আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নীতিহীন ভালবাসা (১ম কিস্তি)

আমিই হয়তো সে, অথবা নই

আজ স্বপ্ন (ছদ্মনাম) এর ইউনিভার্সিটিতে প্রথমদিন। ইউনিভার্সিটির গেটে পা দিয়েই স্বপ্নের মনে হলো-আরেহ্ বাহ্ !!! ইউনিভার্সিটিতে উঠে গেলাম, সেইদিনও না হাফপ্যান্ট পরে স্কুলে যেতাম, আজ আমি ইউনিভার্সিটিতে ?? আমি তো বড় হয়ে গেলাম। স্বপ্ন- একটি মধ্যমমানের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইই তে ভর্তি হয়েছে। বাজারে বেশ নামডাক। কিছু বড় ভাই-বোনও সেই ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।

ঝোকের মাথায়ই ভর্তি হয়ে গেল স্বপ্ন। - ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হইলা মাম। এইবার তো একটা মাইয়া পটানো-ই লাগে। কলেজে দোস্তরা কত মাইয়া লইয়া ঘুরছে। মাগার তুমি ঘুরো নাই, পড়াশুনা করছো।

কিন্তু রেজাল্ট তো ভালো করতে পারো নাই। যাই হোক, ইউনিভার্সিটি তে ঢুকছো, তা-ও আবার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তাছো। খোজো খোজো - এইবার একটা মাইয়া খোজো। এখনই তো তোমার দিন আইছে। ক্লাসে ঢুকতে ঢুকতে স্বপ্নের মাথায় এই কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল।

আসলেই স্বপ্ন খুবই সাধারণ একটা ছেলে। নাম স্বপ্ন হলেও জীবনে স্বপ্ন খুব একটা বেশী নেই। একটা ইউনিভার্সিটি ডিগ্রী, সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড, ভালো চাকরী, তারপর গার্লফ্রেন্ডকে বিয়ে করে মা-বাবা নিয়ে হ্যাপী ফ্যামিলি। আর একটা স্বপ্ন আছে। আর্মি অফিসার হওয়া।

ইতিমধ্যে স্বপ্ন আইএসএসবি এর ডেট এর জন্য অপেক্ষা করছে। যদি আর্মি অফিসার হতে পারে, তা হলে তো কোন কথাই নেই। গর্জিয়াস লাইফ। হ্যাপী লাইফ এন্ড ফ্যামিলী। যাই হোক, ক্লাসের প্রথম দিন থেকেই একটা সুন্দরী মেয়ের খোঁজে তার চোখ ঘুরতে লাগলো।

ক্লাস থেকেই শুরু হোক । ক্লাসে তিনটা মেয়ে। শিমুল (ইন্টেলেকচুয়ল টাইপের, ভালো), অনন্যা (সারছে, ওজন তো ৮০ কেজি, স্বপ্ন নাই), উর্মি (মারছে রে, সেম টাইপের না, ভাগলপট্টি)। - কি করা যায়? তাইলে কি শিমুলের লগেই লাইন মারুম ? ওকে, লেটস্ ট্রাই। ক্লাস শেষ।

স্বপ্ন দেখে শিমুল একটা গ্রুপের সাখে দাড়িয়ে কথা বলছে। - ওরে বাবা !! এর মধ্যে গ্রুপ ও করে ফেলছে? আসলেই ইন্টেলেকচুয়াল। স্বপ্ন লাফ দিয়ে শিমুলের সামনে দাড়িয়ে যায়। - হাই... তোমার সাথে মনে হয় এর আগে কথা হয় নাই। তাই তোমার নাম জানি না (আসলে জানে)।

শিমুলঃ আমি শিমুল। তোমাকে ক্লাসে দেখেছি না? স্বপ্নঃ হুম। একটা ব্যাপার তোমার কাছ থেকে জানতে চাই ............................ এভাবে শুরু হলো শিমুলের সাথে স্বপ্নের বন্ধুত্ব। দিন যায়। আস্তে আস্তে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব গাঢ় হয় (মোটামুটি ২ মাস এর মধ্যে)।

এর মাঝে ১ মাসের মাথায় স্বপ্ন শিমুলের বয়ফ্রেন্ডের সাথে পরিচিত হয়। স্বপ্নের মাথা থেকে শিমুলের সাখে প্রেম করার স্বপ্ন উবে যায়। এর মধ্যে আইএসএসবি দিয়ে আসে। রিজেক্টেড। নীতিবান ও ভদ্র স্বপ্ন জীবন কাটাতে থাকে অন্যরকম স্বপ্নের মধ্য দিয়ে।

আবার আইএসএসবি তে যাবে। এর মাঝে শিমুলের কথায় যোগ দেয় ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট সোসাইটিতে। একসাথে কাজ করতে করতে তাদের সম্পর্ক আরো গাঢ়তর হয় । এবার তারা একে অপরের পারসোনাল লাইফেও মিশে যায়। এভাবে কখন যে তারা একে অপরের হয়ে যায় তারা টেরও পায় না।

সারাদিন একসাথে। একসাথে ক্লাস, তারপর স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনে কাজ, আড্ডা, খাওয়া, বাসায় পৌছে দেয়া, গ্রুপ স্টাডি - সবখানেই তারা একসাথে। ইউনিভার্সিটিতে সবাই তাদের কাপল বলে কানাকানি করে। কিন্তু সবাই জানে, আসলে তা না। শিমুলের বয়ফ্রেন্ড আছে।

স্বপ্নের গার্লফ্রেন্ড না থাকলেও স্বপ্ন তা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায় না। যদিও ইউনিভার্সিটি ঢুকবার সময় গার্লফ্রেন্ড বাগানোর তালে ছিল, কিন্তু তা এখন মাথা থেকে পুরো উবে গেছে। বরং ক্লাস, স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন আর আগত আইএসএসবি নিয়েই স্বপ্নের দিন কাটে। আর শিমুলের নিবিঢ় বন্ধুত্ব। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করলো - ছেলে আর মেয়ের মাঝে প্রেম ছাড়াও নিবিঢ় সম্পর্ক সম্ভব।

শিমুলের জীবনে একটা কষ্ট আছে। তার বয়ফ্রেন্ড। ফোনে তাদের পরিচয়। ছেলেটা গুড ফর নাথিং। আগে পড়াশুনা করতো।

এখন ছেড়ে দিয়েছে। ঢাকার বাইরে থাকে। সারাদিন মাস্তানি করে ঘুরে বেড়ায়, চাঁদাবাজি করে। ভয়ঙ্কর রকমের ড্রাগ এডিক্টেড। আগে ঢাকায় থাকতো।

পরে তার বাবা তাকে ঢাকা থেকে বাড়ি নিয়ে এসে পড়ে। কিন্তু ঢাকা ছেড়েও তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি। বরং সে আরো খারাপ হয়েছে। আর বাবার অণ্ণ ধ্বংস করছে। নাম তার সুমন (ছদ্মনাম)।

তো সুমনকে নিয়ে শিমুলের চিন্তার অন্ত নেই। তারা ফোনে প্রেম চালিয়ে যেত আর নিত্য ঝগড়া করতো। কিন্তু কিভাবে, কেন যেন শিমুল সুমনকে ভালবাসতো। আর একসময় শিমুল স্বপ্বের সাথে এ সবকিছু শেয়ার করতে শুরু করে। স্বপ্নের কাছে সাহায্য চায় এই বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে।

সাহায্য চায়, সে কি করবে? এভাবে চলতে চলতে স্বপ্ন শিমুলের প্রতি মনের অজান্তে দূর্বল হয়ে পড়ে। নীতিবান স্বপ্ন নীতিহীনতার পথে চলতে থাকে। একসময় বুঝতে পারে সে তার দূর্বলতা। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। সে একসময় টের পেতে শুরু করে, শিমুলকে ছাড়া তার জীবন অসম্ভব।

অন্যদিকে, শিমুলের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সুমন ভালো হতে শুরু করে। শিমুলের সাধনা ও অধ্যাবসায়ে সুমন খারাপ পথ থেকে ফিরে আসতে শুরু করে। আবার সে বুঝতে পারে, স্বপ্ন এর কাছ খেকে মানসিক সাহায্য নিতে গিয়ে সে স্বপ্নকে দূর্বল করে ফেলেছে। এবার সে দোটানায় পড়ে যায়। মনের অগোচরে সে-ও যে স্বপ্নকে মন দিয়ে ফেলেছে।

একদিকে তার দীর্ঘদিনের প্রেম - সাধনার - অধ্যাবসায়ের ফল এক নতুন সুমন। অন্যদিকে প্রিয় বন্ধু স্বপ্ন। শিমুল বুঝতে পারে মনের ভূলে সে স্বপ্নের দিকে তাকিয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছে। ( to be continued )

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.