আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেথা বাবার খোঁজ পেলেন, পেলেন না দেখা।

এম এ জোবায়ের
প্রথম আলো ০৮-০৩-২০১১ বাবার খোঁজ পেলেন নেথা ইসলাম। জানলেন বাবার পরিবারের কথা। কিন্তু পেলেন না কেবল বাবার দেখা। পাওয়া আর সম্ভবও নয়। বাবা ফকরুল ইসলাম বেঁচে নেই।

গত হয়েছেন ২৭ বছর আগে, ১৯৮৪ সালে। তবে দেখা পেয়েছেন তিনি বাবার চাচাতো ভাইয়ের। জেনেছেন তাঁর বাংলাদেশি স্বজনদের কথা। পেয়েছেন শেকড়ের সন্ধান। কাকতাল দিয়ে শুরু! কামরুজ্জামান রুমানের বাড়ি সিলেটের কুলাউড়ায়।

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ করছেন। গতকাল সকালে প্রথম আলোয় তিনি পড়েন ‘বাবার জন্য ভালোবাসা’র খবর। বাবার খোঁজে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছেন ৪০ বছরের নেথা ইসলাম। সংবাদটি পড়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন রুমান। বিকেলে রুমান বাসায় ফেরেন।

গল্পের ছলে খবরটি শোনাচ্ছিলেন তালুই (ফুফুর বেয়াই) নিজামউদ্দিন আহমেদকে। একপর্যায়ে মেয়েটির বাবার নাম বলতেই চমকে ওঠেন নিজামউদ্দিন। ফকরুল যে তাঁর আপন চাচাতো ভাই! তিনি জানতে চান, মেয়েটির নাম কী? নাম শুনেই তাঁর মনে হয়, এ বুঝি ফকরুলের মেয়ে নীতা। নেথাকে তাঁরা নীতা নামেই জেনেছেন ফকরুলের কাছ থেকে। এরপর তিনি ইন্টারনেটে প্রথম আলোর সংবাদটি পড়েন।

তাঁর আর কোনো সন্দেহ রইল না, এই নেথাই তাঁর চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে। কারণ, নেথার ভাই ওমর ইসলামের নামও জানতেন তাঁরা। ইন্টারনেট থেকে প্রথম আলোর নম্বর নিয়ে ফোন করেন। কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। নিজামউদ্দিন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।

গত ২০ জানুয়ারি তিনি দেশে বেড়াতে আসেন। আর নেথা এসেছেন ৪ ফেব্রুয়ারি। নেথার বাবার পরিবারের এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রায় সবাই থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে এই সময়ে দেশে নিজামউদ্দিনের এই সফরটিও যেন কাকতাল। সন্ধ্যায় নেথাকে মুঠোফোনে জানানো হলো, সম্ভবত তোমার এক আত্মীয়ের খোঁজ পাওয়া গেছে।

আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নেথা। দুজনকে আসতে বলা হলো প্রথম আলোর কার্যালয়ে। স্বজন আসবে শুনে একটু আগেভাগে এসে অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন নেথা। রাত নয়টায় আসেন নিজামউদ্দিন। প্রথম সাক্ষাতে বিস্মিত দুজন।

নিজামউদ্দিন ইংরেজিতেই সম্বোধন করলেন, ‘নীতা, কেমন আছ?’ শুরু হয় দুজনের কথোপকথন। নিজামউদ্দিন বলতে থাকেন ফকরুলের গল্প। সাগ্রহে বাবার গল্প শুনতে থাকেন নীতা। কিন্তু বাবা কই? আনন্দের এই মুহূর্তেই তাঁকে জানতে হলো—বাবা নেই। চোখ ভিজে যায় নেথার।

৪০ বছর ধরে যে বাবাকে তিনি মনে মনে খুঁজছেন। মায়ের অনুমতি নিয়ে শেষ পর্যন্ত চলে এসেছেন বাংলাদেশে। ঢাকায় এক মাস ধরে পড়ে আছেন, যদি কোনোভাবে বাবার সন্ধান পান। শেষ পর্যন্ত তো সে সন্ধান মিলল। কিন্তু বাবা যে নেই! চাচা নিজামউদ্দিনকে প্রশ্ন, ‘কেমন ছিলেন আমার বাবা? কীভাবে মারা গেলেন? তিনি কি আমাদের কথা বলতেন?’ নিজামউদ্দিনের গল্প শেষ হয় না।

বলেন, ফকরুল সব সময় নীতা ও ওমরের গল্প বলত। তখন ও শারীরিকভাবে অসুস্থ। পেটে ব্যথা। আলসার জাতীয় কোনো অসুখ বাধিয়েছে। সব সময় বলত, ‘ভাবি (নিজামউদ্দিনের স্ত্রী), আমার ছেলেমেয়ের খোঁজ কইরেন আপনারা।

’ নিজামউদ্দিনের স্ত্রী মীনার কাছে ফকরুল সব সময় গল্প করতেন তাঁর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে। মীনাও গতকাল কথা বলেছেন সেই নেথার সঙ্গে, টেলিফোনে। দীর্ঘ আলাপ, হাসি-কান্নার কাব্য। ভালো কথা, নেথার মায়ের নাম লিন। চাচা নিজামউদ্দিন সে নাম বলে একটা পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হলেন।

কারণ, এ দেশে এসে নেথা কাউকেই মায়ের নামটি বলেননি। নেথা তাঁর পরিবারের আরও অনেক সদস্যের খোঁজ পেয়েছেন। তাঁর বাবা ছিলেন মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তবে তাঁর বাবার পাঁচজন সৎভাইবোন আছেন। তাঁরা হলেন শামসুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম এবং দুই বোন রেনু বেগম ও সেবু বেগম।

ফকরুলের আপন চাচাতো বোন হরফুন নেছা। তিনি পরিবারের সবচেয়ে বড় মেয়ে। নেথার খবর পেয়ে তিনিও যোগাযোগ করেছেন নিজামউদ্দিনের সঙ্গে। জানতে চেয়েছেন নেথা কবে আসবে সিলেটে? নেথার বাবার বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দেউগ্রামে। বাবার কবরও সেখানে।

বাবার কবর দেখতে যাবেন নেথা। বাবার জন্য জমানো আছে তাঁর অনেক কথা।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।