আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মূল্য পতন ও প্রতারণা ঠেকাতে টেক ওভার পলিসি নিতে হবে



আরও আর্টিকেল পড়তে ক্লিক করুন বাংলাদের পুঁজিবাজার গত সোমবার আইসিবি’র তত্তাবধানে পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহ বাড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি বিশেষ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারী মালিকানাধীন ৪ ব্যাংক-সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতাসহ আইসিবি, বিডিবিএল ও সাধারণ বীমা করপোরেশন যৌথভাবে এ তহবিল গঠন করবে। এই বৈঠক শেষে জানানো হয় যে, শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় আইসিবি ও ৪ রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংক ইতোমধ্যেই বিনিয়োগ শুরু করেছে। আর যতদ্রুত সম্ভব এই তহবিলের কার্যক্রম শুরু হবে। আরও বলা হয়েছে, ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম যাতে স্থিতিশীল থাকে সেজন্য একটি তালিকা তৈরি করে সাত প্রতিষ্ঠানকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।

ওই তালিকা অনুযায়ী সাত প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ উদ্যোগে বিনিয়োগ করবে। এই ঘোষণার পর গতকালের শেয়ার ট্রেডিংয়ে ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় সব শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। অথচ বলা হয়েছিল, ভালো মৌল ভিত্তির শেয়ারের দাম স্থিতিশীল করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু শেয়ারবাজারে তার প্রতিফলন ঘটেনি।

মূল্যসূচক একদিনেই বেড়ে গিয়েছে ৩৯৮ পয়েন্ট। এই মূল্য বৃদ্ধিকে কোন মতেই স্বাভাবিক ধরে নিয়ে বাজার স্থিতিশীলতার লক্ষণ বলে মেনে নেয়া যায় না। আজকেও যদি এই মূল্য বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকে তবে গত সপ্তাহের মতো আবার পর পর কয়েক দিন মূল্য পতন অবশ্যম্ভাবী হবে একথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তাই আজকের দিনটা নীতি-নির্ধারকদের জন্য একটি অগ্নি পরীক্ষার সামিল। শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করার জন্য আজ খুবই দক্ষতার সঙ্গে তহবিলের উদ্যোক্তাদের শেয়ার কেনা-বেচা করতে হবে।

শেয়ার মূল্যসূচক যাতে না পড়ে, আবার কোন মতেই যাতে ১০০ পয়েন্টের বেশি না বাড়ে সেদিকে এসইসি, আইসিবি ও স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর নীতি-নির্ধারকদের যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। বলা হয়েছে, মৌল ভিত্তি সম্পন্ন শেয়ার খরিদ করা হবে। কিন্তু এই মৌল ভিত্তি নির্ধারণের মাপকাঠি কি হবে? দেখা গেছে বিগত দুই বছরে শেয়ারবাজারের মৌলভিত্তি নির্ধারণের জন্য ‘পিই’কেই একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এখনও কি তাই হবে? এবারে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধির জন্য একটি চক্র কাজ করেছে। স্টক এ্ক্সচেঞ্জের সদস্য, এসইসি’র কিছু কর্মকর্তা, বাজার খেলোয়াড় ও কোম্পানির মালিক-পরিচালকরা মিলে এই চক্র তৈরি করেছে।

সব চেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছে কোম্পানির মালিক-পরিচালকরা। প্রথমে তারা কিছূ অসাধু চাটার্ড একাউন্টিং ফার্মের সহায়তায় ফুলিয়ে-ফাপিয়ে কোম্পানির আর্থিক বিবরণী তৈরি করে বড় আকারের স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর মাধ্যমে কথিত ’পিই’ একটা ভালো জায়গায় দৃশ্যমান হয়েছে। অথচ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ওই কোম্পানির আগের বছরগুলোর ‘পিই’ কিন্তু অনেক বেশি ছিল। এরপর বাজার খেলোয়াড়রা বিভিন্ন রকম গুজব ছড়িয়ে ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম আকাশ চুম্বি করেছে।

এরপর ঘোষণা দিয়ে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসইসিতে কোনরূপ ঘোষণা না দিয়েই ওই সব কোম্পানির মালিক-পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা শেয়ারের সিংহ ভাগে বিক্রি করে দিয়েছে। সিডিবিএল ছাড়াও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রকাশিত রিভিউ দেখলে অতি সহজেই এর প্রমান মিলবে। এবারের শেয়ারবাজারে মূল্য পতনের সূত্রপাত হয়েছে যখন ওই সব কোম্পানির মালিক-পরিচালকরা শেয়ারবাজারের স্ক্রিনে ঘোষণা দিয়ে বিপুল সংখ্যক শেয়ার বিক্রি শুরু করেছে। ব্যাংক, ইন্সুরেন্স, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ অনেক নামি-দামি কোম্পানির স্পন্সর-পরিচালকরা এই কাজ করেছে। এরপরে ধারাবাহিকভাবে মূল্য পতন ঘটতে থাকে।

বলা হচ্ছে, শেয়ারবাজারে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। আস্থার সংকট সৃষ্টি হলে তা হয়েছে এদেরই জন্য। কারণ এরাই চাইছে শেয়ারবাজার আরও ফেলে দিয়ে ওইসব শেয়ারের বিক্রিত দামের থেকে অনেক কম দামে শেয়ারগুলো ফেরত পেতে। এদের এই হীন উদ্দেশ্য যদি সফল হয় তবে কোনো প্রচেষ্টাই কাজে আসবে না। এরা শেয়ার মূল্যের পতন ঘটাতে ঘটাতে একেবারে শেষ করে দেবে।

এখনও আস্থা যতটুকু আছে তাও আর অবশিষ্ট থাকবে না। তখন বাজার পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না। তাই যা করার এখনি করতে হবে। আর করতে হবে একটা সুনিদ্দিষ্ট উদ্দেশ্য সামনে রেখে। উদ্দেশ্য হবে, প্রয়োজনে কোম্পানি টেক ওভার করা।

কোম্পানির শেয়ার হোল্ডিং বিবরণী দেখলেই জানা যাবে স্পন্সরদের কাছে কি পরিমাণ শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে যেসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খুবই ভালো এবং মৌল ভিত্তি সম্পন্ন, আর সেই কোম্পানির স্পন্সর পরিচালকদের কাছে ২০% এর কম শেয়ার রয়েছে অথচ শেয়ারের দাম অনেক নিচে অবস্থান করছে এরূপ ১০-১৫টি কোম্পানি চিন্হিত করে ওইসব কোম্পানির শেয়ার কেনা শুরু করতে হবে। এর ফল হবে ম্যাজিকের মতো। এমন কি যদি এই দামে কোম্পানির মেজরিটি শেয়ারও কিনে নেয়া যায় তাতে কোনো ক্ষতি নেই। কারণ এগুলো খুবই লাভজনক কোম্পানি এবং শেয়ারও কেনা হবে খুবই কম দামে।

এইসব কোম্পানির শেয়ারের দাম কমতে কমতে এখন ২০০৬/০৭ সালের অবস্থানে চলে এসেছে। সে কারণে এইসব শেয়ার খরিদ করা আর্থিক বিবেচনায় খুবই লাভজনক হবে। এরফলে ওই তহবিলের সংগঠকরা একদিকে যেমন এইসব শেয়ার কিনে লাভবান হতে পারবে তেমনি শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট দুর করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে। মনে রাখা দরকার, তহবিলের অর্থের যোগান দিচ্ছে সরকার। সরকার মানে গৌরি সেন নয়।

যথাযথ বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভ করে এই টাকার সদ ব্যবহার করতে হবে। তাই এর জবাবদিহীতা অবশ্যই থাকতে হবে। ফান্ড ম্যানেজারদের বিষয়টি সর্বদাই মাথায় রাখা দরকার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.