আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দরিদ্র আর কোটিপতি

আমি বিদ্রোহী

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দরিদ্র আর কোটিপতি ইলিয়াস খান জামালপুরের নদীভাঙন এলাকার বাসিন্দা ফিরোজা। তিন বছর আগে ঘরবাড়ি সব বিলীন হয়ে যাওয়ায় পাঁচ সন্তান আর স্বামী নিয়ে তিনি মিরপুরের এক বস্তিতে এসে ওঠেন। স্বামী রিকশাচালক। নিজে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। দু’জনের সাকল্যে আয় ১২ হাজার টাকা।

এই টাকা দিয়ে কোনো রকমে তাদের সাত সদস্যের পরিবার চলছিল। বড় মেয়ে দুটিকে এনজিও’র এক স্কুলে পড়াতেন। ছোট তিনটি এখনও স্কুলগামী হয়নি। কিন্তু মেয়ে দুটিকে এ বছর স্কুল থেকে ছাড়িয়ে এনে গার্মেন্টে চাকরি দিয়েছেন। কারণ, স্বামী-স্ত্রীর আয়ে এখন আর সংসার চালাতে পারেন না।

যদিও তিন বছরে তাদের দু’জনের আয়ই বেড়েছে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির কাছে এই বাড়তি আয় হারিয়ে গেছে। পল্লবীর জহির উদ্দিন গার্মেন্ট ব্যবসা করেন। এক ছেলে নিয়ে তার তিন সদস্যের পরিবার। বছরে আয় কমপক্ষে ষাট লাখ টাকা।

ছেলে ও স্ত্রীর জন্য রয়েছে একটি গাড়ি। তার নিজের জন্য একটি। ফিরোজার পরিবারের অবস্থা সঙ্গিন আর জহিরউদ্দিনের সমৃদ্ধ। দুই পরিবারের আয়ের ধরনই বলে দেয় বাংলাদেশে আয় বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী উল্লেখযোগ্যহারে মাথাপিছু আয় বাড়লেও তা বাড়েনি সমভাবে।

ফলে সাড়ে ১৬ কোটির মধ্যে কিছুসংখ্যক কোটিপতি বনে গেলেও অধিকাংশ মানুষেরই আয় বেড়েছে সামান্য। দৃশ্যত আয় বাড়লেও মুদ্রাস্ফীতির কারণে প্রকৃতপক্ষে এদের অনেকের আয়ই আরও কমে গেছে। এ অবস্থায় দেশের অধিকাংশ মানুষ আরও সঙ্গিন অবস্থায় পড়েছে। সরকার সর্বশেষ ২০০৯ সালে জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণা করেছে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত সাতটি বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়।

সর্বশেষ ঘোষিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। সরকার ঘোষিত সাতটি জাতীয় বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিটি বেতন কাঠামোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়ের পার্থক্য বেড়েছে। ২০০৯ সালে ঘোষিত সুষম জাতীয় বেতন কাঠামো অনুযায়ী সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৯০০ টাকা, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চ। ২০০৯ সালের জাতীয় বেতনকাঠামো অনুযায়ী সর্বোচ্চ বেতন ৪০ হাজার টাকা আর সর্বনিম্ন মাত্র চার হাজার ১০০ টাকা। ২০০৫ সালে জাতীয় বেতন কাঠামো অনুযায়ী সর্বোচ্চ বেতন ছিল ২৩ হাজার এবং সর্বনিম্ন দুই হাজার ৪০০ টাকা।

সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের পার্থক্য ছিল ২০ হাজার ৬০০ টাকা। দ্বিতীয় জাতীয় বেতনকাঠামো অনুযায়ী সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের পার্থক্য ছিল দুই হাজার ৭৭৫ টাকা। তৃতীয় জাতীয় বেতন কাঠামোয় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের পার্থক্য ছিল পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা। চতুর্থ ও পঞ্চম বেতন কাঠামোয় এই ব্যবধান ছিল যথাক্রমে নয় হাজার ১০০ ও ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। জাতীয় বেতনকাঠামো ২০০৯ অনুযায়ী নিম্নশ্রেণীর কর্মচারীদের বেতন কম হারে বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ চারটি গ্রেডের কর্মকর্তাদের বেতন অধিকহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রথম থেকে চতুর্থ গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে শতকরা ৭২ থেকে ৭৪ ভাগ। এখানে প্রথম গ্রেড থেকে নিচের গ্রেডের বেতনবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়েছে। পক্ষান্তরে ১০ হতে ১৮ নম্বর গ্রেডভুক্ত কর্মচারীদের জন্য বেতন ২০০৫ সাল থেকে বৃদ্ধি করা হয়েছে সর্বনিম্ন ৫৬ থেকে সর্বোচ্চ ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত। এভাবেই প্রতি বেতন কাঠামোয় নিম্নতম ও উচ্চতম সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়বৈষম্য বাড়ছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়েও আয়বৈষম্য প্রকট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।

গার্মেন্ট খাতে একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার টাকা। অথচ একজন ব্যবস্থাপকের বেতন প্রতিষ্ঠানভেদে এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা। এখানে আয়বৈষম্য হাজার নয়, লাখে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নির্ধারিত থাকলেও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ধারিত নয়। এ কারণে প্রতিষ্ঠানভেদে বেতন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে বেতন বেশি, সেখানে আয়বৈষম্যও অপেক্ষাকৃত বেশি। প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিন্যাসের ব্যবস্থা থাকলেও দু’একটি শিল্পখাত ছাড়া অন্যকোনো খাতে তা মানা হচ্ছে না। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো দারিদ্র্য নিরসনে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির হার দিনপ্রতি দুই ডলারে উন্নীত করা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চার বছর বাকি থাকলেও বাংলাদেশের অবস্থান এখনও অনেক পেছনে। এই আয়বৈষম্যের কারণে বাড়ছে দারিদ্র্য, অতিদরিদ্রের সংখ্যা, বাড়ছে কোটিপতি।

শুধু সরকারি-বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, শহর ও গ্রামের মানুষের আয়ের মধ্যেও রয়েছে বিস্তর ব্যবধান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলভেদেও এই সমস্যা প্রকট। স¤প্রতি পরিচালিত মাঠপর্যায়ের সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশের পূর্ব জনপদের জেলাগুলোয় মাথাপিছু দৈনিক আয় কৃষিখাতে ২২৩ এবং অন্যান্য খাতে ২১৩ টাকা। মধ্যাঞ্চলে এ আয় যথাক্রমে ২১৯ ও ৩১৩ টাকা। উত্তরাঞ্চলে ১৬৪ ও ১৯৭ এবং দক্ষিণাঞ্চলে ১৫৩ ও ১৬৪ টাকা।

কয়েক বছরের মজুরি হার বিশ্লেষণ করে বিআইডিএস দেখিয়েছে, অঞ্চলভেদে মজুরি বৈষম্য প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। অন্য এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের সীমান্তবর্তী ৩০ জেলার মধ্যে কেবল তিনটি ছাড়া সবকটির অর্থনৈতিক অবস্থাই করুণ। পিছিয়ে পড়া এসব জেলার মাথাপিছু আয় বছরে ৩৫০ ডলারের নিচে। অথচ দেশের গড় মাথাপিছু আয় ৭০০ ডলার। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায়, কয়েক বছর ধরে অঞ্চলভেদে আয়ের পার্থক্য বেড়েই চলেছে।

বিশেষ করে শ্রম মজুরির ব্যাপক পার্থক্যের প্রভাব পড়ছে পিছিয়েপড়া জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রায়। কৃষি ও অন্যান্য খাতে দেশের মধ্যাঞ্চলের আয় সবচেয়ে বেশি। আর উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আয় এ দুটি খাতে সবচেয়ে কম। এসব অঞ্চলের মজুরিকাঠামো নির্ভর করে কৃষি মৌসুমের ওপর। মৌসুম শেষ হলে মজুরির পরিমাণও কমে যায়।

এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য আরও প্রকট হবে। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.