আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রহস্য উপন্যাসঃ ছায়া মানুষ



{লেখাটি দুই বছর আগে নবম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে লেখা । ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থনীয়} প্রথম পরিচ্ছেদ রাতের আকাশটা আমার কাছে এক অবারিত রহস্যের দূর্গদ্বার মনে হয় । ছাদে দাড়িযে আকাশে শত সহস্র তারার মেলা দেখছিলাম এমন সময় মা ডাকলেনঃ অভি ভাত খেয়ে যা । আমি আকাশের রহস্য ঝাপিতে পুড়ে পেটে কিছু পুরতে চলে গেলাম । খাওয়া দাওয়া শেষ বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু পারলাম না ।

বারবার একটু দৃশ্য আমার স্মৃতিস্পটে ভেসে উঠছিল । কিভাবে এটাকে মুছব ভেবে পাচ্ছিলাম না । বার বার আমার কানে ভেসে আসছিল সেই ভয়াবহ আর্তনাদ । সেই আকুল স্বরে আহবানঃ রক্ষা কর !!! আমার মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করতে লাগল । আমি দুইহাতে মাথার চুল টেনে ধরলাম ।

এই কনকনে শীতের মাঝেও সারা শরির দিয়ে ঘাম ঝড়তে লাগল । বারবার আমার মনে হতে লাগল আমার জন্যই কান্ডটা ঘটল । হা আমি ইচ্ছা করলেই ওদের বাঁচাতে পারতাম । ব্যাপারট এরকম ,আমি প্রতিদিনই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেশ রাত করেই বাড়ি ফিরি সেদিনও ফিরছিলাম । কিন্তু বকুল চাচার বাসার সামনে এসেই থমকে দাড়ালাম ।

রাস্তায় পড়ে আছে বকুল সাহেবের লাশ । নির্ঘাত ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছেন । আর তখনই ঘর থেকে শুনলাম সেই ভয়াবহ চিত্কারঃ রক্ষা কর !!! আমি এক কদম গেটের দিকে এগিয়ে গেলাম । তারপর আবার আমার মনের ভয় জীবটা জেগে উঠল । ওদের জীবনের চেয়ে আমার জীবনটা বেশি মূল্যবান মনে হল ।

স্বার্থপরের মত কাপুরুষের মত ,নেকড়ে শিয়ালের মত নিজের প্রাণটা নিয়ে পালিয়ে এলাম । আমি আবারও আমার মাথার চুল খামচে ধরলাম । মাথায় ভয়ঙ্কর ব্যাথা । কানের কাছে এখন আর সেই রক্ষা কর !!!কথাটা আসছে তার বদলে পিন পিন একটা শব্দ হচ্ছে । আমার খুব গরম লাগছে ।

কিন্তু ভয়ে লেপটা সরাতে পারছীনা । মনে হচ্ছে লেপের বাইরে দাড়িয়ে আছে নিড়ার পরিবার । আমি লেপটা সড়ানো মাত্র বলবেঃ কাপুরুষ তুমি আমাদের রক্ষা করলে না !! দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ সকালে আমার ঘুম ভাঙল অনেক দেড়িতে । দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম সকাল ১০টা । যাহ আজকে প্রাইভেট্টা মিস ।

হয়ে গেল । তারপর আবার মনে এল আরে আজ তো শুক্রবার । প্রাইভেট নেই । আমি বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালাম । মাথাটা কেমন ভারি হয়ে আছে ।

মনে হচ্ছে মাথা টা না থাকলেই ভাল হত । তারপর আবার মনে হল মাথা না থাকলে অনেক ঝামেলাও হতো । ছুটির দিন তাই খেয়ে দেয়ে । একটু বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাব । বকুল চাচার সামনে অনেক মানুষের ।

বকুল চাচা সপরিবারে নিহত । আর তখনই আমার মনে হল কাল রাতের কথা । আবার আমার নিজেকে অপরাধী মনে হল । ভাবলাম আশ্চর্য মানুষের মন রাতের অন্ধকারে সকলের অগোচরে যা ভাল দিনের আলোয় সবার গোচরে সেটাই সব চেয়ে বড় অপরাধ । দেখলাম পুলিশ ও এসে ছে ।

সবমিলিয়ে বাসায় বেশ ভীর লেগে আছে । আমি আর সেদিকে পা বাড়ালাম না । আমি চলতে চলতে বড় রাস্তার মোড়ে চলে এলাম । এখানে ইচ্ছায় আসিনি মনে ভাবতে ভাবতে চিন্তার অন্তরে তলিয়ে গন্তব্য ভুলে চলে এসেছি । হঠাত্ আমার মন এক ঝলক সাহস খেলে গেল ।

হা হা নিড়ার পরিবারের খুনিদের আমার খুজে বের করতেই হবে । প্রতিবেশী হিসেব নয় নিড়ার ভালবাসার জন্য হলে ও আমাকে ছায়া মানুষ খুনিটাকে বের করতে হবে । ভাবলাম আমি । এ ব্যাপারে আমার গোয়েন্দা বন্ধু শিলুর পরামর্শ নেয়া যেতে পারে । এইসব ব্যাপারে ও মাথা খেলে ভাল ।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ শিলুর বাড়ি গিয়ে দেখলাম ও একজন ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছে । আমাকে দেখে তাকে বিদায় করে দিল । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললঃ কিরে অভি কি খবর । আমি শিলুকে সব খুলে বললাম । শুনে শিলুকে বেশ চিন্তিত বলেই মনে হল ।

তারপর হঠাত্ দাড়িয়ে বললঃ চল । আমি অবাক হয়ে বললামঃ কোথায় ? শিলু বললঃ নিড়াদের বাসায় । আমি কিছুটা আশ্চর্য হয়ে গেলাম । তারপর বললামঃ এখনই ? শিলু আমার দিকে তাকিয়ে তারপর বললঃ এখন গেলে হয়ত কয়েকটা পয়েন্ট পেয়েও যেতে পারি যা আমাদের সেই ছায়া মানুষ খুনিটাকে ধরতে সহজ হবে । হাটতে হাটতে শিলু আমার কাছ থেকে কিছু তথ্য জেনে নিল ।

আমরা কিছুখনের মধ্যেই নিড়াদের বাড়ি চলে এলাম । পুলিশ চলে গেছে । কিন্তু কৌতুহলী মানুষ এবং নিড়াদের আত্নীয় স্বজনদের ভীরে এখনো গমগম বাড়ি । আমি আর শিলু মানুষদের ফাক গলিয়ে ছাদে চলে এলাম । এখান থেকে ফেলেই মারা হয়েছে বকুল চাচাকে ।

আমি বললামঃ এখান থেকে ফেলেই চাচাকে মারা হয়েছে । শিলু আমার দিকে একবার তাকাল তারপর বললঃ তোর ধারনা ভুল আগে বকুল চাচাকে মেরে তারপর ছাদ থেকে ফেলে দেয়া হয়েছ । আমি বিস্ময়ের সাথে বললামঃ কিভাবে বুঝলি । শিলু আমার দিকে তাকিয়ে হাসল তারপর বললঃ একতালা ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে কেউ মারা যায় না । বড়জোর হাত পা ভাঙতে পারে ।

আমি প্রতিবাদ করে বললামঃ মরতে ও তো পারে ? শিলু বললঃ তা পারে কিন্তু আমার মনে হয়না তাকে ফেলে মারা হয়েছে । তারপর শিলু আমার দিকে তাকিয়ে বললঃ চল লাশগুলো দেখে আসি ? আমি বললামঃ আমি সহ্য করতে পারবনা তুই যা । চতুর্থ পরিচ্ছেদ এরপর আর কয়েকদিন শিলুর সাথে দেখা হলনা । সামন এস এস সি পরীক্ষা তাই পড়ালেখার চাপ বেশি । একদিন ছুটির দিনে ঠিক করলাম শিলুদের বাড়ি যাব ।

দুপুরের দিকে আমি শিলুদের বাড়ি উপস্থিত হলাম । শিলু কে বাড়ি পেলাম না । তার কাজের লোক আবুল চাচা বলল একটু বাইরে গেছে এখুনি নাকি ফিরবে । অগত্যা আর কি করা শিলুর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । দুপুর ২টা বেজে গেল শিলুর দেখা নেই ।

মোবাইলটাও বন্ধ । ওর উপর আমার প্রচন্ড রাগ জমতে লাগল । একদিকে আমার নিড়া খুনের প্রতিশোধ আর এক দিকে নিজেকে অপরাধীর কাতারে দাঁড় করানো । আমি শিলুর ঘরে পায়চারী শুরু করলাম । বিকাল চারটা বেজে গেলে আমি হতাশ হয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াব এমন সময় শীলু এক জন লোকসহ এসে হাজির ।

লোকটির চোখে চশমা । পড়নে স্যুট টাই । দেখে ভদ্রলোকই মনে হল । আমায় ধৈর্য সব তুলো হয়ে উড়ে গিয়েছিল । তাই সরাসরি শিলীকে প্রশ্ন করলামঃ আমার কেসের কি খবর ? শিলু আমার দিকে তাকিয়ে বললঃ হা তোর জামিন হয়ে যাবে ।

আমি অবাক হয়ে রইলাম বলে কি ? আমি রেগেমেগে একটা জব্বর কথা শুনিয়ে দিতে চাইছিলুম এমন সময় শিলু চোখ টিপল । বুঝলাম এর ভেতর কোন ভেদ আছে । লোকটি শিলুর দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বললঃ কিসের কেস ? শীলু যেন তৈরীই ছিল । সাথে সাথে বললঃ আরে ও কিছু না পাড়ার একটা মেয়েকে রেপ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড় গেছিল ও নিয়ে আপনি ভাববেন না । শিলুর কথা শুনে তো আমার আক্কেল গুড়ুম ।

নিড়া বাদে আর কোন মেয়ের সাথে ভাল করে কথাই বলতে পারিনি আর ও বলছে আমি নাকি রেপ করেছি । ওর কথা না বুঝে আমি চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম । পঞ্চম পরিচ্ছেদ কিছুখন পর লোকটা চলে গেল । আমি সাথে সাথে শীলু কে আক্রমন করে বসলাম । শীলু বললঃ এই তো রহস্য ।

তুই শুধু আমার কথামত খেলে যা জিত তোর হবেই । আমি বললামঃ আমাকে কি হতে হবে ? শিলু বললঃ বখাটে ছেল । আমি বললামঃ মানে সামনে আমার পরীক্ষা আর তুই বলছিস বখাটে হতে । শিলু বললঃ সব জায়গায় নয় শুধু ওই লোকটার সামনে তুই বখাটের অভিনয় করবি তাহলেই জমবে মজা । আমি বললামঃ তো কথার মাথা মুন্ড কিছুই তো বুঝতে পারছিনা ।

শিলু আনমনে বলতে লাগলঃ তোর ওসব বুঝে কাজ নেয় তুই শুধু আমার কথামত খেলে যা । কি খেলতে রাজি আছস ? শিলু প্রশ্ন ছুড়ে দিল আমার দিকে । আমি কিছুখন ভেবে বললামঃ ঠিক আছে । শিলুর বাসা থেকে বেড়োতে বেড়োতে প্রায় সন্ধা ঘনিযে এসেছে । আমি একটা গলি ধরে বাড়ির পথে এগোতে লাগলাম ।

বড় রাস্তার মোড়ে সেই লোকটাকে দেখতে পেলাম । আমি মনে মনে ভেবে নিলাম এখুনি একটা বখাটের অভিনয় করতে হবে । কিন্তু কি অভিনয় করব ?হা সেই বখাটের অভিনয় করব সেই যে আমাকে বলেছিল তোর বই আর খাতা দে আমি হিসি করি । কিন্তু লোকটার হাতে তো কোন বই কিংবা খাতা নেই । হা ওনার হাতে একটা ফাইল আছে ।

আমি এগিয়ে গেলাম । তারপর সোজা ওনার মুখোমুখী হয়ে বললামঃ চাচা আপনার ফাইলটা দেন আমার খুব হিসু পেয়েছে আমি হিসু করব । লোকটা বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ পরীক্ষা শেষ করলাম অবশেষে । শেষ উচ্চতর গণিত পরিক্ষা দিয়ে হাফ ছেড়ে বাচলাম ।

এবার নিশ্চন্তে গোয়েন্দা অভিযানে নাম যাবে । আমি খেয়ে দেয়ে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে শিলুর বাড়ির দিকে চললাম । এই রহস্যের সমাধান করতে আমাদের যেতে হচ্ছে রাঙামাটি । তবে গোয়েন্দা সেজে নয় আমাদেয় যেতে হচ্ছে ভাড়াটে খুনি সেজে । কেন ভাড়াটে খুনি সেজে আমাদের যেতে হচ্ছে সেটা আমি জানিনা তবে শিলু কথা শুনে মনে হয়েছে খুনি যাতে সতর্ক না হয়ে যায় সেজন্য এই ব্যাবস্থা ।

অবশেষে রাঙামাটি একটা হোটেলে উঠলাম । আমরা । আমি আর শিলু । শিলু আমাকে বলে দিল যাতে আমি সবসময় ক্যাডারের বেশ ধরে থাকতে । আমি ও শুরু করলাম মাস্তানি ।

তবে প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হচ্ছিল । যেমন কেউ ধমক দিলে চমকে উঠতাম । একদিন আমি শিলু আর ভদ্রলোক একটা স্থানে গেলাম । ভদ্রলোক একজন লোককে দেখিয়ে দিয়ে বললঃ ও কে সরিয়ে দাও । শিলু বললঃ ঠিক আছে আপনি এখন যান আমি দেখছি ।

লোকটা চলে গেল । আমি আর শিলু ওই লোকটার দেখানো লোকটার কাছে গেলাম । সরাসরি জিজ্ঞেস করলামঃ বকুল পরিবার হত্যা সম্পর্কে সে কিছু জানে কিনা । লোকটা এমন ভাব ধরলঃ যেন কিছুই জানে না । আমি আর শিলু লোকটাকে বেঁধে ধরে নিয়ে গেলাম ।

তারপর আমাদের রুমে নিয়ে অনেক মারধর করলাম লোকটা কিছু বলেনা । তারমুকে এক কথাঃ আমি কিছু জানিনা । শিলুবললঃ তুই যদি কিছু না জানিস তবে কলিম সাহেব তোকে মারতে চান কেন ? আমাদের সাথে আসা ভদ্রলোকের নাম কলিম । শিলুর মুখে এই কথা শুনে ধরে আনা লোকটি কিছুটা অবাক হলেনঃ কলিম সাহেব আমাকে মারতে চায় অথচ , লোকটা এটুকু বলে থেমে গেল । শিলু লাঠি দিয়ে একটা আঘাত করে বললঃ অথচ বল কি বল ।

এরপর লোকটি পানির মত গড়গড় করে সব বলে দিল । ওর কথা শুনে আমরা থতমত খেয়ে গেলাম । খুনি কলিম না । কলিম খুনের সাথে জড়িতই নয় । তবে কে খুনি ।

কে সে ছায়া খুনি ... সপ্তম পরিচ্ছেদ কলিম বললঃ হ্যা আমিই খুন করেছি । আর এখন তোমাদের ও খুন করব ? আমি বললামঃ কেন করলেন আপনি এটা নিড়ারা আপনার কি দোষ করেছিল ? কলিম সাহেব প্রকান্ড হাসি দিয়ে বললঃ দোষ নিড়া ও করেনি ওর মা ও করেনি করেছে ওর বাবা ? আমি বললামঃ কি দোষ করেছিলেন তিনি যার জন্য তাকে মরতে হল । কলিমঃ ও আমার পাচ কোটি টাকার হিরোইন ধরিয়ে দিয়েছিল পুলিশের হাতে । শিলু বললঃ তাহলে নিড়াদের মারলেন কেন ? কলিম সাহেবের ঠোটে ক্রুর হাসি ফুটে উঠলঃ এটা ও বুঝতে পারছনা মিঃ গোয়েন্দা শিলু ? ওরা আমায় চিনে ফেলেছিল বলে ওদের খতম করে দিয়েছি । কথাগুলো শেষ করে কলিম সাহেব ঘর ফাটিয়ে একটা হাসি দিলেন ।

কিছুখন পর রাঙামাটি আসা পর্যটকেরা শুনতে পেল পুলিশের গাড়ির সাইরেন আর গোলাগুলির শব্দ । সমাপ্ত


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।