আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহামতি সালাহ্‌ আদ দীন

বলুনঃ সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। [১৭:৮১-পবিত্র কুরআন]

সালাহ্‌ আদ দীন ইউসুফ ইবনে আইউবী (১১৩৭-মার্চ ৪,১১৯৩) কুর্দী বংশোদ্ভূত একজন বীর মুসলিম সেনাপতি, যিনি মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে। ক্রুসেডারদের প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবে তার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। পাশ্চাত্যে তিনি সালাদিন নামে পরিচিত।

তিনি মিশর ও সিরিয়ায় আইউবীয় বংশের পত্তন করেন। তার নেতৃত্বে হাত্তিনের যুদ্ধে জয়ের পর মুসলিমরা জেরুজালেমকে দখলমুক্ত করে। সালাহ্‌ আদ দীন এর জন্মস্থান মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক)এর তিকরিত নামক এলাকায়। ইউসুফ তার ডাক নাম। তার বাবা নিজামউদ্দিন আইয়ুব ছিলেন একজন কুর্দি সৈন্য ও রাজনীতিক।

সালাহ্‌ আদ দীন ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অনুরাগী ছিলেন, একইসাথে আইনশাস্ত্র,অঙ্কশাস্ত্র,জ্যামিতি এবং আরবের ইতিহাসেও পারদর্শী ছিলেন। দামেস্‌ক এ তিনি নুরুদ্দিন এর দরবারে দশ বছর ছিলেন। নুরুদ্দিনের প্রতিনিধি শিরকু এর সাথে তিনি মিশরের ফাতিমীয় সুলতান গণের বিরুদ্ধে অভিযানে গমন করেন। পরবর্তীতে শিরকু মিশরের প্রধান উজীর হন। শিরকু পরলোক গমন করলে ১১৬৯ সালে সালাহ্‌ আদ দীন তার জায়গা নেন।

নুরুদ্দিনের মৃত্যুর পর সালাহ্‌ আদ দীন নিজেকে মিশরের সুলতান ঘোষণা করেন এবং সেখানে আইউবীয় বংশের পত্তন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৫ পুত্রসন্তানের জনক ছিলেন। উদার মনোভাবের জন্য তিনি পাশ্চাত্যে ও প্রাচ্যে সমভাবে সম্মান কুড়াতে সক্ষম হন। ১১৮৭ সালে সালাহ্‌ আদ দীন খ্রিষ্টানদের জেরুজালেম থেকে বিতারিত করেন। জেরুজালেম দখলমুক্ত করার পরে তিনি অনর্থক একটি হত্যাকান্ডও ঘটাননি।

ক্রুসেডের প্রথম পর্যায়ে ইটালী, ফ্রান্স,জার্মানীর ক্রুসেডাররা এশিয়া মাইনর দখল করে নেয়। অতঃপর ১০৯৮ সালে এডিসা ও এন্টিয়ক এবং ১০৯৯ সালে জেরুজালেম দখল করে। এন্টিয়কে ক্রুসেডাররা প্রায় দশ হাজার মুসলিমকে হত্যা করে আর জেরুজালেম দখল করে মুসলিম ও ইয়াহুদীদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। খুব অল্প সংখ্যক মুসলিম ও ইয়াহুদী এই গণহত্যার হাত থেকে বাচঁতে পেরেছিল। অনেকে ভেবেছিল সালাহ্‌ আদ দীন হয়তোবা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবেন।

কিন্ত মুসলিম বাহিণীর বিজয়ে কোথাও তার প্রতিশোধ গ্রহণ করা হয়নি। সসম্মানে মুক্তি দেয়া হয় জেরুজালেমের রাজা গী দ্য লুসিনানকে, মুক্তি দেয়া হয় সকল যুদ্ধ বন্দীদের। মুসলিম সৈন্যরা জেরুজালেমের নিরপরাধ সাধারণ জনগোষ্ঠীর জীবণ ও সম্পত্তির নিশ্চয়তা প্রদান করে। তৃতীয় ক্রুসেডে (১১৮৯ - ১১৯২), (যা রাজাদের ক্রুসেড নামেও পরিচিত) ইউরোপীয় নেতারা পুনরায় পবিত্র ভূমি কে সালাহ্‌ আদ দীনের কাছ থেকে দখল করার চেষ্টা করে। কিন্ত ব্যর্থ হয়ে ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড সালাহ্‌ আদ দীনের সাথে চুক্তি সম্পাদন করেন।

১১৯৩ সালের ৪ঠা মার্চ দামেস্কে সালাহ্‌ আদ দীন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি মাত্র ১টি স্বর্ণমুদ্রা ও ৪৭টি রৌপ্যমুদ্রা রেখে গিয়েছিলেন। তিনি তার বিশাল সম্পত্তি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিলিয়ে দেন। তথ্যসূত্রঃ ক্রুসেডের ইতিবৃত্ত - আশকার ইবনে শাইখ http://www.pbs.org/empires/islam/profilessaladin.html http://www.encyclopedia.com/topic/Saladin.aspx http://www.biographyonline.net/military/saladin.html http://en.wikipedia.org/wiki/Saladin

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.