আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষা ব্যবস্থাঃ প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি

শিক্ষা যেখানে অসম্পূর্ণ, জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দু:খজনক যে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার দীর্ঘ ৩৯ বছর পার হলেও আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। এ পর্যন্ত যতগুলো শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছিল অথবা শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠিত হয়েছিল সবগুলোই কোন না কোন কারণে বাতিল হয়েছে। শিক্ষা সংস্কার কমিটির সুপারিশগুলোরও একই অবস্থা। সেসব শিক্ষানীতি বা সুপারিশগুলো বারবার আস্তাকুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে।

একথা অনস্বীকার্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই সে শিক্ষানীতিগুলোর আস্তাকুড়ে পতিত হওয়ার একমাত্র কারণ। অথচ স্বাধীনতার পরপরই আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি পেয়েছিলাম। আমাদের দূর্ভাগ্য যে ৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন কর্তৃক প্রণীত শিক্ষানীতিটি বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। এটা একটা জাতির জন্য হতাশাজনক যে আমরা শিক্ষা নিয়েও রাজনীতি করি। এক সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে অথবা প্রণয়ন কমিটি গঠন করে এবং পরবর্তী সরকার এসে তা বাতিল করে দেয়।

রাজনৈতিক চুল ছেড়াছেড়ির কুপ্রভাব পড়ে গিয়ে আমাদের কোমলমতি শিশুদের উপর, আমাদের কিশোরদের উপর। আমাদের শিশু-কিশোররা আজ হয়ে গিয়েছে বুলি আওড়ানো পাখির মত; তারা হয়ে পড়েছে গাইড বই, কোচিং আর গৃহশিক্ষক নির্ভর। তাদের বাবা-মারা কোচিং আর গৃহশিক্ষক ছাড়া সন্তানদের পড়াশুনার কথা চিন্তাও করতে পারে না। জোরজবরদস্তি করে শিশুদের শিখানো হচ্ছে কিছু মুনাফালোভী ব্যবসাখোরদের বই, কোমলমতি শিশুদের ভর্তি করানো হচ্ছে কোন মুনাফালোভী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অথবা কোচিং সেন্টারে। এভাবেই উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে আজ আমাদের যুবসমাজ হয়ে গিয়েছে চিন্তাশক্তিহীন।

এক বিশাল অর্ধশিক্ষিত বেকারে পরিণত হচ্ছে আমাদের দেশ ও সমাজ। এসবের দায়িত্ব নেবে কে? শুধু তাই নয়, আমাদের শিক্ষাব্যব্স্থা আজ বহু ভাগে বিভক্ত। শিক্ষার এতগুলো ভাগ পৃথিবীর আর কোথাও আছে কীনা আমার জানা নেই। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। একদিকে শহুরে অর্থ-প্রতিপত্তিশালীদের সন্তানরা পাচ্ছে ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ, অনেকেই বাংলা ছেড়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াচ্ছে তাদের ছেলেমেয়েদের; আরেকদিকে গ্রাম্য শিশুরা থেকে যাচ্ছে অবহেলিত।

তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গতানুগতিক শিক্ষক দিয়ে গতানুগতিক শিক্ষা দেয়া হচ্ছে এবং দেশের কোমলমতি শিশুদের বিরাট একটা অংশ মাদ্রাসার অপার্থিব শিক্ষা(!) নিয়ে হয়ে দাড়াচ্ছে দেশের জন্য বোঝাস্বরূপ। মাদ্রাসায় এইসব শিশুদের ‘পড় তোমার প্রভুর নামে’ যা শেখানো হচ্ছে তা দেশে কিছু মোয়াজ্জিন, ইমাম আর মাদ্রাসার শিক্ষক তৈরী করছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেমন তাদের ভূমিকা থাকে না, তেমনি তাদের নিজেদের মধ্যেও উন্নয়নের কোন চেষ্টা দেখা যায় না। কারণ এরা শিখেছে অপার্থিব জ্ঞান, বেহেশতী জ্ঞান; যা পৃথিবীর ইহজাগতিক উন্নয়নের চিন্তা করতেই শিখায় না। বরং এদের অনেকেই মিসগাইডেড হয়ে বনে যায় জঙ্গী, জেহাদী কিংবা হিজবুত তাহরীর সদস্য।

তখন তারা মৃত্যু নিয়েই চিন্তিত থাকে বেশি। আত্মঘাতি বোমা হামলা করে হলেও মৃত্যুর মাধ্যমে বেহেশত লাভের চিন্তা করে তারা। এসবের দায়িত্ববা কে নেবে? জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ শিক্ষাক্ষেত্রে এসব বৈষম্য দূরীকরণ, মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে মেইনস্ট্রিম শিক্ষাব্যবস্থার সাথে তুলনামূলক সহাবস্থানে নিয়ে আসা, দেশে গাইড বই-কোচিং-গৃহশিক্ষক নির্ভরতা কমানো, কারিগরী শিক্ষার মাধ্যমে বেকারত্বের অবসানসহ মানুষকে মানবসম্পদের পরিণত করার বেশকিছু দিক নির্দেশনা দিয়েছে। শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সাধারণ লক্ষ্যগুলোর সাথে সংবিধান, স্বাধীনতা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ধারণ; সামাজিক মূল্যবোধ, নৈতিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তবুদ্ধি চর্চাসহ আরো বেশ কিছু ভাল লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এসেছে, যা খুবই প্রাসঙ্গিক ও যুক্তিবহ। স্বাধীনতার অনেকদিন পরে হলেও বর্তমানে আমরা একটি প্রায় পূর্ণাঙ্গ শিক্ষানীতি পেয়েছি।

এই “প্রায়” শব্দটির ব্যাখ্যা দেবার দায় অবশ্যই আমার। কেননা যে শিক্ষানীতিটি প্রণয়ন করেছেন বাঘা বাঘা শিক্ষাবিদরা মিলে, সেটাকে প্রায় পূর্ণাঙ্গ বলার ধৃষ্টতাকে ব্যাখ্যা করার দায়বদ্ধতা আমার আছে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকীকরণের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যকরণ, বহুধাবিভক্ত শিক্ষাকে একমুখী শিক্ষায় নিয়ে আসার (ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষা ও কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যতিরিকে) চিন্তাটা বেশ প্রশংসনীয় অবশ্যই। প্রতিটি গ্রামে কম হলেও একটি করে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা, আট বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষা, চার বছর মেয়াদী মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থাও অবশ্যই প্রশংসনীয়। প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি রাষ্ট্রের দায়িত্বে অর্পণ করাটাও ভাল উদ্যোগ।

এর ফলে শিশুরা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষা পাবে, যা আমাদের দেশের গরীব মানুষদের জন্য খুবই আশাপ্রদ। কিন্তু আমরা হতাশ হই ধর্ম শিক্ষাকে নিয়ে। বর্তমান শিক্ষানীতিটি তৈরী করা হয়েছে ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে। সেখানে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ধর্মশিক্ষার অস্তিত্বই ছিল না। নবম শ্রেণী হতে ধর্মশিক্ষাকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।

কিন্তু বর্তমান শিক্ষানীতিতে একদিকে যেমন শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছে বিজ্ঞানমনস্কতা, মুক্তবুদ্ধি চর্চা, ইত্যাদি তেমনি প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অন্যতম বিষয় হিসেবে ধর্মকে রাখা হয়েছে। বিজ্ঞানমনস্কতা-মুক্তবুদ্ধি চর্চার সাথে ধর্ম যে একেবারেই খাপ খায় না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পৃথিবীর তথা বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষাবিদই মনে করেন ধর্মশিক্ষা বিষয়টি পুরোই পারিবারিক শিক্ষার বিষয়, একাডেমিকভাবে ধর্মশিক্ষা শিশুদের মধ্যে প্রশ্নহীনতার জন্ম দেয়, বিজ্ঞানমনস্কতাকে বিলুপ্ত করে, মুক্তবুদ্ধির চর্চার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা দেখি ইসলাম ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বে দেখা যায় আদম-হাওয়া পৃথিবীর প্রথম মানব-মানবী, যাদেরকে আল্লাহ মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেন এবং শাস্তি হিসেবে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে পাঠান। হিন্দু ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্বে মনু থেকে মানবের উৎপত্তি জাতীয় উদ্ভট ব্যাখ্যা।

এর সাথে প্রত্যেক ধর্মের রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব ব্যাখ্যা যা একটার সাথে আরেকটার তো মেলেই না, উপরন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখার সাথে তুলনা করলে তা রীতিমত হাস্যকর। বিবর্তনবাদের মত প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অস্বীকার করে সকল ধর্মই। এ ব্যাপারে আরেকটি বিষয় অবতারণা না করলেই নয়-জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান বিষয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান কোন একটা বইয়ে দেখেছিলাম, লেখক বিবর্তনবাদ বিষয়টি নিয়ে বৈজ্ঞানিক ব্যাখার পরে শেষের দিকে কোরাণের বিভিন্ন আয়াতসহ কয়েক পৃষ্ঠার ফুটনোট দিয়েছে। যার প্রধান কথা হল-বিবর্তনবাদ আমাদের শুধু শেখার জন্য, পরীক্ষায় পাশের জন্য পড়তে হবে; আসলে সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছাতেই সৃষ্টি হয়েছে এবং বিবর্তনবাদ আসলে কোন বৈজ্ঞানিক সত্য নয়, ইত্যাদি। এখানে একটা প্রশ্ন জাগে কেন শিক্ষাবিদরা ধর্মশিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার সাথে সংযুক্ত করলেন? এর উত্তর একটাই।

তা হল-সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্টকে মূল্য দিতে গিয়ে। আসলেই কি তাই? প্রকৃত চিত্র আসলেই মোটেই তা নয়। হিন্দু-বৌদ্ধ-ইসলাম প্রভৃতি ধর্মগুলো এদেশে এসেছে রাষ্ট্রযন্ত্রের হাত ধরে। এদেশের মানুষ কখনোই রাষ্ট্রযন্ত্রের আরোপিত ধর্মকে ধর্মের স্বরূপে পালন করেনি। বাঙালির রক্তে প্রোথিত রয়েছে অসাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম এখানে কখনোই অতখানি গুরুত্ব পায়নি যতখানি পেয়েছে সমাজ ও সংস্কৃতি।

প্রত্যেকটি সমাজই ধর্মকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে ফেলে পালন করতে চেয়েছে উৎসবরূপে। কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী মানুষ সবসময়ই ধর্মকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটতে চেয়েছে। তারাই এখন সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্টকে জাগ্রত করে তুলছে তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য। আর এই অল্পকিছু সুবিধাভোগী মানুষের জন্যই শিক্ষাবিদরা একটি সেক্যুলার শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে পারেননি। ধর্মকে একাডেমিক শিক্ষার বাইরে রাখার প্রচেষ্টাকে বাদ দিতে হয়েছে যদিও তারা জানেন যে এটা আমাদের সামনে এগুতে বড় প্রতিবন্ধকতা।

শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে যে বিজ্ঞানমনস্কতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চার কথা বলা হয়েছে তা মুখ থুবড়ে পড়তে পারে ধর্মশিক্ষার জন্য। আমরা এমন একটি একমুখী শিক্ষানীতি চেয়েছিলাম যেখানে সবাই একই শিক্ষার ছায়াতলে আসবে। অল্পকিছু মানুষের সেন্টিমেন্টকে মূল্য না দিতে না গেলে আমরা তা পেতাম। মাদ্রাসা শিক্ষা, ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষাকে আলাদা রাখার প্রয়োজনীয়তা ছিল না। কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে টিকিয়ে রাখারও কোন প্রয়োজন ছিল না।

যে শিক্ষায় সকল শিক্ষার বিষয় একখানা পুস্তককেন্দ্রিক তা আমাদের জন্য মোটেই ভাল কিছু বয়ে আনতে পারে না। আমাদের প্রচুর সংখ্যক মসজিদের ইমাম দরকার নেই। আমাদের দরকার উৎপাদনশীল জনসম্পদ। তার জন্য একটি একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষানীতির বিকল্প নেই। শিক্ষানীতিতে আরেকটি বিষয়কে ভুলভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে বলব।

ধর্মশিক্ষাকে নীতিশিক্ষার প্রধান উপাদান হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নীতিশিক্ষা মূলত ধর্মশিক্ষা নির্ভর নয়, নীতিশিক্ষাগুলো মানুষ সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে পেয়ে থাকে। আমি আগেই উল্লেখ করেছি যে আমাদের সমাজ মোটেই ধর্মনির্ভর সমাজ নয়। কিন্তু আমাদের সমাজকে ধর্মনির্ভর সমাজরূপেই উপস্থাপন করার প্রবণতা দেখা যায় সুবিধাবাদী রাজনীতিক এবং ধর্মীয় মোল্লাদের। যেদেশে শিক্ষা নিয়েও প্রতিটি রাজনৈতিক দল ফায়দা তোলার মানসিকতাকে বর্জন করতে পারে না, সেদেশে একটি সেক্যুলার বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষানীতি পাওয়া একটি দুরূহ কল্পনা।

তারপরও আমরা যে শিক্ষানীতিটি পেয়েছি তা বাস্তবায়ন করতে পারলেও শিক্ষার বিকাশ অনেক সহজ ও সুন্দর হবে বলে মনে করি। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। জাতি হিসেবে আমরা আর অন্ধকারে থাকতে চাই না, আমরা আলো চাই; বিদেশে আমরা কেবলই শ্রমিক পাঠাতে চাই না, আমরা জনশক্তি পাঠাতে চাই। পরবর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অন্য সরকার আসলে যেন এই শিক্ষানীতিটিকে আস্তাকুড়ে ছুড়ে ফেলা না হয়। অন্তত একটি শিক্ষানীতি এদেশে বাস্তবায়নের মুখ দেখুক।

------------------------------------------------------ *লেখাটি ‌‌‍‌’জিজ্ঞাসু’ ৩য় বর্ষ ষষ্ঠ সংখ্যায় প্রকাশিত।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.