আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞের একটি রাত ২৫ র্মাচ, ১৯৭১।

জীবনের প্রত্যেক প্রবাহ অমৃত চায়।

\ বিভীষিকাময় কালোরাত আজ \ আজ ২৫ মার্চ। চল্লিশ বছর পূর্বে এমন একটি দিবস ছিলো। সেই দিনের শেষে স্বাভাবিকভাবেই এসেছিলো একটি রাত। দিনের শেষে কর্মক্লান্ত মানুষ ঘুমিয়ে ছিলো নিশ্চিন্তে।

তাঁদের বুকে ছিলো একটি বিরাট আশা - আমাদের জাতি স্বত্তার পরিচয় তুলে ধরা হবে। তৎকালীন পাকিস্তানের নির্বাচনে বিজয়ী একমাত্র বাঙালি জাতি-স্বত্তার ফোরামের অগ্রগামী দল , আওয়ামী লীগ পুরো পাকিস্তানের শাসন ভার নিতে যাচ্ছে। যদিও এর মাঝে ষড়যন্ত্রের বিভিন্ন জাল প্রতিয়মান হচ্ছিলো। মানুষ গভীর ঘুমে নিমগ্ন। এমনই রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার সামরিক জান্তা ঢাকা শহর সহ সারা দেশে এমন এক বিভীষিকার সৃষ্টি করলো, যা ছিলো দুঃস্বপ্নের চেয়েও অধিকতর বিভীষিকাময়।

পৃথিবীর ইতিহাসে সৃষ্টি করলো মানবতার চরম অবমাননার একটি ঘৃণ্যতম অধ্যায়। এই অধ্যায়ের নাম দিয়েছিলো বর্বর ও পশুজাত পাকিস্তানিরা ‘‘অপারেশন সার্চলাইট’’ শিরোনামে। যা ছিলো মূলতঃ বাঙালি নিধন কার্যক্রম পরিচালনার একটি ষড়যন্ত্র। সেই হত্যাযজ্ঞের বেদনা মথিত দুঃখময় অজস্র স্মৃতি নিয়ে আবার ফিরে এলো ২৫ মার্চ। অমানিশির ঘনঘোর অন্ধকারময় রাত।

পাকিস্তানের আরেক ষড়যন্ত্রকারী জুলফিকার আলী ভুট্টো ছিলো ঢাকায়। আলোচনার নামে সময় ক্ষেপনের উদ্দেশ্যই ছিলো তার ঢাকা আসা। হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ( বর্তমানে হোটেল শেরাটন) এ অবস্থান করছিলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত সাংবাদিকগণ। সেখানেই ছিলো ভুট্টো। বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সেই সময় ছিলো ইতিহাসের এক যুগ-সন্ধিক্ষন।

সারা পৃথিবীর মানুষ এ দেশের খবর জানতে চায়। তাই, সাংবাদিকবৃন্দ ছিলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং কর্ম তৎপর। মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার সৈনিকেরা হোটেল ঘিরে ফেললো। যাতে কোন সাংবাদিক তাদের হত্যাযজ্ঞের সংবাদ সংগ্রহ করতে না পারে। ততক্ষনে ট্যাংক আর সাঁজোয়া যান নিয়ে ছড়িয়ে পড়লো সারা ঢাকা শহর।

হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠলো রক্ত-খেকো পিচাশেরা। আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় হলো তাদের মূল টার্গেট। পাকিস্তানি হায়েনারা আক্রমন করলো ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ‘ইকবাল হল’ ( বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল), জগন্নাথ হল এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হোষ্টেল। নির্বিচারে হত্যায় মেতে উঠলো পশুর দল। তারপর পাকিস্তানি জান্তার বর্বর বাহিনী আক্রমন করলো রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানায়।

পুলিশ বাহিনী ও পিলখানায় অবস্থিত ইপিআর (পরে বিডিআর, বর্তমানে বিজিবি) সদস্যগণ তাদের যৎসামান্য শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু ট্যাংক ও ভারী সামরিক অস্ত্রের কাছে তাঁরা সঙ্গত কারনেই টিকে থাকতে পারেনি। সেই রাতের গণহত্যায় পাকিস্তানিরা সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকায় এক বিভীষিকার অধ্যায়ের সূচনা করে। সারা শহরে গুলি করে হত্যা করা হয় সাধারন মানুষকে। সারা শহরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয় জগন্যতম রাতের অবতারনা করে। যা বাঙালির ইতিহাসে একটি ‘কালো রাত’ হিসেবে স্মরনীয় হয়ে রয়। রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির উপর পাকিস্তানি সেনাদের বর্বর হামলার খবর দ্রুততার সাথে ছড়িযে পড়লো দেশব্যাপি। ঐ রাতেই পাকিস্তানি কমান্ডোদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পুুর্ব মূহুর্তে (২৬ মার্চ, ১৯৭১) গণহত্যার কথা উল্লেখ করে- এই দেশ ও জাতিকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন - হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের অগ্রনায়ক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারপর, আরেক অধ্যায় - যুদ্ধ - বিজয় - স্বাধীনতা।

একটি জাতি। একটি পতাকা। একটি দেশ। বাংলাদেশ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.