আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিযবুত তাহরীর আদর্শগতভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী--মা হ মু দু র র হ মা ন

good
হিযবুত তাহরীর আদর্শগতভাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী হওয়ার কারণে তারা জামায়াতে ইসলামীকে সর্বদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের প্রতি দুর্বল একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচনা করেছে। তদুপরি ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে দলটির বিতর্কিত ভূমিকার জন্য হিযবুত তাহরীর তাদের সঙ্গে একটা দূরত্বও বজায় রেখেছে। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী নেতারা হিযবুত তাহরীরের কর্মকাণ্ডকে হঠকারী বিবেচনা করার পাশাপাশি তাদেরকে ইসলামী আন্দোলনে বাধা হিসেবেও মনে করে। এই প্রসঙ্গে ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা চলাকালীন একটি ঘটনার উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করছি। আমি তখনও আমার দেশ পত্রিকার দায়িত্ব গ্রহণ করিনি বিধায় আমার লেখালেখির একমাত্র জায়গা ‘নয়া দিগন্ত’ পত্রিকা।

প্রতি বুধবার সেখানে কলাম লিখতাম। সেই সময় প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিনে আমাদের মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর প্রিয় সাহাবি হজরত আবু হুরায়রাকে (রা.) ব্যঙ্গ করে ছড়াসহ একটি কার্টুন ছাপা হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ নিয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে জরুরি অবস্থার মধ্যেই বিভিন্ন মসজিদ থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হতে থাকে। এসব বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনে হিযবুত তাহরীর সেই সময় জামায়াতে ইসলামীর তুলনায় অধিকতর সাহসী ভূমিকা পালন করে। অবস্থা সঙ্গিন দেখে শেষ পর্যন্ত প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান বায়তুল মোকাররম মসজিদের তত্কালীন খতিব মরহুম উবায়দুল হকের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন এবং ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে মুসলমানদের মনে আঘাত দেয়ার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিতর্কটির অবসান ঘটান।

ক্ষমাপ্রার্থনা অনুষ্ঠান আয়োজনে তত্কালীন তথ্য উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। সেই সময় ক্ষমতাসীন সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের দালাল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত বিপদ উপেক্ষা করে আমার লেখালেখির কারণে একটি ক্ষুদ্র ভক্ত পাঠকগোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল। জামায়াতে ইসলামী দলে যথেষ্ট প্রভাব রাখেন, এমন একজন ব্যক্তি টেলিফোন করে প্রথম আলো’র বিতর্কিত কার্টুন নিয়ে আমার কলামে কিছু না লিখতে অনুরোধ করেন। অতি সজ্জন প্রকৃতির সেই ভদ্রলোককে ব্যক্তিগত সততার জন্য আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখলেও তার অনুরোধ রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। প্রথম আলোর ইসলাম বিরোধিতার সম্পাদকীয় নীতির কঠোর সমালোচনা করেই আমার সাপ্তাহিক কলামটি যথারীতি লিখেছিলাম।

‘নয়া দিগন্ত’ কর্তৃপক্ষ অবশ্য কোনো কাট-ছাঁট না করেই লেখাটি ছাপিয়েছিলেন। প্রথম আলোর বিষয়ে উল্লিখিত ভদ্রলোকের নমনীয় অবস্থানের পেছনে যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করে পরবর্তী সময়ে দু’টি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম। একেবারে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছি এমন দাবি করব না। তবে আমার ধারণা, দু’টি কারণে তিনি প্রথম আলোর বিষয়ে নমনীয় অবস্থান নেয়ার জন্য ওকালতি করেছিলেন। প্রথমত, হিযবুত তাহরীর যেহেতু ওই আন্দোলনটিতে অন্তত জামায়াতে ইসলামীকে প্রতিযোগিতায় পরাজিত করে ইসলামী মূল্যবোধের পক্ষে লড়াইয়ে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল, কাজেই তাদের আর অগ্রসর হতে দেয়া দলটি নিজ স্বার্থে বিপজ্জনক মনে করেছিল।

আর দ্বিতীয়ত, তখন পর্যন্ত সম্ভবত জামায়াতে ইসলামী নীতিগতভাবে জরুরি সরকারকে কোনো বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে অনাগ্রহী ছিল। জামায়াতে ইসলামী এবং হিযবুত তাহরীরকে সহযোগী দল হিসেবে দেখানোর যে প্রচেষ্টা বর্তমান মহাজোট সরকার গ্রহণ করেছে, দল দু’টির আদর্শগত বিরোধ বিবেচনায় নিলে সরকারের এই প্রচারণা যে বিশ্বাসযোগ্য নয়, সেটি আশা করি বুদ্ধিমান পাঠকমাত্রই বুঝবেন। পশ্চিমা বিশ্বে শেখ হাসিনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ইসলামী জঙ্গিত্ব নিয়ে এই অতি সরলীকরণকে শেষ পর্যন্ত কোন দৃষ্টিতে দেখবে, সেটাও ভাববার বিষয়। গত বছর ৬ জানুয়ারি এদেশে সেক্যুলার মোর্চা রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বিরুদ্ধ মতাবলম্বীদের ন্যূনতম মৌলিক অধিকারকেও আর স্বীকার করা হচ্ছে না। বিদেশ যেতে বিমানবন্দরে আইনবহির্ভূতভাবে বাধা প্রদান, গ্রেফতার, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সর্বশেষ গুম-খুন গণতন্ত্রের লেবাসে এই দেশটিকে গত শতাব্দীর সত্তর দশকের আর্জেন্টিনা অথবা চিলিতে পরিণত করেছে।

সেই সময় কমিউনিস্টদের শায়েস্তা করার মহত্ উদ্দেশ্য সাধনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন যেমন দক্ষিণ আমেরিকাতে তাবত্ কিসিমের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে চোখ বুজে সমর্থন দিয়েছিল, বাংলাদেশেও আজ তারা একই নীতি অবলম্ব্বন করছে। পার্থক্য কেবল কমিউনিস্ট বিরোধিতার নীতির জায়গায় এখানে ইসলাম বিরোধিতা চলছে। গত দেড় বছরে মাত্র একটিবারই আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টিকে প্রকাশ্য বিবৃতি প্রদানের মাধ্যমে সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের সমালোচনা করতে দেখেছি। সেটি ঘটেছিল যখন জামায়াতে ইসলামী দলের সহকারী মহাসচিব প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাককে (তিনি আমারও আইনজীবী) তার স্ত্রীসহ বিমানবন্দরে শুধু হেনস্তাই করা হয়নি, উল্টো তাদের বিরুদ্ধে সরকার বানোয়াট মামলাও দায়ের করেছিল। জামায়াতে ইসলামী দলের মধ্যম সারির একজন নেতার মৌলিক অধিকার রক্ষার পক্ষে অবস্থান নিয়ে মরিয়ার্টি সাহেব কী সঙ্কেত প্রদান করতে চেয়েছিলেন, তা তিনিই ভালো জানেন।

তবে পরবর্তীতে সরকার যখন চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী কায়দায় দলটিকে মিছিল, সভা ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে বাধা দিয়েছে অথবা দলটির শীর্ষ নেতাদেরকে তুচ্ছ মামলায় গ্রেফতার করেছে; সেই সময় মার্কিন দূতাবাসের নীরবতা বাংলাদেশ সরকারকে মানবাধিকারের অধিকতর লঙ্ঘনে উত্সাহিত করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মানববন্ধনের মতো নিরামিষ কর্মসূচি পালনের দুর্বল উদ্যোগকেও দেখা যাচ্ছে মারমুখী পুলিশ এখন পিটিয়ে ভণ্ডুল করে দিচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ‘মুজিববাদে’ বিশ্বাসী ক্ষমতাসীনরা ব্যতীত দেশের অন্য কোনো নাগরিককে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অধিকার দেয়া হবে না। এসব নিন্দনীয় আচরণেও ‘গণতন্ত্রের পূজারী’ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী নিদেনপক্ষে উদ্বেগ জানানোরও আর প্রয়োজন বোধ করছে না। সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট এই ফ্রাঙ্কেনস্টাইন আসকারা পেয়ে কতটা দুর্বিনীত হয়ে ওঠে, সেটা দেখার জন্য আমাদের আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে।

(চলবে) রিমান্ডে নির্যাতন বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনা দেশকে ’৭০-এর আর্জেন্টিনা-চিলিতে পরিণত করেছে
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.