আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিধাতা, আমি ইলিশ হব

,,,কুয়াশার আড়ালে লুকানো ঘটনা কুয়াশার চাদরে জড়ানো সকালের মোহনীয় রূপের মত নিস্পাপ, নিস্কলঙ্ক, নির্মোহ নয়,,,

খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম। না, না। আমি উঠিনি। বরং সত্যি কথা বলতে আমাকে উঠানো হল। আর সেটা আমার জন্য খুব সকাল হলেও আপনার মত কর্মব্যস্ত মানুষের জন্যে হয়তো খুব সকাল নয়।

পহেলা বৈশাখের দিনে সকাল দশটায় আম্মুর দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় আমার ঘুম ভাঙ্গে। বেকার লাইফ শুরু হবার পর থেকে কখনও ১২টার আগে উঠেছি বলে মনে হয় না। আর দুপুরের ভাত দিয়ে সকালের নাস্তা করাটা এখন রুটিনের ভেতরেই পড়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই ডাইনিং টেবিলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। সবার সামনে নাস্তার প্লেট।

আর প্লেটে শোভা পাচ্ছে পানিতে ডুবানো সাদা ভাত। পান্তা ভাতের আয়োজন দেখেই মনে হল আজ যে পহেলা বৈশাখ। বাঙ্গালী যে আজ ‘বাঙ্গাল’ হবার প্রতি্যোগীতায় মেতেছে। আমরাই বা কেনো সেই প্রতিযোগীতায় পিছে পড়ে থাকব! তাই প্রতি বছরের মত বাঙ্গালীত্ব অজনের এই পরিপাটি আয়োজন দেখে আবাক হই না। কিন্তু খেতে বসে যখন আবিষ্কার করি যে প্রতি বছরের পান্তা-ইলিশ হঠাৎ পান্তা-ভর্তায় পরিণত হয়েছে তখন একটু অবাক হই।

অবশ্য এই অবাক হবার রেশ কাটতে বেশীক্ষণ লাগে না। যখন চ্যানেল-আইয়ের ইলিশের দাম নিয়ে তৈরী করা রিপোর্টের কথা মনে পড়ল, তখন মনে হল ইলিশ না খাওয়াটা আমাদের মত মানুষের খুবই স্বাভাবিক। আট হাজার টাকা জোড়া’র ইলিশ কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর সেই ইলিশ খেয়ে বাঙ্গালী হবার প্রতিযোগীতায় ফাস্ট হবার মানসিকতাও নেই। নাস্তা খেয়ে বেশ কৌতুহল নিয়ে টিভি খুলে বসি।

চ্যানেল-আইয়ের লাইভ আয়োজন দেখি। আজ তারা মূলত টিএসসি-শাহবাগ-রমনা এলাকা নিয়েই মেতে ছিল। অবাক হয়ে অলস বাঙ্গালীর কর্মঠ হবার অভিনয় দেখতে থাকি। যে বাঙ্গালী এক কিলোমিটার পায়ে হাটা দূরত্ব অতিক্রমে দশ টাকা রিকশা ভাড়া খরচ করে, আজ সেই বাঙ্গালীই আজিম্পুর থেকে রমনার ১২ টাকা ভাড়ার বাস দূরত্ব হাসিমুখে হেটে যাচ্ছে। যে বাঙ্গালী অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড আসক্তির কারণে মুটিয়ে যাচ্ছে, আজ সেই বাঙ্গালীই মাটির সানকিতে পান্তা খেয়ে বাংলা মা’কে স্বরণ করছে।

যে বাঙ্গালী উঠতে-বসতে, চলতে-ফিরতে কানে লাগানো হেডফোনের হিপ-হপ মিউজিকে নিত্য কর্ম সম্পাদন করে, আজ সেই বাঙ্গালীই তন্ময় হয়ে বাউলা সঙ্গীত শুনছে। হায়রে!!! আমরা যদি এই হাটার অভিনয়টাকে অভ্যাসে পরিণত করতে পারতাম, তবে সকাল আটটা না বাজতেই গাড়িগুলোকে চরম জ্যামে আটকে থাকতে হতো না। ফাস্ট ফুডকে যদি এভাবে না বলতে পারতাম তবে হয়তোবা থাইরয়েড রোগটা আমাদের দেহে বাসা বাধত না। বাউল সঙ্গীত আজকের মত করে এমনি ভালবাসলে পাংশায় আঠাশ জন বাউলের চুল-দাড়ি এমনি করে কাটতে পারতাম না। বাঙ্গালীত্ব অর্জনের এই বাহ্যিক মুখোশকে আমরা অন্তরের আচ্ছাদন বানাতে পারিনি।

এটা হয়তোবা শুধু এই জেনারেশনের ব্যর্থতা না। এটা একটা ট্রেডিশন। যা আমাদের পূর্বপুরুষদের ধমনীবাহিত হয়ে আমাদের মধ্য দিয়ে চরমভাবে ফুটে উঠেছে। আর এই সংস্কৃতির বিকৃত লালনের কারণেই হয়তোবা কবি বহু আগেই বলেছেন- “সাত কোটি সন্তানের হে বংগ জননী, রেখেছো বাঙ্গালী করে- মানুষ করনি” হ্যা, আমরা মানুষ না, আমরা বাঙ্গালী। মানুষ হলে আমাদের দুই নেত্রী উৎসব-পা্র্বণে শুধু শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময় করতে পারত না, দেশের সংকট উত্তরণে আলোচনার টেবিলেও বসত।

মানুষ হলে হাজার বছরের বাঙ্গালীয়ানার সরূপ শুধু এক বিশেষ দিনে পান্তা-ইলিশ খাবার মধ্যে আটকে থাক্ত না। মানুষ হলে প্রতিদিনের জিন্স-টপস পরিহিত উগ্র ললনারা বিশেষ দিনে শাড়ি পড়ে বাঙ্গালী সাজত না। আমরা বাঙ্গাল বলেই হয়তো তা পারছি। তাই বিধাতার কাছে এই বিশেষ দিনে আমার একান্ত মিনতি- “হে বিধাতা, পরজন্মে আমায় বাঙ্গালী রূপী মানুষ করো না-মানুষ রূপী বাঙ্গালী করো। আর তাও যদি না কর, তবে আমায় পদ্মার ইলিশ করো।

বাংলার বাজারে আমি আকাশ ছোয়া দামে বিক্রি হব- টেলিভিশনের রিপোর্টে আসব। ” ১৪/৪/১১

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।