আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নষ্ট প্রজন্ম বনাম শুদ্ধ প্রজন্ম....এ মাস্ট রীড ব্লগ।

আই এম নো বডি...

মূল ব্লগ এখানে নষ্ট প্রজন্ম বনাম শুদ্ধ প্রজন্ম মিনার রশীদ স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের জেনারেল সেক্রেটারী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, জিয়া-এরশাদের শাসন আমল নষ্ট প্রজন্ম। আওয়ামী নেতৃত্ব ও বুদ্ধিজীবীদের এটাই কৃতিত্ব যে, তারা বগলে মদের বোতল নিয়েও অনর্গল মদের বিরুদ্ধে ওয়াজ করতে পারেন। এতে তাদের বক্তা ও শ্রোতা কারোরই কোনো অসুবিধা হয় না। জিয়ার প্রসঙ্গ এলে আওয়ামী লীগ ইতিহাস, বাস্তবতা, ভব্যতা সব কিছু ভুলে যায়। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের প্রকৃত এক হিতাকাঙ্খী সৈয়দ আবুল মকসুদের মন্তব্যটি স্মরণীয়, শত্রু কে নিন্দা করারও একটা ভাষা আছে, একটা রীতি আছে।

তার বাইরে কিছু করতে গেলে শত্রু উপকৃত হয়। শেখ হাসিনাকে খুশি করতে গিয়ে অনেকেই যা করছেন তাতে জিয়ার উপকার হচ্ছে। কাজেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কথা বললে এটি নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে যখন তারা এরশাদের বিরুদ্ধেও কথা বলেন। মহাজোটের রাজনীতিতে এরশাদ হলেন টক দইয়ের সেই গোয়ালার মতো।

নিজেদের সুশীলত্ব বজায় রাখতে ইনু-মেনন-দিলীপ বড়ুয়ারা এরশাদকে মাঝে মধ্যে এ রকম দুয়েকটা চড়-থাপ্পড় বসাবেন এটা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। কিন্তু খোদ সৈয়দ আশরাফরাও এমনভাবে থাপ্পড় মেরে বসবেন তা নিশ্চয় গণনা বা আশার বাইরে ছিল। নষ্ট শব্দটির কোনো চিরন্তন রূপ বা অর্থ নেই। আবু জেহেল, আবু লাহাবের কাছে আমাদের প্রিয় নবীজি ছিলেন নষ্ট প্রজন্ম । নমরুদের চোখে হজরত ইব্রাহিম বা আব্রাহাম ছিলেন নষ্ট প্রজন্ম।

ফেরাউনের চোখে মুসা নবী ছিলেন নষ্ট প্রজন্ম। আমেরিকা, বৃটেনসহ সারা দুনিয়ার হিরো জর্জ ওয়াশিংটন বৃটিশদের চোখে ছিলেন নষ্ট প্রজন্ম। এ রকম বাক্য দিয়েই পুরো আর্টিকলটি শেষ করা সম্ভব। তাতে খুব একটা সমস্যা হবে না। প্রতিটা লাইন পাঠক পড়বেন আর বলবেন, ঠিক।

সমস্যা হলো, টানাটানির এই দেশে আমার এ কথাগুলো কে কোনদিকে টেনে নিয়ে যায় তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। তাই নিজেই উপরের কথাগুলোর ব্যাখ্যা প্রথমেই দিয়ে রাখা নিরাপদ মনে করছি। এসব বাক্য দিয়ে জীবিত কারো সঙ্গে কারো তুলনা করিনি। শুধু নষ্ট শব্দটির ভাব ও অর্থ কিভাবে বদলে যায় বা উল্টে যায় তার উল্লেখ করছি মাত্র। প্রিয় নবীজির জীবনের এক অবস্থার সঙ্গে নিজেদের সঙ্গীন অবস্থার তুলনা করে ফেসে গেছেন জামায়াতের কিছু কেন্দ্রীয় নেতা।

যুক্তি, ভাব ও শব্দ সংকটে পড়লে একটা মানুষকে আমরা বলি পাগল। কিন্তু সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা এমন সংকটে পড়লে তাকে কি বলা যায়? সরকার বা সরকারপ্রধানকে রং হেডেড বলার সাহস ও হিম্মত একদা যে বিচারকদের ছিল তারাও প্রায় একই সংকটে পড়ে যাচ্ছেন। তা দেখাতে গিয়ে মাহমুদুর রহমানই আটকে গিয়েছেন। তার বক্তব্যের মধ্যে ভুলটি কোথায় ছিল তা আদালত ধরতে না পারলেও বলা হলো, তিনি আদালতকে অবমাননা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ কার ওপর আস্থা রাখবে? বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতকে এতোটাই সুবোধ হয়ে পড়তে হয় যে, সরকার রীতিমতো সমস্যায় পড়ে যায়।

অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের’ গ্রেফতারের জন্য অজুহাত-এর চরম অভাবে পড়ে সরকার। এই অবস্থা থেকে সরকারকে উদ্ধার করেন ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন এক ব্যক্তি। তার এই আহত অনুভূতিকে অত্যন্ত সহানুভূতির সঙ্গে রিপেয়ারের দায়িত্ব নিলেন ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ও স্বাধীন বিচার বিভাগ। এ রকম বড় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিয়ে শুরু হলো বিচার প্রক্রিয়াটি। সত্যিই কলির যুগ শুরু হয়েছে।

ধর্মকে আঘাত করে ধর্ম ভিত্তিক দল জামায়াত আর তাকে রক্ষা করে হাসিনা-এরশাদ-মেনন-ইনুর মহাজোট। ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে, মেয়েদের ইভ টিজিং করছে বুড়ো বাপ আর তার বিচার করছে ইভ টিজার বাপের ওই ছেলে। একদিকে ইমামদের বিবি সোহাগের ডিজিটাল কায়দা শেখাতে চান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি, অন্যদিকে বাইতুল মোকাররমের খতিব ঈদের নামাজের মূল আকর্ষণ তাকবির দিতে ভুলে যান। কামভাবে কাতর যুগলদের দিয়ে এ রকম ব্যালে ড্যান্স দেখালে অনেক ঈদের নামাজ তাকবির ছাড়াই সারতে হবে। এই সরকার ইহকাল ডিজিটাল বানাতে না পারলেও আমাদের পরকালকে ঠিকই ডিজিটাল বানিয়ে ছেড়েছে।

জিয়ার সঙ্গে এরশাদের তুলনায় অসুবিধা নেই। তাদের একই ব্র্যাকেটে বন্দি করলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। দুজনই রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। দুজনই সেনাবাহিনী থেকে এসেছেন। তবে তাদের এই মিলের জায়গাগুলো তাদের অমিলের জায়গাগুলোও স্পষ্ট করেছে।

এরশাদের সঙ্গে জিয়ার মিলের জায়গাটি উল্লেখ করে অমিলের জায়গাগুলোতে সৈয়দ আশরাফরা চোখটি বন্ধ করে ফেলেন। কারণ জিয়ার সঙ্গে এরশাদের গরমিলের জায়গাটিতেই তাদের সঙ্গে মিলটি শুরু হয়ে যায়। একটি নির্বাচিত সরকারকে বন্দুকের নলের মুখে সরিয়ে এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। তার আগমনে কারা নট আনহ্যাপি হয়েছিলেন, কারা তার শাসন দীর্ঘ হতে সহায়তা করেছেন, পরে কারা তার সঙ্গে দীর্ঘকালের রাখিবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তখন এরশাদকে এ সুযোগটি করে না দিলে এবং পরে এক-এগারোর হোতাদের সব কাজ বৈধ করার অগ্রিম প্রতিশ্রুতি না দিলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার কোন পর্যায়ে থাকতাম সেই হিসাবটি শুদ্ধ প্রজন্মের সৈয়দ আশরাফদের না বোঝারই কথা।

জিয়ার আগমন ও তার সমস্ত কার্যকলাপ দাড়ি-কমাসহ এ দেশের গণমানুষের ইতিহাসে লেখা রয়েছে। এই ইতিহাসের কালি সত্যি অমোছনীয়। জিয়া প্রজন্মকে নষ্ট করেছেন, তা প্রচার করে বিশুদ্ধ সৈয়দ ঘরের সন্তান ও পরিশুদ্ধ ব্রাহ্মণ ঘরের জামাতা আশরাফ কতোটুকু সফল হবেন তা সামনের দিনের ইতিহাসই নির্ধারণ করবে। ক্ষমতার দাপট দেখলে ইতিহাস সাময়িকভাবে চুপ মেরে যায়। কিন্তু ইতিহাসের নীরব কাজটি নীরবেই চালিয়ে যায়।

জিয়ার রাজনৈতিক দর্শনের উপযোগিতা দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। একজন ব্যক্তির দক্ষতা ও মেধাকে তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছিলেন। সব জায়গার মেধাবী লোকগুলোকে নিয়ে তিনি একটা দল গঠন করেছিলেন। মেধা ও দক্ষতার বাইরে ডান কিংবা বাম তার বিবেচনায় ছিল না। তার টার্গেট ছিল মেধাবী মানুষকে সামনে টানা।

ফলে তার গঠিত মন্ত্রী পরিষদ এখন পর্যন্ত এ দেশের সবচেয়ে দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। সিংগাপুরের মতো দেশে চোখ ধাধানো উন্নতির পেছনে কাজ করেছে একটি মন্ত্র। তা হলো দেশের সবচেয়ে টেলেন্ট ব্যক্তিদের দেশ শাসনে সম্পৃক্ত করা। এখানে মন্ত্রী হন মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ও তুখোড় মানুষটি, ইউনিভার্সিটি জীবনে যে ছিল ক্লাসের সেরা ও চৌকস ছাত্র। এমন একটা ভাবনা আমরা জিয়ার মধ্যে দেখেছি।

তিনি বা তার দল এই ব্যাপারে কতোটুকু সফল হয়েছেন তা নিয়ে আজ প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু তার এই লক্ষ্য ও ভাবনাটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। বিএনপি ও দেশকে বাঁচাতে হলে আজও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার এই চিন্তার কোনো বিকল্প নেই। বস্তুত গলাবাজির চিরন্তন ধারাটিকে পাল্টে দিয়ে তিনি কাজের ধারায় টানতে চেয়েছিলেন দেশের রাজনীতি। তার কথার প্রমাণ স্বরূপ নিজে সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন।

নিজে কোদাল হাতে নিয়ে মাটি কেটে সারা দেশে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন । তিনি বলেছেন, I will make politics difficult for the politicians· তার প্রবর্তিত ধারায় রাজনীতি চললে তা অনেক পলিটিশিয়ানের জন্য আসলেই তা কঠিন হতো। আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুগত বুদ্ধিজীবীরা জিয়ার এ কথাটিও আই ডোন্ট নো গল্পের মতো করে ব্যাখ্যা করে। কিন্তু তার এই আহ্বানে লাখ লাখ যুবক এগিয়ে এসেছে। সৈয়দ আশরাফ যাই বলুন, তারা কখনোই নষ্ট প্রজন্ম নয়।

তিনি গ্রামের কোনো মানুষকে যখন চাচা বলে ডাক দিয়েছেন কিংবা গরিব কোনো ঘরের মাচায় বসেছেন তাতে এই মানুষরা কোনো কৃত্রিমতা দেখেনি। কারণ এ মানুষরা দেখতে পেয়েছে তাদের কাছে যেভাবে ও ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে গিয়েছেন, সেই একই কথা কোনো বিশ্ব আসরেও স্পষ্ট করে উচ্চারণ করেছেন। কাজের মাধ্যমে তার এই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। কোথাও মাথায় পট্টি আবার কোথাও সিদুর এই রকম করেননি। কোথাও ফেরেশতাদের আমির আবার কোথাও ইবলিশের আমির এমনটিও কখনোই হয়নি।

এখানেই জিয়া অনন্য। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া মনে করতেন বহুদলীয় ও উদার গণতন্ত্রই পারে এ দেশটির জনগণের সমস্যা দূর করতে। স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো রোমান্টিক চিন্তায় প্রভাবিত হননি। অত্যাচারীর চেহারা ও মেজাজ দেখে তিনি প্রতিবাদের ভাষা ঠিক করতেন না। মঞ্চের পরিবেশ দেখে তিনি বক্তব্য তৈরি করতেন না।

তার চরিত্রের এই দৃঢ়তা দেশবাসী ও ভক্তদের আনন্দ দিয়েছে এবং শত্রু দের মনে সমীহ ও ভয় সৃষ্টি করেছে। জিয়ার সবচেয়ে বড় গুণটি হলো, তিনি দেশের মানুষের নাড়ির টানটি স্পষ্ট অনুভব করেছিলেন এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আবহে তার একটা রাজনৈতিক অবয়ব সৃষ্টি করে গিয়েছেন। কাজেই জিয়ার প্রখর ও সলিড ব্যক্তিত্বের সামনে অত্যন্ত তরল চরিত্রের (যখন যে পাত্রে রাখা হয় তখন সেই পাত্রের আকার ধারণ করে) এরশাদের তুলনা টানা সৈয়দ আশরাফদের পক্ষেই সম্ভব। তবে দেশের মানুষ ও সেনাবাহিনীর ওপর জিয়ার এই প্রভাব থেকে বের হওয়া এরশাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বহুরূপী ও নগদ সুবিধায় বিশ্বাসী এরশাদ তার কিছু কাজ নকল করতে চেয়েছিলেন।

তবে জনগণের কাছে তার এই মেকি চেহারা ধরা পড়ে যায়। যে এরশাদ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে যুক্ত করেছে সে এরশাদই আজ ১৯৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে শর্তহীন সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। এটি নিয়ে ভাবলে জিয়া ও এরশাদের রাজনৈতিক মানসের গরমিলটি স্পষ্ট হবে। জগাখিচুরির এই সংবিধানে জিয়া কর্তৃক প্রণীত বিসমিল্লাহ রাখা হয়েছে, এরশাদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অটুট রয়েছে। কিন্তু ভেতরের এ সংক্রান্ত মালামাল সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট করেনি। কিন্তু স্রষ্টার প্রতি পরম বিশ্বাস শব্দ কটি ধর্মনিরপেক্ষতা নষ্ট করেছে অর্থাৎ এখন স্রষ্টার প্রতি আধাআধি বিশ্বাস রাখলেই চলবে। ধর্মনিরপেক্ষতার আপত্তি শুধু স্রষ্টার প্রতি পুরো বিশ্বাসে। কাউকে যেন খুশি করতে হচ্ছে আবার জনগণকেও নাখোশ করা সম্ভব হচেছ না। মেয়েটি কবুল বলেছে, স্বামীকে বিশ্বাস ও ভালোবাসার আশ্বাস শুনিয়েছে।

কিন্তু স্বামীর বিছানা থেকে নিজের বালিশটি সরিয়ে নিয়েছে। বিয়ের কাবিনটি বুকে জড়ানো স্বামীটির মতোই ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে পরমভাবে সন্তুষ্ট এই দেশের ধর্মপ্রাণ ভোটারকুল। সত্যিই এ দেশের জনগণকে অনেক বোকা ভেবে বসেছে এই সরকার । সুরঞ্জিত তার স্বভাবসুলভ চিবানো ভঙ্গিতে বলেছেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানবেন না তাদের জাতির পিতা হলো জিন্নাহ। বুশের মতো উদ্ধত এই নব্য বাকশালির সহজ গণনা, হয় তুমি আমাদের দলে, না হয় তাদের দলে।

বুশবাদী, ফ্যাসিবাদী ও বাকশালিরা এই দুয়ের মাঝখানে কখনো কাউকে দেখতে পায় না। জেসাসকে গডের পুত্র হিসেবে না মানার অর্থ এই নয় যে, অন্য কাউকে গডের পুত্র হিসেবে মেনে নিচ্ছি। ফ্যাসিবাদে আক্রান্ত মানুষের মনে এসব যুক্তি কখনোই প্রভাব ফেলে না। এরকম পিতা ছাড়া পৃথিবীতে অনেক জাতি রয়েছে। জাতির পিতা থিমটিই অনেকে সঠিক মনে করেন না।

দেখা যায়, এ থিমটিতে সবচেয়ে লাভবান হন জাতির মতলববাজ পুত্ররা। জাতির যেসব পুত্র খ্যাতিতে, জ্ঞান-গরিমায় পিতার চেয়ে বড় হয়ে যান তখন এই মতলববাজ পুত্ররা তা সহ্য করতে পারেন না। নোবেল বিজয়ী ড· ইউনূস তাদেরই কোপানলে পড়েছে। কাজেই জাতির পিতা থিমটিতে কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই বেশি। অনেকে ধর্মীয় কারণে, কেউ বা সাংস্কৃতিক বা পারিবারিক ইগোতে নিজের পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা ডাকতে চান না।

তার মধ্যে কেউ কেউ আছেন নিজের শ্বশুরকেও পিতা বা বাবা ডাকেন না। এই ধরনের সব যুক্তি উপেক্ষা করে জাতির পিতার ব্যাপারে একটা সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। জনগণের রাজনৈতিক ও আচরণগত কমফোর্ট জোনটিকে নিয়ে ভাবা হয়নি। ইতিহাসের শিক্ষা হলো, জনগণ সব সময় কমফোর্ট জোনে থাকতে চায়। জনগণের জন্য সংবিধান - সংবিধানের জন্য জনগণ নয়।

জাতে মাতাল (বাম) তালে ঠিক (আওয়ামী লীগ) এই সুরঞ্জিত ভুলে গিয়েছেন যে, তার আগের সতীর্থ এবং আজকের মিত্রদের অনেকেই অনেক দিন পর্যন্ত জাতির পিতাকে পিতা ডাকেননি। বরং তাদের কেউ কেউ জাতির পিতা শব্দটিকে বিকৃত করে বলতেন জুতার ফিতা। জীবনের তরে একবারের জন্য এমপি হওয়ার বেসামাল বাসনাটি জাগ্রত না হলে এই মহান পুত্রদের আজ পিতা ডাকার তাগিদটি সৃষ্টি হতো কি না সন্দেহ। কাজেই সিদ্ধান্তে পৌছা সম্ভব যে, ১৯৭১-এর পর থেকে এই বা ওই সময়টি পর্যন্ত নিশ্চয় জিন্নাহ তাদের জাতির পিতা ছিলেন না। | Killers are always seen in the front row of mourners· এ কথাটি ইদানীং বেশি করে মনে হচ্ছে।

আজ যে প্রক্রিয়ায় জাতির পিতা ডাকানো হচ্ছে তা দেখে দেশের মানুষের মনে ভয় ঢুকে গিয়েছে। প্রথিতযশা এক গায়কের টিভি ক্যামেরার সামনে শুধু জাতির পিতা নয় সরাসরি বাবা, বাবা ডাক শুনে অন্তর আত্মা শুকিয়ে গিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় নিজেদের দলীয় নেতাকে জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগের পিতা হিসেবেই আরো সুদৃঢ করা হবে। কারণ ভালোবাসা, শ্রদ্ধার এ জায়গাটিতে চাপাচাপি করলে তার ফল কখনোই ভালো হয় না। মানুষের মনে বিষয়টির বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিরোধক সৃষ্টি হয়ে পড়ে।

কেননা শেখ মুজিবকে এ আওয়ামী লীগই তাদের সামগ্রিক কর্মকান্ডে দলীয় এসেট বানিয়েছে। শেখ মুজিবকে অনেকেই জাতির পিতা মানতে নারাজ। তার পেছনেও শক্ত কারণ রয়েছে। বায়োলজিকাল ফাদার অনেক সময় সত্যিকারের পিতা হতে পারেন না। ব্যক্তি জীবনের মতো কোনো কোনো জাতির জীবনে একই কথা প্রযোজ্য।

বর্ণিত এই শুদ্ধ প্রজন্ম স্বাধীনতার পর পর এক নেতা এক দেশ শ্লোলোগানটি চালু করেছে। দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সব পত্রিকা বন্ধ করে সরকার ও একমাত্র নেতার গুণকীর্তনের জন্য মাত্র চারটি পত্রিকা চালু রাখা হয়েছে। লাল ঘোড়া দাবড়ানো হয়েছে ত্রিশ হাজার জাসদ কর্মীসহ সিরাজ সিকদারদের উদ্দেশে। জাতীয়করণের ধোয়া তুলে দেশের কলকারখানা ধ্বংস করা হয়েছে।

পাটের গুদামে রহস্যময় আগুন লেগেছে। পাবলিক পরীক্ষায় নকলের সুযোগ অবারিত করে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের বীজ বপন করা হয়েছে। তাদের সার্বিক লুটপাটের ফলে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থা যদি দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির কারণ হতো তবে তা হওয়ার কথা ছিল ১৯৭২ সালে। কোনোক্রমেই তা ১৯৭৪ সালে নয়।

প্রাণঘাতী যুদ্ধের মধ্যেও এ দেশের কৃষককুল ফসল ফলিয়ে সারা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪-এর মধ্যে সীমাহীন লুটপাটের ফলেই শিশু দেশটি কঠিন অবস্থায় পড়ে। তলাবিহীন ঝুড়ির তলাটি খসেছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে। একটা বাকশালি আবহ সৃষ্টি করে লুটেরাদের সম্পর্কে সমালোচনার রাস্তা বন্ধ করে ফেলা হয়। খাদ্য উৎপাদনের স্বল্পতার চেয়ে বণ্টন ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলাই এসব দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী।

চাটার দল নির্বিঘ্নে চেটে খেয়েছে আর অবিসংবাদী নেতা কিছু প্রশ্রয় মিশ্রিত ধমক দিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করেছেন। চাটার দলকে চাটাইয়ের তলায় রেখে লাল ঘোড়া দাবড়িয়েছেন সমালোচকদের উদ্দেশে। শুধু দেশের মানুষের স্মৃতিতেই নয়, আধুনিক সিংগাপুরের জনক লি কুয়ান ইউয়ের স্মৃতিতেও তা ধরা পড়েছে। তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন The Singapore Story নামে তার বিখ্যাত স্মৃতিচারণমূলক বইটিতে। ১৯৭৫ সালের কমনওয়েলথ সম্মেলনে গিয়ে তিনি দেখতে পান, সম্মেলনের পুরো সময়টিতে দিনের পর দিন একটি বিমান অযথা দাড়িয়ে রয়েছে।

সেই বিমানটিতে গরিব একটি দেশের (সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের নামটি স্পষ্টভাবে উলেস্নখ রয়েছে) সরকার প্রধান এসেছেন। অথচ তিনি সিংগাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একই সম্মেলনে এসেছেন সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান ব্যবহার করে। অত্যন্ত গরিব দেশের সম্পদের এমন অপচয় তার সংবেদনশীল মনে রেখাপাত করে। খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে অপপ্রচারের সময় যারা শেখ মুজিবকে অতি মানব বানানোর চেষ্টা করেছিলেন তাদের এ বইটি পড়ে রাখা দরকার। এক জন্মদাতা ও এক পিতার মধ্যে এভাবেই হয়তো পার্থক্যটি সৃষ্টি হয়ে যায়।

লি কুয়ান ইউয়ের দেশটি তার মেয়াদকালেই তৃতীয় বিশ্ব থেকে উন্নত বিশ্বে ঠাই পেয়েছে। তার ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় মাছ ধরা জেলেদের এ ছোট্ট জনপদটি আজ বিশ্বের টপ কসমোপলিটান সিটিতে রূপান্তরিত হয়েছে । এখন কোনো সাংবিধানিক শক্তি প্রয়োগ করে বা অন্য কোনো কৌশলে তাকে জাতির জনক বানানোর দরকার পড়ছে না। জনক বা কারিগর শব্দটি যেভাবেই প্রয়োগ হোক না কেন, এই মর্যাদাটুকু আপনাআপনি লি কুয়ানের জন্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে। কাজেই সব কিছু যোগ-বিয়োগ করেই জাতির পিতা বা ওই মাপের মর্যাদাটুকু নির্ধারণ করতে হবে।

ইতিহাসের সঙ্গে এ বোঝাপড়াটুকু না সেরেই গায়ের জোড়ে বা গলাবাজির মাধ্যমে জাতির ওপর কিছু চাপিয়ে দেয়া সম্ভব হবে না। মানব সৃষ্ট সেই দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ অনাহারে মারা পড়েছে। মানুষ আর কুকুর ডাস্টবিনে খাবারের জন্য কাড়াকাড়ি করেছে। বাসন্তীরা মাছ ধরার জাল পরে লজ্জা নিবারণ করেছেন। এমন কঠিন সময়েও স্বর্ণের মুকুট পরিয়ে নিজের ছেলের বিয়ে দেয়া হয়েছে।

যেভাবেই ওই জনবিচিছন্নতা সৃষ্টি হোক না কেন, এর দায় কোনোভাবেই তখনকার অবিসংবাদিত নেতা এড়াতে পারেন না। এই দৃশ্য দেখে অনেক মুজিবভক্ত জীবনের তরে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। ইতিহাসের নষ্ট অধ্যায়টি শুদ্ধ প্রজন্মের সুরঞ্জিত ও সৈয়দ আশরাফরা শত চেষ্টা ও গলাবাজি করেও ঢাকতে পারবেন না। এ কথাটি স্পষ্ট করে বলার জন্য জিন্নাহকে বাবা ডাকার দরকার নেই। এ ভূমির পুত্ররাই এসব প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলার জন্য এগিয়ে আসবে।

সৈয়দ আশরাফদের চোখে অবশ্য তারাই নষ্ট প্রজন্ম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.