গন্ত্যবের শেষ পরিণতি জানা নেই......... ওই ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম আগামী দুই বছরের মধ্যে গুটিয়ে নেয়ার বিধান যুক্ত করে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০১৩ এর খসড়া অনুমোদিত হয়।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সাংবাদিকদের জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এ খসড়া আবারো মন্ত্রিসভায় তোলা হবে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রস্তাবিত খসড়া আইনে আমরা ট্রাডিশনাল ব্যাংকগুলোর ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো ও বুথ বন্ধ করার প্রস্তাব করেছি। একইসঙ্গে দুই ধরনের ব্যাংকিংয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে।
এজন্য আমরা বলেছি, এখন থেকে কোনো ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাতে চাইলে সেটিকে পূর্ণ ইসলামী ব্যাংক হতে হবে। ”
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধিত) আইনের কপি হাতে না পাওয়ায় তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি।
ব্যাংক ব্যবস্থাপক ও নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের(এবিবি) চেয়ারম্যান নূরুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে আলাদা নীতিমালা করা হলে তাদের আপত্তি নেই। তা না হলে এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কারণ প্রচলিত ধারার ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে বিশ্বব্যাপী।
”
দেশে বর্তমানে মোট ১৭টি প্রচলিত ধারার ব্যাংকে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে বিদেশি এইচএসবিসি, স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক আল ফালাহও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন আইনে ব্যাংকিং খাতের ওপর বিশেষ করে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ আরো বাড়ানো হয়েছে।
নতুন আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা ১৫ জনের বেশি হতে পারবে না। এর মধ্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংকের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয় ন্যূনতম এমন তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে।
অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডার মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ১১ জন পরিচালক থাকতে পারবেন। বর্তমানে এর কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই। তাছাড়া একটি ব্যাংকের পর্ষদে একজন পরিচালক (৩ বছর মেয়াদে) একটানা দুই বারের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। এক্ষেত্রে দুই বারের পর তাকে আবশ্যিক অবসর নিতে হবে। তবে এসময় তিনি অন্য ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন।
এক পরিবার থেকে একজন সদস্যের বেশি এক ব্যাংকে পরিচালক থাকতে পারবে না। তবে একই পরিবারের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন ব্যাংকে পরিচালক থাকতে কোন বাধা নেই।
তবে ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলোর পরিচালকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ২০ হতে পারবে। দুই বছর পর এ ব্যাংকগুলোকেও পরিচালকের সংখ্যা ১৫-তে সীমিত করে ফেলতে হবে।
বর্তমান আইনে পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি ব্যাংক তার মোট দায়ের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারে।
নতুন আইন অনুযায়ী একটি ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। মূলধন বলতে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, বিধিবদ্ধ মুদ্রার মজুদ ও রিটেইল আর্নিং-কে বোঝায়। বর্তমানে যে ব্যাংকের বিনিয়োগ ২৫ শতাংশের বেশি রয়েছে আইন পাশ হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে সেই ব্যাংকের বিনিয়োগ এই সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। আর যে ব্যাংকের বিনিয়োগ মুলধনের ২৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে সেই ব্যাংক ২৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না।
আগে ব্যাংকের কোনো অনিয়ম হলে কেবল কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় আনা হতো।
নতুন আইনে ব্যাংক কম্পানিকেও শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমান আইনে কোন ব্যাংকের পরিচালক বা চেয়ারম্যান বা এমডিকে অপসারণের ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেই। নতুন আইন পাশ হলে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণের ক্ষমতা পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যদিও ব্যাংকের পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের অপসারণের প্রস্তাব রাখা হয়েছিলো।
বর্তমানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হয়।
নতুন আইনে এমডির অধস্তন আরো দুই কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নেয়ার বিধান করা হয়েছে।
এছাড়া গ্রাহক স্বার্থসংশ্লিষ্ট কিছু বিষয়েও সংশোধনী হতে যাচ্ছে ব্যাংক কোম্পানি আইনে। এতে গ্রাহকদের দাবিহীন আমানতের মেয়াদ আগে ছিল ১০ বছর। এটাকে বাড়িয়ে ১৫ বছর করার প্রস্তাব করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাছাড়া হিসাব খোলা বা স্থায়ী আমানত রাখার ক্ষেত্রে আগে যেখানে একজনের বেশি নমিনি বা মনোনীত ব্যক্তি থাকতো না এখন সেখানে একাধিক রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।