আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন মায়ের গল্প

দ্রিমু য্রখন ত্রখন স্রবট্রাতেই দ্রিমু
দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে সন্তানের মা হচ্ছেন অনেকেই। অন্য মায়েদের চেয়ে একটু ভিন্ন শাহনাজ পারভীনের ঘটনা। তিনি এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। পরীক্ষার সময়টায় মা হওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। কিন্তু শাহনাজ পারভীন সত্যিই ব্যতিক্রমী।

অদম্য তাঁর ইচ্ছাশক্তি। তাই তো সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার মাত্র দুই ঘণ্টা পর তিনি হাজির পরীক্ষাকেন্দ্রে। ৫ এপ্রিল সকাল সাতটায় জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি এই মায়ের কোল আলো করে আসে একটি কন্যাসন্তান। সেদিনই এই মা শাহনাজ পারভীনের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার শুরুর দিন। পরীক্ষা শুরু সকাল ১০টা থেকে।

সবে সন্তানের জন্ম হয়েছে, কিন্তু পরীক্ষার কী হবে? এখানেই সরিষাবাড়ীর ধানাটা গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন ঘটান ব্যতিক্রমী ঘটনা। সব ইচ্ছাশক্তি জড়ো করে, শারীরিক কষ্ট উপেক্ষা করে তিনি চলে যান পরীক্ষা দিতে। চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে সরিষাবাড়ী পাইলট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম) বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা দিতে পৌঁছে যান নয়টার মধ্যেই। নবজাতক থাকে হাসপাতালে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে। হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার আগে ব্যথানাশক ইনজেকশন দেওয়া হয় শাহনাজকে।

আর জরুরি অবস্থা সামলানোর জন্য পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয় একজন স্বাস্থ্য সহকারীকেও। তিনি পরীক্ষা কক্ষের বাইরে থেকে অপেক্ষা করেন। তবে কোনো সমস্যা হয়নি। পরীক্ষার তিন ঘণ্টা বেঞ্চে বসেই স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। আর ১০ এপ্রিল নবজাতককে সঙ্গে নিয়েই পরীক্ষার হলে বসেন তিনি।

শাহনাজ পারভীন অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তিনি। তাঁর মা ফজিলা বেগম জানান, পরীক্ষার জন্য রাত জেগে হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগেই পড়াশোনা করে শাহনাজ। ভোররাত থেকে শুরু হয় শাহনাজের প্রসবব্যথা। সকাল সাতটায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁর সন্তান জন্ম নেয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মীরা জানান, ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর রাতে শাহনাজ পারভীন তাঁর স্বামী মানিক মিয়াকে বাড়ি থেকে বই এনে দিতে বলেন। স্বামী বই এনে দেন। প্রসূতি বিভাগের শয্যায় শুয়ে পরীক্ষার্থী মা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। প্রসূতি বিভাগের সেবিকা নাহার আক্তার জানান, শাহনাজ পারভীনকে রাতে শুয়ে শুয়ে বই পড়তে দেখেছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সোহেল মাহমুদ নবী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ২৮ বছর চিকিৎসকজীবনে এমন মা দেখিনি, যিনি দুই ঘণ্টা বয়সের নবজাতক রেখে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।

এটা একটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ’ ২০০৯ সালে সরিষাবাড়ীর সাতপোয়া ইউনিয়নের দিনমজুর সোহরাব আলীর মেয়ে শাহনাজ পারভীনের সঙ্গে দিনমজুর ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে মানিক মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের পরও শাহনাজ পারভীন পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান। দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেই ২০০৯ সালে শাহনাজ পারভীন এসএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন স্থানীয় মাহমুদা সালাম মহিলা ডিগ্রি কলেজে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম) কোর্সে।

সরিষাবাড়ী পাইলট বালিকা বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ও কেন্দ্রের সচিব সৈয়দ আবদুর রউফ বলেন, ‘আমার ৩১ বছর শিক্ষাজীবনে এমন পরীক্ষার্থী মাকে কখনো দেখিনি। এ ধরনের পরীক্ষার্থী মা যেন হাসপাতালে বসে পরীক্ষা দিতে পারে, প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমি অনুরোধ জানাই। ’ তিনি বলেন, পাশাপাশি এ ধরনের আত্মপ্রত্যয়ী মায়েরা যেন শিক্ষাজীবন শেষে কর্মসংস্থানের নিশ্চিত সুযোগ পায়। ‘আমার স্ত্রীর ইচ্ছা ছিল পরীক্ষা দেবে, তাই আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছে। ’ বললেন শাহনাজের স্বামী মানিক মিয়া।

শাহনাজের মেয়েটির নাম রাখা হয়েছে ইমতি খাতুন। ৫ এপ্রিল পরীক্ষার্থী শাহনাজ পারভীনকে পরীক্ষাকেন্দ্রে দেখতে গিয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান এ নাম রাখেন। তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টার নবজাতককে রেখে সকাল নয়টায় পরীক্ষার জন্য কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তিন ঘণ্টা বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিয়ে শাহনাজ অদম্য ইচ্ছাশক্তির পরিচয় দিয়েছেন। তাই আমি এ ঘটনা শুনে মেয়েটির নাম রেখেছি। ’ শাহনাজ পারভীনের এইচএসসির সব কটি পরীক্ষাই দেবেন শিশুকন্যাকে সঙ্গে নিয়ে।

‘পরীক্ষা দিতে আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না। নারীরা আমার এ ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হবে এবং এগিয়ে যাবে। ’ শাহনাজের প্রত্যাশা এমনই।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.