আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মদনের চন্দ্রজয়-না পড়লে মিস

উচিৎ কথা কইতে গেলেতো বলবেন হাজী সাহেবের মুখ খারাপ মধুমালাকে ফোন করে বললাম ব্যপারটা। সে যথারীতি বিশ্বাস করল না। সে পড়ে আছে শাহবাগে। আজ ক’সপ্তা হতে চলল। তাকে বুঝিয়ে বললাম- দেখ, এমন হতেই পারে।

আমাদের মত মহামানুষকে মাঝে মধ্যে চাঁদে, সূর্যে, গ্রহে, নক্ষত্রে, পানিতে, পাথরে, দেখা যাবে এটাই স্বাভাবিক। এটাই ভুতেশ্বরের বিধান। জয় ভুতেশ্বর। মধুমালা ফোন কেটে দিল। সে ঘোর অবিশ্বাসী।

তারপর গিয়ে পড়ে আছে শাহবাগে। বদ্ধ উন্মাদ সে। দিনের পর দিন। নাওয়াখাওয়া ভুলে পড়ে আছে। ভুতেশ্বরের অতি প্রিয় বান্দাদের ফাঁসীর দাবী নিয়ে বসে আছে।

মামুর বাড়ীর আব্দার! মধুমালার চিন্তা বাদ দিলাম। মধু বিশ্বাস না করলেও অনেকেই বিশ্বাস করেছে। আমার বাসায় রান্না বান্না করে দেয় যে মেয়েটা তার নাম সুফিয়া খাতুন। সে বিশ্বাস করেছে। সে নিজে দেখেনি।

তবে শুনেছে। নুরজাহান রোডের সবাই নাকি পষ্ট দেখেছে। চাঁদের মধ্যে আমার মানে শ্রীমান মদনের কালার ছবি! আবার কেউ দেখেছে চাঁদের বুকে লম্বা লম্বা পা ফেলে হেটে চলেছে ঢাকার মদন! নুরজাহান রোডে আমার কিছু ভাল শিষ্য আছে। ফল ব্যবসায়ী আব্দুল হাই আমার প্রথম শ্রেণীর ভক্ত। তাকে যা বলি তাই বিশ্বাস করে।

এই সব মাল আছে বলেই না এখনও ভুত টিকে আছে। তার ফলের দোকানে গেলাম। আমাকে দেখেই তাড়াতাড়ি করে ভিতরে নিয়ে গেল। পাশের দোকান থেকে নানা রকমের ফল এনে কেটে দিল। সে সবসময়ই এটা করে।

নিজের দোকানের ফল সে নিজেও খায় না, আমাকে খাওয়ায় না। জিজ্ঞাসা করলে হাসে। কোন জবাব দেয় না। -‘বাবা, আবার কবে দেখা দিবেন চান্দের পিঠে? -আর যাব না। আসা যাওয়া খুব ঝক্কির ব্যাপার।

আর সেখানে খাওয়া দাওয়ার তেমন ব্যবস্থা নেই। খালি পাহাড় আর পাহাড়। যতক্ষণ ছিলাম, না খেয়ে ছিলাম। আমার সঙ্গে একটা টিয়া পাখি ছিল। ব্যচারীও না খেয়ে ছিল।

-আহারে, আমারে আগেই কইতেন সঙ্গে খানাখাদ্য দিয়া দিতাম। ফলমূল দিতাম। ফরমালিন আলাদা কইরা দিতাম। -আলাদা করে কেন? -ফরমালিন দেয়া ফল পাখপাখালির জন্যে হালাল না। মানুষের জন্য হালাল।

তাই আলদা ব্যাবস্থা। যখন যেটায় খুশী মিশাইয়া লইতেন। -আমার ময়না পাখি তো ফল খায়না। -এইনা কইলেন টিয়া পাখি? -যাহা ময়না তাহাই টিয়া। তুমি ভুতেশ্বরের কাজ কারবার সব বুঝবা না।

- ও আচ্ছা। তো হুজুর, আপনার ওই পাখি কী খায়? -লইট্ট্যা ফিশ। দেখলাম আব্দুল হাইয়ের চক্ষু সরু হতে শুরু করেছে। তাই আর পাখি প্রসঙ্গ বাড়ালাম না। বললাম- তোর ফলের আড়তে কি কুড়ি বাইশ জনের মিটিং করার জায়গা হবে? -একটু ঠাসাঠাসি হবে।

তবে চালিয়ে নেয়া যাবে। হুজুরের কাছে কি নতুন ভুতবার্তা এসেছে? -হু। তবে তোদের জন্যে না। আমার কিছু আধুনিক ভক্ত আছে। তারা টিয়া পাখি ময়না পাখি লইট্ট্যা ফিশ সবই খায়।

তাদের জন্যে বিশেষ বার্তা। সেইখানে বসে পরামর্শ হবে। তুই চোখ কান খোলা রাখবি। কেউ যেন না জানে। পুলিশ খুব তৎপর।

-পুলিশ! হাইয়ের চোখ ছানাবড়া। ‘দুই পয়সার পুলিশ। টাকা ছাড়লেই ঠাণ্ডা। আমার আড়তের ফরমালিন পুলিশের নাকের ডগা দিয়া আসে!’ - একাত্তরে প্রথম প্রতিরোধ তৈরী করেছিল পুলিশ। টাকা পয়সা তো দুরের কথা জীবনের মায়া পর্যন্ত করেনি এই পুলিশের দল।

এই সব শয়তান গুলার মধ্যে কেন যে এত দেশপ্রেম! -দেশপ্রেম কি নিষিদ্ধ, হুজুর? -অবশ্যই। প্রেম শুধু ভুতেশ্বেরের জন্যে। অন্য সব প্রেম গভীর পাপ। হাইকে মিটিঙের পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বললাম। সেখানে থাকবে প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, রসায়নবিদ, বোমা এক্সপার্ট।

নিখুত প্ল্যান হবে। একরাতে উড়িয়ে দেয়া হবে শাহবাগ, টি এস সি, শহীদ মিনার। পাশাপাশি ভুত মন্দিরও ভাঙ্গা হবে। ব্যলাঞ্চিং। ফাকিস্তান থেকে সব সরঞ্জাম এসে গেছে।

সব কিছু ঠিকঠাক করতে করতে বিকেল হয়ে গেল। মোবাইল দিয়ে অন্তর্জালে ঢুকলাম। মুখোপাতায় দেখলাম আমার চন্দ্রারোহনের ছবি বেড়িয়েছে। আমার শিষ্যরা তেলেসমাতিতে বিশ্বসেরা। নিজেকে বেশ হালকা লাগছে।

ভুতরাজ্য প্রতিষ্ঠা আর বেশী দেরী নেই। মধুমালার কথা মনে পড়তেই বুকের ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠল। প্রলয় ঘটার আগেই তাকে সেখান থেকে বের করে আনতে হবে। হোক সে বিধর্মী। সে আমার মধুমালা।

আমার মধু। তাকে ফেরাতে হবে। কিন্তু সে তো কথা শুনছে না। তাকে কথা শোনাতে হবে। ভুতেশ্বর নারীর উপর পুরুষের প্রধান্য দিয়েছেন।

নারীর এমন অবাধ চলাচল খুবই অধর্ম। আর থাকা যায় না। পুবালী ব্যাংকের গেটের সামনে তাকে পেলাম। রোদে পুড়ে মানুষের মুখ এমন তামাটে হয়! তার মুখের পেশী শক্ত। চোখে আগুন।

তার কণ্ঠ ধীর, কিন্ত দৃঢ়। তার কপালে জ্বলজ্বল করছে বঙ্গোপসাগরের নোনা জল। বললামঃ মধুমালা! -উঁহু, আমি রাজীব হায়দার। আমি লাকী আখতার। আমি আসাদ।

আমি সালাম বরকত রফিক জব্বার। -আমি তোমাকে এখানে থাকতে দেব না। এখানে যে নতুন প্রজন্মের জোয়ার উঠেছে, যে তারুন্যে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ, কাঁপছে নতুন বিশ্ব, ভুতেশ্বর তার আগমনী মানতে পারছে না। ভুতেশ্বর অন্তিম ঘণ্টা বাজিয়ে দিচ্ছে শাহবাগ। মধুমালা, তুমি চল আমার সঙ্গে।

খানিক সময় সে তাকিয়ে থাকল আমার দিকে। মনে হল আমার কথা সে কিছুই বোঝেনি। তারপর বিড়বিড় করে বলল- আর পিছানোর কোন উপায় নেই। -বোঝার চেষ্টা কর। এখানে আসলে কেউই নিরাপদ না।

ভুতেশ্বর এত সহজে দমবার পাত্র না। তার সেপাই সান্ত্রী ছড়িয়ে আছে চারদিকে। তাদের আছে ব্যাংক। আর ব্যাংক ভর্তি টাকা। তাদের আছে অস্ত্র আর গোলাবারুদ।

আর আছে বিশাল ব্রহ্মাস্ত্র। ভুতানুভুতি। এই অনুভূতি অতি মারাত্মক। একবার তা ছড়িয়ে দিলেই ফেটে পড়বে অসংখ্য মানুষ। দিকে দিকে জ্বলবে গোলাবারুদ।

তোমরা কেউ বাঁচবে না মধু। তোমাদের ছিঁড়ে ফুঁরে খাবে অজস্র হায়না। তুমি ফেরে এস মধু। আমাকে ছেড়ে দাও মদন। আমি চললাম।

সে ফিরে গেল তার সাথীদের কাছে। সেখানে উত্তাল শ্লোগানে অজস্র মোমের সোনালী আলো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ধাবমান আধারকে। লিখেছেন- মুরশেদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.