আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি ডাকাত আর আপনি?

,,,কুয়াশার আড়ালে লুকানো ঘটনা কুয়াশার চাদরে জড়ানো সকালের মোহনীয় রূপের মত নিস্পাপ, নিস্কলঙ্ক, নির্মোহ নয়,,,

'আম্মু, আমার ঘড়িটা কোথায়? একটু এনে দাও তো, আমি খুঁজে পাচ্ছি না। ’ আসলে আমি একটা মিথ্যা কথা বললাম। ঘড়িটা হয়তো জায়গামতই ছিলো, কিন্তু প্রতিদিন বাইরে যাবার সময় আমি এই ছলনাটুকুর আশ্রয় নেই যাতে মা ঘড়ি নিয়ে নিয়ে এসে দরজা থেকে আমাকে বিদায় দেয়। আম্মুর হাসিমাখা মুখের যে ছবি মনে গেঁথে নিয়ে বের হই তার দীপ্তিতেই হয়তোবা আমার বাইরের সময়টা ভালো কাটে। কিন্তু আজকে বাইরে বের হবার সময় কেনো যেন মনে হতে লাগলো যে, আমি বুঝি আর বাড়ি ফিরতে পারব না।

আম্মুর এই হাসিমাখা মুখের অবয়ব আর দেখা হবে না, বাবার শাসনে আর আড়ষ্ট হব না। ভাবছেন বুঝি সাহিত্য করছি, একটু ভাব আনার চেষ্টা করছি। মোটেই না। প্রায় তিন সপ্তাহে প্রথম আলোতে নিউজটা পড়েছিলাম। নর্দান কলেজের ফাস্ট ইয়ারের আবিরকে ১০ই জানুয়ারী রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

খবরটা পড়ে প্রথমে তেমন কিছু মনে হয়নি। ক’দিন আগেই তো সীমান্তে নির্দোষ ফেলানী মরলো ভীনদেশী শ্যুটারদের হাতে। আর এই ব্যাটা আবিরতো ভীনদেশী বাহিনীর হাতে মরেনি। ডাকাত সন্দেহে মেরেছে নিজ দেশের বাহিনী। কিন্তু ভেতরের পেইজে যখন আবিরের ফ্যামিলি ডিটেইলস পড়লাম তখন দেখি আবিরের বাবা তিতাস গ্যাসের উপমহাব্যবস্থাপক, বড় বোন একটা বেসরকারী বিশবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আর ছোট ভাই মনিপুর স্কুলের ছাত্র।

মনে প্রশ্ন জাগে, তবে আবির কেনো ডাকাতির প্রশ্তুতি নিচ্ছিলো? আমার ক্ষুদ্র বিদ্যাকল্যাণে আমি যতটুকু জানি ডাকাতি মানুষ করে পেটের দায়ে বা উগ্রপন্থী কোন দলের নামে বা কোন সন্ত্রাসী গ্রুপ। কিন্তু এলাকাবাসী তো আবিরকে কোনদিন আড্ডা দিতে দেখেনি, পাড়ার মাঠে খেলতে দেখেনি। তবে আবির কিভাবে ডাকাতে পরিণত হলো তা আমার মাথায় আসে না। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ যে তারা ডাকাতি করার আগেই ডাকাত ধরে ফেলেছে। কিন্তু হত্যা করলো কেনো? ডাকাতির শাস্তি কি মৃত্যুদন্ড? আমি এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না।

যেমনিভাবে উত্তর পাইনি সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর শাস্তি ঝাঝরা করে দেয়া শরীর কিনা। আমাদের খেলার মাঠ নেই। হাতে গোনা কয়েকটা যে পার্ক আছে তাও আবার অসামাজিক কাজের জন্য প্রসিদ্ধ। তাই মাঠে যাই না, যাই না কোন পার্কেও। তীব্র জ্যামের কারণে ছুটির দিনেও দূরে কোথাও যাই না।

তবে কখনোবা আমার এলাকায় আবার কখনো বা কোন বন্ধুর এলাকায় আড্ডা দিতে যাই। এখনতো ভয় হয়, কোনদিন না জানি আড্ডাস্থল থেকে আমার লাশ চলে আসে আমার বাড়িতে। পেপারে আসবে ওমুক ডাকাতের মৃত্যু। আমি হয়তো জানিই না যে আমি ডাকাত। কিন্তু আমার মত বোকাদের হয়তোবা আমাদের মৃত্যুর কারণ জানতে নেই।

কেউ কেউ তাদের দিব্য দৃষ্টিতে জেনে নেবেন এগুলো। রক্ষা করবেন আমাদের দেশকে, নিয়ন্ত্রণে আসবে এদেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি। মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি পেপারে আমার বন্ধু ডাক্তারী পড়ুয়া রাসেলের নাম আসবে ছিনতাইকারী হিসেবে। টেক্সটাইলে পড়ুয়া নাফিসের নাম আসবে চাঁদাবাজ হিসেবে আর আমার নাম আসবে ডাকাত হিসেবে। আর এ সবের শাস্তি হবে নির্ঘাত মৃত্যুদন্ড।

মুক্তিপাগল মানুষগুলো কি ৭১’এ এই ভেবে নিজেদের প্রাণ দিয়ে আমাদেরকে এই দেশটা উপহার দিয়ে গেছে যার পরিধীতে মারা হবে ফেলানীকে আর কেন্দ্রে বসে ডাকাত সন্দেহে আমরা মারব আবিরকে???

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।