আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোরিয়া হতে মালেশিয়া হয়ে লন্ডন যাবার কাহিনীঃ পর্ব ০১

রানিং এন্ড রানিং...

আমার রয়েছে ভ্রমনের দূর্ণিবার আকর্ষণ। আর এই চরম আকর্ষণের সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু সু্যোগ। অবশ্য এই সুযোগ গুলো এমনি এমনি আসে নাই। এইজন্য আমাকে রাত দিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। কারন, এই ভ্রমনের জন্য যে পরিমান অর্থ প্রয়োজন, তা আমার কাছে কোনভাবেই ছিল না।

যাইহোক, এবার আমি আমাদের বাংলা সহ ভারত বর্ষ যারা দুইশত বছর শাসন করেছেন, তাদের দেশ ভ্রমনের কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলব। ১ম পর্বঃ আমার একটা আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ছিল লন্ডন শহরে। আমি আমার কোরিয়ান কো-অথোর কে সাথে নিয়ে একটা খসড়া প্লান দাঁড় করিয়ে ফেললাম। সময়টা ছিল, সেপ্টমবরের প্রথম সপ্তাহ, ২০০৮। এই সময়তে আমার চতুর্থ সেমিস্টার ক্লাস চলছিল, তাই সঙ্গত কারনেই প্লানটা একটু কাঁটছাট করে মাত্র ৭ দিনের জন্য করতে হয়েছিল।

যাইহোক ইংরেজ সাহেবদের দেশ দেখার জন্য মনের ভিতর একটা বাকুম বাকুম উত্তেজনা কাজ করতেছিল, কিন্তু আমি আমার কোরিয়ান বন্ধুর কাছে তা প্রকাশ করি নাই। ভাব টা এমন ছিল, আমার দেশ থেকে প্রায় যাওয়া আসা করতাম... আমি তাকে বলি, তুমি ইংলিশ তেমন পারোনা, তাই আমি যা বলবো তাই ফলো করবা। আমার কথার বাইরে কখনোই যাবা না (অবশ্য এর জন্য ভ্রমনের শেষে এসে একটা রাম ধরা খাই, সেইটা পরে বলবো)। আমার ফ্লাইট ছিল ইনচিয়ওন এয়ারপোর্ট থেকে সকাল ৯ টাই, তারিখ ৮ সেপ্টমবর ২০০৮। মালেশিয়ান এয়ারলাইন্সের একটা ফ্লাইট যেটা কোরিয়া থেকে কুয়ালালাম্পুরে যাবে, সেখানে ১১ ঘন্টা স্টপ ওভার (ট্রানজ়িট টাইম)।

তারপর কুয়ালালাম্পুর থেকে ডিরেক্ট লন্ডন। খরচ কমানোর জন্যই এইটাই ছিল, সবচেয়ে সস্তা। আমারা ইউনিভার্সিটি থেকে থেকে রাত ১ টার পরে বের হবো, এরকম একটা প্লান আগে থেকে করা ছিল, কারন বাসে আমার শহর থেকে এয়ারপোর্ট যেতে সময় লাগবে সাড়ে ৪ ঘন্টা। দূরত্ব হইল প্রায় ৪১০ কিমি। বাসটার্মিনাল থেকে ৩০ হাজার ৯০০ কোরিয়ান ওন দিয়ে টিকেট কেটে রাত ২ টায় বাসে চেপে বসলাম।

লিমুজিন বাস ঠিক ২ টার সময় ছেড়ে দিল। কোরিয়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের প্রথম ১০ টা অর্থনৈতক ভাবে শক্তিশালী দেশে পরিনিত হয়েছে। এদের যেকোন সার্ভিস বিশ্বসেরা। প্রতি ৩০ থেকে ৪৫ মিন পর পর এক্সপ্রেস বাস। বাসে যাত্রি কতজন এইটা কোন বিষয় নয়।

টাইম হয়েছে, ছেড়ে দিতে হবে বাস। আমি সহ আমার ল্যাবমেট আর এক জন পুরো বাসে মোট ৩ জন যাত্রি ছিলাম। বাস চলছে আর আমি হাত পা ছড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাসে আমার ঘুম হইতে চাই না, তারপরো অবিরাম চেষ্টা করেই যাচ্ছি। কোরিয়া থেকে কুয়ালালাম্পুর যেতে সময় লাগবে প্রাই ৫ ঘন্টা।

দুপুর ১২ টার (লোকাল টাইম) দিকে পৌছাবো। আমাদের প্লান আছে, ট্রানজিট টাইম টা কুয়ালাল্মপুর শহর টা একটু ঘুরে দেখবো, তাই এনার্জি দরকার বলেই ঘুমানোর চেষ্টা। হাল্কা ঘুম চলে আসছে এই সময় দেখি বাস থেমে গেছে। কি হয়েছে, একটু উকি মেরে দেখি সামনে বাস গাড়ির বিশাল লাইন। সামনে এক ইয়া বড় তেল ট্যাংকার উলটে পড়ে আছে, আর আগুন ধরে গেছে।

মহা সমস্যায় পড়লাম, আমাদের এয়ারপোর্টে পৌছাতে আরো প্রাই ২ ঘন্টা লাগবে, ততক্ষনে ভোর সাড়ে ৪ টা বেজে গেছে। আমার কোরিয়ান ল্যাবমেট বাস থেকে নেমে পরিস্থিতি বোঝার ট্রাই করলো। আমাদের সাথে বাস ড্রাইভার কিছুটা চিন্তিত, কি করা যাই এখন। এইদিকে রাস্তা ক্লিয়ার করতে আরো ঘন্টা খানেক সময় লাগবে, ততক্ষনে আমাদের অনেক দেরী হয়ে যাবে। একদম টাইট সময় নিইয়ে আমরা বের হয়েছিলাম, তাই নিজের উপরে কিছুটা রাগ হচ্ছিল।

যাইহোক, বাস ড্রাইভার অনেক চেষ্টা করে একটা সাইড পথ বের করে কিছুটা কান্ট্রি সাইড রোড দিয়ে সুউন সিটি দিয়ে আমাদের সকাল ৭ টাই এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিল, আর আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচালাম। তারপর, সব ফরমালিটিজ শেষ করে ইমিগ্রেশন পার হয়ে নির্দিষ্ট গেটে যেয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। তখন আর বেশি সময় ছিল না, কারন আমরা আলরেডি লেট। এখানে একটা কথা বলে রাখি, ইনচিয়ওন এয়ারপোর্ট কিন্তু বেশ কয়েকবার বেস্ট এয়ারপোর্ট হয়েছে সারা বিশ্বে, এর সার্ভিস এবং ফ্যাসিলিটিলিজ এর কারনে। সুবিশাল এই এয়ারপোর্টে আমার জানা মতে তখন ১৫০ টি গেট ছিল।

এই এয়ারপোর্ট থেকে বের হইলে কোরিয়া এমন কোন ছোট বা বড় শহর নাই যে সেখানে ডাইরেক্ট বাস পাওয়া যাবে না। আর ট্রেনে সাবওয়ে ব্যাবহার করে সিউল এ যেয়ে যেকোন শহরের জন্য ট্রেন পাওয়া যাবে। কি মজা তাই না, এয়ারপোর্ট থেকে বের হইলেই একেবারে সরাসরি যেকোন গন্তব্যে যাওয়া যাই। ইশ যদি এমন সিস্টেম আমার ঢাকা এয়ারপোর্টে থাকতো!!! এইসব হাবিজাবি চিন্তা করতে করতে একসময় বোর্ডিং এর ডাক আসলো, বিমানে চড়ে বসলাম আল্লাহ এর নাম করে। “ওয়েলাকাম টু বোর্ড” মালেশিয়ান সুন্দরী গুলো সেবা দিতে শুরু করলো, আর আমিও সেইসব সেবা নিতে নিতে একসময় কুয়ালালাম্পুরের আকাশে চলে আসলাম।

কুয়ালালাম্পুরে নেমে এখন বাইরে যাবো শহর দেখতে। ঝামেলা এখান থেকেই শুরু হলো। কোরিয়ান ল্যাব মেট ওরতো কোন ভিসা লাগে না ৩ দিন থাকার জন্য। জাস্ট পারমিট লাগে। কিত্নু আমার ভিসা লাগবে।

আমি হইত সেইসময় বেকুব ছিলাম, তাই আমারো যে ট্রানজিট ভিসা আগে থেকে লাগিয়ে আনতে হবে, এটা বুঝতে পারি নাই। আমার পাসপোর্ট দেখে বেয়ায়াদব ইমিগ্রাশন অফিসার এমন একটা ভাব করে “ও বাঙ্গাল” বললো, যা দেখে আমার নিজেকে খুবি অপমানিত মনে হসচ্ছিল। আমি তাকে বুঝানোর ট্রাই করলাম, আমার ইউকের ভিসা আছে, রিটার্ন টিকেট আছে সিউল টু লন্ডন। কিন্তু কিছুতেই তাকে বুঝানো গেল না, আমার এই অবস্থা দেখে কোরিয়ান বন্ধু বলল থাক বাদ দাও, আমরা যাবো না বাইরে। আমিও ছাড়ার পাত্র না।

গেলাম ওদের অফিসে যেখানে ভিসা অন এরাইভাল দেয়। সব কিছু বুঝালাম, তারপর তাদের মনে হয় একটু দয়া হল, রাজী হইলো ভিসা অন এরাইভাল দিতে ১৪ দিনের জন্য। যাইহোক ১০০ রিঙ্গিত ফি দিয়ে শেষ পর্যন্ত মালেশিয়ান ভিসা পাইলাম। ১) ভিসা নিতে মালেশিয়ান অফিসারদের সাথে বাতজিত করতেছিলাম এখন এটাও আমার জানা ছিলনা, ঠিক কত দূরে মূল শহর এয়ারপোর্ট থেকে। পরে শুনলাম কিলা এক্সপ্রেসে প্রাই ৩০ কিমি ।

তার আগে একজন অফিসার এর কাছ থেকে ৮/৯ ঘন্টার মধ্যে কুয়ালালামপুরের চুম্বুক অংশ গুলো কিভাবে ঘুরা যাই, সে ব্যাপারে একটা রাফ আইডিয়া নিয়ে ট্রেনে উঠে বসলাম। কুয়ালালাম্পুর শহরটা বেশ ভাল লেগেছিল আমার সেই সময়। বিদেশীদের মধ্যে তামিল কাল লোকজন বেশি দেখলাম। যাইহোক প্রথমেই আমরা টুইন টাওয়ারে গেলাম। সেখান থেকে চাইনা টাউন, এখানে আমরা আমাদের ডিনার করেছিলাম।

তারপর এক বড় মার্কেটে গেলাম। মার্কেটের নাম টা ঠিক মনে করতে পারছি না (সেন্ট্রাল মার্কেট মনে হয়)। কিন্তু অনেক বড় এবং পুরানো। এইভাবে কিছু ক্ষন ঘুরাফেরা করলাম আর বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলাম, কারন আমাদের নেক্সট ফ্লাইট রাত ১০ টায়। তাই অন্তত রাত ৮ তার মধ্যে ট্রেনে উঠতে হবে এই প্লান ছিল।

আমাদের বোর্ডিং পাশ কোরিয়া থেকেই নাওয়া ছিল, তাই, এক ঘন্টা আগে গেলেই হবে, টেনশন মুক্ত ছিলাম। এইভাবেই কুয়ালালামপুর শহর ৮ ঘন্টার জন্য ঘুরে আবার এয়ারপোর্টে ফিরে আসলাম। ২) কিলা এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে আমি ৩) আমাদের রাফ প্লান টু এক্সপ্লোর কুয়ালালামপুর (সময় ৭ ঘন্টা) ৪) ট্রেন থেকে তোলা কুয়ালালামপুরের কিছু ছবি ৫) কুয়ালালামপুরের কিছু ব্যস্ত রাস্তা ৬) টুইন টাওয়ার ৭) চাইনা টাউনে ডিনার আপাতত, এইখানে এই পর্ব শেষ করি। পরবর্তি পর্বে ছবি সহ লন্ডন থেকে আমার জীবনের প্রথম ফ্লাইট মিসের কাহিনী নিয়ে আসবো। বিঃদ্রঃ আমি গুছিয়ে ভাল লিখতে পারিনা... বিরক্ত সহকারে পড়লে লেখক কে নিজ গুনে ক্ষমা করে দিবেন... আমার আগের ভ্রমন বিষয়ক পোষ্টঃ Click This Link


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.