ এবং আরিফুল ইসলাম আকাশকে অভিযোগ পত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ পত্রে হাবিবুল্লা ইতিহাস ওরফে হাবিবকে একমাত্র আসামী করা হয়েছে। হাবিবুল্লা ইতিহাস ওরফে হাবিব হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে। ১৭ মে, ২০১০, কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার আলীয়ারা গ্রামে এক প্রতিবন্ধী তরুণী গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে টিকা দিতে গেলে ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী মিজানুর রহমান তাকে ধর্ষণ করে।

তাঁর চিৎকারে এলাকাবাসী এসে মিজানুর রহমানকে আটক করে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং আপস মীমাংসার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ধর্ষক মিজানকে ছেড়ে দেয়। ‘‘অধিকার’’ এর ২০০৯ সালের বার্ষিক রির্পোটে প্রকাশ করা হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৯ যশোরে স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে একদল সহযোগীর সহায়তায় অপহরণ করে শহরের ষষ্ঠিতলা এলাকার বৈদ্যনাথ ঘোষের পুত্র শিশির ঘোষ। অপহরণের পর ওই কিশোরীকে কয়েকবার ধর্ষণ করা হয় এবং জোরপূর্বক তাঁর কপালে সিঁদুর পরিয়ে দিয়ে তাঁর ধর্মীয় স্বাধীনতা খর্ব করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, শিশির ঘোষ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী।

২৫ সেপ্টেম্বর ২০০৯ পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায় পূঁজা দেখে চাচাতো ভাইয়ের সাথে বাড়ি ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া এক কিশোরীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মী রাজিব, সোহেল, রানা, রিগ্যান, রাতুল, পবিত্র, আজিব, সুমন, রাজিব বিশ্বাস ও জুয়েল পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পুলিশ রাজিব ও সোহাগকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করলেও পরে তাঁদের ছেড়ে দেয়। পিরোজপুরে এক স্কুলছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করা হয় এবং ধর্ষণের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করে তা ইন্টারনেটে প্রচারসহ সিডিতে করে বাজারে ছাড়া হয়। জানা যায়, পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আহসান কবীর মামুন ওরফে টাইগার মামুন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং তার সহযোগী মনির হোসেন ওই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করেন। ৩ অক্টোবর ২০০৯ নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকার এক নববিবাহিত নারী তাঁর স্বামীকে নিয়ে পাগলার নূরবাগে বান্ধবীর বাড়িতে বেড়াতে গেলে স্থানীয় যুবলীগ কর্মী আব্দুল হক ওরফে হক্কার নেতৃত্বে শরীফ, আমজাদ, স্বপন, তাজুল ইসলাম, ওসমান মোল্লা ও সুমন তাঁকে তুলে কাছের চান মিয়ার বাড়িতে নিয়ে গণধর্ষণ করে।

পুলিশ এ ঘটনায় ৩ ধর্ষক আমজাদ, তাজুল ইসলাম, ওসমান মোল্লাকে গ্রেফতার করলেও মূল আসামী আব্দুল হক ওরফে হক্কাকে গ্রেফতার করেনি। ১৭ নবেম্বর ২০০৯ নোয়াখালী জেলার কবিরহাটে মাদরাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে (১২) গণধর্ষণ করে ১২ জন যুবলীগ কর্মী। এ ঘটনায় যুবলীগ কর্মী হেদায়েতউলাহ ও জহির উদ্দিনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এ সময়ে পুলিশ কর্তৃক তিন জন নারী ধর্ষিতা হন। যৌতুক সহিংসতা : ২০১০ সালে ৩৮৭ জন নারী ও শিশু যৌতুক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

এদের মধ্যে ২৪৩ জনকে যৌতুকের কারণে হত্যা করা হয়েছে এবং ১২২ জন বিভিন্নভাবে অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সময়ে ২২ জন নারী যৌতুকের কারণে নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানি : ২০১০ সালে ৭ জন নারী বখাটেদের হাতে নিহত, ১২৯ জন লাঞ্ছিত/আহত, ২৫ জন আত্মহত্যা, ৫ জন অপহৃত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৪ জন পুরুষ যৌন হয়রানিকারী বখাটেদের হাতে আক্রান্ত হয়ে নিহত এবং ১২৭ জন আহত হন। এসিড সহিংসতা : ২০১০ সালে ১৩৭ জন এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

এদের মধ্যে ৮৪ জন নারী, ৩২ জন পুরুষ এবং ২১ জন শিশু। এছাড়া ২১ জন শিশুর মধ্যে ১৬ জন মেয়ে শিশু এবং ৫ জন ছেলে শিশু এসিডদগ্ধ হয়। সেন্টার ফর মিডিয়া রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (এমআরটি) এর ২০১০ সালের রির্পোটে বলা হয়েছে, গত বছর সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ৫১১ জন। যার মধ্যে ২৭২ জন নারী ও ২৩৯ জন শিশু। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১৪টি ।

উল্লেখ্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট ছাত্রলীগ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় একজন গৃহবধূ এএসআই কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন, যশোরে এক গৃহবধূ আনসার সদস্য ও জয়পুরহাটে ৮ বছরের এক শিশু গ্রামপুলিশের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। ২১ এপ্রিল পটুয়াখালীতে বাহাদুর নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নেতৃতে ৬/৭ জন যুবক একজন গৃহবধূকে ধর্ষণ করে। ২২ এপ্রিল ভোলার লালমোহনের কচুয়াখালী গ্রামে বিএনপি কর্মী শফি মাঝির স্ত্রী ও মেয়েকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে । ভোলায় উপনির্বাচনের পরদিন যুবলীগ নেতা সিরাজ মিয়া বিএনপি সমর্থিত নান্নু মেম্বারের ভাতিঝা রুবেলের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।

১৩ মে সিলেট পলিটেকনিকে ছাত্রলীগ নেতা সৈকত শ্রেণীকক্ষে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সোনাইকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন রেজার পুত্র পান্না (২২) তার একজন সহযোগীকে নিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা এক মহিলাকে (৪০) ধর্ষণ করে। খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার দুর্গম কেয়াংঘাট এলাকায় ১৫ মে ইউপিডিএফ-এর সন্ত্রাসীরা কলনা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৫ মে লালমনিরহাটে শরিফাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে এসিডে শরীর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ২৯ মে নারায়ণগঞ্জে চাচাকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে ২ ভাতিজীকে গণধর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা।

জুন মাসে লালমনিরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের খাদ্য পরিদর্শক শফিউল আলম ১২ বছরের কিশোরী গৃহপরিচারিকা দুলালীকে ধর্ষণ করলে তার মৃত্যু হয়। ৩ জুন শরীতপুরের প্রবাসীর স্ত্রীকে ৫-৭ জন সন্ত্রাসী গণধর্ষণ শেষে তাকে গলাকেটে হত্যা করে। ২২ জুন নড়াইলে সেলিনা সুলতানাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়। ৫ জুলাই টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ধর্ষিতা কিশোরী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।

১ আগস্ট বন্ধু দিবসে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বান্ধবীকে ইকোপার্কে নিয়ে ধর্ষণ করে প্রেমিক মোশাররফ। ৩ আগস্ট গঁফরগাওয়ে ভন্ডপীর আব্দুর রশিদ চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে। ৪ আগস্ট মাগুরার শ্রীপুরে মহেশপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কতিপয় যুবক তাকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে। সাতক্ষীরায় মাদরাসা ছাত্রী তাহমিনাকে অপহরণ করে ভারতের মুম্বাই শহরের এক পতিতালয়ে নিয়ে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়। ৩১ আগস্ট গোপালগঞ্জে নিজের বাড়িতে ইডেন কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মিতাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

৩ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শাজাহানপুরে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে বখাটে আলামিন তাকে ধর্ষণ করে। পরে মামলা করতে গেলে যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ বাধা দেয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী লিজাকে ধর্ষণের পর শবাস রোধ করে হত্যা করে ঘাতক সোহেল। ৬ নবেম্বর রংপুরের পীরগঞ্জে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে তা প্রচার করে স্থানীয় বখাটেরা। ৯ নবেম্বর বরিশালের উজিরপুরে এক কিশোরীকে চিকিৎসার নামে বারো দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে জনৈক ভন্ড ফকির।

১০ নবেম্বর লালমনিরহাটে ৩ বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয় এক নরপিশাচের হাতে। ১৭ নবেম্বর বাগেরহাটে ছবি আক্তার নামে এক গৃহবধূকে যুব ও শ্রমিক লীগের শুভ, মিজান, মল্লিক ও খোকা গণধর্ষণের পরে বিষ প্রয়োগে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২২ নবেম্বর বাহুবলে এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। একই দিন পাবনায় বখাটেদরে হাতে গণধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী। পরে আজিজুল নামে এক ধর্ষক গণপিটুনিতে নিহত হয়।

১ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্রায় ডিআইটি মাঠের সামনে থেকে গার্মেন্টস কর্মীকে ধরে নিয়ে রনি, সুমন, ডাকাত আবুল ও মিঠু ধর্ষণ করে। কিন্তু যুবলীগ কর্মীদের হুমকিতে পুলিশের সামনেই ধর্ষিতা গার্মেন্টস কর্মীকে পতিতা সাজিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়। ৯ ডিসেম্বর জাপানী বাবলু ভোগরাবুরি ইউপি'র সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলম খোকন ও আলতাফ হোসেন এক কিশোরীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। ১৪ ডিসেম্বর ফতুল্লায় পাঁচ বছরের শিশুকে লম্পট আলামিন ধর্ষণ করে। ১৯ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে দশম শ্রেণীর ছাত্রী নুরেশা খাতুন লিমাকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে সহপাঠী মাহবুব ও আজিম পুটুর বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

‘এমআরটি' এর ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসের রির্পোটে বলা হয়, জানুয়ারি মাসে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ১৯ জন। যার মধ্যে ১০ জন নারী ও ৯ জন শিশু। এক্ষেত্রে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৩টি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১০ জনকে। ১ জানুয়ারি রাতে কিশোরী গার্মেন্টস শ্রমিককে প্রেমিক স্বপন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার তিন সহযোগী বাবু, সুমন ও রুবেল নিকটস্থ মতি ঝর্ণা পাহাড়ে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে পাহাড় থেকে ফেলে দেয়, স্থানীয়রা মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে।

৩ জানুয়ারি অপহৃত বোন মওসুমী আক্তারের সন্ধান চাওয়ায় এক সন্তানের জননী হিরাকে যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ শাহ চট্টগ্রাম নগরীর ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার যুবলীগের ক্লাবে সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে ধর্ষণ করে। ৩ জানুয়ারি রূপগঞ্জের কিশোরী তানিয়া আক্তার (১৮) এর বিয়ে ঠিক হওয়ায় বখাটে জসিম (২২) তার সহযোগীদের নিয়ে ধর্ষণ করলে মুমূর্ষু তানিয়া হাসপাতালে মারা যান। ৪ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের ওয়াপদা বাঁধের সেখ আলীর স্ত্রী আয়েশা খাতুন (৪০) নামের এক ফলব্যবসায়ীকে বখাটেরা ধর্ষণের পরে হত্যা করে। ৪ জানুয়ারি সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর ইউনিয়নের সোনাপুর পূর্বপাড়া গ্রামে অন্তঃস্বত্তা বোনের বাড়িতে বেড়াতে এলে বাড়ির মালিক লক্ষ্মীবাবু, ম্যানেজার হারুন ও রিয়াজের ধর্ষণের শিকার হয় দুই সন্তানের জননী ছোট বোন। ৫ জানুয়ারি ঝিনাইদহের মহেশপুরে এক তরুণীকে ধর্ষণের পরে হত্যা করে বখাটেরা।

৫ জানুয়ারি মনিরামপুরে খালেদা বেগম (৪০) নামের দুই সন্তানের জননীকে বখাটেরা ধর্ষণের পরে হত্যা করে। ৫ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের বন্দরে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করে আবদুস সাত্তারের বখাটে ছেলে নয়ন মিয়া (৩০)। ৬ জানুয়ারি আশুলিয়ার আটকপাড়া এলাকায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এক মহিলা (২৪) কে বখাটেরা ধর্ষণের পর হত্যা করে একটি বাগানে ফেলে দেয়। ৬ জানুয়ারি রূপগঞ্জে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে তানিয়া বাইরে বের হলে সেখান থেকে তার প্রতিবেশী সাওঘাট এলাকার কালামিয়ার বখাটে ছেলে জসিমের নেতৃত্বে ছয় লম্পট তাকে অপহরণ করে স্থানীয় মাঠে নিয়ে রাতভর ধর্ষণ করে, পরদিন মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করলে ৯ জানুয়ারি মারা যায় তানিয়া। ১৮ জানুয়ারি কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ফতুল্লার পোশাক কারখানার ১০ বছরের এক শিশুশ্রমিক গণধর্ষণের শিকার হয়।

২০ জানুয়ারি ঈশ্বরদীর সলিমপুর ইউনিয়নের ভারইমারী গ্রামের আনন্দবাজারে ইকরাম হোসেন (৩২) নামের এক মাদকসেবী চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ২০ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পঁচামাধিয়া গ্রামে গোলাম রসুলের লম্পট ছেলে সবুজ (১৮) বাড়িতে ডেকে ঘরের ভিতরে পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করে। ২৭ জানুয়ারি গজারিয়া উপজেলায় দক্ষিণ ফুলদি গ্রামের শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে একই গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে রাজিব (১৬)। ‘এমআরটি' এর ফেব্রুয়ারি মাসের রির্পোটে বলা হয়, ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ৩৮ জন। যার মধ্যে ১৬ জন নারী ও ২২ জন শিশু।

এক্ষেত্রে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৩টি। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ৫ জনকে। ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জে দুই সহোদরকে বেঁধে তাদের সামনেই কিশোরী বোনকে ধর্ষণ করে বখাটেরা।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.