আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেয়ারবাজার তদন্ত প্রতিবেদন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা

আজ আমার মন ভাল নেই। সময় আর অসময়ের আধো আলো

http://barta24.net/news/8760 নিজস্ব প্রতিবেদক বার্তা২৪ ডটনেট ঢাকা, ১৫ এপ্রিল : সাম্প্রতিক পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির কারণ খতিয়ে দেখতে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জড়িত হোতাদের বাঁচাতে অপচেষ্টা চলছে। প্রতিবেদন ও তদন্ত কমিটির প্রধানের বিরুদ্ধে অসমাঞ্জস্যপূর্ণ সমালোচনার মাধ্যমে প্রতিবেদনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে জড়িত ও তাদের সহযোগীরা। এর ফলে পুঁজিবাজারে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ আবারো হুমকির মুখে পরবে বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এসইসি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, ‘‘তদন্ত প্রতিবেদনে কোনো অসম্পূর্ণতা থাকলে তা নিয়ে কথা বলা অন্যায় কিছু নয়।

তবে এটাকে মূল ইস্যু বানিয়ে প্রতিবেদনের মৌলিক বিষয়গুলোকে বিতর্কিত করার চেষ্টা কারোই কাম্য হতে পারে না। ’’ ‘‘তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন মহলে কী ধরনের আলোচনা হচ্ছে সেটা বড় কথা নয়। মূল বিষয় হলো সরকার বিষয়টি নিয়ে কী ভাবছে’’, বলেন তিনি। মির্জা আজিজুল ইসলাম আরো বলেন, ‘‘তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে সরকারের দিক থেকে তাদের আড়াল করা বা রক্ষা করার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ’’ ‘‘তদন্ত প্রতিবেদনের সামগ্রিক দিকগুলো বিবেচনা করে সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিতে চাইলেই কোনো বিশেষ মহলেরও নেতিবাচক প্রচারণায় খুব বেশি লাভ হবে বলে মনে হয় না’’ বলে মনে করেন তিনি।

পুঁজিবাজারে বিশাল দুর্নীতির চিত্র মাত্র দুমাস সময়ে তদন্ত করা কার্যত কঠিন। কিন্তু তারপরও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সংগঠিত দুর্নীতির সবগুলো দিক নিয়েই পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করার আগে তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘সময় সীমিত হলেও আমরা কখনোই দায়সারাভাবে কাজ শেষ করতে চাইনি। শুরু থেকেই আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করার বিষয়ে সচেতন ছিলাম। এ কারণে কম সময়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করার চেষ্টা করেছি।

’’ ‘‘এমন একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে চেয়েছি যাতে সরকার চাইলে পুঁজিবাজারে কারসাজির কারণ ও এর নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের সহজেই শনাক্ত করতে পারে। ’’ ‘‘পাশাপাশি সরকার ইচ্ছা করলে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুঁজিবাজারের আমূল সংস্কার সাধন করতে পারবে, যা কারসাজি বন্ধের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রাখতে সক্ষম’’ বলেছেন ইব্রাহিম খালেদ। সরকারিভাবে না হলেও মিডিয়ার কল্যাণে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বড় ধরনের কারসাজি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিভিন্ন লেদদেনের তথ্য এবং পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা ও শৈথিল্য সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সময় স্বল্পতার কারণে প্রতিটি সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে দৈবচয়ন ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘পুঁজিবাজারে সংঘটিত বিপুল অনিয়ম-অনৈতিকতা এবং অনিয়ম-অনৈতিকতার সঙ্গে জড়িত বিশাল অঙ্কের লেনদেন পর্যালোচনায় তদন্ত কমিটির অনুমিত হলো, এ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বিদ্যমান।

একেকটি লেনদেন তদন্ত করে দুর্নীতি নিরূপণ করা বেশ সময় সাপেক্ষ। সামগ্রিক লেনদেন তদন্ত করে দুর্নীতির সামগ্রিক চিত্র উন্মোচন অসম্ভব না হলেও তাতে কয়েক বছরের কর্মপরিকল্পনার প্রয়োজন। তাই তদন্ত কমিটি অল্প কয়েকটি নমুনা হিসাবের লেনদেন পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। এত অল্পসংখ্যক নমুনায় দুর্নীতি থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে, কারণ সব হিসাবেই দুর্নীতি থাকে না। তবে পরীক্ষান্তে কমিটি নিশ্চিত হয়েছে যে, এত অল্প নমুনার মধ্যেও দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে।

দুর্নীতির নির্দেশক হিসেবে সুনির্দিষ্টভাবে প্রাপ্ত তথ্যগুলো পরিবেশিত হলো। এসইসি পুনর্গঠিত হয়ে সক্ষমতা অর্জন করলে, একই প্রক্রিয়ায় সংস্থাটি সন্দেহজনক লেনদেন হিসাব পরীক্ষাকার্য গ্রহণ করতে পারে। ’’ প্রতিবেদনে কয়েকটি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে না পারলেও অনেকের সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য দেয়া হয়েছে। এসব তথ্য উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের পক্ষ থেকে অধিকতর তদন্তে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ৭ এপ্রিল বিকেলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিবেদনে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে অধিকতর তদন্তে পর প্রমাণিত হলে অবশ্যই শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

” গত বুধবার অর্থমন্ত্রী বলেন, “ফৌজদারি (ক্রিমিনাল অফেন্স) কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়ে থাকলে সে হিসেবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। ” ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, মিডিয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিবেদনে কী আছে এবং এর ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত, সেসব আলোচনা বাদ দিয়ে এখন প্রতিবেদনের অসম্পূর্ণতাকে মূল আলোচ্য বিষয়ে পরিণত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তারা আরো বলছেন, তদন্তে মাধ্যমে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাদের বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এমন ব্যক্তির নাম না থাকা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে যার কাছ থেকে জড়িতরা পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। কিন্তু এখতিয়ার না থাকায় তার পক্ষ পুরোপুরি ভেটো দেয়া সম্ভব হয়নি।

দেখা যাচ্ছে, একইসঙ্গে তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে তদন্ত কমিটির প্রধানের সততা নিয়েও। তদন্ত কমিটির কার্যপরিধির বাইরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশদ পর্যালোচনার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে কমিটি প্রধানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের পদে থাকার বিষয়টি উত্থাপন করে। যদিও তদন্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক, এসইসি ও স্টক একচেঞ্জের সমন্বয়হীনতাও যে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে সে বিষয়টিও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এমনকি এসইসি ও স্টক একচেঞ্জের যেসব কর্মকর্তা তদন্ত কাজে সহযোগিতা করেছেন তাদের নানাভাবে চাপের মুখে ফেলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্বন্যামখ্যাত এক বিশ্লেষক বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “অর্থমন্ত্রীর এমন উক্তি ও সরকারের পক্ষ থেকে এখন শেয়ার কেলেঙ্কারির সাথে জড়িতদের বিষয়ে জোরালো কোনো অবস্থান না নেয়ার প্রেক্ষাপটেই জড়িতরা তাদের অনুচরদের দ্বারা সমালোচনার পাহাড় গড়ে তুলছেন। ” তিনি বলেন, ‘‘সরকারের দীর্ঘসূত্রিতার সূযোগ নিয়ে অনেকটা ‘বলতে বলতে মিথ্যাও সত্য হয়ে যায়’ প্রবাদকে কাজে লাগানোর পদ্ধতি নেয়া হয়েছে। ’’ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, তদন্ত প্রতিবেদন, প্রতিবেদনে নাম না আসা বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পর্কে আক্রমণাত্বক সমালোচনার কারণে কিছুটা আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ায় এই বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.